সংবাদ শিরোনামঃ

তুরস্কে জনতার বিজয় ** এরদোগানের নেতৃত্বে তুরস্কের জনগণ রুখে দিল সেনা অভ্যুত্থান ** সঙ্কট নিরসনে প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য ** ২০ দলীয় জোট ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র ** তুর্কী গণপ্রতিরোধে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থান ** রফতানি বাণিজ্যের নতুন চ্যালেঞ্জ : রাজনৈতিক অস্থিরতা ** মানবতাবাদী বিশ্ব ও সন্ত্রাসবাদী বিশ্বের মাঝখানে মুসলমানদের দাঁড় করিয়ে দেয়া হচ্ছে ** সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে প্রয়োজন দলমত নির্বিশেষে সবার ঐক্য : নজরুল ইসলাম খান ** তুর্কী জনগণকে অভিনন্দন ** জাতীয় স্বার্থ বনাম হুকুম তামিল করার দৌড়ঝাঁপ ** এ শিক্ষা আমাদের কোথায় ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ** দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজেও হরিলুটের অভিযোগ ** দুর্ভোগের আরেক নাম পাইকগাছার কপিলমুনি শহর ** কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসক সঙ্কট : সেবা কার্যক্রম ব্যাহত ** কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা ** ইসলামী সংস্কৃতির আলোকেই হোক ঈদ আনন্দ ** বাংলা ভাগের জন্য মুসলমানরা নন হিন্দুরাই দায়ী ** কবির বিশ্বাস ** সানজিদা তাহসিনা বেঁচে থাকবে সবার মাঝে ** জাতির নিকট রেখে গেলেন অনেক প্রশ্ন **

ঢাকা, শুক্রবার, ৭ শ্রাবণ ১৪২৩, ১৬ শাওয়াল ১৪৩৭, ২২ জুলাই ২০১৬

ড. মাহফুজুর রহমান আখন্দ
কবি মতিউর রহমান মল্লিক শুধু একজন ব্যক্তি নন, বরং তিনি একাই একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিলেন। সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশে তিনি দিনরাত ব্যস্ত থাকতেন দৈহিক ও মানসিকভাবে। নিজের দুনিয়াদারী, তথাকথিত উন্নত ক্যারিয়ার, অর্থবিত্ত, বিষয়বৈভব কোন কিছুর প্রতি তাঁর কোন টান ছিল না, ছিল না কোন আকর্ষণ। এমনকি ব্যক্তিগত আরাম আয়েশ, উন্নত পোশাক পরিচ্ছদ খাওয়া-দাওয়া, সুখ-সমৃদ্ধি কোন কিছুই তাঁর মগজে ঠাঁই পায়নি। তাঁর মগজ জুড়েই ছিল একটাই চিন্তা, অপসংস্কৃতির মূলোৎপাটন করে আদর্শিক চেতনার বিশ্বাসী সংস্কৃতির লালন ও প্রতিষ্ঠা; জাতিকে র্শিক ও অশ্লীলতা মুক্ত করে মননশীলতার আবহে গড়ে তোলা। তাঁর প্রধান ধ্যান-জ্ঞানই ছিল প্রিয় বাংলাদেশের প্রতিটি জনপদে সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। তাঁর চিন্তা চেতনার পুরোটা জুড়েই এই একটি বিষয়ই আবর্তিত হতো। সাহিত্য-সংস্কৃতির বিষয়গুলো সম্পর্কে নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) কি দৃষ্টিভঙ্গী পোষণ করতেন তার অসংখ্য বিবরণ তাঁর যেন নখদর্পণে থাকতো। সাহাবী আজমাঈন (রা.) এ বিষয়ে কি ভাবতেন, তা’বেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন (রহ.), মুসলিম মনীষীগণ কি বক্তব্য দিয়ে গেছেন এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটে অপসংস্কৃতির মোকাবেলায় কি ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার সে সব বিষয় নিয়ে তিনি গবেষণামূলক বেশকিছু প্রবন্ধ-নিবন্ধ রচনা করেছেন। তাঁর প্রবন্ধসমূহে সাহিত্য-সংস্কৃতির বিষয়ে সুস্পষ্ট দিকনির্দেনা পাওয়া যায়।

কবি মতিউর রহমান মল্লিক ছিলেন সত্যিকার অর্থে একজন শুদ্ধ সংস্কৃতিচিন্তক। বক্তৃতা, আলোচনা এমনকি লেখালেখিতেও তিনি সংস্কৃতির শেকড় অনুসন্ধান করে বিশ্বাসী সাংস্কৃতিক দর্শনের ভিত্তিতে সমাজ গড়ার পরিকল্পিত প্রয়াস চালিয়েছেন। ছড়া, কবিতা ও গান ছাড়াও সাহিত্য-সংস্কৃতির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি বেশ কিছু গবেষণামূলক ও বিশ্লেষণধর্মী প্রবন্ধ রচনা করেছেন। ‘কবি-কবিতা: রাসূলে খোদা (সা.) এর অনুরাগ ও উৎসাহ, রাসূল (সা.) এবং তাঁর সাহিত্য দর্শন, ইসলামী সংস্কৃতি, আমাদের সংস্কৃতি: প্রেক্ষিত কবি নজরুল ইসলাম, সাহিত্য-সংস্কৃতি আন্দোলন : দায়িত্বশীলদের ভূমিকা’ প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ। প্রবন্ধগুলো বিশুদ্ধ সাংস্কৃতিক দর্শনভিত্তিক এবং সাহিত্য-সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে এক একটি মাইলফলক।

‘কবি-কবিতা: রাসূলে খোদা (সা.) এর অনুরাগ ও উৎসাহ’ শীর্ষক প্রবন্ধটিতে তিনি আরবের সাহিত্যচর্চার ঐতিহ্য, আরবি সাহিত্যের শেকড় ও সমৃদ্ধি, মহানবী (সা.)-এর জীবনে কবিতার প্রভাব, সাহাবী আজমাঈনদের কাব্যচর্চায় উৎসাহ প্রদান, সাহাবী কবিদের প্রতি মহানবীর (সা.) অতি ভালোবাসা প্রদর্শন, সাহাবী কবিদের সম্মানার্থে অতিরিক্ত আনুকল্য প্রদান এবং ‘রাসূলের জীবন দর্শনকে কবিতার মতো ছন্দময়’ বলে উল্লেখ করেছেন। প্রবন্ধের শেষপ্রান্তে এসে তিনি উল্লেখ করেন, ‘সত্যিকার অর্থেই রাসূলে খোদা (সা.) কবিতার মতো ছন্দময়, হৃদয়ময় এবং সৌন্দর্যময় একটি নমনীয় পৃথিবী রচনা করতে চেয়েছিলেন। সে পৃথিবী গড়বার জন্যে কবিদের প্রতিও তাঁর আহ্বান ছিল বড় আবেগঘন, বড় প্রাণস্পর্শী।’ কবি মতিউর রহমান মল্লিক তাঁর প্রবন্ধে আরো উল্লেখ করেন, ‘তাঁর একটি স্বভাব ছিল কোন দিকে যখন তিনি তাকাতেন আদৌ বাঁকা চোখে তাকাতেন না; বরং সম্পূর্ণভাবে নিজেকে ঘুরিয়ে নিয়েই সে দিকেই তাকাতেন। অর্থাৎ যে কোন সিদ্ধান্ত দেয়ার ব্যাপারেও তিনি ছিলেন ঐ স্বভাবের। অর্ধেক দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী মানুষ তিনি একেবারেই ছিলেন না। সুতরাং কবি ও কবিদের ব্যাপারে তিনি ছিলেন পরিপূর্ণ হৃদয়ের মানুষ, পূর্ণাঙ্গ পরিতৃপ্তির মানুষ।’

‘রাসূল (সা.) এবং তাঁর সাহিত্যদর্শন’ কবি মতিউর রহমান মল্লিকের একটি তথ্যভিত্তিক গল্পময় মজাদার প্রবন্ধ। অত্যন্ত আড্ডাময় পরিবেশে ও গল্পচ্ছলে তিনি মহানবী (সা.)-এর ব্যক্তিত্ব ও সাহিত্য সংস্কৃতির দৃষ্টিভঙ্গী তুলে ধরেছেন। সেইসাথে সূরা আশ শুয়ারার শেষ রুকুতে কবি-সাত্যিকদের সম্পর্কে আল্লাহর বাণীকে অধিকাংশ আলিম নিজের চিন্তার ঘাটতি রেখেই বিশ্লেষণ করে সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নিরুৎসাহিত করেন- সে বিষয়টিও অত্যন্ত রসালো ভঙ্গিতে উপস্থাপন করেছেন। বিশেষত আয়াতের প্রথমাংশ ‘আশ শুয়ারাউ ইয়াত্তা বিউহুমুল গাউন’ অর্থাৎ ‘কবিরা বিভ্রান্তির উপত্যকায় ঘুরে বেড়ায়’ এর মধ্যে আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখেন। এরপরে যে বলা হয়েছে ‘ইল্লাজিনা আমানু...’ অর্থাৎ সেই সব কবিরা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে এবং আমলে সলেহ করেছে... অর্থাৎ যারা মুমিন কবি-সাহিত্যিক তারা এ বিভ্রান্ত কবিদের অন্তর্ভুক্ত নয়। ঠিক যেন সেই আয়াতের মতো- ‘লা তাকরাবুস সলাত’। এ আয়াতাংশে যেমন বলা হয়েছে ‘তোমরা নামাজের ধারে কাছেও যেয়ো না’ পরের অংশে বলা হয়েছে ‘ওয়া আনতুম সুকারা’ অর্থাৎ যখন তোমরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় থাকো। অর্থাৎ আয়াতের পূর্ণ অর্থ হলো তোমরা যখন নেশাগ্রস্ত ও মাতাল অবস্থায় থাকো তখন নামাজের কাছাকাছিও যেও না।’ অর্থাৎ পুতঃপবিত্র ও সুস্থমানসিকতা নিয়েই নামাজে দাঁড়াতে হবে। এক্ষেত্রে নেশাকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এতে কেউ যদি আয়াতের প্রথমাংশ পড়ে আজীবন নামাজ থেকে দূরে থাকেন তিনি যেমন বোকার স্বর্গে বসবাস করছেন ঠিক তেমনি সূরা আশ শুয়ারার এ আয়াতেও ভুল ব্যাখ্যা করে সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকলে জাতির জন্য মহাসর্বনাশ নেমে আসবে। যখন বিশ্বাসী সাহিত্য-সংস্কৃতির চর্চা থাকবে না তখন এককভাবে গোটা সংস্কৃতির মাঠ দখল করে নেবে অপসংস্কৃতি। আজ জাতির ভাগ্যে সে দশাই নেমে এসেছে।

এ প্রবন্ধে তিনি আরো উল্লেখ করেন, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মুসলিম কবি-সাহিত্যিকদের খুব পছন্দ করতেন। যে কারণে তিনি সব সময় বিশেষত সফরে, যুদ্ধের ময়দানে, বিভিন্ন সময়ে কবিদের সাথে রাখতে পছন্দ করতেন। এক্ষেত্রে হজরত আলী (রা.), হজরত আবদুল্লাহ বিন রাওহা, হজরত হাস্সান বিন সাবিত (রা.) সবচেয়ে বেশি সৌভাগ্যবান ছিলেন। এমন কি হজরত হাস্সান বিন সাবিতসহ মুসলিম কবিদের কবিতা চর্চা ও কবিতা পাঠের জন্য মহানবী (সা.) কর্তৃক মসজিদে নববীতে আলাদা মিম্বার তৈরি করে দেয়া হয়েছিল; সে বিষয়টিও তিনি এ প্রবন্ধে স্ববিস্তারে উল্লেখ করেছেন। সেইসাথে উম্মুল মোমেনিন হজরত আয়শা (রা.), হজরত আবু বকর সিদ্দিকীসহ (রা.) বিভিন্ন সাহাবীর কাব্যপ্রীতির নানা ঘটনাও তিনি উল্লেখ করেছেন।

সাহিত্য-সংস্কৃতিসহ মহানবীর (সা.) জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে খুব বেশি গবেষণা প্রয়োজন বলে কবি মতিউর রহমান মল্লিক মনে করেন। আজ অবিশ্বাসীরা তাদের চিন্তা-চেতনা নিয়ে যেভাবে গবেষণা করছে, ইসলামের বিপক্ষে তাদের বিভ্রান্ত মতামতগুলো জোরালোভাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে সত্য হিসেবে মানব সমাজে ছড়িয়ে দিচ্ছে সেই তুলনায় আমাদের সত্য বিষয় নিয়েও গবেষণার ভূমিকা অত্যন্ত দুর্বল। তাই কবি মতিউর রহমান মল্লিক বলেন, ‘আজকে আমাদের প্রয়োজন হচ্ছে রাসূলের সমস্ত দিক ও বিভাগকে আবিষ্কার করা। রাসূল (সা.)-এর যে বিশ্বাস, রাসূল (সা.)-এর যে ধারণা, রাসূল (সা.)-এর যে উক্তি, রাসূল (সা.)-এর যে বক্তব্য, সে বক্তব্য সরাসরি আবিষ্কার করা।’

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) হচ্ছেন আমাদের জীবন চলার মডেল। তাঁর নীতিমালাই মূলত আমাদের জীবন পদ্ধতি ও সাহিত্য-সাংস্কৃতিক দর্শন। ইসলামের ধর্মীয় বিধি-বিধান যেমন আমাদের জানা অত্যাবশ্যক তেমনি তাঁর সমাজনীতি, অর্থনীতি, রাজনীতি, সমরনীতি, খাদ্যনীতি, সাহিত্য-সাংস্কৃতিকনীতি, অভিভাষণ নীতি, এমনকি পথ চলার নীতিও আমাদের জানা জরুরি। অথচ এ বিষয়গুলো আমাদের গবেষণার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। তাই কবি মতিউর রহমান মল্লিক গুরুত্ব সহকারে উল্লেখ করেন, যে অধ্যাপক সে আবিষ্কার করুক রাসূল (সা.) এর শিক্ষানীতি কী? যে আইনজীবী, সে আবিষ্কার করুক রাসূল (সা.)-এর আইন কী? যে শিল্পী সে আবিষ্কার করুক আঁকিবুকির ব্যাপারে রাসূল (সা.)-এর কী সিদ্ধান্ত? সাংবাদিক আবিষ্কার করুক তাঁর সংবাদনীতি, সাহিত্যিক আবিষ্কার করুক তাঁর সাহিত্যনীতি।’ সত্যই যদি প্রত্যেক অঙ্গনের গবেষকরা স্ব স্ব অঙ্গনে মহানবীর (সা.) নীতি-আদর্শ নিয়ে গবেষণায় রত থাকতে পারতাম তাহলে হয়তো আমাদের এ দীনতা স্পর্শ করতেই পারতো না।

কবি মতিউর রহমান মল্লিকের আরেকটি নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধ ‘ইসলামী সংস্কৃতি’। প্রায় সতের পৃষ্ঠার এ প্রবন্ধে তিনি সংস্কৃতি শব্দের ব্যাখ্যা করেছেন সবিস্তারে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন মনীষীর মতামতও বিশ্লেষণ করেছেন তিনি। ইসলামী সংস্কৃতির মৌল উপাদান, ইসলামী সংস্কৃতির লক্ষ্য, ইসলামী সংস্কৃতির স্বাতন্ত্র ও বৈশিষ্ট্য স্ববিস্তারে আলোচনা করেছেন। সেইসাথে ইসলামী সংস্কৃতির স্বরূপ নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা উপস্থাপন করেছেন তিনি। ইসলামী সংস্কৃতি চর্চার প্রেরণা গ্রহণের জন্য তিনি আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বক্তৃতার একটি উদ্ধৃতি উল্লেখ করেছেন। কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমাদের ইসলামাবাদ হোক ওরিয়েন্টাল কালচারের পাঠস্থান- আরাফাত ময়দান। দেশ-বিদেশের তীর্থযাত্রী এসে এখানে ভীড় করুক। আজ নব জাগ্রত বিশ্বের কাছে বহু ঋণী আমরা, সে ঋণ আজ শুধু শোধই করব না- ঋণ দানও করব, আমরা আমাদের দানে জগতকে ঋণী করব- এই হোক আপনাদের চরম সাধনা।’ কবি কাজী নজরুল ইসলাম আরো বলেন, ‘হাতের তালু আমাদের শূন্য পানে তুলে ধরেছি এতদিন, সে লজ্জা আজ আমরা পরিশোধ করব। আজ আমাদের হাত উপুড় করার দিন এসেছে। তা যদি না পারি সমুদ্র বেশি দূরে নয়, আমাদের এ লজ্জার পরিসমাপ্তি যেন তারি অতল জলে হয়ে যায় চিরদিনের তরে।’ সত্যিকার অর্থে কবি কাজী নজরুল ইসলামের এ অভিভাষণ আমাদের চেতনার মূলে নাড়া দেবার এক অমৃত মহৌষধ।

কবি কাজী নজরুল ইসলাম সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার পাদপীঠ গড়ে তোলার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ভূমিকা সম্পর্কেও খোলামেলা বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে সাহিত্য-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য যে গুরুত্ব তুলে ধরেছেন তা কবি মতিউর রহমান মল্লিক তাঁর প্রবন্ধে উদ্ধৃতি আকারে উপস্থাপন করেছেন। কাজী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি বলি, রবীন্দ্রনাথের শান্তি নিকেতনের মতো আমাদেরও কালচারের, সভ্যতার জ্ঞানের সেন্টার বা কেন্দ্রভূমির ভিত্তি স্থাপনের মহৎ ভার আপনারা গ্রহণ করুন। আমাদের মতো শত শত তরুণ খাদেম তাদের সকল শক্তি আশা-আকাক্সক্ষা জীবন অঞ্জলির মতো করে আপনাদের সে উদ্যমের পায়ে অর্ঘ্য দেবে।’ কাজী নজরুল ইসলামের এ তাগিদের ভিত্তিতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন কবি মতিউর রহমান মল্লিক। সেই চিন্তা থেকেই তিনি সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার পাদপীঠ হিসেবে ঢাকায় বাংলাদেশ সংস্কৃতিকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আর তা ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন সারাদেশের জেলাসহ সকল গুরুত্বপূর্ণ স্থানে। তাঁর স্বপ্ন কিছুটা হলেও বাস্তবায়িত হয়েছে।

সাহিত্য সংস্কৃতির বিষয়ে দিক নির্দেশনামূলক সবচেয়ে দীর্ঘ প্রবন্ধ হচ্ছে ‘সাহিত্য-সংস্কৃতি আন্দোলন: দায়িত্বশীলদের ভূমিকা।’ প্রায় পঁচিশ পৃষ্ঠার এ প্রবন্ধে কবি মতিউর রহমান মল্লিক একটি পূর্ণাঙ্গ সাহিত্য-সাংস্কৃতিক আন্দোলনের রূপরেখা ও পরিচালনার জন্য দায়িত্বশীলদের ভূমিকা স্ববিস্তারে আলোচনা করেছেন। সাহিত্য-সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পরিশীলিত ধারার উপর বাংলা ভাষায় এটিই সম্ভবত সবচেয়ে খোলামেলা ও বাস্তবধর্মী একটি প্রবন্ধ যা বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কর্মীদের যে ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয় তাও তিনি বর্ণনা করেছেন এ প্রবন্ধে।

প্রবন্ধটি শুরু করা হয়েছে সাহিত্যের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দের বিশ্লেষণ করার মধ্যদিয়ে। গুরুত্বপূর্ণ শব্দগুলো হচ্ছে- সাহিত্য, সংস্কৃতি, আন্দোলন, দায়িত্বশীল ও ভূমিকা’। এ বিষয়ে বিভিন্ন বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞগণের মতামত উপস্থাপন ও বিশ্লেষণের মধ্যদিয়ে তিনি এ শব্দগুলোর ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি দায়িত্বশীলদের দায়িত্ব-কর্তব্যকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেছেন। সেগুলো হচ্ছে ব্যক্তিগত দায়িত্ব, সাংগঠনিক দায়িত্ব, আন্দোলন বিষয়ক দায়িত্ব, আন্তর্জাতিক দায়িত্বসহ আরো কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের বিভাজন করে আলোচনার প্রয়াস চালিয়েছেন। প্রত্যেক বিভাগকে নিয়ে অত্যন্ত যৌক্তিক কিছু দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে প্রবন্ধটিতে। অন্যভাবে বলা যায়, একটি সাহিত্য-সাংস্কৃতিক আন্দোলন পরিচালনার জন্যে যে ধরনের নিদের্শনা প্রয়োজন তাঁর পুরোটাই এ প্রবন্ধে পাওয়া যায়।

প্রবন্ধে যে বিষয়গুলোর উল্লেখ করা হয়েছে তার প্রথমেই আছে ব্যক্তিগত দায়িত্ব। ব্যক্তিগত দায়িত্ব হিসেবে তিনি কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করেছেন। যেমন- পরিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা, সিদ্ধান্ত-গৃহীত বিষয়ের দখল প্রতিষ্ঠা করা, মূল আদর্শের আলোকে চরিত্র গঠন করা, অব্যাহতভাবে সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চা করা, বিশেষজ্ঞদের সাথে এবং সম্ভাবনাময় তরুণদের সাথে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে তোলা, পরামর্শের স্বভাবকে আয়ত্ব করা, সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করা। সর্বোপরি সর্বদা আল্লাহর সাহায্য কামনা করা এবং প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রগুলোতে উন্মুক্ত করা। মূলত মজবুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সাথে সাথে যদি নিজের যোগ্যতা বাড়িয়ে সাহিত্য-সংস্কৃতির নির্দিষ্ট বিষয়ে গভীর জ্ঞান অর্জন করে নিজেকে সেই আদর্শে গড়ে তুলে আদর্শ দায়ী হিসেবে ময়দানে কাজ করা যায় তবে ব্যক্তিগত তাগিদেও সাহিত্য সাংস্কৃতিক আন্দেলনকে সফলতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।

প্রবন্ধটির দ্বিতীয় পর্যায়ে দায়িত্বশীলদের ভূমিকাকে বলা হয়েছে ‘সাংগঠনিক দায়িত্ব’ হিসেবে। এ পর্বে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও বাস্তবভিত্তিক দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে স্ববিস্তারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দিক হলো- সংশ্লিষ্ট সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করা, আত্মনির্ভরশীল সংগঠনে পরিণত করা, প্রাক্তনদের কাজে লাগানো ও নতুনদের জায়গা করে দেয়া, সৃষ্টিশীল কাজের দিকে গুরুত্ব নিবদ্ধ করা, মাঝে মধ্যেই সেমিনার-সিম্পোজিয়ামের ব্যবস্থা করা, সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে আন্দোলনমুখী সংগঠনে পরিণত করা, বিভিন্ন পর্যায়ে সমন্বয় সাধন করা [বিশেষত সহযাত্রীদের সঙ্গে সমমনা সংগঠন, স্থানীয় ও জাতীয় সংগঠনের সাথে সমন্বয় সাধনের কথা বলা হয়েছে] নিয়মিত প্রোগ্রাম চালিয়ে যাওয়া, অধিকতর উদারতার পরিবেশ গড়ে তোলা, একত্রিত হওয়া যায়- এমন একটি জায়গার ব্যবস্থা করা, বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা, মূল সংগঠনের সাথে যুক্ত করা, সংগঠনের অভ্যন্তরে আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করা, সংগঠনের অভ্যন্তরভাগে সুকৃতির লালন করা, অকপটে কথা বলার পরিবেশ সৃষ্টি করা, পরিশ্রমী ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী জনশক্তি গড়ে তোলা, আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা, প্রাকৃতিক অভিজ্ঞতা এবং ইতিহাসের অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে গোটা জনগোষ্ঠীকে জ্ঞানের তিনটি উৎস সম্পর্কে সচেতন করা, প্রশিক্ষণের কাজকে অধিকতর গুরুত্ব দেয়া, জনগণের আস্থা অর্জন করা যায় এমন অনুষ্ঠানের আঞ্জাম দেয়া, আমাদের অনুষ্ঠানগুলোতে মাটি-মানুষ-আদর্শ-সত্য ও সুন্দরের স্বাভাবিক প্রকাশ ঘটানো, চোখ কান খোলা রেখেই কাজ করা, অর্জিত যা কিছুরই সংরক্ষণ করা, মাঝে মাঝে ওয়ার্কশপ করা, দেশী বিদেশী মূল্যবান গ্রন্থ ও সিডি-ভিসিডির সমন্বয়ে সংগহশালা গড়ে তোলা, সময়নিষ্ট স্বতষ্ফুর্ত-কর্মঠ-ধৈর্যশীল-উদার-আত্মপ্রত্যয়ী-অধ্যবসায়ী-দূরদর্শী-অতিথিপরায়ণ-মিষ্টভাষী বিপ্লবী জনশক্তি গড়ে তোলার মাধ্যমে মজবুত সংগঠন গড়ে তোলার ব্যবস্থা গ্রহণ করা। মূলত এসব বিষয়ের বিস্তারিত বিবরণ পাঠে সাহিত্য-সংস্কৃতির অঙ্গনের প্রত্যেক কর্মীকে সামনে চলতে ব্যাপকভাবে সহায়তা করবে।

প্রবন্ধের তৃতীয় পর্বে ‘আন্দোলন বিষয়ক দায়িত্ব’ শিরোনামে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের অবতারণা করেছেন কবি মতিউর রহমান মল্লিক। এ আলোচনার শুরুতেই তিনি বলেন, ‘শুধু অনুষ্ঠান সর্বস্ব কার্যক্রম পরিচালনা করাই একটি যথার্থ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কাজ নয়; কাজ নয় জীবনের যাবতীয় দুর্যোগ ও দুর্ভাবনা থেকে পরিত্রাণের সমস্ত উদ্যোগকে এড়িয়ে গিয়ে স্বার্থপরের মতো কেবল বিনোদনের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়া।’ মূলত একটি জাতীয় বিশ্বাসের সাহিত্য-সাংস্কৃতির বুনিয়াদ বিনির্মাণই সাহিত্য সংস্কৃতি কর্মীদের উদ্দেশ্য হওয়া বাঞ্ছনীয়। এক্ষেত্রে তিনি বেশ কিছু বিষয়ের উল্লেখ করেন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য শিরোনাম হচ্ছে, অপসংস্কৃতির মোকাবেলা করা, সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মোকাবেলা করা, বিভিন্ন স্থানে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্মেলনের আয়োজন করা, পথসভা এবং ভ্রাম্যমাণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা, মানুষের প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা, কোন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুকেই হাতছাড়া না করা, নতুন নতুন সংগঠন গড়ে তোলা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সপ্তাহ ঘোষণা করা, পুরস্কার প্রদানের নিয়ম চালু করা, সাহিত্য সাংস্কৃতিক পত্রিকা প্রকাশ করা, মূল সংঠনের উপশাখা থেকে কেন্দ্রীয় সংগঠন পর্যন্ত সাংস্কৃতিক সম্পাদকের পদ সৃষ্টি করা, জনশক্তিকে ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া, যুব শক্তিকে প্রতিষ্ঠিত করা, পত্র-পত্রিকা, মিডিয়ার প্রচার সংক্রান্ত কাজকে এগিয়ে নেয়া, প্রতিষ্ঠিত ও পুরনো শিল্পীদের কাজে লাগানো, একটি শক্তিশালী তহবিল গঠন করা, শিশু সংগঠনের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা, তথ্যসমৃদ্ধ পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করা, জনশক্তিকে পাঠ্যতালিকা তৈরি করে দেয়া, কালচারাল কমপ্লেক্স গড়ে তোলা, দুঃস্থ সাহিত্য সংস্কৃতি কর্মীদের জন্য সাহায্য তহবিল গঠন করা, বিভিন্ন সংগঠনের জন্য উপকমিটি গঠন করা, সর্বোপরি বিজাতীয় সংস্কৃতির বিরুদ্ধে আন্দোলনমুখী কর্মসূচি উপস্থাপন করার মাধ্যমে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন মোকাবেলার ধারা অব্যাহত রাখার ব্যবস্থা করা।

প্রবন্ধটির সর্বশেষের অংশে ‘আন্তর্জাতিক দায়িত্ব’ শিরোনামে বেশ কিছু বিষয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন কবি মতিউর রহমান মল্লিক। আল্লামা ইকবালের বিশ্বভ্রাতৃত্বের দৃষ্টিভঙ্গিতে তিনি গোটা বিশ্বকে এক মিল্লাতের আওতায় আনার পরামর্শ দেন। এক্ষেত্রে নিজেদের সমৃদ্ধ করার জন্য তিনি যে সব বিষয়ের উল্লেখ করেন তা হলো, মুসলিম দুনিয়ার সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক যাবতীয় সৃষ্টি সংগ্রহ করা, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের সাহিত্য-সংস্কৃতির মৌল বিষয়ের অনুবাদ করা, সাহিত্য-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বিনিময় বৃদ্ধি করা, দেশে দেশে নিজেদের আদর্শের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলা এবং সর্বোপরি সাহিত্য-সাংস্কৃতিক বৃত্তির প্রচলন করা জরুরি বলে তিনি উল্লেখ করেন।

প্রবন্ধের উপসংহারটি অনেকগুলো দার্শনিক তত্ত্বে ভরপুর। এ অংশে তিনি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের অবতারণা করেন, তা হলো- ‘যে সময় অতিক্রান্ত হচ্ছে, সে সময়ে আমাদের এই জাতির বিশ্বাস ও প্রত্যয়ের ভিত্তিভূমি তছনছ করে দেয়াই হচ্ছে শত্র“দের প্রধান লক্ষ্য। কারণ তারা জানে, এই জাতির ঐক্যের সর্বোত্তম হাতিয়ার যে ঈমান, সেই ঈমানকে পর্যুদস্ত করতে না পারলে এই জাতিকে পর্যুদস্ত করা যাবে না। সে জন্যই তারা চায় আমাদের ঈমান যেন আমাদের রাজনীতির সাথে জড়িত না থাকে, অর্থনীতি, সমাজনীতি, সাহিত্য-ভাবনা, সংস্কৃতি-চিন্তা, দেশপ্রেম, মানবপ্রীতির সাথে সংযুক্ত না থাকে, সেই কারণেই আমাদেরকে কেবল বিচ্ছিন্ন রাখতে চায়, বিভক্ত রাখতে চায়, নিরপেক্ষ রাখতে চায়, অন্ধ রাখতে চায়।’ তাঁর এ মন্তব্য যে অত্যন্ত যথার্থ তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

কবি মতিউর রহমান মল্লিকের সংস্কৃতি চিন্তা অত্যন্ত দূরদৃষ্টি সম্পন্ন। কবি মল্লিক অপসংস্কৃতির বিস্তারকারী ও ঈমানী সংস্কৃতির বিরোধী মহলের কর্মকাণ্ডের মূল টার্গেট নির্ণয় করতে গিয়ে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে উল্লেখ à¦•à¦°à§‡à¦¨Ñ ‘তারা জানে যে, সাহিত্য হচ্ছে জীবনের দর্পণ আর সংস্কৃতি হচ্ছে একটি জাতির শুদ্ধতম পরিচয়। কিন্তু সেই দর্পণ যদি ঈমানের পারদে অভিষিক্ত হয়, সেই পরিচিতি যদি ঈমানের আলোয় আলোকিত থাকে তাহলে ঐ ঈমানদীপ্ত জাতিকে পদানত করা সম্ভব নয়। তারা এও জানে যে, বিশ্বাস ও প্রত্যয়ের ব্যুহ ভেদ করতে হলে সর্বপ্রথম সাহিত্য এবং সংস্কৃতির ওপরই হামলা করতে হবে। তাই তো তারা নানা কলা কৌশলের মধ্যদিয়ে করছে, দেদার করে যাচ্ছে। আর তা করতে গিয়ে তারা লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে যাচ্ছে।’ কবি মল্লিক বিশ্বাসবিরোধী সংস্কৃতিকর্মীদেরকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখার জন্য সুস্থ সাহিত্য-সংস্কৃতির সকল সিপাহসালারকে অনুরোধ করেছেন। এ ব্যাপারে তিনি মন্তব্য করেন, “বিষয়টি বুঝতে হবে বিপ্লবী অভিভাবকদের। অন্তত আর কেউ না বুঝুক জাগ্রত তারুণ্যকে তা বুঝতে হবে অরুণপ্রাতের তরুণদলকে- যারা উর্দ্ধগগণে বাজে মাদল, নিম্ন উতলা ধরণীতল, হলেও ‘চলরে চলরে চল’ গাইতে গাইতে ‘হেরার রাজ তোরণ’ এর দিকে ধাবিত হয়। প্রভাবিত হয় বিপুল বন্যাবেগে, সৃষ্টি সুখের উল্লাসে উল্লাসে।”

কবি মতিউর রহমান মল্লিকের সংস্কৃতিকেন্দ্রীক এ প্রবন্ধমালায় ইসলামী সংস্কৃতির উপর একটি পূর্ণাঙ্গ দার্শনিক দিক নির্দেশনা পাওয়া যায়। মুলত ইসলামী জীবনাদর্শ প্রতিষ্ঠার সর্বাত্মক প্রচেষ্টাসমূহের নানাদিকের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হচ্ছে সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিশুদ্ধতা আনায়ন করা। চিন্তার শুদ্ধতা না আনতে পারলে জাতিকে ইসলামের সঠিক পথে চালানো কঠিন। তাই সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে জাহিলিয়াতমুক্ত না করতে পারলে ইসলামী বিপ্লব কখনো সফল হতে পারে না। তথ্য প্রযুক্তি ও বিশ্বায়নের এ যুগে তাই সাহিত্য-সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে খাটো করে দেখার কোন সুযোগ নেই। বরং ঈমানের বিশুদ্ধতা ও দৃঢ়তাসম্পন্ন যোগ্যতম ব্যক্তিদেরকেই এ পথে নেতৃত্ব প্রদানে এগিয়ে আসতে হবে।

কবি মতিউর রহমান মল্লিকের প্রবন্ধগুলো কোনটা খুব সহজবদ্ধ ও বক্তৃতাসুলভ আবার কোন কোন প্রবন্ধের ভাষার গাঁথুনী বেশ শক্ত ও গভীর। সবদিক বিবেচনায় কবি মল্লিকের প্রবন্ধগুলো সুখপাঠ্য বললে ভুল হবেনা। সেইসাথে সাহিত্য বিষয়েও বেশ কিছু প্রবন্ধ লিখেছেন কবি মতিউর রহমান মল্লিক। বাংলা নামের উৎপত্তি: কয়েকটি বিবেচনা; স্বাধীনতা : বিষয় ও ভাবনার অনুসঙ্গে, কবি ইকবাল : তাঁর যরবে কলীম ও অনূদিত যরবে কলীম, ইকবালের হাস্যরস, বঙ্গবন্ধু মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ, কবি ফররুখ আহমদ : তাঁর সিরাজাম মুনীরা, ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ : তাঁর সাহিত্য চিন্তা, কথাশিল্পী জামেদ আলী ও তাঁর সাহিত্যচিন্তা, ঈদুল ফিতরের তাৎপর্য প্রভৃতি তাঁর রচিত প্রবন্ধ/নিবন্ধ। এ প্রবন্ধগুলোর সমন্বয়েই তাঁর নির্বাচিত প্রবন্ধগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।

আলোচিত নির্বাচিত চৌদ্দটি প্রবন্ধের সমন্বয়ে মূলত ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত হয় কবি মতিউর রহমান মল্লিকের এ প্রবন্ধ গ্রন্থটি। আল-আমিন ফাউন্ডেশন থেকে এ গ্রন্থটি প্রকাশ করেন ফাউন্ডেশনের ফাউন্ডার চেয়ারম্যান মুহাম্মদ রুহুল আমীন। এ গ্রন্থের বাইরেও কবি মতিউর রহমান মল্লিকের বেশ কিছু প্রবন্ধ নিবন্ধ রচিত ও প্রকাশিত হয়েছে। সার্বিকভাবে উল্লেখ করলে কবি মতিউর রহমান মল্লিককে একজন সফল প্রাবন্ধিক ও বিজ্ঞ গবেষক এবং বিশ্বাসী সংস্কৃতির দিকদর্শন হিসেবেও চিহ্নিত করা যায়। মুলত জাহিলিয়াতের শেকড়ের মূলোৎপাটন করে বিশ্বাসী সংস্কৃতির আবাদ করাই ছিল তাঁর জীবনের মূল কাজ। কবি মতিউর রহমান মল্লিকের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক দর্শন উপলব্ধির জন্য যেমন গান-কবিতার বিশ্লেষণ জরুরি তেমনি তাঁর প্রবন্ধ সাহিত্যও ব্যাপকভাবে পর্যালোচনা হওয়া দরকার। সেইসাথে অপসংস্কৃতির মোকাবেলা করে আদর্শিক মূল্যবোধের বিজয় আনতে হলে বিষয়ভিত্তিক গবেষণা সেল বা থিংকট্যাংক প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।

[লেখক : কবি ও গবেষক; প্রফেসর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।mrakhanda@gmail.com]

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।