সংবাদ শিরোনামঃ

বিদ্যুৎ : কোন সুখবর নেই লোডশেডিং তীব্রতর হবে ** জেনারেল মঞ্জুরকে হত্যার নেপথ্য খলনায়ক কে? ** জামায়াত নেতৃবৃন্দ যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত নন ** কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে আ’লীগ সরকারের কোরআন বিরোধী নারী নীতি ** বিশ্বকাপে বাংলাদেশের স্বপ্ন প্রলম্বিত হোক ** পাকিস্তানকে অস্থিতিশীল করার নায়ক ডেভিস ইস্যুতে পাক জনমত ও আদালতের চাপে সরকার ** ভূমিকম্প আর সুনামির পর পরমাণু আতঙ্কে জাপান ** কোরআন বিরোধী নারীনীতির অনুমোদনের পর সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় ** আশির দশক ও কবি মতিউর রহমান মল্লিক **

ঢাকা শুক্রবার ০৪ চৈত্র ১৪১৭, ১২ রবিউস সানি ১৪৩২, ১৮ মার্চ ২০১১

।। অধ্যাপক গোলাম আযম ।।
রাহমাতুল্লিল আলামীন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন একটি পেয়ারা নাম যা প্রত্যেক মুসলিম তার অন্তরে মহববতের সাথে স্মরণ করে থাকে। আমলের দিক দিয়ে কারো মধ্যে যত কমতিই থাকুক, রাসূল (সা.) এর প্রতি মহববত সবার মধ্যে কমবেশি অবশ্যই আছে। আমলের দিক দিয়ে যে যত বেশি অগ্রসর এ মহববত তার অন্তরে ততই গভীর। এ মহববতের কোন তুলনা নেই। মুমিনের দিলে যে কারণে আল্লাহতায়ালার মহববত গভীর, সে কারণেই রাসূল (সা.)-এর প্রতি মহববত গভীর হওয়া স্বাভাবিক। আল্লাহপাক বলেন, ‘‘যারা ঈমানদার তাদের মহববত আল্লাহর জন্যই বেশি।’’ (বাকারা : ১৬৫)। আল্লাহ পাক আবার বলেন, ‘‘হে রাসূল ! আপনি বলে দিন যে, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবেসে থাক, তাহলে আমার অনুকরণ করো, তাহলে আল্লাহই তোমাদের ভালোবাসবেন।’’ এ দু’টো আয়াত থেকে বুঝা গেল যে, মুমীন আল্লাহকেই বেশি ভালোবাসে এবং এ ভালোবাসা প্রকাশের একমাত্র পথ হলো রাসূলের অনুসরণ, অনুকরণ ও আনুগত্য। কিন্তু রাসূল (সা.)কে ভালোবাসা ছাড়া কি তাঁর আনুগত্য সম্ভব? তাই আল্লাহকে ভালোবাসার স্বাভাবিক পরিণতিই হলো রাসূল (সা.)কে ভালোবাসা।
রাসূল (সা.) এর প্রতি ভালোবাসা কি পরিমাণ থাকা উচিত সে কথা রাসূল (সা.) স্বয়ং স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন :
‘‘তোমাদের কেউ সত্যিকারের মু’মিন হবে না, যে পর্যন্ত আমি তার কাছে তার পিতা, পুত্র ও সকল মানুষের চেয়ে বেশি প্রিয় বলে গণ্য না হব।’’

আল্লাহপাক পিতা-মাতা, স্ত্রী-পুত্র, ভাই-বেরাদর ও আত্মীয়-স্বজনকে ভালোবাসা কর্তব্য বলে জানিয়েছেন। কিন্তু কারো প্রতি ভালোবাসা যেন রাসূলের চেয়ে বেশি না হয়, বরং সবার চাইতে যেন রাসূলের প্রতি ভালোবাসা অধিকতর গভীর ও তীব্র হয়, সে কথাই এ হাদীসে বলা হয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো যে, আমাদের ভালোবাসা রাসূলের জন্য সবচেয়ে বেশি কিনা তা যাচাই করার উপায় কি? এর হিসাব নেওয়া কঠিন নয়। অন্য কোন মানুষের প্রতি ভালোবাসার দাবি পূরণ করতে গিয়ে যদি রাসূল (সা.) এর নাফরমানী করা হয় তাহলে বুঝা গেল যে, রাসূলের প্রতি ভালোবাসা অন্যের তুলনায় কম।

বাস্তবে এটাই দেখা যায় যে, মানুষ প্রিয়জনের প্রতি স্নেহ-ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে তাদের মঙ্গলের নিয়তেই এমন কিছু করে, যা করতে গিয়ে আল্লাহ ও রাসূলের হুকুম অমান্য করে রাসূলের প্রতি গভীর ভালোবাসা থাকলে সে এমনটা করবে না। যারা এমন বোকামি করে তাদের সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন :
‘‘যে অন্য লোকের দুনিয়া বানাবার জন্য নিজের আখিরাত নষ্ট করে, কিয়ামতের দিন সে সবচেয়ে বেশি নিকৃষ্ট বলে গণ্য হবে।’’

রবিউল আউয়াল
মু’মিনের দিলে রাসূলের প্রতি যে মহববতের দরিয়া প্রবাহিত হয় তাতে রবিউল আউয়াল মাসে যেন বান ডাকে। মহববতের এ জোয়ার এ মাসে সর্বত্রই টের পাওয়া যায়। সীরাতুন নবীর এত চর্চা আর কোন মাসে হয় না। বড় বড় মাহফিলে, মসজিদে, অফিসে, বাড়িতে, সর্বত্র এ মাসে অনুষ্ঠানের ব্যাপক আয়োজন হয় এবং তাতে রাসূল (সা.)-এর জীবন থেকে শিক্ষণীয় বিষয় সম্পর্কে ইসলামী চিন্তাবিদ ও ওলামায়ে কেরাম মূল্যবান আলোচনা পেশ করেন।
এসব অনুষ্ঠানে সমবেতভাবে রাসূল (সা.) এর প্রতি যে পরিমাণ দরূদ ও সালাম পেশ করা হয় বছরের আর কোন মাসে এতটা হয় না। এ মাসটি এ ব্যাপারে এমন এক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী যার কোন তুলনা নেই। বিশেষ করে ১২ রবিউল আউয়াল ঘরে ঘরে যেভাবে মিলাদের অনুষ্ঠান করা হয়, এমনভাবে একদিনে আর কোন সময় করতে দেখা যায় না।

মিলাদ মাহফিল ও দোয়ার মাহফিল
মিলাদ অনুষ্ঠানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করতে গিয়ে একটি বিষয় মুসলিম সমাজ, বিশেষ করে ওলামায়ে কেরামের দৃষ্টি আকর্ষণ করা প্রয়োজন মনে করছি।
আমাদের দেশে সারা বছরই বিভিন্ন উপলক্ষে যেসব দোয়ার মাহফিল হয়, তা সাধারণত ‘মিলাদ মাহফিলের’ নামেই হয়ে থাকে। মৃতের জন্য দোয়া, নতুন বাড়ি বা দোকান উদ্বোধন উপলক্ষে দোয়া, বিয়ে-শাদী উপলক্ষে দোয়ার যে অনুষ্ঠান করা হয়, তা খুবই ভালো রেওয়াজ। মুসলমানদের সব কাজই আল্লাহর নামে ও রাসূল (সা.)-এর শিক্ষা অনুযায়ী হওয়া উচিত। এসব দোয়ার মাহফিল উপলক্ষে আল্লাহ ও রাসূল (সা.) সম্পর্কে যে চর্চা হয় তা সত্যিই প্রশংসনীয়।

কিন্তু এ অনুষ্ঠানগুলোর নাম ‘‘মিলাদ মাহফিল’’ রাখা কি যুক্তিপূর্ণ? মিলাদ শব্দের অর্থ জন্মদিন। রাসূল (সা.)-এর জন্মদিন হলো ১২ রবিউল আউয়াল। সেদিনের অনুষ্ঠানকে ‘‘মিলাদ মাহফিল’’ নাম দেওয়া অবশ্যই যুক্তিযুক্ত। আরব দেশগুলোতেও এ দিনটিকে ‘‘ঈদে মিলাদুন্নবী’’ হিসেবে পালন করা হয়। কিন্তু এ দিনটি ছাড়া সারা বছরই রাসূল (সা.)-এর জন্মদিবস পালন করা কি অর্থহীন নয়? দোয়ার মাহফিল যখন করা হয় তখন এর নাম দিলাদ মাহফিল রাখার চেয়ে ‘‘দোয়ার মাহফিল’’ বলাটাই সঠিক ও যথাযথ।

১২ রবিউল আউয়ালের গভীর তাৎপর্য
১২ রবিউল আউয়াল বিশ্বনবী (সা.) এর জন্মদিবস হিসেবেই পালন করা হয়। অথচ তিনি এ তারিখে ইন্তিকালও করেছেন। কিন্তু এ দিনটি তাঁর মৃত্যুর দিবস হিসেবে কখনও পালন করা হয় না।
সব দেশে ও সব জাতির মধ্যেই মহান ব্যক্তিদের জন্ম ও মৃত্যুদিবস পালন করার রীতি চালু আছে। জাতীয় নেতা, স্বাধীনতা আন্দোলনের হিরো ও বিভিন্ন দিক দিয়ে যারা দেশে বা জাতির জন্য গৌরবময় ব্যক্তিত্ব হিসেবে গণ্য তাদের জন্মদিবস যেমন পালন করা হয়, তেমনি তাদের মৃত্যুদিবসও পালন করা হয়ে থাকে। কিন্তু বিশ্বনবী (সা.)-এর মৃত্যুদিবস কেন পালন করা হয় না? যদি তাঁর জন্ম ও মৃত্যুদিবস একই দিনে না হতো তাহলে হয়তো তাঁর মৃত্যুদিবসও পালন করা হতো। তাঁর জন্ম ও মৃত্যু একই দিনে হওয়ায় শুধু জন্ম দিবস পালন করার সুযোগ রয়েছে। এ বিষয়টির মধ্যে কি কোন তাৎপর্য নিহিত নেই?

যিনি হায়াত ও মওতের একমাত্র মালিক তিনি কি কোন হিকমত ছাড়াই তাঁর সর্বশেষ রাসূলের জন্ম ও মৃত্যু একই দিনে নির্দিষ্ট করেছেন? দুনিয়ার আর কোন মানুষ সম্পর্কে তিনি এ ব্যবস্থা করেছেন বলে আজ পর্যন্ত জানা যায়নি। বিশ্বনবী (সা.)-এর বেলায় এমন নজিরবিহীন ব্যবস্থা কেন করা হয়েছে তার আসল কারণ আল্লাহ রাববুল আলামীনই জানেন। এ বিষয়টা নিয়ে এক সময় যখন আমার মনে প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছিল তখন যে জওয়াব আমার নিকট যুৎসই  মনে হয়েছে তা বহু সীরাত মাহফিলে পেশ করেছি এবং শ্রোতাগণ সে জওয়াবে আমারই মতো তৃপ্তিবোধ করেছেন। এ পর্যন্ত অন্য কোন জওয়াব কেউ দিয়েছেন কিনা জানতে পারিনি।

একই তারিখে রাসূল (সা.) এর জন্ম ও মৃত্যু হওয়ার দরুন সবাই বাধ্য হয়ে শুধু জন্মদিবসই পালন করছে। কেউ মৃত্যু দিবস হিসেবে ঐ দিবসটি পালনের কল্পনাও করতে পারছে না। এর কোন সুযোগই রাখা হয়নি।
এ ব্যবস্থা দ্বারা এ কথাই যেন ঘোষণা করা হয়েছে যে, শেষ নবীর মৃত্যু নেই। মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ নামক মানুষটির দৈহিক তিরোধান হলেও মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যু নেই। তিনি রাসূল হিসেবে দুনিয়ায় কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী। আর কোন রাসূল আসবে না।

তাঁর নবুয়্যাত ও রিসালাত চিরস্থায়ী। এ রাসূলের জন্মই আছে, তাঁর মৃত্যু নেই। তাঁর মৃত্যুহীন মর্যাদা চিরস্থায়ী করার মহান উদ্দেশ্যেই আল্লাহতায়ালা তাঁর জন্য এ বিশেষ ব্যবস্থা করেছেন, যাতে মানুষ শুধু তার জন্মের উৎসব পালন করতে বাধ্য হয় এবং মৃত্যু দিবস পালনের কোন সুযোগই না পায়।
রাসূল (সা.)-এর ‘‘খাতামুন নাবিয়্যিন’’ হিসেবে যে মহান মর্যাদা আল্লাহপাক কুরআনে ঘোষণা করেছেন সে মর্যাদার এটাই স্বাভাবিক দাবি। তাই এ দাবি পূরণ করার ক্ষমতা যার হাতে রয়েছে তিনি সুপরিকল্পিতভাবেই তার ব্যবস্থা করেছেন।

রাসূল (সা.)-এর নবুওয়াতের এ স্থায়ীত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব এ দুনিয়ায়ই সীমাবদ্ধ নয়। আখিরাতেও তাঁর নবুওয়াতের পতাকাতলেই সকল নবী সমবেত হবেন বলে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।
হযরত আবু সাঈদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘‘কিয়ামতের দিন আমিই সকল আদম সন্তানের সর্দার হব। আমি এ কথা গর্ব প্রকাশের জন্য বলছি না। সেদিন আদম ও অন্যান্য সব নবী আমার পতাকাতলে থাকবেন। আর আমি প্রথম ব্যক্তি যার কবর সবার আগে ফাটবে। এ কথাও আমি গর্ব হিসেবে বলছি না।’’ (তিরমিযী)।
লেখক : ইসলামী চিন্তাবিদ ও সাবেক আমীর, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।