সংবাদ শিরোনামঃ

তুরস্কে জনতার বিজয় ** এরদোগানের নেতৃত্বে তুরস্কের জনগণ রুখে দিল সেনা অভ্যুত্থান ** সঙ্কট নিরসনে প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য ** ২০ দলীয় জোট ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র ** তুর্কী গণপ্রতিরোধে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থান ** রফতানি বাণিজ্যের নতুন চ্যালেঞ্জ : রাজনৈতিক অস্থিরতা ** মানবতাবাদী বিশ্ব ও সন্ত্রাসবাদী বিশ্বের মাঝখানে মুসলমানদের দাঁড় করিয়ে দেয়া হচ্ছে ** সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে প্রয়োজন দলমত নির্বিশেষে সবার ঐক্য : নজরুল ইসলাম খান ** তুর্কী জনগণকে অভিনন্দন ** জাতীয় স্বার্থ বনাম হুকুম তামিল করার দৌড়ঝাঁপ ** এ শিক্ষা আমাদের কোথায় ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ** দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজেও হরিলুটের অভিযোগ ** দুর্ভোগের আরেক নাম পাইকগাছার কপিলমুনি শহর ** কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসক সঙ্কট : সেবা কার্যক্রম ব্যাহত ** কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা ** ইসলামী সংস্কৃতির আলোকেই হোক ঈদ আনন্দ ** বাংলা ভাগের জন্য মুসলমানরা নন হিন্দুরাই দায়ী ** কবির বিশ্বাস ** সানজিদা তাহসিনা বেঁচে থাকবে সবার মাঝে ** জাতির নিকট রেখে গেলেন অনেক প্রশ্ন **

ঢাকা, শুক্রবার, ৭ শ্রাবণ ১৪২৩, ১৬ শাওয়াল ১৪৩৭, ২২ জুলাই ২০১৬

মনসুর আহমদ
জীবনের পড়ন্ত বেলায় শৈশব ও কিশোর জীবনের স্মৃতি বড় মধুময় হয়ে ভেসে ওঠে। শৈশব ও কৈশোর কেটেছে গ্রামের বন বাদাড়ে, নদী ধারের ঝোপ ঝাড়ে, বাড়ির পাশের হাটে মাঠে। জেলে, চাষি, কামার- কুমার ও বৈদ্যের সাথে মিলে মিশে শৈশব ও কৈশোর কেটেছে।  সে কারণে আমার রোজা, আমার কুরবানি ও ঈদের স্মৃতির সাথে মিলেমিশে আছে এ সব সাধারণ মানুষের সাথে জড়িত স্মৃতি।

আমার জীবনের প্রথম রোজা শুরু হয়েছে প্রাইমারি স্কুল জীবন শেষ হওয়ার সাথে সাথে। অনেক শিশুরা কম বয়সে শখ করে রোজা রাখে, কিন্তু আমার বেলায় তা নয়। বিধবা মায়ের একমাত্র কিশোর সন্তান হওয়ার পরেও মা স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন যে, তিনি আমার জন্য দুপুরে ভাত রাঁধতে পারবেন না। মায়ের একমাত্র আঁদুরে সন্তানের উপরে এমন কঠোর সমন জারিতে সেদিন মনে মোটেই কষ্ট পাইনি। তখন সবেমাত্র আমি প্রাইমারি স্কুল ছেড়েছি। মাকে কষ্ট দেব না। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম, তা হলে রোজাই রাখব।

জীবনের প্রথম রোজা রাখার বছরেই ঊনত্রিশটি রোজা রেখে ফেললাম। শীতের সকালে কলাই ক্ষেতে বড়দের সাথে কলাই তুলতে গিয়ে ভুলে কচি কলাই খেয়ে একটি রোজা ভেঙ্গে ছিলাম। মাসয়ালা না জেনেও অন্য কিছু না খেয়ে সারাদিন রোজা রেখেছিলাম। এরপরে জীবনের লম্বা সময় যৌবনে একবার অসুখে ভুগে দুই তিনটি রোজা ভেঙ্গেছি, আর জীবনের শেষ প্রান্তে এসে গত বছর অসুখের কারেণে ছয়টি রোজা ভেঙ্গেছি। আল্লাহ ক্ষমা করুন।  

জীবনের প্রথম রোজা শীতকালে পড়েছিল। ভোর রাতে মা ডাক দেওয়ার সাথে সাথে শীতের কাঁথা ছেড়ে চোখ কচলাতে কচলাতে মায়ের পাশে বসে পড়তাম সেহেরি খেতে। হাইস্কুলে ভর্তি হওয়ার আগে তিনবছর মার কাছে থেকে রোজা রাখার সুযোগ হয়েছিল। এই তিনবছরে সেহেরি খেতে মা আমাকে এক দ’ুটির বেশি ডাক দিয়েছেন বলে আমার মনে পড়ে না। মা আমার জন্য মাছ ভাজা ও ডাল বড়ার সাথে দৈ কলা রাখতেন। দৈ খাওয়ার সে অভ্যাস আজও আছে, সারাবছর দৈ-এর কথা ভুলে থাকলেও রোজার মাস এলেই মনে দৈ খাওয়ার ইচ্ছা জাগে। এখনও আমার বিবি তাই প্রতিরাতে সেহেরির জন্য নিজ হাতে অতি যতেœ দৈ পাতে। আমি রস করে বলি, এমন সুন্দর দৈ যখন বানাতে পার তা হলে দৈ-এর একটা দোকান খুলে দেই না। শুনে বিবি রাগ করে না, ছেলে, মেয়ে, জামাই বৌদের সামনে মুখ বুজে বুজে হাসে।

পরের বছরে রোজা রাখার স্মৃতি বেশ মজার। সে বছর খুব দুর্ভিক্ষ ছিল। বাড়ির পাশের মজিবর নামে একটি ছেলে মাকে এসে বলল, চাচী, আমাকে উপকার করতে হবে। মা জিজ্ঞেস করলেন, ‘কিরে, কী উপকার করতে হবে?’ মজিবর বলল, চাচী, আমিতো ছেপারা, কুরআন শরীফ কিছুই পড়তে জানি না। আমি রোজার মাসের রাতগুলো আপনাদের বাড়িতে থেকে মনসুর ভাইর কাছে আরবি শিখতে চাই। মা শুনে বেশ খুশি হলেন। বললেন, বেশ, আসবা। মা বাংলা লেখাপড়া জানতেন না। নওয়া মামুর কাছে মা শুদ্ধভাবে কুরআন শরীফ পড়া শিখেছিলেন। প্রতিদিন জোহরের পরে মা সাদা শাড়ি পরে বসে যেতেন কুরআন তিলাওয়াত করতে। আমি প্রায় দিন মার পাশ বসে তার কুরআন পড়া শুনতাম। আমি কুরআন পড়ার শুরুটা মার কাছে করছিলাম।

মজিবর সারাদিন এ বাজারে সে বাজারে তরকারি বেচা কেনা শেষে সেহেরির জন্য থালায় কিছু ভাত তরকারি নিয়ে এশার আগে হাজির হতো আমাদের বারান্দায়। সে আমার চেয়ে বয়সে বড় হওয়ার পরেও আমাকে সম্মান দেখাত। তাকে আমি আরবি পড়াতাম। আমি ছোট বেলা থেকে গল্প শুনতে ভাল বাসতাম। মজিবর ওর মার কাছে হাতেম তাই, গাজী কালু চম্পাবতী ইত্যাদি কাহিনী শুনে শুনে তা প্রায় মুখস্থ করে ফেলেছিল। সে আমাকে প্রতি রাতে এ সব গল্প শুনাত। আমি গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে যেতাম। মজিবর আজ আর নেই। কিন্তু তার স্মৃতি এখন মনে জেগে আছে।

সে বছর খাল বিলে বেশ মাছ পড়েছিল। বাড়ির পাশের জয়নাল ভাইর নেতৃত্বে দশ বার জন জুটে ছিলাম মাছ ধরার জন্য। আমি ছিলাম বয়সে সবার ছোট। সারাটা মাস সকাল থেকে জোহর পর্যন্ত মাছ ধরে কাটিয়ে ছিলাম। আমি ওদের সাথে থাকতাম বটে, কিন্তু তেমন কোনো কাজে লাগতাম না। আমার বেশ লজ্জা হত যখন কোনো কাজ না করেও তাদের সমান সমান ভাগ নিয়ে মার কাছে ফিরে আসতাম। আজ আর সে খাল বিলও নেই, মাছের লাফা লাফিও নেই। মাছ ধরার দলের অনেকেই আজ আর বেঁচে নেই। শৈশবের সেই স্মৃতি আজও আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়।

বড় মজা হতো ইফতারির সময়। আছরের আগ থেকেই মা চাচীরা ব্যস্ত হয়ে পড়তেন ইফতারের আইটেম বানাতে। ডালের বড়া, মলিদা বানাবার জন্য ডাল বাটা, চাল গুড়া করায় ব্যস্ত হয়ে পড়তেন তারা। সাধারণ গৃহস্থের ঘরে ছোলার রেওয়াজ খুব একটা ছিল না। ডিম, আলুর চপ বানাতে তখনও পল্লীর মানুষ শুরু করেনি। মাগরিবের আজান পড়ার সাথে সাথে পানি, মলিদা, মুড়ি ও ডাল বড়া দিয়ে ইফতার করাটাই ছিল তাদের কাছে বড় আনন্দের ব্যাপার। সাথে অনেক সময় থাকতো নিজ বাগানের পাকা কলা আর ডাব।

তখনকার দিনে গ্রামে একটা ভাল রেওয়াজ ছিল ‘রোজা খোলান’। প্রায় বাড়িতে এটা হত। সাধ্যানুযায়ী অনেক লোককে এতে দাওয়াত করা হত। এসব অনুষ্ঠানে ছোলা, খেজুর, মুড়ি ও গুড়ের শরবত পরিবেশন করা হতো। তবে মাগরিব নামাজ শেষে সবাইকে মাংস ও অনান্য সালুন দিয়ে পেট পুরে খাওয়ান ছিল রোজা খোলান অনুষ্ঠানের মূল কাজ। আমরা এসব অনুষ্ঠানে খুব মজা পেতাম। এ সময় হুজুর, মৌলভীদের কদর খুব বেড়ে যেত। আমার বড় ভাই ছিলেন মাওলানা। তাকে প্রায় রাতে সন্ধ্যায় রোজা খোলার দাওয়াত ও সেহেরিতে মিলাদের দাওয়াতে যেতে হত। মনে মনে ভাবতাম বড় হলে মাওলানা হব, তাহলে এভাবে ভালো ভালো খাওয়া যাবে। কিন্তু আমার মাওলানা হওয়ার সে আশা পূরণ হয়নি, বড় ভাইর ইচ্ছা পূরণ করতে প্রকৌশলী হয়েছিলাম।

তারাবিহ নামাজ আদায়টা ছিল আমাদের জন্য একটা মজার বিষয়। আমাদের বাড়ির সামনে ছিল এক বিরাট পুকুর। পুকুর পাড়ের প্রশস্ত চত্বরে পাড়ার ছেলে বুড়ো সবাই আসত তারাবিহ পড়তে। সূরাহ তারাবিহ হতো, ইমামতি করতেন মিয়া ভাই। আমরা ছোটরা পুরো নামাজ আদায় করতাম না; কিছু পড়েই পেছন থেকে ভেগে এসে দূরে দুষ্টুমিতে মত্ত হতাম। নামাজ শেষ হবার আগ মুহূর্তে এসে জামাতে শরিক হতাম। বেশ কয়েক বছর হলো পুকুর পাড়ের সে জায়গায় মিয়া ভাইর প্রচেষ্টায় পাকা মসজিদ নির্মিত হয়েছে। সেখানে প্রতি রমজানে খতম তারাবিহ হয়। মসজিদের পাশে তৈরি করা হয়েছে বিশাল কবর স্থান। সেখানে শুয়ে আছেন মাসহ পাড়া প্রতিবেশী ও অনেক আত্মীয় স্বজন। জীবনের পড়ন্ত বেলায় সেখানে দাঁড়াতেই মনের আয়নায় ভেসে ওঠে তারাবিহ নামাজের ফাঁকি দেয়ার স্মৃতির সাথে চলে যাওয়া লোকদের স্মৃতি, চোখ সিক্ত হয়ে ওঠে।

হাইস্কুল জীবনের শুরুতেই মাকে ছেড়ে লজিং বাড়িতে থাকতে হয়েছে। তাদের খুব আদর স্নেহ পেয়েছি। সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণীতে পড়াকালীন সময় যে বাড়িতে ছিলাম, সে বাড়িতে দুই রমজানে সুরা তারাবিহ পড়ায়েছি। সে বয়সে এমন একটি ভালো কাজের জন্য বেশ প্রশংসা কুড়িয়ে ছিলাম। এর পরে কলেজ জীবনের প্রথম বর্ষে হোস্টেল মসজিদের নামাজে প্রায়ই আমাকে ইমামতি করতে হয়েছিল।

ঈদ এলেই মনে পড়ে শৈশব কৈশোরের টুকরো টুকরো ঈদের স্মৃতি। ঈদের দিনক্ষণ নিয়ে গ্রামে প্রায়ই দলাদলি হতো। ঈদের আগের দিন সন্ধ্যায় ছেলে বুড়া সবাই জড়ো হতাম বড় পুকুর পাড়ে চাঁদ দেখার জন্য। চাঁদ দেখা না গেলে বিপাকে পড়তাম। খোঁজ নেয়া হতো কোথায় চাঁদ দেখা গেল। সিন্ধু, করাচিতে চাঁদ দেখা গেল, না পূর্ব পাকিস্তানের কোথায়, এ নিয়ে মতপার্থক্যের কারণে তখনও কোথাও কোথাও দুই দিন ঈদের নামাজ হতো। যে কারণে ঈদের আনন্দে কিছুটা ভাটা পড়ে যেত। আমাদের ঈদগাহে একবার এমনটা ঘটে ছিল। তখন গ্রামে রেডিও ছিলনা, তাই দু’একজন ছুটে যেত বন্দরে কোথায় চাঁদ উঠেছে খোঁজ নিতে। সাইজদ্দি চাচাই একাজটি বেশি করতেন। একবার তিনি বললেন, করাচিতে চাঁদ দেখা গেছে, সে মোতাবেক আমরা ঈদ গাহে নামাজ পড়তে এলাম। কিন্তু গ্রামের অন্যতম মুরব্বী গফুর শেখ রাজি হলেন না। তিনি কয়েক জনকে নিয়ে পরের দিন ঈদের নামাজ আদায় করলেন। শৈশবের সেই স্মৃতি করুণভাবে ভেসে ওঠে যখন দেখি আজও একই ভূখণ্ডে এক ঈদ দু’দিনে পালন হচ্ছে।

আমি তখন সম্ভবত প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। একবার নামাজের আগে ঈদগাহে শুরু হয়েছিল বেশ বিতর্ক তাকদির ও তদবির নিয়ে। তাকদিরের পক্ষে আবদুল (বৈদ্য) তালুকদার, বিপক্ষে হাজী সোনামদ্দী হাওলাদার। বৈদ্য পাড়ার সব মুসুল্লি আবদুল তালুকদারের পক্ষে, বাকিরা হাজী সাবের পক্ষে। এ নিয়ে কোনো হাতাহাতি হয়নি, তবে শোরগোল হয়েছিল বেশ। অবশেষে ইমাম সাহেবের কথায় বিষয়টি মিটমাট হয়ে গেল। যতটুকু মনে পড়ে, ঐ ঈদের পরবর্তী ঈদের নামাজগুলো আদায় আমাদের পুকুর পাড়ের ঈদগাহে চালু হয়, যা আজও চালু আছে।

নতুন ঈদগাহে ঈদের নামাজ আরো আনন্দময় করতে এগিয়ে এলেন আচমত আলী খান। যেহেতু ঈদুল ফিতরে সে কালে গ্রামের খুব কম বাড়িতেই ঝাল গোশত খাওয়ার অবস্থা ছিল, তাই তিনি ঈদগাহে আসা সবাইকে খাসী জবেহ করে আর পকুরের বড় কাতলা মাছ দিয়ে সবাইকে ভাত খাওয়াতেন। মাছ ধরার আনন্দটা ছিল বেশ মজার। একবার বাইশ সের ওজনের একটা কাতলা মাছ ধরা পড়েছিল জালে। কূলে তুলতে গিয়ে সে কী যে হৈচৈ। ঈদুল আজহাতে সেমাই শিরণী খাওয়ানো হতো। কিন্তু সেই রেওয়াজ আজ আর চালু নেই। আমরা ছেলের দল খুব সকালে উঠে মার বানানো গুড়ের পাকানো শিরণী ও মলিদা খেয়েই ছুটে যেতাম ঈদগাহের পাশে বড় ডেকচির রান্না দেখতে। কি যে মজা লাগত, তা বলে শেষ করা যাবে না।

ঈদটা বেশি মজার হত যখন তালই বাড়িতে ঈদের দাওয়াত পেতাম। বাড়িতে ঈদ করে পরের দিন যেতাম তালই বাড়ি। তালই সাব ছিলেন ধনী লোক। সে বাড়িতে খুব মজা করে কোর্মা পোলাও ও ফিরনী খাওয়ার ধুম হতো। দু’একদিন পরে নানী পাঠাতেন ছোট মামাকে আমাদেরকে নিতে। ছোট নৌকায় চড়ে খাল বিল পাড়ি দিয়ে হাজির হতাম নানা বাড়ি। নানী আমাদেরকে পেয়ে বেজায় খুশি হতেন। নানী নাতিদেরকে ঈদের জামা কাপড় দিতেন। মা খালারা সব একত্র হতেন। খাওয়ার চেয়ে চলত বেশি বেড়াবার আনন্দ। মা খালারা কেউই বেঁচে নেই। নানা বাড়িতে যে কবে ঈদ কাটিয়েছি তা আজ আর  মনে নেই।

ঈদুল আজহার আমেজটা ছিল কিছুটা ভিন্নতর। নামাজ শেষে নাস্তা খেয়েই ছুটে যেতাম কুরবানির গরুর পাশে। হাড় লিক লিকে গরুর গায়ে আমরা খুব আদর করে হাত বুলাতাম। গ্রামে গঞ্জে কুরবানির গোশত বানাতে বানাতে সন্ধ্যা হয়ে যেত। মা চাচীদের রান্না শেষ করতে এশা পেরিয়ে যেত। আমরা সবাই চুলার পাশে পাশে ঘুর ঘুর করতাম। রান্না শেষে মা থালায় যখন মাংসগুলো তুলে দিতেন তখনও গোশত থেকে গরম ধোঁয়া উড়ছে। হাপুস হুপুস চাউলের রুটি দিয়ে খাওয়া শুরু হতো, আর সাথে সাথে চলতো ঝালের যন্ত্রণায় হাঁ হুঁ। গরুর মাংসে কি একটু বেশি ঝাল না হলে চলে? তখন মনে করতাম কুরবানির গোশতে হাড়ের পরিমাণ বেশি থাকে, কিন্তু কেন, তা বোঝার জ্ঞান তখন ছিল না।

কুরবানির ঈদের জন্য ছাগল কেনা নিয়ে একটা ঘটনা আজও মনে হলে বেশ শরম পাই। মিয়া ভাইর হাতে মা কয়েকটি টাকা দিয়ে দুই ভাইকে পাঠালেন একটি মোটা তাজা ছাগল কিনতে। দুই ভাই বাজার ঘুরে একটি বকরী কিনে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে এলাম। বকরীটি দেখে মা মাথায় হাত দিয়ে মিয়া ভাইর দিকে তাঁকিয়ে মুচকি হেসে বললেন, “কিরে বাবা, এট কি কিন্যা নিয়া আইছ? এটা তো কয়েক মাস পরে বাচ্চা দেবে।” মা’র কতা শুনে মিয়া ভাই বোকামীর জন্য লজ্জা পেলেন বটে, তবে আমি ছাগলের বাচ্চা নিয়ে খেলতে পারব ভেবে খুশি হলাম।

গ্রামে কুরবানির গোশত বিলানো নিয়ে খুব একটা সমস্যা হতো না। কে বিলাবে! যারা কুরবানি দিত তারাতো অধিকাংশই ছিল গরিব। তবুও গরিবদেরকে কিছু বিলাতো, আর বাকিটা আত্মীয় স্বজনদেরকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়াত। সে কালেতো আর ফ্রিজ চালু ছিল না। তাই কেউ কেউ গোশত জ্বাল দিয়ে কয়েক দিন রেখে দিত। গ্রামের সাইজদ্দি চাচা সারা বছর কাজ করতো যশোহরে। সে কুরবানির সময় মাটির কলসী ভরে কুরবানির গোশত নিয়ে বাড়িতে আসত। প্রায় সময় তা নষ্ট হয়ে যেত। পরিবারের সবাই তাই খেয়ে পেটের পীড়ায় ভুগতো। শেষের বারে চাচা এই গোশত খেয়ে এমন অসুস্থ হলেন যে তাতেই মারা গেলেন। প্রতি বছর কুরবানির সময় গোশত বিলাবার সময় গ্রামের সাইজদ্দি চাচাসহ গরিব লোকদের কথা খুব মনে পড়ে।

 à¦šà¦¾à¦•à¦°à¦¿ জীবনের প্রথম দিকে একবার ঈদ পালন করতে বাড়িতে রওয়ানা করলাম। বিবি সাব গ্রামে মায়ের বাড়িতে। ভাবী ইফতারি ও সেহেরির জন্য যা যা প্রয়োজন তা দিয়ে দিলেন। তখন লঞ্চে বাড়ি যেতে হতো। সদর ঘাট থেকে লঞ্চে চড়লাম। সে কি ভিড়! যেখানে বসে পড়লাম সেখানেই গোটা রাত কাটাতে হলো।

এমনকি ভিড়ের কারণে জায়গা ছেড়ে গোটা রাত প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়া সম্ভব হলো না। ভাবীর দেওয়া ভাত গোশত সব প্রায় নষ্ট হয়ে গেল। উপায় কি! বিনা হাত মুখ ধোয়ায় সেই নষ্ট ভাত গোশত খেয়েই শেষ রোজাটি রেখে ছিলাম। সেদিন শপথ করে ছিলাম আর কোনো ঈদেই গ্রামের বাড়ি আসব না। হ্যাঁ, ঐ ঈদের পরে আমার আর কোনোও ঈদই বাড়িতে করা হয়ে ওঠেনি। মা চলে এলেন আমার কাছে। শ্বশুর বাড়িতে কোনো ঈদ করা হয় নাই। ভবিষ্যতে আর কোনো ঈদ গ্রামের বাড়িতে করা সম্ভব হবে কি না তা একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।