সংবাদ শিরোনামঃ

তুরস্কে জনতার বিজয় ** এরদোগানের নেতৃত্বে তুরস্কের জনগণ রুখে দিল সেনা অভ্যুত্থান ** সঙ্কট নিরসনে প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য ** ২০ দলীয় জোট ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র ** তুর্কী গণপ্রতিরোধে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থান ** রফতানি বাণিজ্যের নতুন চ্যালেঞ্জ : রাজনৈতিক অস্থিরতা ** মানবতাবাদী বিশ্ব ও সন্ত্রাসবাদী বিশ্বের মাঝখানে মুসলমানদের দাঁড় করিয়ে দেয়া হচ্ছে ** সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে প্রয়োজন দলমত নির্বিশেষে সবার ঐক্য : নজরুল ইসলাম খান ** তুর্কী জনগণকে অভিনন্দন ** জাতীয় স্বার্থ বনাম হুকুম তামিল করার দৌড়ঝাঁপ ** এ শিক্ষা আমাদের কোথায় ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ** দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজেও হরিলুটের অভিযোগ ** দুর্ভোগের আরেক নাম পাইকগাছার কপিলমুনি শহর ** কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসক সঙ্কট : সেবা কার্যক্রম ব্যাহত ** কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা ** ইসলামী সংস্কৃতির আলোকেই হোক ঈদ আনন্দ ** বাংলা ভাগের জন্য মুসলমানরা নন হিন্দুরাই দায়ী ** কবির বিশ্বাস ** সানজিদা তাহসিনা বেঁচে থাকবে সবার মাঝে ** জাতির নিকট রেখে গেলেন অনেক প্রশ্ন **

ঢাকা, শুক্রবার, ৭ শ্রাবণ ১৪২৩, ১৬ শাওয়াল ১৪৩৭, ২২ জুলাই ২০১৬

তাহনিয়া তরিক
গতবছর ক্রিসমাসে লায়লার দেয়া গিফট প্যাকেট খুলতেই আলো পড়ে ঝকমক করে উঠেছিল লাল মলাটের উপর সোনালী অক্ষর। তারপর থেকে জড়পদার্থটা কেমন সবাক সঙ্গি হয়ে গেছে ওর। সুখ দুঃখের সব কথা খুলে বলা যায় নোটবুকটার কাছে। মনের কথাগুলো যা কারোও কাছেই খুলে বলা যায়না- সব শুনায় ও নোটবুককে। মনের আকাশে জমে থাকা মেঘ কালির ধারা হয়ে নেমে আসে প্রতিদিন নোটবুকের পাতায়। নোটবুকটাও যেন নীরব ভাষায় সহানুভূতি জানায় ওকে- যা কেবল ওই শুনতে পায়। মাঝে মধ্যে নেড়েচেড়ে পড়ে দেখে আগে লেখা পাতাগুলো, নিজের কষ্টে নিজেই কেঁদে বুক ভাষায়। আবার নতুন করে লেখে দিনলিপি। এই এখন যেমন লিখছে। স্কুল থেকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে গেছে ওর নিজস্ব ড্রাইভার আঙ্কেল জন। তারপর সন্ধ্যায় টিচার আসার আগ পর্যন্ত সারাদিন অবসর। এমনি সময় কখনও ওর প্রিয় সাদা কাকাতুয়া দু’টোরসাথে খেলে, কখনও বাগানে ঘুরে ফিরে, কখনও আইভিলতা আর বাটারকোপের ঝোপে বসে আকাশ দেখে সময় কাটে ওর। ডিভিডিও প্লেয়ার অন করে মিউজিক শুনে কখনও। কিন্তু আজ মিউজিকের করুণ সুর ওর বেদনাসিক্ত মনে কেমন অস্থিরতা আর অসহায়ত্বের অনুভূতি সৃষ্টি করছে। সারা পৃথিবী কেমন ধূসর, আনন্দহীন মনে হচ্ছে। মিউজিক অফ করে তাই নোটবুকটা বের করে বসেছে। দু’ ফোঁটা নোনা জল টপ করে পড়ল সাদা পাতায়। চোখ মুছে লিখতে লাগলো আজকের অনুভূতি।

‘স্কুলে আজ প্যারেন্টস ডে ছিল। লায়লা, এলিন, রাওয়ান, জোসেফ, টিমোথি, টমাসসহ সব শিক্ষার্থীদের কারো বাবা, কারো মা, কারো বাবা-মা দু’জনেই এসেছেন। কেউই আসেনি এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যাও অনেক। কিন্তু ওর মতো স্কুলসেরা ছাত্রীর হয়ে কথা বলার, অনুভূতি পেশ করার, পরামর্শ দেয়ার বা ‘বেস্ট প্যারেন্টস অব দ্যা ইয়ার’ পুরস্কার গ্রহণ করার মতো কেউ যখন দাঁড়ালো না; তখন হৃদয়ের গহীন প্রদেশটা ফাঁকা গেল ওর। না চাইতেই সব পেয়ে যাওয়া সত্ত্বেও দুনিয়াটা সম্পূর্ণ শূন্য আর অর্থহীন মনে হতে লাগলো ওর কাছে। প্যারেন্টস ডেতে স্কুলে সবসময়ই উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়, কিন্তু দিনটা ওর কাছে মূল্যহীন। অবশ্য এ দিনটাতে লায়লার বাবা- মা মিস্টার এ্যান্ড মিসেস ইউসুফের সাথে দেখা হয়। তারা খুব ভালোবাসেন সোফিয়াকে। আমিনা ইউসুফ- লায়লার মাম- সোফিয়াকে বুকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু একে দিলেন আজ। ভালো করে পড়ালেখা করতে বললেন। শরীরের যতœ নিতে বললেন। মুখখানা শুকনো দেখে নিয়ে আসা হাতে বানানো কেক আর স্যান্ডউইচ খাইয়ে দিলেন জোর করে। আবেগে চোখে পানি চলে এসেছিল ওর। ইস্ এমন আদর কতদিন পায়নি ও! লায়লা তুমি কত ভাগ্যবান!!’- নোটবুকে লিখে সোফিয়া।

চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে, ঈশ্বর যদি ওকে আংকেলের মতো ড্যাড আর আন্টির মতো একটা মাম দান করতেন, পৃথিবীর আর কোন কিছুর দরকার হতোনা ওর। লায়লাকে একদিন বলেছিল সে কথা। শুনে লায়লাকে কেমন গম্ভীর দেখাল, বলল- তোমার মনে খুব দুঃখ, সোফিয়া? দেখ মন খারাপ করনা- হাত দিয়ে সোফিয়ার এলোমেলো চুলগুলো সরিয়ে দেয় লায়লা- মন খারাপ করলে তো সমাধান হবেনা, শুধুই কষ্ট পাবে। আজ হয়তো সৃষ্টিকর্তা তোমাকে দুঃখ দিয়েছেন,একসময় তিনি সুখে তোমার জীবন ভরিয়ে দিবেন। জীবনের স্ট্রাগলটা সৃষ্টিকর্তার একটা এক্সাম মনে কর। উৎরে যেতে পারলে দুখের সময়গুলো সব তিনি সুখ দিয়ে ভুলিয়ে দিবেন, দেখ। তিনি চাইলেই তো তোমাকে সব দিতে পারতেন তাই না?- পুরো বড় মানুষি ভঙ্গিতে দাদুর শিখানো কথাগুলো সোফিয়াকে বুঝায় লায়লা। ‘সব কিছু’ কথাটা কয়েকবার আওড়ালো সোফিয়া। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ায় ও। লাঞ্চ আওয়ারে কল করছেন হাউস কিপার জেনিফার আন্ট। দরজা দিয়ে বের হতেই থমকে দাঁড়াল। ল্যান্ডিংয়ে সুবিশাল পোট্রেটে গ্রুপ ফটোটার দিকে চোখ পড়ল। দুই বছরের ওকে কোলে নিয়ে সোফায় বসে আছে মাম আর ড্যাড। চোখ ফিরিয়ে নিয়ে দ্রুতপায়ে ডাইনিংয়ে নেমে এল। সুদৃশ্য ওক কাঠের সাজানো ডাইনিং টেবিলে ও একাই। পুরো টেবিলের উপর একবার চোখ বুলিয়ে প্লেটে অল্প কিছু রাইস নিল সোফিয়া। পাশে দাঁড়িয়ে খানিকক্ষণ দেখে এটা ওটা নিতে বলে কাজে চলে গেলেন জেনিফার আন্ট। ওর জন্মের আগে থেকে এ বাসায় আছেন স্বপরিবারে। সোফিয়াকে দেখা থেকে শুরু করে সুবিশাল বাড়িটার দেখাশোনার দায়িত্ব তার। দু’টো মুখে দিয়ে উঠে পড়ল ও। কিছু খেতে ভালো লাগেনা ওর।

রাতে প্রাইভেট টিচারের কাছে পড়া শেষ করে রুমে এসে কমিকস বই বের করে বসল সোফিয়া। ৬০ ইঞ্চি এলসিডি মনিটরটা অন করে রিমোর্ট ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে খানিকক্ষণ জিওগ্রাফী চ্যানেল দেখল। লাল নোটবুকটা নিয়ে বসল একসময়। সাপারের কল আসতেই ইন্টারকমে নিষেধ করে দিল। নাহ্ কিছুতেই থামছেনা আজ অশান্ত মনটা। একটা অপ্রাপ্তি, একটা না পাওয়ার দু:খবোধ হৃদয়ের আঁকা বাঁকা পথ বেয়ে নিত্য তড়িতাহত করে ওকে। যতই বড় হচ্ছে, যতই বুঝতে শিখছে জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা ততই বাড়ছে। মাঝেই মাঝেই ব্যাকুল হয়ে উঠে মনটা। কিসের অভাব ওর? দেয়ালে সোনার ফ্রেমে বাঁধানো ওয়েস্ট মিনিস্টার এ্যাবির পোট্রেটটা আলো পড়ে জ্বলজ্বল করছে। কাবার্ডের উপর এ্যাকুরিয়ামে জলকেলি খেলছে এ্যালিফ্যান্ট নোজ আর গোল্ডফিশ। বেড সাইডের উপর রাখা রূপোর খাঁচায় খুঁটে খুঁটে দানা খাচ্ছে সাদা কাকাতুয়া জোড়া। টক্ টক্ করে শব্দ হচ্ছে। সুদৃশ্য ওয়াল ক্যাবিনেটে সাজানো ক্রিসমাসের স্যুভেনিরগুলো। টেবিলের উপর নতুন মডেলের পাথর বসানো এ্যালার্ম ক্লকটা টিকটিক করে বেজেই চলেছে। জানালা দিয়ে বাইরে তাকায় ও। আলো ঝলমলে নগরীর বুকে টেমসের তীরে দাঁড়ানো প্রাসাদোপম বাড়ি ওদের। বিশাল সিংহদরজা পাহারা দেয় গোমড়ামুখো জনা কয়েক গেটম্যান। ওর কাছে কেউ আসতে চাইলে সবার আগে ড্যাডকে ফোন দেয় তারা। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় এতটুকু ফাঁক রাখেনি ড্যাড। চাওয়ার আগেই সব কিছুর ব্যবস্থা ওর জন্য। ড্যাডের এতো এতো সম্পত্তি শুধ্ ুওর একার জন্যই। লন্ডনের শীর্ষ কেটিপতিদের সারিতে নাম ওর ড্যাড মিস্টার উইলিয়াম পার্কারের। ওর নিজস্ব ল্যান্ড ক্রুজার যখন ওকে স্কুলের গেটে নামিয়ে দেয় ঈর্ষার চোখে তাকায় ফ্রেন্ডরা। সব ...বই তো আছে ওর। মাম থাকলে কি ওকে এখন মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিতেন? জোর করে মুখে তুলে খাইয়ে দিতেন? কল্পনায় দেখে ও। পিপ্ ... পি..প পিপ, হর্ণের শব্দে চিন্তায় ছেদ পড়ে সোফিয়ার। চমকে ঘড়ির দিকে তাকায় ও। রাত ২ টা! কখন এত রাত হলো টেরই পায়নি ও!! জানালা দিয়ে নিচের গাড়ি বারান্দার দিকে তাকায় সোফিয়া। ড্যাড এসেছেন। দীর্ঘশ্বাস বের হয় বুক চিরে। ভাগ্য ভালো হলে ব্রেকফাস্টের সময় ড্যাডের সাথে দেখা হতে পারে। ভালো মন্দ জিজ্ঞাসা করতে পারেন। নিচতলা থেকে প্রতিদিনকার মতো হৈ চৈ ভেসে আসছে। দোতলায় উঠে এল পদশব্দ। দরজা ফাঁক করে ড্যাডকে টলতে টলতে বেডরুমে ঢুকতে দেখল। লাইটটা অফ করে দিয়ে দক্ষিণের কাঁচের দেয়ালের কাছে গিয়ে দাঁড়ায় ও। বুকের কাছটায় জড়িয়ে ধরে রেখেছে নোটবুকটা। কাঁচে বা’হাত রাখে। রাতের নিকষ কালো টেমসের বুক চিরে দু’একটা বোট চলছে, তাদের সার্চলাইট জ্বলছে নিভছে। তার ওপারে আলো ঝলমলে নগরী। এই মাঝরাতেও কত আলো চারিদিকে! কত আনন্দ উৎসব!! কোনকিছুই স্পর্শ করেনা ওকে। আর সবার মতো খুশির আকাশে উড়তে যেয়ে ওর ছোট্ট মন কিসের দেয়ালে যেন বাঁধা খেয়ে বারবার ফিরে আসে। পুরো পৃথিবীটাকে মিথ্যা মনে হয় ওর কাছে। রোবট নগরীর রোবটিক ব্যস্ততা কেন হৃদয় সমুদ্রে সুনামী ডাকে জানেনা ও। কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারেনা সোফিয়া। যেমন পারেনা শত চেষ্টা করেও পোট্রেটের বাইরে মামের আর কোন ছবি আঁকতে। মনের আকাশে টানা হেচড়া করেও আনতে পারেনা মামের মধুময় স্পর্শের কোনো স্মৃতি। হাজারো আকাক্সক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিয়ে ড্যাডকে বলতে পারেনা - “ ড্যাড বেশি না শুধু একটা দিনের জন্য তোমাকে কাছে চাই।” এত এত ব্যর্থতা বিক্ষুব্ধ করে তোলে ওকে। উফ্ গড! কি দরকার এত নিষ্ঠুর ব্যস্ততাময় পৃথিবীর ?‘আমি একটু স্বর্গের ভালোবাসা চাই। একটু ভালোবাসা আর আদর!”- ফুঁফিয়ে উঠে সোফিয়া। গ্রিলে মাথা রেখে অঝোরে কাঁদতে থাকে। মামের প্রতি অভিমানে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে ও। অতৃপ্ত হৃদয়ের হাহাকার অশ্রু হয়ে গড়িয়ে পড়ে গণ্ডদেশ বেয়ে।

পরদিন সারাক্লাস চুপ করে কাটালো সোফিয়া। কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করলে ছোট করে জবাব দিল। লিসা ম্যাম খুব গভীর দৃষ্টিতে পরখ করছিলেন ওকে- আ’ ইউ সিক সোফিয়া? ‘ওহ্ নো ম্যাম’- বলে নড়েচড়ে বসে মুখে হাসি টানার চেষ্টা করল ও। ছুটির পর সবার আগে ক্লাস থেকে বেড়িয়ে মাঠে এসে দাঁড়াল। সারি দিয়ে বের হচ্ছে ওদের ফোর্থ গ্রেডের স্টুডেন্টরা। লাইন থেকে বের হয়ে সোফিয়ার দিকে ছুটে এল লায়লা- ‘কেমন আছ সোফিয়া?’ লায়লাকে জবাব দেবার আগেই কাঁধে কারো হাতের ছোঁয়া পেয়ে পিছন ফিরল সোফিয়া। ‘হাই সোফিয়া ! কেমন আছ তুমি?’- দাঁত বের করে হাসছে বব। ওদের চেয়ে দুইক্লাস উপরে পড়ে। ‘হুম্, ভালো’ - বলেই মুখ ফিরিয়ে নিল সোফিয়া। কোমরে হাত রেখে দাঁড়াল বব- ‘কি হলো তোমার? মন খারাপ বুঝি?’‘না’ - কাটছাট জবাব সোফিয়ার। গাজর রঙা চুল ঝাঁকালো ছেলেটা- ‘তাহলে কি হয়েছে বলবে তো!’ ‘কিছু হয়নি।’-প্রচণ্ড বিরক্ত লাগছে ওর। লায়লাও বিরক্তিভরা চেহারায় দাঁড়িয়ে দেখছে। সিনিয়র বলে কিছু বলতে পারছেনা। ‘ঠিক আছে শোন’ - এবার আসল কথা বলছে এমন ভঙ্গিতে বব বলল- ‘কাল মার্কিন এ্যম্বাসেডরের অনারে আমাদের বাড়িতে ডিনার পার্টি আছে। বাবার ফ্রেন্ডরা সব আসবে। আমার ফ্রেন্ডদেরও ইনভাইট করেছি। সো তুমিও আসবে।’ ‘কেন? আমি যাব কেন?- চকিতে ববের দিকে তাকাল সোফিয়া। চোখ নাচাল বব- ‘তুমি আমার ফ্রেন্ড তাই।’ ববের কথা গা জ্বালিয়ে দিচ্ছে সোফিয়ার- ‘আমি তোমার ফ্রেন্ড হলাম কবে থেকে?’‘অলটাইমই ছিলে, আছো’- হি হি করে হাসলো বব। রেগে গেল সোফিয়া- ‘উফ্! গেট আউট বব! আমাকে বিরক্ত করনা, প্লিজ!!!’ ‘ওকে। আমি যাচ্ছি। তোমার অপেক্ষায় থাকবো।’- বলতে বলতে চলে গেল ডিসগাস্টিং ছেলেটা। অসহ্য!- স্বগতোক্তি করল সোফিয়া। তুখোড় রাজনীতিবিদ বাবার একমাত্র ছেলে বব। সবসময় স্কুল রুলস অমান্য করলেও কারো কিছু বলার নেই ওর বিরুদ্ধে। খুব টাকার গর্ব।‘এস সোফিয়া ’ -লায়লা ওকে হাত ধরে টেনে নিয়ে সেইন্ট পিটার্স চত্বরে এসে বসল। গাড়ি আসা পর্যন্ত ওয়েট করবে দু’জন। ‘সোফিয়া আজ তোমার মন কি অনেক খারাপ? নাকি শরীর খারাপ?’- কাঁধে হাত রেখে জানতে চায় লায়লা। মলিন হেসে লায়লার দিকে তাকায়ও। স্কার্ফ পড়া লায়লার সুন্দর মুখশ্রীতে মাখন কোমল সহানুভূতির দৃষ্টি। ওর হাত ধরে সোফিয়া - ‘তুমি কত সুখী লায়লা!!! তোমাকে আমি খুউব পছন্দ করি।’ ‘দূর মেয়ে কি সব বলছ তুমি? তোমার কি হয়েছে? তাই বল’- ওর হাত মুঠির মধ্যে নেয় লায়লা। দূরের রেইন ট্রি গাছের দিকে তাকায় সোফিয়া। কয়েকটা স্প্যারো উড়াউড়ি করছে। হালকা বাতাসে দোল খাচ্ছে বার্চ আর উইলোর পাতা। কম্পাউন্ডে খেলাধুলা করছে ছেলে মেয়েরা। আনমনে মাথা নাড়ে ও- ‘লায়লা ! শরীর খারাপ হলে আমার ডক্টরের অভাব হবেনা। আমার ড্যাড সেরা ডক্টর ডেকে আনবেন।’‘তাহলে?’ - জিজ্ঞাসু দৃষ্টি লায়লার। একটা ঘাসের ডগা ছিড়ে সোফিয়া- ‘আমার মন খুব খারাপ সোফিয়া। আমার কিছু ভালো লাগেনা।’‘ও এই ব্যাপার?’- সোজা হয়ে বসে লায়লা- ‘তা মন খারাপ কেন ? মামের কথা মনে পড়েছে বুঝি? কি করবে বল ? প্রভুর পৃথিবীতে সবাই তো আর চিরদিন.. .. ..’-ওর কথার মাঝে থামিয়ে দেয় সোফিয়া- ‘লায়লা! তুমি জান আমার মাম মারা গেছেন। কিন্তু তিনি বেঁচে আছেন। আর আমার কষ্টটা এখানেই।’‘মানে ? কোথায় তিনি?’- বিস্ময়ে হা হয়ে গেছে লায়লা। ‘বুদ্ধি হওয়ার পর মামকে দেখিনি আমি’- মাথা নাড়ে সোফিয়া- ‘ন্যানির কাছে শুনেছি মামের অফিসের এক লোক নিয়ে গেছে মামকে। আমার তিন বছর বয়সে আমাকে রেখে চলে গেছেন মাম্।’- ধীর হয়ে আসে ওর কণ্ঠ- ‘আর ড্যাড.. .. ..! আমাকে দেবার মতো তার সময় নেই!!’- দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কাঁধ থেকে ভারী ব্যাগটা নামিয়ে রাখে। লায়লা নীরবে তাকিয়ে আছে, মুখটা মলিন হয়ে গেছে সোফিয়ার কষ্টে। আবার বলে সোফিয়া- ‘জান লায়লা, আমার যখন খুব ইচ্ছা করে ড্যাডের কাছটিতে বসে গল্প করার, তার সাথে হাসতে হাসতে ব্রেকফাস্ট করার; তখন ঘুম ভাঙ্গতেই দেখি তিনি ল্যাপটপের সামনে। হাজারো মেইল আর ফোন রিসিভ শেষে যখন ডাইনিংয়ে নেমে আসেন, তখন গেটে তার গাড়ি ওয়েট করে। আমার দিকে তাকানোরও সময় থাকেনা।’- অকস্মাৎ ভারী হয়ে উঠলো ওর কণ্ঠ- ‘এভাবে মানুষ বেঁচে থাকতে পারে? তুমিই বল লায়লা ? তোমরা জানো আমার কোন অভাব নেই। কিন্তু টাকাই কি সব? বল ! আমি একটু প্রশান্তির জীবন চাই লায়লা! একটু প্রশান্তি!’- ফুঁফিয়ে উঠে সোফিয়া।

সোফিয়ার মনগলা ঝড়োবাতাস ওর মনের বেলাভূমিতেও ঝাপটা দিচ্ছে। মনে চিন্তার ঝড় বইছে। সোফিয়ার জন্য কি ওর কিছু করার আছে?বাবা সবসময় শিখিয়েছেন কিভাবে মানুষের কষ্ট দূর করা যায় সেই চেষ্টা করবে। বাবার চেহারাটা ভাবে একবার লায়লা। রিলিজিয়াস মিনিস্ট্রির একজন বড় কর্মকর্তা তিনি। অফিস থেকে ফিরে নিয়মিত পড়তে বসান ওদের দুই ভাইবোনকে। স্যারের দেয়া পড়া শিখছে কিনা ওরা খোঁজ নেন। কত্ত কিছু শিখান! মামণি আর দাদীমা তো সবসময় আগলে রাখছেন। অথচ সোফিয়া?সব থাকতেও ওর কেউই নেই??? বাসায় যেয়ে দাদীমাকে সব খুলে বলবে চিন্তা করে ও। সোফিয়া!- ডাকে লায়লা। মাথা উঁচু করে তাকায় সোফিয়া। দু’ চোখে ব্যথার নির্ঝরিণী। হাত দিয়ে ওর চোখ মুছিয়ে দেয় লায়লা- কেঁদনা সোফি! দেখি আমি তোমার জন্য কি করতে পারি?বড়মানুষী কন্ঠস্বর ওর। টিস্যু পেপারে চোখ মুখ মুছে সোফিয়া- তুমি কি করবে বল? পুরো এই তেরটা বছরই আমার কাছে অসহ্য। আমি মরে যাব লায়লা.. .. .. ‘ছিহ’্- ওর মুখে হাত চাপা দেয় লায়লা- ‘ এভাবে খারাপ কথা বলেনা সোফিয়া!’ ‘আমার বেঁচে থাকতে ভালো লাগেনা- মাথা নাড়ে সোফিয়া- শোন লায়লা! আমার একটা ক্রিমসন নোটবুক আছে। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আমার সব কথা ওখানে লেখা আছে। আমি মরে গেলে ওটা তুমি রেখে দিবে তোমার কাছে ঠিক আছে?’ ‘চুপ্ , অনেক দিন বেঁচে থাকবে তুমি’- কৃত্রিম ধমক দেয় লায়লা। খানিক থেমে বলে- ‘আমি একটা পরামর্শ দিতে পারি। তুমি শুনবে?’ সোফিয়ার চোখের দিকে দৃষ্টি ওর। কোনো ঔজ্জ্বল্য জাগেনা সেখানে। ‘কি বলবে? বল’- নিরস মাথা ঝাঁকায় সোফিয়া। ‘আমার দাদীমা বলেন’ ধীরে ধীরে বলে চলে লায়লা - ‘নিরাশা ও কষ্টের মুহূর্তে একজনের কথা ভাবলে তিনি মন প্রশান্ত করে দেন। তিনি হলেন আমাদের সৃষ্টিকর্তা। তিনি কখনই আমাদের ছেড়ে যান না। যার কেউ থাকেনা তার তিনি তো থাকেন! সব অন্ধকারে আলো ফোটানোর শক্তি আছে তার।’

‘ কই ? আমি তাকে দেখিনা তো? তাকে কোথায় পাওয়া যায়? গীর্জায়? ওখানে গিয়েও কোনো লাভ হয়নি আমার- কপাল কুঁচকিয়ে বলে সোফিয়া। আবার বলে লায়লা- ‘তাকে দেখা যায় না। অনুভবে পাওয়া যায়। তাকে পেতে হলে তার কথা স্মরণ করতে হয়, তাকে ডাকতে হয়, তার কাছে চাইতে হয়। তার বলে দেয়া নিয়ম অনুযায়ী ঘরে বসে ডাকলেও তাকে তুমি পেতে পারবে। কোথাও যাওয়ার দরকার হবেনা। আমি একটা বই দিতে পারি তোমাকে ওটা পড়লে সহজেই তাকে কাছে পাওয়া যাবে।’ এবার কিছুটা আশান্বিত মনে হলো সোফিয়াকে। ‘আর’ - খানিক ভাবে লায়লা- ‘আমাদের সানডে স্কুলের মি: আহমদের সাথেও কথা বলা যায়। খুব সুন্দর করে সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে বক্তৃতা দেন তিনি।’ ‘হ্যালো! মিস্ সোফিয়া পার্কারের ড্রাইভার জানতে চাইছেন তিনি এত দেরি করছেন কেন?’- ইউনিফর্মধারী বাদামী চুলো গার্ড এগিয়ে এল। উঠে দাঁড়ালো দু’ বান্ধবী।

দু’দিন পর। বিকেলে ছাদে বসে টেমসের নীল ঢেউ দেখছে সোফিয়া। মনের নদীটায় তুফান ছুটেছে ওর। এ ক’দিনরাতে ঘুম হয়নি। দু’চোখ লাল হয়ে আছে। মাথা ঝিম ঝিম করছে। গত পরশু সন্ধ্যায় বব এসেছিল। জোর করে নিয়ে গিয়েছিল ওদের পার্টিতে। এ্যামেরিকার রাষ্ট্রদূতসহ সরকারি উঁচু পদের সব লোকজন আমন্ত্রিত ছিলেন। ববের ফ্রেন্ডদের জন্য আলাদা এ্যারেঞ্জমেন্ট ছিল। পার্টির পরিবেশ ওর কখনই ভালো লাগেনা। পার্টির দৃশ্যগুলো মনে হলে এখনও ওর মাথার কোষগুলো জ্বলছে। ঘৃণায় রি রি করছে শরীর। বোতলের পর বোতল শেষ হওয়া হুইস্কি - বিয়ার আর মাথা ঘোড়ানো বলড্যান্সের মাঝে দেশের বিখ্যাত, প্রখ্যাত সব গুণীজনরা যেভাবে বিলীন হয়ে গেলেন সোফিয়ার কাছে তা রীতিমত বিস্ময়কর ঠেকেছে। রাজনীতির আর অর্থনীতির মঞ্চের তুখোর নেতারা এখানে অন্যরকম ঘরোয়া আনন্দে বুঁদ হয়ে রইলেন ক’টা ঘণ্টা। বলরুমে সোফিয়াকে বারবার ইনভাইট করছিল বব। ও গ্যাট হয়ে বসে বারবার বাসায় যাওয়ার সুযোগ খুঁজছিল। একসময় ওকে হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় বব। বলরুমে ডুয়েল ড্যান্সের তখন তুমুল পর্যায়। ড্রামের তালে তালে জোড়ায় জোড়ায় বিভক্ত হয়ে গেছে আমন্ত্রিত জনেরা। ‘দেখ, তোমার যত সব আদিখ্যেতা! ওই যে ওদিকে তাকাও’- ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে বব। ববের তাক করা আঙ্গুল বরাবর তাকিয়ে হা করে চেয়ে থাকে সোফিয়া। ড্যাড্!!! জোড়ার অপরজনকেও চেনা চেনা ঠেকেছে ওর কাছে। জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপিকা। গুরুজনদের কণ্ঠলগ্ন হয়ে থাকার মুহূর্তগুলো আর সহ্য করতে পারলনা সোফিয়া। ববের হাত ছাড়িয়ে দৌঁড়ে বেরিয়ে আসে ও। কান্না উথলে আসছিল ওর। একটা টেক্সি ডেকে চলে আসে পার্কার কনকর্ডে। সারা রাত এপাশ ওপাশ করেছে বিছানায়। স্কুলে কোনমতেই মন বসাতে পারেনি এ দু’দিন।

 à¦†à¦œ সকালের কথা মনে হলো। সোফিয়ার বিষন্মতা দেখে খুব কষ্ট পাচ্ছিল লায়লা। ছুটির পর ওদের সানডে স্কুলে গিয়েছিল সোফিয়া। খুব সুন্দর স্কুল কমপ্লেক্স। পরিচালক মি.আহমদকে দেখে ওর মনে হয়েছে এনজেল বোধ হয় এরকম হবে। কি মধুর তার কথা। কমপ্লেক্সে অনেক ছাত্র-ছাত্রী পড়া শোনা করছে। আবাসিকও আছে। ওখানকার ছাত্রীরা ওর চিবুক ধরে আদর করে দিল, নাম জানতে চাইল। মি. আহমদ ওর সব কথা শুনলেন। কিছু পরামর্শ দিলেন। তিনিও লায়লার দেয়া বইটা পড়তে বলেছেন, আরও বলেছেন - যখন খুশি তখন তার স্কুলে চলে যেতে। তিনি অনেক ছাত্রছাত্রীর গল্প করলেন যারা একসময় সোফিয়ার মতো এক বুক প্রশান্তির সন্ধানে এখানে এসেছিল। তারা সবাই এখন এখানে আছে। আসার সময় মিসেস আহমদ ওকে অনেকগুলো সুন্দর কিছু কলম গিফট করেছেন।

‘ম্যাডাম !’- ডাক শুনে বাস্তবে ফিরে আসে সোফিয়া। সন্ধ্যার নাস্তার ট্রলি ছাদেই নিয়ে এসেছে ওর সার্বক্ষণিক পরিচারিকা লিন্ডি। ট্রলির দিকে তাকালো ও- বার্গার, ফ্রাই চিকেন, ডেজার্ট আর স্যুপ। সবই ওর প্রিয়। কিন্তু মাথা নাড়ল ও - ‘প্লিজ লিন্ডি এখন খাবনা, ভালো লাগছে না। আর আন্টকে বলে দাও, আজ স্যারের কাছে পড়ছিনা আমি।’

লিন্ডি ট্রলি ঠেলে চলে যায়। সোফিয়াও নিচে নেমে আসে। অশান্ত হৃৎপিণ্ডটা গলার কাছে উঠে আসতে চাইছে। ধকধক করছে বুকের ভিতর। রুমে এসে চোখ বুজে শুয়ে রইল কোনো রকম বিছানায়। খানিক পরে উঠে বসল। ববদের বলড্যান্সের ছবিগুলো জ্বলছে নিভছে মনের স্ক্রিনে। সারাদিন কিছু খায়নি ও। কিছু নামছেনা গলা দিয়ে। অভিমান, প্রচণ্ড অভিমান বিপর্যস্ত করে ফেলছে ওকে। এই কি ড্যাডের ব্যস্ততার নমুনা ? ড্যাডের দিনলিপিতে সবই আছে, নেই শুধু সোফিয়ার জন্য একচিলতে সময়?মাম্ .. ..। মামও একি ব্যস্ততায় ওকে পর করেছে? ঘৃণায় কুঁকড়ে আসে অন্তর। পৃথিবীতে ওর অস্তিত্ব এতটাই মূল্যহীন ?

সানডে স্কুলের শান্ত দৃশ্যপট ভাসছে চোখের সামনে। হঠাৎ কি মনে হতেই ড্রেসারের উপর রাখা বইটার দিকে তাকাল। লায়লা সেদিন দিয়েছে। উত্তেজনায় খেয়াল হয়নি। উঠে বসল ও। লায়লার শিখিয়ে দেয়া পদ্ধতিতে ওয়াশরুম থেকে হাতমুখ ধুয়ে এল। টাওয়েল দিয়ে মুখ মুছে বইটা হাতে নিয়ে সোফায় বসল। ধীরে ধীরে উল্টাল পৃষ্ঠা। জ্বলজ্বল করে উঠলো একটি লাইন- “ ইন দ্যা নেইম অব আল্লাহ। মোস্ট গ্রেসিয়াস, মোস্ট মার্সিফুল।” কয়েকটা পাতা উল্টাল। মুসলমানদের ভাষা আরবীর পাশে লেখা ইংরেজিগুলো মন দিয়ে দেখল। এক জায়গায় চোখ আটকে গেল ওর। কালো কালিতে লেখা অক্ষরগুলো-

“And those who disbelieved say, Why has a sign not been sent down from His Lord? Indeed Allah leaves astray whom he wills and guids to Himself whoever turns (to Him).

Those who have belive and whose hearts are assured by rememberance of Allah. Unquestionably, by the rememberence of Allah hearts are assured. Those who have belived done righteous deeds a good is theirs and agood return.” (Sura Ra’ad 27-29)

অদ্ভুত! কেমন ভালো লাগা কথা!! একজন সৃষ্টিকর্তা যাকে লায়লারা আল্লাহ বলে তার স্মরণে প্রশান্তি আসবে অন্তরে? লায়লাও বলেছিল এ কথা। আরো বলেছিল দিনে ওরা পাঁচবার স্মরণ করে ওদের আল্লাহকে। চোখ বন্ধ করে ভাবার চেষ্টা করে একজন অপরিচিত সত্ত্বাকে যিনি ওকে সৃষ্টি করেছেন। মুসলমানদের আল্লাহ কি ওকে গ্র্যান্ট করবেন ? ওর মতো মেয়ের অন্তরকেও ভরে দিবেন প্রশান্তির ভাণ্ডারে। এ ব্যাপারে কোনো ধারণাই নেই ওর। লায়লার কাছে আরো শুনে দেখবে। আকাশের দিকে তাকায় সোফিয়া। ফুঁপিয়ে উঠে এক সময়- ‘লায়লার প্রভু! আমার মনটা ভালো করে দাও। আমার অস্থিরতা দূর করে দাও। আমি যে আর টিকতে পারছিনা।’- অনেকক্ষণ কাঁদলো সোফিয়া। কেঁদে বুকটা হালকা হলো একসময়। শরীর আর নিজের ভার বইতে পারছেনা। নেতিয়ে পড়ল বিছানায়। ধরে এসছিল চোখের পাতা। হঠাৎ হৈ চৈ এ ঝাড়া দিয়ে উঠে বসল। ঘড়ির দিকে তাকাল। রাত ১.০০ টা। দু’ ঘণ্টা ঘুমিয়েছে ও? মাথাটা একটু ঝরঝরে লাগছে টের পেল। নিচে হর্ণ দিচ্ছে ড্যাডের গাড়ি। শব্দ আজ বেশিই মনে হচ্ছে। বিছানা থেকে নেমে জানালায় এসে দাঁড়াল ও। স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে নিচের ল্যান্ডিং। গাড়ির দরজা খুলে ধরেছে ড্যাডের ম্যানেজার মিস্টার হুভার। গাড়ি থেকে নামল ড্যাড, তারপর আরেকজন আরোহী। হাত ধরে নামাল ড্যাড। সাদা গাউন পড়া মানুষটাকে চিনতে পারল সোফিয়া। মিডিয়ায় আগেই দেখেছে। আর সেদিনের পার্টিতে.. .. ..। ‘ওহ্ গড ! শেষ পর্যন্ত বাড়িটা. .. ..?-ধপ করে পড়ে গেল সোফিয়া।

পরদিন বিকাল। পার্কার কনকর্ডে চরম উত্তেজনা। সান্ধ্য পত্রিকাগুলো খবর ছাপিয়েছে-

“বিখ্যাত সফট্ওয়্যার কোম্পানির মালিক উইলিয়াম পার্কারের কন্যা নিখোঁজ।”

মেয়ের রুমে এসে দাঁড়ালেন মিস্টার পার্কার। বড় একটা ডিল পড়ে রয়েছে তার। তারমধ্যে এই ঝামেলা! চারিদিকে তাকালেন। শেষ কবে এসেছিলেন এ রুমে খেয়াল নেই। রূপার খালি খাঁচাটা চোখে পড়ল। দৃষ্টি গেল টেবিলে রাখা একটা লাল নোটবুকের উপর। একটা কাগজ বের হয়ে আছে। এগিয়ে গিয়ে আস্তে করে খুললেন। প্রথম পাতায় রাখা কাগজটার ভাঁজ খুললেন। চোখের সামনে ভেসে উঠল সোফিয়ার হস্তাক্ষর-

ড্যাড!

তোমাকে ছেড়ে আমি চলে যাচ্ছি। তোমার পার্কার কনকর্ড আমার কাছে দিন দিন অসহ্য হয়ে উঠেছিল। আর গতকালের ব্যাপারটা আমার সহ্যাতীত। তোমাকে একসময় খুব ভালোবাসতাম। তোমার ব্যস্ততাকে শ্রদ্ধা করতাম। কিন্তু বব ওয়াটসনদের পার্টিতে দেখলাম তোমাদের ব্যস্ততার কিছু নমুনা। আর কালকের বিষয়টা.. .. ..! ড্যাড্! আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। জীবনে তোমাকে বা মামকে কাউকেই তো থাকতেও পেলাম না। কিছুতেই মানতে পারছি না আরেকটি অস্তিত্বকে। আগে হলে হয়তো স্রেফ সুইসাইড করতে বাধ্য হতাম।

‘ড্যাড্!

তুমি আমাকে সব স.. ..ব দিয়েছ। কোন কিছুর কমতি ছিলনা আমার জীবনে। কিন্তু আমার খুউব বেশি প্রয়োজন ছিল একটু আদর আর ভালোবাসার। তোমার সামনে যে লাল নোটবুকটা দেখছ, ওটা আমার সবচাইতে প্রিয় বস্তু। কিন্তু নিয়ে যাচ্ছি না। ওটা তোমার জন্য দরকার। তোমার প্যালেসে আমি কেমন প্রিন্সেস হয়ে দিন কাটিয়েছি?-ওটা পড়ে তুমি জানতে পারবে।

মাম্কে দেখিনি কখনও। ন্যানির কাছে গল্প শুনেছি। দেখার বাসনা জেগেছে অনেক। তোমাকে আজ ছেড়ে যাচ্ছি। আজ আমার মনে একফোঁটা দু:খ নেই। প্রতি ক্ষণে দগ্ধকারী কষ্টের বিপরীতে আমি এক প্রশান্তির পথের সন্ধান পেয়েছি। আমার সামনে আলোর সীমানা খুলে গেছে। নতুন জীবনের পথে পুরাতনকে বিদায় জানালাম। সেই সাথে বিদায় জানালাম তের বছরের অভিশপ্ত জীবনকে। আবেগের বশে সিদ্ধান্ত নেইনি। আমাকে খুঁজতে যাবার দরকার নেই।

বিদায় ড্যাড! বিদায় পার্কার কনকর্ড!! আর কখনই হয়তো তোমাদের দেখবনা।

মে গড হেল্প আস্।

সোফিয়া।’

‘স্যার ! এফবিআইয়ের অফিসার এসেছেন। আপনার সাথে দেখা করতে চায়’- মিস্টার হুভারের ডাকে পিছন ফিরে তাকালেন উইলিয়াম পার্কার। মাথা নাড়লেন- ‘দরকার নেই। ওদের বিদায় করে দাও।’

অবাক হয়ে চেয়ে রইলেন মিস্টার à¦¹à§à¦­à¦¾à¦°Ñ à¦à¦• ঘণ্টা আগে স্যারই তাকে বলেছিলেন সার্চ পার্টি পাঠাবার কথা।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।