সংবাদ শিরোনামঃ

বিদ্যুৎ : কোন সুখবর নেই লোডশেডিং তীব্রতর হবে ** জেনারেল মঞ্জুরকে হত্যার নেপথ্য খলনায়ক কে? ** জামায়াত নেতৃবৃন্দ যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত নন ** কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে আ’লীগ সরকারের কোরআন বিরোধী নারী নীতি ** বিশ্বকাপে বাংলাদেশের স্বপ্ন প্রলম্বিত হোক ** পাকিস্তানকে অস্থিতিশীল করার নায়ক ডেভিস ইস্যুতে পাক জনমত ও আদালতের চাপে সরকার ** ভূমিকম্প আর সুনামির পর পরমাণু আতঙ্কে জাপান ** কোরআন বিরোধী নারীনীতির অনুমোদনের পর সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় ** আশির দশক ও কবি মতিউর রহমান মল্লিক **

ঢাকা শুক্রবার ০৪ চৈত্র ১৪১৭, ১২ রবিউস সানি ১৪৩২, ১৮ মার্চ ২০১১

।। এম. মুহাম্মদ আব্দুল গাফফার ।।
শিক্ষা, সভ্যতা, শান্তি ও সমৃদ্ধির অপ্রতিদ্বন্দ্বী রূপকার ছিলেন মহানবী (সা.)। মজলুম মানুষের মুক্তি সকল জনগোষ্ঠীর সামাজিক নিরাপত্তা, সুষম বণ্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও ন্যায়ভিত্তিক বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে রাজনৈতিক নিপীড়নের হাত থেকে বিশ্বমানবতার মুক্তির পথ প্রদর্শক ছিলেন আল্লাহর রাসূল (সা.)। বিশ্ব শান্তির অগ্রদূত ছিলেন বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)। এ মর্মে আল্লাহ রাববুল আলামীন ঘোষণা করেন অমা আরসালনাকা ইল্লা রাহমাতুল্লিল আ’লামীন অর্থাৎ আমি আপনাকে বিশ্বের রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছি। মানব জীবনের সার্বিক সমস্যা সমাধানের একমাত্র মডেল হলেন রাসূলে খোদা (সা.)। পবিত্র কুরআনুল কারীমে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা যার সম্পর্কে এরশাদ করেন-লাক্কাদ কানালাকুম ফি রাসূলিল্লাহি উসওয়াতুন হাসানা অর্থাৎ নিশ্চয়ই আমি রাসূল (সা.)কে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ হিসেবে সৃষ্টি করেছি।

পৃথিবীতে অসংখ্য মনীষীর পদচারণা অহরহই ঘটেছে এবং এখনও ঘটছে কিন্তু কোনকালেই এমন মহাপুরুষের আবির্ভাব ঘটেনি যিনি সর্ববিষয়ে বিরল আদর্শ স্থাপনকারী হিসেবে শ্রেষ্ঠত্বের দাবি করতে পারেন। অন্ধকারের অথৈ সাগরে হাবুডুবু খাওয়া মানব জাতিকে উদ্ধার করে যেভাবে মুক্তির পথ প্রদর্শন করেছিলেন তার দৃষ্টান্ত একমাত্র সাইয়্যেদুল আম্বিয়া হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.) ভিন্ন আর কেউ নন। বিশ্বনবী (সা.)-এর গোটা জীবন পর্যালোচনা করলে এ সত্য সুস্পষ্টভাবে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে-মানুষের মুক্তির লক্ষক্ষ্য সমাজ শান্তি, ন্যায় বিচার, সমতা, সৌহার্দ, শিক্ষা, সংস্কৃতি, গবেষণা, আন্তর্জাতিকতা, নীতিশাস্ত্রসহ অসংখ্য বিষয়ের সংস্কার করে তার মৌলিক সূত্র চালু করে গেছেন। মহানবী (সা.)-এর এসব বৈপ্লবিক পদক্ষেপের ফলশ্রম্নতিতে পরবর্তী সময়ে মানব জাতি জ্ঞান বিজ্ঞানের সর্বক্ষেত্রে অসামান্য সাফল্য লাভ করেছিল। মহানবী (সা.)-এর আবির্ভাব ছিল গোটা বিশ্বের যু্দ্ধবিগ্রহ, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বসহ যাবতীয় অমানবিক কার্যক্রম, ভ্রান্ত চিন্তা চেতনার রাহুগ্রাস তথা আইয়্যামে জাহেলিয়াতের অতলগহবরে নিমজ্জিত বিশ্ব সমাজকে জ্যোতিলোকের রশ্মিতে উত্তরণের আয়োজন বটে। মানুষের দাসত্ব থেকে মানবজাতিকে মুক্তি দিয়ে এক স্রষ্টার নিকট শির নত করার আদর্শ স্থাপনের মাধ্যমে মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীবের আসনে সমাসীন করাই ছিল মহানবী (সা.)-এর রিসালাত মিশনের অন্যতম উদ্দেশ্য।

বিশ্বনবী (সা.)-এর জীবন পরিক্রমায় রিসালাতের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় তার ৪০ বছর বয়সে। কিশোর বয়স থেকেই তিনি সমাজের খেদমত করার জন্য নিজকে নিয়োজিত করেছিলেন। গোষ্ঠী সংঘর্ষ বন্ধ, দুস্থ মানুষকে সার্বিক সহযোগিতা, অন্যায়ের প্রতিরোধ, মজলুমকে সাহায্য ও অশস্নীলতার মূলোৎপাটনসহ জনকল্যাণমূলক কাজ পরিচালনার জন্য হিলফুল ফুজুল নামক জনকল্যাণ প্রতিষ্ঠান চালু করেছিলেন তিনি মাত্র ১৪ বছর বয়সেই।
মহানবী (সা.) গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ও সামাজিক কলহ নিরসনের জন্য ছোটবেলা থেকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর নবুয়ত লাভের অনেক পূর্বে মক্কার কুরাইশগণ পবিত্র কাবা গৃহ সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এ সময় কাবাঘরে সংরক্ষেত হাজরে আসওয়াদ অর্থাৎ কালো পাথর যথাস্থানে পুনঃস্থাপনের ব্যাপার নিয়ে যে উত্তেজনা তথা গোষ্ঠী সংঘর্ষের রূপ পরিগ্রহ করেছিল যা কোন ক্রমেই নিরসন করা সম্ভব হচ্ছিল না-কারণ এ মর্যাদাপূর্ণ কাজের অধিকার কোন গোত্রই ত্যাগ করতে রাজি ছিল না। শেষ পর্যন্ত মহানবী (সা.)-এর দূরদর্শী সিদ্ধান্তের ফলেই কুরাইশগণ একটি অনিবার্য রক্তপাতের হাত থেকে নিষ্কৃতি পেয়েছিল। মহানবী (সা.) কালো পাথরটি একটি চাদরের ওপর উঠিয়ে সমস্ত গোত্র প্রধানকে এটির (কাপড়টির) চতুর্কোণ ধারণ করে যথাস্থানে নিয়ে যেতে বললে সবাই আনন্দের সাথে এ কাজটি সমাধা করে। এভাবে মহানবী (সা.) এমন একটি কলহের হাত থেকে কুরাইশ বংশকে রক্ষা করলেন যে সংঘর্ষ কতকাল যে চলতো তার ইয়ত্তা ছিল না।

মদিনা সনদ ছিল বিশ্বের প্রথম কার্যকর রাষ্ট্র পরিচালনার সংবিধান। বিশ্বনবী (সা.) মদিনায় হিজরত করে সেখানকার ইহুদী, খ্রিস্টান ও অন্যান্য অমুসলিমদের নিয়ে যে সহঅবস্থান তথা সহযোগিতামূলক চুক্তি স্বাক্ষর করেন সেটাই হলো মদিনা সনদ। মদিনা সনদের চেয়ে উত্তম লিখিত সংবিধান বিশ্বের কোন জাতি বা গোষ্ঠী প্রণয়ন করতে পেরেছিল বলে বিশ্বাস করার কারণ থাকতে পারে না। ঐ সংবিধানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সমঅধিকারসহ রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছিল।

বিশ্বনবী (সা.) সুলেহ হুদাইবিয়া অর্থাৎ হুদাইবিয়ার সন্ধিতে সংঘর্ষ পরিহার করে শান্ত ও সহঅবস্থানের স্বার্থেই মক্কার মুশরিকদের সাথে নিজেদের পক্ষের সুবিধা ত্যাগ করে চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। যুদ্ধবাজ কুরাইশদের মানবতা বিরোধী যুদ্ধ বিগ্রহের কারণে গোটা আরব সমাজে হত্যা, সন্ত্রাস, লুণ্ঠনসহ নানারূপ গোষ্ঠী দ্বন্দ্বে নিরিখে প্রজ্বলিত দাবানল দাউ দাউ করে জ্বলছিল-আল্লাহর রাসূল (সা.)-এ নরকতুল্য পরিস্থিতি থেকে সমাজকে মুক্তিদানের জন্য অধীর প্রতীক্ষায় দিন গুনছিলেন। হুদাইবিয়া সন্ধি চুক্তিতে যে সব বিষয় লেখা ছিল তা হলো উভয় পক্ষ এ ব্যাপারে একমত হচ্ছে যে দশ বছরের জন্য যুদ্ধ বন্ধ থাকবে। এই দশ বছর জনগণ পূর্ণ শান্তি ও নিরাপত্তা ভোগ করবে এবং পরস্পরের বিরুদ্ধে সব রকমের আক্রমণ থেকে বিরত থাকবে। (সিরাতে ইবনে হিশাম)। চুক্তির পরবর্তী উল্লেখ করা হলো কুরাইশদের কোন লোক মুহাম্মদ (সা.)-এর নিকট গেলে তাকে ফেরৎ দিতে হবে কিন্তু আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর দল থেকে কেউ মক্কার কুরাইশদের নিকট পৌঁছলে কুরাইশরা তাকে ফেরৎ পাঠাবে না। বাহ্যত এ অবমাননাকর সন্ধি চুক্তি সম্পাদনের ব্যাপারে মুসলিম শিবিরের অনেকেই ঘোর আপত্তি উত্থাপন করতে শুরু করলেন এমনকি বিশিষ্ট সাহাবীদের মধ্য থেকেও বিরোধিতার আওয়াজ উঠতে শুরু করলো। মহানবী (সা.) আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার সরাসরি ইঙ্গিতে শান্তি, সামাজিক নিরাপত্তা ও সহ অবস্থানের বৃহত্তর স্বার্থে সন্ধি স্থাপনের সিদ্ধান্তে অটল থেকে সন্ধিচুক্তির ধারাগুলো অনুমোদন করলেন। মহানবী (সা.)-এর এ দূরদর্শী সিদ্ধান্ত রাববুল আলামীন ফাতহুম মুবিন অর্থাৎ সুস্পষ্ট বিজয় হিসেবে ঘোষণা করে কুরআনুল কারীমের আয়াত নাযিল করলেন।

দাম্ভিক কুরাইশগণ তাদের স্বভাবসুলভ শঠতার আশ্রয় নিয়ে হুদাইবিয়ার সন্ধির শর্তাবলী ভঙ্গ করে ফেললো। মহানবী (সা.) আল্লাহর ইচ্ছায় বিনা রক্তপাতে স্বীয় জন্মভূমি শত্রুমুক্ত করার কৌশল অবলম্বন করতে শুরু করলেন। বিশ্বনবী (সা.)৮ম হিজরির রমযান মাসে প্রায় বিনা বাধায় মক্কা অধিকার করেন। যে সব দুরাচারের অমানবিক আচরণ ও অকথ্য অত্যাচার এবং নির্যাতনে স্বীয় জন্মভূমি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন, তাদের অপরাধ ছিল ক্ষমার অযোগ্য। যারা রণক্ষেত্রে শাহাদত বরণকারী মুজাহিদদের লাশকে কেটে বিকৃত করে উল্লাসে ফেটে পড়তো, আল্লাহর রাসূল (সা.) তাদেরকে সেদিন পাকড়াও না করে সবার জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিলেন যা তথাকথিত সভ্যতার দাবীদার অধুনা বিশ্বের নেতাদের আচরণেও লক্ষ্য করা যায় না। আল্লাহর রাসূল (সা.) যে একমাত্র দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী আদর্শ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সারা পৃথিবী যদি আজ বিশ্বনবী (সা.)-এর প্রদর্শিত আদর্শ অনুসরণ করে চলে তাহলে বিশ্ব শান্তি তথা আন্তর্জাতিক সহঅবস্থানের জন্য অন্য কোথাও ধরনা দিতে হবে না। একজন অমুসলিম মনীষী যথার্থই বলেছেন যে, মহানবী (সা.) যদি আজ বিশ্ব পরিচালনার দায়িত্ব নিতেন তাহলে এই ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ জগতে নেমে আসতো অপার শান্তি ও সুখ। মোটকথা আল্লাহর রাসূল (সা.) প্রবর্তিত শান্তি নীতি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ভূমিকা পালনে কার্যকরভাবেই সক্ষম।

৯ম হিজরীতে তিনি তদানিন্তন শীর্ষ পরাশক্তি রোমান সম্রাজ্যের বাদশাহ মদিনা আক্রমণের উদ্দেশ্যে সীমান্তে সৈন্য সমাবেশের খবর জানতে পারলেন। এ বিষয় অবহিত হওয়া মাত্র আল্লাহর রাসূল (সা.) রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষার স্বার্থে সসৈন্যে রোম সীমান্তবর্তী তবুকের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। মুসলিম বাহিনীর আগমণ বার্তা  শুনে রোমান বাহিনী পিছু হটে গেল। রোম সীমান্তবর্তী প্রাদেশিক শাসকবৃন্দ মহানবী (সা.)-এর নিকট এসে জিযিয়া নিরাপত্তা কর প্রদানের শর্তে সন্ধি প্রার্থনা করলে মহানবী (সা.) সানন্দে তা মঞ্জুর করেন। বিশ্বনবী (সা.)-এর এখানে সুযোগ ছিল যে, রোমানদের ওপর পাল্টা হামলা চালিয়ে তাদেরকে পর্যুদস্ত করে দেয়ার, কিন্তু তিনি তা করেননি। রোমান সাম্রাজ্যের সীমান্তবর্তী আয়লা রাজ্যের শাসক ইউহান্না এবং জাররা আজরুহর ও তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকার অধিবাসীদের তিনি যে শান্তি সনদ লিখে দেন তা এরূপ-

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ (সা.)-এর পক্ষ থেকে ইউহান্না ইবনে তোবা এবং আয়লাবাসীর জন্যও তাদের সকল নৌ ও স্থলযানসমূহের জন্য নিরাপত্তা ঘোষণা করা যাচ্ছে। তাদের জন্য এবং তাদের সহযোগী সিরিয়া, হামাস ও সাগর উপকূলবাসীর নিরাপত্তার জন্য আল্লাহ ও তার রাসূল (সা.) পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। যদি কেউ এ সন্ধির বরখেলাপ করে তবে সে তার অর্থবিত্ত বলে শাস্তি থেকে অব্যাহতি লাভ করতে পারবে না। (সিরাতে ইবনে হিশাম)।

মহানবী (সা.) মক্কা শত্রুমুক্ত করার পর হুনায়ুন রণাঙ্গনে হাওয়াযিন সম্প্রদায়কে পর্যুদস্ত করে ইসলামের দুশমন ও অত্যাচারী বনু সাকীফ গোত্রের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের স্বার্থে তায়েফে তাদের দুর্ভেদ্য দুর্গ অবরোধ করেন। কিছুদিন অবরোধ অব্যাহত রেখে অধিক রক্তপাত এড়ানোর লক্ষক্ষ্য তা প্রত্যাহার করে মদিনায় প্রত্যাবর্তন করেন। বিশ্বনবী (সা.) রাজধানীতে পৌঁছার পূর্বেই বনুসাকীফের অতিপ্রিয় ও বিশ্বাসভাজন ব্যক্তিত্ব উরওয়া ইবনে মাসউদ সাকাফী রাসূলে খোদা (সা.)-এর সাথে পথিমধ্যে সাক্ষাৎ করেন এবং ইসলাম কবুল পূর্বক স্বীয় গোত্রে (সাকীফ) ফিরে গিয়ে আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর দূত হিসেবে ইসলাম প্রচারের অনুমতি প্রার্থনা করেন। মহানবী (সা.) বনু সাকীফের শঠতা ও বিশ্বাসঘাতকতাসুলভ আচরণ সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। এ সব বিষয় বিবেচনা করে উরওয়া ইবনে মাসউদ (রা.)কে এ ব্যাপারে অসম্মতি দান করলেন। হযরত উরওয়া ইবনে মাসউদ (রা.)  বার বার রাসূলে খোদা (সা.)-এর কাছে দ্বীনি দাওয়াতের কাজ বনু সাকীফের লোকজনের মধ্যে চালিয়ে যাবার অনুমতি প্রার্থনা করতে লাগলেন। তিনি মহানবী (সা.)কে এ বলে আশ্বস্ত করলেন যে, বনু সাকীফের নিকট তিনি নবজাতক শিশুর চাইতেও প্রিয় ব্যক্তিত্ব। মহানবী (সা.) উরওয়া ইবনে মাসউদ (রা.)-এর স্বীয় গোত্রের প্রতি আস্থার দৃঢ়তা ও আগ্রহ দেখে নিজ দূত হিসেবে তাকে তায়েফে প্রেরণ করেন। তায়েফের সাকীফ সম্প্রদায় সকল নীতি নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ সংঘটের ধৃষ্টতা প্রদর্শন করে মহানবী (সা.)-এর দূতকে হত্যা করে ফেলল। মহানবী (সা.)-এর এটা অধিকার ছিল যে মানবতা বিরোধী এ জঘন্য অপরাধের কারণে তাফেলে দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক অভিযান পরিচালনা করার, কিন্তু তিনি শত্রুদের আরো আত্মোপলব্ধির সুযোগ দান করলেন। মহানবী (সা.)-এর এ শান্তিনীতি অত্যন্ত ফলপ্রসূ হল। বনু সাকীফ মহানবী (সা.)-এর উদারতা ও মহানুভবতায় মুগ্ধ হয়ে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করল। আল্লাহর রাসূল (সা.) শুধু তাদের অপরাধ মার্জনাই করেননি তাদের প্রতিনিধি দলকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়ে মসজিদে নববী সংলগ্ন সরকারি মেহমান খানায় অবস্থানের ব্যবস্থা করে দেন। উক্ত প্রতিনিধিদল মহানবী (সা.)-এর নিকট থেকে যে অঙ্গীকারনামা লিখে নিয়েছিল এবং আল্লাহর রাসূল (সা.) তায়েফবাসীদের উদ্দেশ্যে যে বার্তা পাঠিয়েছিলেন তা নিম্নরূপ-

বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম। আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ (সা.)-এর পক্ষ থেকে মুমিনদের প্রতি ওয়াজ্জের অর্থাৎ তায়েফের কণ্টকময় বৃক্ষরাজি কাটা নিষিদ্ধ। যে ব্যক্তি এ আদেশ লংঘন করবে তাকে বেত্রাঘাত করা হবে। যে ব্যক্তি বাড়াবাড়ি করবে তাকে পাকড়াও করে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর নিকট পাঠিয়ে দিতে হবে। এটা আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ (সা.)-এর নির্দেশ (সিরাতে ইবনে মহানবী) (সা.)-এর  তায়েফবাসীদের উদ্দেশ্যে মহানবী (সা.)-এর উপরোক্ত বার্তা প্রেরণের কারণ ছিল এই যে, তায়েফ এলাকায় সবুজ বৃক্ষরাজি শস্যক্ষেত, ফলের বাগান ইত্যাদি রক্ষার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন ছিল উক্ত এলাকাবাসী। যদি কোন কারণে লড়াই শুরু হয় তাহলে এগুলো ধ্বংস হবার সম্ভাবনা ছিল বেশি।

আমরা মহানবী (সা.)’র সিরাত পাঠ করলে দেখতে পাই- তাঁর সাথে যে বা যারাই কোন সন্ধি তথা সমঝোতামূলক চুক্তি করেছে তাতেই বিশ্বনবী (সা.)এর ক্ষমা উদারতা ও দয়ার সুস্পষ্ট ছাপ ভেসে উঠেছে। আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর জীবনের সমস্ত কর্মকান্ডের মূল লক্ষ্যই ছিল আল্লাহর একত্ববাদের ভিত্তিতে সামাজিক রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক শান্তি, শৃঙ্খলা, ন্যায়বিচার, সুষম বণ্টন ব্যবস্থা, শোষণ, জুলুম ও নিপীড়নমুক্ত  বিশ্বব্যবস্থার মাধ্যমে সকলের সহঅবস্থানের বদ্ধ দুয়ার উন্মুক্ত করা। মহানবী (সা.)’র এ পথ অনুসরণ করলে গোটা মানবসমাজ সকল দুঃখ, যাতনা ও নির্যাতনের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি লাভ করতে পারে।
লেখক : প্রভাষক

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।