সংবাদ শিরোনামঃ

তুরস্কে জনতার বিজয় ** এরদোগানের নেতৃত্বে তুরস্কের জনগণ রুখে দিল সেনা অভ্যুত্থান ** সঙ্কট নিরসনে প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য ** ২০ দলীয় জোট ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র ** তুর্কী গণপ্রতিরোধে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থান ** রফতানি বাণিজ্যের নতুন চ্যালেঞ্জ : রাজনৈতিক অস্থিরতা ** মানবতাবাদী বিশ্ব ও সন্ত্রাসবাদী বিশ্বের মাঝখানে মুসলমানদের দাঁড় করিয়ে দেয়া হচ্ছে ** সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে প্রয়োজন দলমত নির্বিশেষে সবার ঐক্য : নজরুল ইসলাম খান ** তুর্কী জনগণকে অভিনন্দন ** জাতীয় স্বার্থ বনাম হুকুম তামিল করার দৌড়ঝাঁপ ** এ শিক্ষা আমাদের কোথায় ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ** দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজেও হরিলুটের অভিযোগ ** দুর্ভোগের আরেক নাম পাইকগাছার কপিলমুনি শহর ** কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসক সঙ্কট : সেবা কার্যক্রম ব্যাহত ** কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা ** ইসলামী সংস্কৃতির আলোকেই হোক ঈদ আনন্দ ** বাংলা ভাগের জন্য মুসলমানরা নন হিন্দুরাই দায়ী ** কবির বিশ্বাস ** সানজিদা তাহসিনা বেঁচে থাকবে সবার মাঝে ** জাতির নিকট রেখে গেলেন অনেক প্রশ্ন **

ঢাকা, শুক্রবার, ৭ শ্রাবণ ১৪২৩, ১৬ শাওয়াল ১৪৩৭, ২২ জুলাই ২০১৬

হারুন ইবনে শাহাদাত
১.

অনেক অনেক বছর পর যারা এই গল্প পড়ছেন। তারা হয় তো এই দুঃসময়ের কথা ভাবতেও পারবেন না। কারণ দেশে এখন বইছে গণতন্ত্রের সুবাতাস। মানুষ তাদের অধিকার পেয়েছে। বিচার বিভাগ স্বাধীন। রাজপথে জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে রাজনৈতিক দলগুলো প্রকাশ্যে মিছিল মিটিং করে সরকারের সমালোচনা করছে। জাতীয় সংসদেও হচ্ছে অম্ল-মধুর সমালোচনা। কিন্তু অনেক অনেক বছর আগের এই দিনটি কেমন ছিলো। আসুন, সেই সময়ের সাক্ষী হাসানের মুখোমুখি হই।

২.

পুবের আকাশটা আজ খুব সুন্দর । এক টুকরো সাদা মেঘ ভেসে যাচ্ছে। তার নিচে নীল আকাশের কোলে সকালের সূর্য উঁকি দিচ্ছে। হাসান জানালা দিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভোরের আকাশ দেখচ্ছে। তার কোন তাড়া নেই, মনটা খুব ফুরফুরে। সে আজ অফিসে যাবে না। অনেক দিন পর সে ছুটি নিয়েছে। এমন দিন তার জীবনে খুব একটা আসে না। অসুস্থতা অথবা জরুরি কাজ ছাড়া ছুটি কবে কোন দিন সে নিয়েছিল, মনের অ্যালবামের প্রতিটি পাতা বার বার উল্টে-পাল্টে দেখেও হাসান স্মরণ করতে পারছে না। কলিং বেলের শব্দ পেয়ে সে বারান্দায় যায়, পাঁচতলা থেকে নিচে তাকিয়ে দেখে হকার। হাসান রশিতে বাঁধা ব্যাগটা নিচে ফেলে। ব্যাগে পত্রিকা দেয়ার পর হকার ছেলেটা হাঁক দেয়,‘ উঠান।’ পত্রিকা হাতে পাওয়ায় সে ডুব দেয় পত্রিকার পাতায়।

আজ অক্টোবরের ১ তারিখ। পত্রিকার পাতা থেকে হাসানের চোখ চলে যায় দেয়ালে ঝুলানো ক্যালেন্ডারের পাতায়। না, ক্যালেন্ডারের পাতা বদলানো হয়নি। সে পত্রিকা রেখে হাত বাড়ায় ক্যালেন্ডারের দিকে, পাতা উল্টাতে উল্টাতে ভাবে, কি বিচিত্র আমাদের জীবন। ক্যালেন্ডারের একটি পাতা উল্টানোর মানে জীবন থেকে একটি মাস কমে গেলো, তারপরও মানুষ প্রতি মাসে অপেক্ষায় থাকে কবে কখন এই দিনটি আসবে। নতুন আরেকটি মাসকে স্বাগত জানাবে। কারণ সে জানে জীবন থেকে যে সময়টা চলো গেলো তার বিনিময়ে পাচ্ছে আগামী দিনে চলার শক্তি। এই পাতা বদলের আগে সে বিগত মাসের বেতন-ভাতা পাবে না,তার ভবিষ্যৎ স্বপ্ন-সম্ভাবনা সন্তানরা বড় হবে না,অভিজ্ঞতার ঝুড়িতে যোগ হবে না নতুন পালক, শেয়ারবাজার চাঙা হবে না, ব্যাংকে জমানো টাকার সাথে যোগ হবে না বাড়তি মুনাফা কিংবা সুদ। লাভের সকল যোগফল শূন্য থাকবে। এই যোগ ফলের আশায় মানুষ ভুলে যায় জীবনের বিয়োগ ফল।

চায়ের নেশা ভরা ঘ্রাণের সাথে আর একটা চিরচেনা মিষ্টি গন্ধে হাসানের ভাবনার খাতা বন্ধ হয়, সে ফিরে আসে তার চিরচেনা সকালে। তার ত্রিশ বছরের জীবন সঙ্গিনী হাসি চায়ের আয়োজন নিয়ে হাজির। হাসির সাথে হাসানের হাসি বিনিময় হয়। দু’প্রাণের এই হাসি বিনিময়ের মধ্যে জীবনের কি অর্থ আছে, তা নির্ণয় করার সাধ্য হাসানের কেন, জীবনদর্শনের বাঘা বাঘা গবেষকদেরও নেই। তবে  সে এতটুকু জানে, এই হাসির মাঝে লুকিয়ে আছে জীবন চলার শক্তি। যতদিন এই হাসি থাকবে ততদিন শত দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণা তাকে পরাজিত করতে পারবে না। মানব-মানবীর জীবনের অদৃশ্য বন্ধনের এই রহস্যেময় খেলা চলছে, সৃষ্টির আদি থেকে। অন্ততকাল চলবে।

নায়ক-নায়িকা বদল হবে, কিন্তু দৃশ্য বদল হবে না। যেদিন এই দৃশ্য বদল হবে সেদিন হয় তো বা পৃথিবী পরিণত হবে, ভালোবাসাহীন এক শ্বাপদ অরণ্যে।

 à¦šà¦¾à§Ÿà§‡à¦° কাপে চুমুক দিতে দিতে পত্রিকার পাতা উল্টায় হাসান। সাধারণ পাঠকের মতো সাদা কালো চোখে সে পত্রিকা পড়ে না। কারণ পেশায় হাসান একজন সাংবাদিক। প্রতিটি খবরেরই সে মানে খোঁজে। খবরের পিছনের খবর সে জানতে চায়। দেশে এখন চলছে বড় দুঃসময়। কারণ সব কিছু চলছে গণতন্ত্রের নামেই। সংসদ আছে, বিরোধী দল আছে, মজার ব্যাপার হলো বিরোধী দল থেকে মন্ত্রীও আছে। পত্র-পত্রিকা মিডিয়ার অভাব নেই। সংবাদমাধ্যম জগতে একটি নতুন শব্দ যোগ হয়েছে হাসানদের এই সময়,‘সেলফ সেন্সরশিপ’। এই শব্দের মানে না বোঝার অপরাধে জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক, সাংবাদিক সংগঠনের অনেক ডাকসাইটের নেতাসহ ভিন্নমতের কয়েকজন সাংবাদিক বছরের পর বছর ধরে জেলহাজতে পড়ে আছেন। হাসান সেলফ সেন্সরশিপের মানে বুঝে বলে একটি জাতীয় দৈনিকের বিশেষ প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করছে খুব সর্তকতার সাথে। খবরের পিছনের অনেক খবর জানলেও জনগণকে জানাতে পারে না। মনের গহিনে লুকিয়ে থাকা সেই খবরগুলো দুঃস্বপ্ন হয়ে ওকে যন্ত্রণা দেয়। যন্ত্রণা ভুলতে মনে মনে কবিতা আবৃত্তি করে। কবি নবারুন ভট্টাচার্যের এই কবিতা

‘এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না’ আবৃত্তি করতে করতে সে নিজের দেশকে নতুন করে আবিষ্কার করার চেষ্টা করে, ‘যে পিতা সন্তানের লাশ শনাক্ত করতে ভয় পায়

আমি তাকে ঘৃণা করি-

যে ভাই এখনও নির্লজ্জ স্বাভাবিক হয়ে আছে

আমি তাকে ঘৃণা করি-

যে শিক্ষক বুদ্ধিজীবী কবি ও কেরাণী

প্রকাশ্য পথে এই হত্যার প্রতিশোধ চায় না

আমি তাকে ঘৃণা করি-

আটজন মৃতদেহ

চেতনার পথ জুড়ে শুয়ে আছে

আমি অপ্রকৃতিস্থ হয়ে যাচ্ছি

আট জোড়া খোলা চোখ আমাকে ঘুমের মধ্যে দেখে

আমি চীৎকার করে উঠি

আমাকে তারা ডাকছে অবেলায় উদ্যানে সকল সময়

আমি উন্মাদ হয়ে যাব

আত্মহ্ত্যা করব

যা ইচ্ছা চায় তাই করব।

 

কবিতা এখনই লেখার সময়

ইস্তেহারে দেয়ালে স্টেনসিলে

নিজের রক্ত অশ্রু হাড় দিয়ে কোলাজ পদ্ধতিতে

এখনই কবিতা লেখা যায়

তীব্রতম যন্ত্রণায় ছিন্নভিন্ন মুখে

সন্ত্রাসের মুখোমুখি-ভ্যানের হেডলাইটের ঝলসানো আলোয়

স্থির দৃষ্টি রেখে

এখনই কবিতা ছুঁড়ে দেওয়া যায়

’৩৮ ও আরো যা যা আছে হত্যাকারীর কাছে

সব অস্বীকার করে এখনই কবিতা পড়া যায়

 

লক-আপের পাথর হিম কক্ষে

ময়না তদন্তের হ্যাজাক আলোক কাঁপিয়ে দিয়ে

হত্যাকারীর পরিচালিত বিচারালয়ে

মিথ্যা অশিক্ষার বিদ্যায়তনে

শোষণ ও ত্রাসের রাষ্ট্রযন্ত্রের মধ্যে

সামরিক-অসামরিক কর্তৃপক্ষের বুকে

কবিতার প্রতিবাদ প্রতিধ্বনিত হোক

বাংলাদেশের কবিরাও

লোরকার মতো প্রস্তুত থাকুক

হত্যার শ্বাসরোধের লাশ নিখোঁজ হওয়ার স্টেনগানের গুলিতে সেলাই হয়ে

যাবার জন্য প্রস্তুত থাকুক

তবু কবিতার গ্রামাঞ্চল দিয়ে

কবিতার শহরকে ঘিরে ফেলবার একান্ত দরকার।

এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না

এই জল্লাদের উল্লাসমঞ্চ আমার দেশ না

এই বিস্তীর্ণ শ্মশান আমার দেশ না

এই রক্তস্নাত কসাইখানা আমার দেশ না

আমি আমার দেশকে ফিরে কেড়ে নেব

বুকের মধ্যে টেনে নেব কুয়াশায় ভেজা কাশ বিকেল ও ভাসান

সমস্ত শরীর ঘিরে জোনাকি না পাহাড়ে পাহাড়ে জুম

অগণিত হৃদয় শস্য, রূপকথা ফুল নারী নদী

প্রতিটি শহীদের নামে এক একটি তারকার নাম দেব ইচ্ছে মতো

ডেকে নেব টলমলে হাওয়া রৌদ্রের ছায়ায় মাছের চোখের মতো দীঘি

ভালোবাসা-যার থেকে আলোকবর্ষ দূরে জন্মাবধি অচ্ছুৎ হয়ে আছি-

তাকেও ডেকে নেব কাছে বিপ্লবের উৎসবের দিন।

 

হাজার ওয়াট আলো চোখে ফেলে রাত্রিদিন ইন্টারোগেশন

মানি না

নখের মধ্যে সূঁচ বরফের চাঙড়ে শুইয়ে রাখা

মানি না

পা বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা যতক্ষণ রক্ত ঝরে নাক দিয়ে

মানি না

ঠোঁটের ওপরে বুট জ্বলন্ত শলাকায় সারা গায় ক্ষত

মানি না

ধারালো চাবুক দিয়ে খণ্ড খণ্ড রক্তাক্ত পিঠে সহসা আ্যালকোহল

মানি না

নগ্নদেহে ইলেকট্রিক শক কুৎসিৎ বিক্রিত যৌন অত্যাচার

মানি না

পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা খুলির সঙ্গে রিভলবার ঠেঁকিয়ে গুলি

মানি না

কবিতা কোন বাধাকে স্বীকার করে না

কবিতা সশস্ত্র কবিতা স্বাধীন কবিতা নির্ভীক।

চেয়ে দেখো মায়কোভস্কি হিকমেত নেরুদা আরাগঁ এলুয়ার

 

তোমাদের কবিতাকে আমরা হেরে যেতে দিইনি

বরং সারাটা দেশ জুড়ে নতুন একটা মহাকাব্য লেখবার চেষ্টা চলছে

গেরিলা ছন্দে রচিত হতে চলেছে সকল অলংকার।

গর্জে উঠুক দল মাদল

প্রবাল দ্বীপের মতো আদিবাসী গ্রাম

রক্তে লাল নীলক্ষেত

শঙ্খচূড়ের বিষ-ফেনা মুখে আহত তিতাস

বিষাক্ত মৃত্যুসিক্ত তৃষ্ণায় কুচিলা

টণ্কারের সূর্য অন্ধ উৎক্ষিপ্ত গান্ডীবের ছিলা

তীক্ষ্ম তীর হিংস্রতম ফলা-

ভাল্লা তোমার টাঙ্গি পাশ

ঝলকে ঝলকে বল্লম চর-দখলের সড়কি বর্শা

মাদলের তালে তালে রক্তচক্ষু ট্রাইবাল টোটেম

বন্দুক কুরকি দা ও রাশি রাশি সাহস

এত সাহস যে আর ভয় করে না

আরো আছে ক্রেন, দাঁতালো বুলডোজার বনভয়ের মিছিল

চলামান ডাইনামো টারবাইন লেদ ও ইঞ্জিন

ধস-নামা কয়লার মিথেন অন্ধকারে কঠিন হীরার মতো চোখ

আশ্চর্য ইস্পাতের হাতুড়ি

ডক জুটমিল ফার্নেসের আকাশে উত্তোলিত সহস্র হাত

না ভয় করে না

ভয়ের ফ্যাকাশে মুখ কেমন অচেনা লাগে

যখন জানি মৃত্যু ভালোবাসা ছাড়া কিছু নয়।

আমাকে হ্ত্যা করলে

বাংলার সব কটি মাটির প্রদীপে শিখা হয়ে ছড়িয়ে যাব

আমার বিনাশ নেই-

বছর বছর মাটির মধ্য হতে সবুজ আশ্বাস হয়ে ফিরে আসব

আমার বিনাশ নেই-

সুখে থাকব, দুঃখে থাকব সন্তান-জন্মে সৎকারে

বাংলাদেশ যতদিন থাকবে ততদিন

মানুষ যতদিন থাকবে ততদিন।’

 à¦•à¦¬à¦¿à¦° আদর্শের সাথে হাসানের  ফারাক আকাশ পাতাল। কিন্তু অনুভূতির সাথে কোন গরমিল নেই। বিচারবহির্ভূত হত্যা, খুন গুম ইত্যাদি ইত্যাদির সাথে যোগ হয়েছে জঙ্গিবাদ। সন্দেহভাজন জঙ্গিকে বিচারের আওতায় আনার আগেই ‘বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যার ঘটনায় মাস্টারমাইন্ডরা থাকছে, আড়ালে। হাসানের মনে  একটাই প্রশ্ন, এই হত্যার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কাদেরকে আড়াল করছে। তাহলে কি সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলীয় নেতার মর্যাদা হারানো নেতার অভিযোগই সত্য, যা কিছু ঘটছে সব কিছুর নাটেরগুরু সরকার এবং তার মিত্ররা। হাসানের মনের ভাবনার কালোমেঘে বজ্রপাত ঘটাতে চায়। কিন্তু না সে একা কি করবে? তাই আবার কবিতার আশ্রয়ে চলে যায়, এবার জাতীয় কবি নজরুলের কবিতা, দুটি ছত্র তাকে শান্ত করে, ‘রক্ত ঝরাতে পারি না তো একা/ তাই লিখে যাই এ রক্ত লেখা।’

৩

হাসান একটি  ছোট দোতলা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়। বাড়ি সমানে এক চিলতে বাগান। বাগানে অনেকগুলো বাহারি গাছ। হাসানের চোখ আটকে যায় একটি রক্তজবা গাছে। গাছের ডালে ছোট একটি টুনটুনি পাখি উড়ে এসে বসলো।

‘আব্বু এসেছে’ ‘আব্বু এসেছে’ কচি কণ্ঠের ডাকে তাকিয়ে দেখে তিন চার বছরের একটি মেয়ে দৌড়ে তার দিকে আসছে। পিছনে এক দেড় বছরের একটি বাবু কোলে বোরকা পরা একজন মহিলা। তারপরও অনেক পিছনে মধ্যবয়েসী একজন ভদ্রলোক। ছোট মেয়েটি কোন কিছু বোঝার আগেই তাকে জড়িয়ে ধরলো, ‘আব্বু  তুমি এত দিন কোথায় ছিলে? সেই যে সেদিন তুমি রাগ  করে ঘুমিয়ে পড়ার পর এত ডাকলাম, তুমি ফিরেও তাকালে না। সবাই বলল তুমি আল্লাহর কাছে চলে গেছো? আমি কত কাঁদলাম, কিন্তু তোমার ঘুম ভাঙলো।’ হাসান বিব্রতবোধ করেলও শিশুটিকে কোলে তুলে নিলো।

‘ভাই মনে কিছু নিবেন না, ওর বাবা নিহত হওয়ার পর তার বয়সি কাউকে দেখলেই মেয়েটি পাগলের মতো তাকে জড়িয়ে ধরে, এমন অস্বাভাবিক আচরণ করে। বাবাকে খুব বেশি ভালোবাস তো, তাই তার চলে যাওয়াকে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।’ কয়েক দিন আগে পুলিশের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত তারিকের শ্যালক বিনীতভাবে হাসানকে কথাগুলো বলল।

হাসান তার পেশাগত কাজে এসেছে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত তারিকের স্ত্রীর সাক্ষাৎকার নিতে। তারিক ইসলামপন্থী একটি রাজনৈতিক দলের নেতা ছিলেন। বিগত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। সন্ত্রাস, জনযুদ্ধ কিংবা জঙ্গিবাদের মাধ্যমে আদর্শ প্রতিষ্ঠাকে তার দল মনে প্রাণে ঘৃণা করে, এ কথা হাসানের মতো অনেক সাংবাদিকই জানে। কিন্তু সবাই এই সত্য কথাটি লিখে না। কারণ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে যারা মিডিয়ার পিছনে কোটি কোটি টাকা ঢালে তাদের পক্ষেই চলে প্রচারণার ঢল।

তারিকের পরিবার এলাকার জনগণ সবাই তারিকের পক্ষেই কথা বলল।  তার মতো দক্ষ সাংবাদিকের বুঝতে অসুবিধা হলো না, ‘আপনা মাংসে হরিণা বৈরি।’ অর্থাৎ জনপ্রিয়তাই তার কাল হয়েছে। সে বেঁচে থাকলে এলাকায় তার দলের আদর্শের প্রভাব বাড়বে. অতএব..

৪

সূর্য ডুবে গেছে অনেক আগেই। পশ্চিম আকাশের আবির রঙও মিলিয়ে গেছে। হাসান হাঁটছে। একা বড় একা সে। আজ বড় বেশি ক্লান্ত। তার বার বার মনে পড়ছে পিছনে ফেলে আসা তারিকের শিশু সন্তানদের মুখ। তার কানে এখনো বাজছে তারিকের মেয়ে তাহমিনার কণ্ঠস্বর, ‘আব্বু কেন রাগ করছো? আমি তোমার কাছে কিছু চাই না, লাল ফিতে জামা কিছু চাই না, তুমি আমাদের ছেড়ে চলে যেও না।’ আবার আসবে মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে বিদায় নিয়ে চলে এসেছে।

হাসান অনেকটা পথ চলে এসেছে। সে এখনো হাঁটছে। আকাশে  মেঘ জমেছে। মিট মিট করে জ্বলতে থাকা তারাগুলো হারিয়ে গেছে মেঘের আড়ালে। এখনই বৃষ্টি নামবে। সে পণ করেছে আজ রাতের বৃষ্টিতে ভিজবে। বৃষ্টির নির্মল বর্ষণে মনের কষ্টগুলো ধুয়ে সে নিজেও নির্মল হতে চায়।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।