সংবাদ শিরোনামঃ

বিদ্যুৎ : কোন সুখবর নেই লোডশেডিং তীব্রতর হবে ** জেনারেল মঞ্জুরকে হত্যার নেপথ্য খলনায়ক কে? ** জামায়াত নেতৃবৃন্দ যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত নন ** কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে আ’লীগ সরকারের কোরআন বিরোধী নারী নীতি ** বিশ্বকাপে বাংলাদেশের স্বপ্ন প্রলম্বিত হোক ** পাকিস্তানকে অস্থিতিশীল করার নায়ক ডেভিস ইস্যুতে পাক জনমত ও আদালতের চাপে সরকার ** ভূমিকম্প আর সুনামির পর পরমাণু আতঙ্কে জাপান ** কোরআন বিরোধী নারীনীতির অনুমোদনের পর সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় ** আশির দশক ও কবি মতিউর রহমান মল্লিক **

ঢাকা শুক্রবার ০৪ চৈত্র ১৪১৭, ১২ রবিউস সানি ১৪৩২, ১৮ মার্চ ২০১১

।। মনসুর আহমদ ।।
হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর আগমনের ভবিষ্যৎ বাণী কুরআন পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবাদির একটি অন্যতম বিষয় ছিল। পৃথিবীর বিভিন্ন যেসব ধর্মগ্রন্থে রসূল (সা.) প্রসঙ্গে আলোচনা এসেছে তন্মধ্যে বারনাবাস ইঞ্জিল অন্যতম। এই ইঞ্জিলে রসূল (সা.) প্রসঙ্গে আলোচনার পূর্বে এ ইঞ্জিলের পরিচয় জানা একান্ত জরুরি। বইবেলে যে চারখানা ইঞ্জিল গ্রন্থকে আইনসম্মত ও নির্ভরযোগ্য ঘোষণা করে শামিল করা হয়েছে, তার একখানা গ্রন্থেরও লেখক হযরত ঈসা (আ.) এর সাহাবী নন। বাইবেলের এসব লেখকদের কাছে হযরত ঈসার কথা ও কাজ কর্মের  বিবরণ সুরিয়ানী ভাষী খ্রিস্টানদের মাধ্যমে মৌখিক বর্ণনারূপে পৌঁছেছিল। তারা যেসব উপায় ও সূত্র হতে তথ্য ও তত্ত্ব সংগ্রহ করেছেন তার পরিচয়ও তারা দেননি। তারা এই সুরিয়ানী  বর্ণনাসমূহ নিজেদের ভাষায় তরজমা করে সুবিন্যাস্ত করেছিল। এই কাজটি করতে গিয়ে তারা নিজেদের ইঞ্জিলে নিজেদের ইচ্ছামত পরিবর্তন পরিবর্ধন করেছিল। এ প্রসঙ্গে ইনসাইক্লোপিডিয়া বৃটানিকায় লেখা হয়েছে : ‘‘ইঞ্জিল সমূহে জেনে শুনে এমনসব সুস্পষ্ট পরিবর্তন করা হয়েছে যেমন স্থান বিশেষে সকল কথাই অন্য এক উৎস থেকে নিয়ে মূল গ্রন্থে শামিল করে দেওয়া হয়েছে ... এইসব পরিবর্তন স্পষ্টভাবে এমন কিছু লোক ইচ্ছা পূর্বক করেছে যারা মূল গ্রন্থে শামিল করার জন্য কোথাও হতে কিছু তথ্য পেয়ে গেল এবং তারা নিজেদেরকে এ কাজের অধিকার প্রাপ্ত মনে করল যে, গ্রন্থকে উন্নত ও অধিক কল্যাণকর করবার জন্য তাদের তরফ হতে এসব তথ্য বাড়িয়ে দেওয়া হল। ... দ্বিতীয় শতকেই অনেক অতিরিক্ত বিষয় যোগ হয়েছে্ কিন্তু সেগুলোর উৎস কি ছিল, তা জানা যায়নি।’

কিন্তু ইঞ্জিল বারনাবাস এই দোষ ও ত্রুটি হতে মুক্ত। বারনাবাস বলেছেন, আমি নিজে হযরত ঈসা মসীহ’র প্রাথমিক হাওয়ারীর একজন। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমি নি জে হযরত মসীহ’র সাথে থেকেছি। আমার নিজের চোখে দেখা ঘটনাবলী ও নিজের কানে শোনা কথা ও বাণী আমি এ গ্রন্থে সন্নিবেসিত করেছি। এ ইঞ্জিলে হযরত ঈসার জীবন ও শিক্ষাবলী একজন নবীর জীবন ও শিক্ষাবলীর মতই পুরাপুরিভাবে মনে হয়। তিনি এ গ্রন্থে নিজেকে ঠিক একজন নবী হিসাবে উপস্থাপিত করেছেন। তিনি সব নবী রসূল ও আসমানী কিতাবকে পরম সত্য বলে ঘোষণা করেছেন।
বারনাবাসের এ ইঞ্জিল খ্রিস্টধর্মের সরকারি আকিদার সম্পূর্ণ বিপরীত আকিদা পেশ করে বিধায় খ্রিস্টানরা এ গ্রন্থের বিরোধী। এই ইঞ্জিল খানার সাহায্যে নিজেদের আকিদা-বিশ্বাসকে সংশোধিত ও নির্ভুলভাবে গড়ে তোলা ও হযরত ঈসার আসল শিক্ষাদি জেনে নেবার যে মহাসুযোগ খ্রিস্টানদের ছিল, কেবল মাত্র নিজেদের জেদের বশবর্তী হয়ে তারা তা থেকে নিজেদেরকে বঞ্চিত করে রাখল। শুধু তাই নয় বারনাবাস ইঞ্জিলের নানা স্থানে হযরত নবী করিমের আগমন সম্পর্কে যে সব সুসংবাদ দেয়া হয়েছে তাও তারা জেদ করে প্রত্যাখ্যান করেছে।

বারনাবাস রসূল (সা.) এর আগমন সম্পর্কে হযরত ঈসার যে সব ভবিষ্যৎ বাণী তার ইঞ্জিল তুলে ধরেছেন সেসব বাণীতে হযরত ঈসা কোথাও নবী করিমের নামের উল্লেখ করেছেন, কোথাও শুধু  রসূলুল্লাহ বলেছেন, আবার কোথাও তাঁকে মসীহ নামে উল্লেখ করেছেন। সেসব সুসংবাদ বাণী থেকে নমুনা স্বরূপ কিছু বাণী বোদ্ধা পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হল।

শান্তিকর্তা মসীহ হবেন ইসমাঈল বংশোদ্ভূত :
কাতিব তখন বললেন : ‘আমাকে ক্ষমা করুন হুজুর! আমি অপরাধ করে ফেলেছি।’
ঈসা বললেন : আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন! কারণ তারই কাছে আপনার অপরাধ হয়েছে।’
কাতিব তখন বললেন : ‘‘আমি একখানা পুরান কিতাব দেখেছি, কিতাব খান স্বহসেত্ম লিখেছেন মুসা ও যশুয়া, আল্লাহর সেবক ও নবীদ্বয়; সেই কিতাব খানি হল মূসার আসল কিতাব। সেখানে একথাই লেখা আছে যে, শান্তি কর্তার পিতা হবেন ইসমাঈল এইরূপ এবং ইসহাক হবেন শান্তিকর্তার অগ্রবার্তাবাহকের পিতা আর কিতাবের কথাগুলো হলো এরূপ যে মূসা বলেছেন, ‘বনি ইসরাইলের প্রভু আল্লাহ মহাশক্তিধর ও দয়াময়, আপনার দাসের প্রতি প্রদর্শন করুন আপনার অনন্ত মহিমার নিদর্শন’’ অতঃপর আল্লাহ ইসমাঈলের কোলে তাঁর রসূলকে এবং ইবরাহীমের কোলে আসীন দেখালেন ইসমাইলকে। ইসমাঈলের পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ছিলেন ইসহাক তাঁর কোলে ছিলেন আর একজন শিশু যিনি আল্লাহর রসূলের প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করে বলেছিলেন: এই তো তিনি যার জন্য আল্লাহ সৃজন করেছেন তামাম বিশ্ব লোক।’’
এ অবস্থায় মূসা আনন্দশিহরণে চিৎকার করে উঠলেন : হে ইসমাঈল, আপনার কোলে সারা বিশ্ব কায়েনাৎ ও বেহেশত সমূহ। এই- আমি, আল্লাহর এই বান্দার প্রতি সদয় হোন, যেন আমিও আল্লাহর দৃষ্টিতে রহমত লাভ করি আপনার সন্তানের উসিলায় যার খাতিরে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন তামাম বিশ্ব লোক।’’ (অধ্যায়-১৯১)
রহমাতুল্লিল আলামীন

ঈসা তাঁর শিষ্যবর্গসহ জর্ডান নদী অতিক্রম করে মরু অঞ্চলে গমন করলেন আর যোহারের নামায শেষ করার পর একটি বৃক্ষের নিকট উপবেশন করলেন, আর পাপ বৃক্ষের ছায়ায় জড়ো হলেন তাঁর শিষ্যবর্গ।
ঈসা তখন বললেন : তকদির এত দুর্জ্ঞেয় হে ভাইসব, যা আমি তোমাদেরকে বলছি, অবশ্যই একজনের কাছে তা ধরা পড়বে। তিনি হলেন সেইজন যাকে জাতিপুঞ্জ সন্ধান করছে যার কাছে আল্লাহর রহস্যাবলী এত স্পষ্ট যে যখন তিনি দুনিয়ায় তশরিফ আনবেন, সৌভাগ্যবান হবেন তারাই যারা তাঁর বাণী শ্রবণ করবেন, কারণ তাদের ওপর আল্লাহ পাক ছায়া বিস্তার করবেন রহমতের; ঠিক যেমনি এ পাপ গাছটি আমাদের ওপর ছড়িয়ে দিয়েছে ছায়া। হ্যাঁ, ঠিক এই গাছটি যেভাবে আমাদের রক্ষা করেছে সূর্যের খরতাপ থেকে, তেমনি আল্লাহর করুণা বাঁচাবে শয়তান থেকে তাদেরকে যারা সেই মানুসের ওপর আনবে তাঁদের ঈমান।’’
শিষ্যগণ বললেন : ওগো মুর্শিদ, সেই মানুষ কে হবেন যাঁর সম্পর্কে বলছেন আপনি, কে তিনি যে আসবেন এ-দুনিয়ায়?

ঈসা হৃদয়ের পূর্ণ আনন্দ দিয়ে জওয়াব দিলেন : তিনি মুহম্মদ, আল্লাহর রসূল। আর যখন দুনিয়ায় তার আবির্ভাব হবে, দীর্ঘকাল অনাবৃষ্টির পর যেভাবে দুনিয়া ফসলে ভরে ওঠে, বৃষ্টির ধারা বর্ষণে, তেমনি মানুষের মাঝে আসবেন শুভ কাজের লগ্ন অপরিমিত রহমতের যে স্রোত তিনি আনবেন সেই সূত্র ধরে কেননা তিনি আল্লাহপাকের পরিপূর্ণ রহমতের শুভ্র মেঘমালা সদৃশ, রহমাতুল্লিল আলামীন যার সৌরভবারি আল্লাহপাক ছিটিয়ে দেবেন সকল বিশ্ববাসীর ওপর বৃষ্টি কণার মতো।’’ (অধ্যায়-১৬৩)
শান্তিকর্তা-তত্ত্ব

মোনাজাত পর্ব শেষ হতেই ইমা সাহেব স্বর উঁচু করে বললেন, ‘‘দাঁড়ান হে ঈসা! কেননা আমরা জানতে চাই আপনি কে হন, আমাদের জাতিকে শান্ত করার জন্য তা জানা প্রয়োজন।’’
ঈসা জওয়াব দিলেন, ‘‘আমি মরিয়ম তনয় ঈসা, দাউদ নবীর বংশধর, একজন মরণশীল মানুষ, যে আল্লাহর ভয়ে ভীত, আর আমার প্রত্যাশা এই যে, একমাত্র আল্লাহর প্রতিই আরোপিত হোক মর্যাদা ও গৌরব।’
ইমাম বললেন, মূসার কিতাবে বর্ণিত হয়েছে যে, আমাদের মা’বুদ অবশ্যই শান্তির দূত প্রেরণ করবেন, যিনি আমাদের মাঝে আবির্ভূত হয়ে প্রচার করবেন আল্লাহর গৌরব ও আহকাম এবং জগতের বুকে আল্লাহ প্রদত্ত আশীর্বাদের কারণ হবেন তিনি। অতএব, আমি আরজ করছি, আমাদের কাছে সত্য উদঘাটিত করুণ এবং বলুন আপনি কি সেই বহুল প্রত্যাশিত আল্লাহ প্রেরিত শান্তি দূত?’’
ঈসা জওয়াব দিলেন, ‘‘আল্লাহর এই ওয়াদা সত্যই বটে, কিন্তু আমি সেই ‘‘তিনি’’ নই, তাঁর সৃষ্টি আমার পূর্বে, তাঁর আবির্ভাব আমার পরে।’’

ইমাম বললেন, ‘‘আপনার বাণী ও আলামত দেখে যে- কোন বিচারেই আমাদের একিন হচ্ছে, আপনি একজন নবী ও আল্লাহর পবিত্র বান্দা, অতএব সমগ্র ইয়াহুদা ও বনী ইসরাইলের নামে আপনার সমীপে আরজ করছি, আপনি আল্লাহর ওয়াসেত্ম ইরশাদ করুন, কি প্রক্রিয়ায় জগতে শান্তিকর্তার আবির্ভাব হবে?’’
ঈসা উত্তরে বললেন, ‘‘যেহেতু আল্লাহ চিরঞ্জীব, যাঁর মোকাবিলায় আমার আত্মা নতশীরে দন্ডায়মান, সারা দুনিয়ার তাবৎ জাতির প্রত্যাশিত শান্তিকর্তা আমি নই। তার প্রসঙ্গে আমাদের পিতা ইব্রাহিমের প্রতি উচ্চারিত হয়েছিল পবিত্র ওয়াদা, এই মর্মে যে, ‘‘তোমার বংশেই দান করা হবে জগৎবাসীর জন্য রহমত।’’ কিন্তু  যখন আল্লাহ আমাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে নেবেন, শয়তান পুনরায় এ অভিশপ্ত আন্দোলনের সূচনা করবে এবং এই আকিদার জন্ম দেবে যে, আমি স্বয়ং খোদা এবং খোদার পুত্র। যখন আমার বাক্য ও মতবাদ এমনভাবেই দোষমুক্ত হবে যে, ত্রিশজন ঈমানদারের সন্ধান দুর্লভ হবে, সেই সময় জগতের প্রতি আল্লাহর করুণা সঞ্চার হবে, আর তিনি তার রসূলকে প্রেরণ করবেন যার নিমিত্ত আল্লাহ সম্ভাবায়িত করেছেন তামা মখলুকাত, তিনি শক্তিসহ উত্থিত হবেন দক্ষেণ দিক হতে এবং বিনাশ করবেন পূজার ও পৌত্তলিকদের, যিনি শয়তানের রাজত্ব ও কর্তৃত্ব ছিনিয়ে নেবেন, যা সে বিস্তৃত করে রেখেছে আদম সন্তানের উপর। ...’’ (অধ্যায়-৯৬)

শান্তিকর্তার নাম মুবারক
তখন ইমাম সাহেব বললেন, ‘‘শান্তি দূতকে কি নামে ডাকা হবে এবং কি সব চিহ্ন তাঁর আবির্ভাবকে সুব্যক্ত করবে?’’
ঈসা বললেন, ‘‘শান্তি-দূতের নাম হবে প্রশংসিত; কেননা, স্বয়ং আল্লাহ তাঁর আত্মার এই নামকরণ সৃষ্টির আদি লগ্নেই করেছেন। আল্লাহ তাঁর উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘‘অপেক্ষা কর মুহম্মদ। কেননা, আমি তোমার জন্যই পত্তন করেছি স্বর্গরাজ্য, পৃথিবীর অযুত মাখলুকাতের, যাদের প্রতি তুমি হবে আমার উপহার স্বরূপ। ফলে যে তোমাকে অভিনন্দন দেবে সে হবে অভিনন্দিত, আর যে তোমার অভিশাপ দেবে সে হবে অভিশপ্ত। যখন আমি তোমাকে পৃথিবীতে পাঠাব, তোমাকে আমার রহমতের রসূল রূপেই প্রেরণ করব এবং তোমার বাক্য হবে সত্যপূর্ণ, এমনকি আসমান- জমিন ব্যর্থ হতে পারে, কিন্তু তোমার হবে অব্যর্থ। ‘মুহম্মদ’-এই হল তার রহমত পরিপূর্ণ নাম মোবারক।’’ (অধ্যায়-৯৭)
রসূলুল্লাহ নিদর্শন সমূহ এই বিরল লেখক ঈসা (আ.)  এর কাছে গিয়ে অশ্রম্ন নয়নে প্রশ্ন করলেন- ‘‘ওগো মুর্শিদ! মেহেরবাণী করে বলুন কে সে, যে আপনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে?’’

ঈসা (আ.) জওয়াবে বললেন, ‘‘হে বারনাবাস, তোমার জন্য সেই সময় এখনো আসেনি যে,তাকে চিনতে পারবে, তবে খুব সত্বর সেই পাপাত্মা প্রকাশ করবে। কারণ আমিও দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে যাব।’’
ক্রন্দন রোলে ভেঙে পড়ে হাওয়রীগণ সমস্বরে বললেন, ওগো মুর্শিদ! কেন আপনি আমাদেরকে ছেড়ে যাবেন? বরং এই ভাল আপনার বিচ্ছেদের বদলে আমাদের মৃত্যু হোক।’’

ঈসা (আ.) বললেন, ‘‘তোমাদের হৃদয়কে দুর্বল করো না, কিম্বা ভয়াতুর হইও না, কারণ আমি তোমাদের সৃষ্টি করিনি বরং আমাদের স্রষ্টা আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন রক্ষাও করবেন তিনি। আর আমার বিষয়টি এই যে, পৃথিবীতে আমার আগমন রসূলুল্লাহর প্রস্ত্ততি স্বরূপ যিনি দুনিয়ায় নাজাতের আবে হায়াত নিয়ে আসবেন কিন্তু সাবধান, দেখ, তোমরা প্রতারিত হয়ো না। কারণ বহু ভন্ড নবীর প্রাদুর্ভাব ঘটবে যারা আমার নামে আমার বাণী বিকৃত করবে।’’
আঁদ্রু তখন আরজ করলেন, মুর্শিদ! তাঁর লক্ষণ কিছু বয়ান করুন, যেন আমরা তাকে চিনতে পারি।’’
ঈসা (আ.) জওয়াব দিলেন, ‘‘তিনি তোমাদের কাল সীমায় আবির্ভূত হবেন না। বরং তোমাদের বহু পরেই তিনি আসবেন, যখন তোমাদের সত্য বাণী নিষিদ্ধ হয়ে যাবে এমনি মাত্রায় যে, কোন মতে ত্রিশ জনের বেশি মুমিন ব্যক্তি অবশিষ্ট থাকবে না। তখন আল্লাহ দুনিয়ার প্রতি রহমত নাজিল করবেন এবং তার রসূলকে প্রেরণ করবেন। তাঁর উন্নত শিরের উপর নিত্যই বিরাজ করবে এক শুভ্র মেঘখন্ড, যার ফলে তিনি আল্লাহর প্রিয়জন রূপে চিহ্নিত হবেন। তাঁর মাধ্যমে আল্লাহর কুদরতের প্রকাশ ঘটবে। তার আবির্ভাব হবে মহাশক্তিসহ এবং পৌত্তলিকদের প্রভাবিত করবেন তিনি। আর পুতুল পূজার দিন দুনিয়া হতে শেষ হবে চিরতরে।’’

তিনি আসবেন, ইতোপূর্বে আবির্ভূত সকল নবীদের চেয়ে অধিক সুস্পষ্ট ও সত্য বাণীসহ এবং পৃথিবীকে পাপে নিমজ্জ্বনকারীদের তিনি ঠেকাবেন। আমাদের নগরীর পিতৃপুরুষের সৌধমালা সানন্দে শিহরিত হয়ে একে অন্যকে অভিনন্দিত করবে এবং যখন পৌত্তলিকরা ধুলিসাৎ হবে এবং আর আমাকে দেবতা বলে নয় মানুষ রূপেই গণ্য করা হবে। অবশ্যই তোমাদের বলছি, সেই হবে রসূলুল্লাহর আবির্ভাব কাল।’’ (অধ্যায়-৭২)
হাশরের দিবসে আল্লাহর রসুল (সা.)

আল্লাহর রসূল (সা.) সকল নবীদের একত্র করে আহবান করবেন যেন তাঁরা তাঁর সঙ্গে আল্লাহর দরবারে ঈমানদারদের পক্ষে সুপারিশের জন্য গমন করেন। কিন্তু প্রত্যেকেই অজুহাত দেখাবেন, ভীতি প্রকাশ করে বললেন, আল্লাহর সমীপে সব জেনেশুনে কী করে উপস্থিত হব? আল্লাহপাক তখন অবস্থা অবলোকন করে তাঁর রসূলকে স্মরণ করিয়ে দেবেন যে, কীভাবে তাঁর প্রেমাকর্ষণে জগতের সব কিছুই করা হয়েছিল। ফলে রসূলের চিত্ত হতে সকল ভীতি দূর হবে, তিনি ভক্তি ও প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে একাকী বিচারাসনের সমীপবর্তী হবেন যখন ফেরেশতারা গাইতে থাকবেন, ‘‘রহমত পরিপূর্ণ আপনার পবিত্র নাম, হে আল্লাহ, আমাদের মা’বুদ।’’ ... (অধ্যায়-৫৫) এভাবে বারনাবাস ইঞ্জিলের প্রচুর স্থান রসূল (সা.) সম্পর্কে আলোচনা এসেছে। কিন্তু ইহুদী ও খ্রিস্টানগণ এ সত্যকে গোপন রেখেছে। ইহুদীদের আসমানী কিতাব হচ্ছে হিব্রু বাইবেল। খ্রিস্টানগণ হিব্রু বাইবেলকে নিজেদের কিতাব বলে মেনে নিয়েছে বটে, কিন্তু তার সঙ্গে আরও কিছু যোগ করে নিয়েছে। তারা হযরত ঈসার বাণী প্রচারের উদ্দেশ্যে লিখিত ও প্রকাশিত রচনাকে গ্রহণ করেনি। খ্রিস্টান পাদ্রীগণ হযরত ঈসার জীবন ও শিক্ষা সম্পর্কে লিখিত অনেক কিতাবই বাতিল করে দিয়েছে। নিউ টেস্টামেন্টে তাঁর অতি অল্প সংখ্যক রচনাই বহাল রেখেছে। তার মধ্যে চারটি ক্যানোনিক গসপেলই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। চতুর্থ শতাব্দীর শুরুতে সেন্ট পল প্রবর্তিত আকিদা সর্বসম্মত খ্রিস্টান ধর্মরূপে মনোনীত করা হয়। অতঃপর এই ধর্মমতের বিপরীত আকিদা পেশ করার সমস্ত গ্রন্থাদি পরিত্যক্ত ও বেআইনি ঘোষিত হয়। আর এভাবেই পলীয় মতবাদীদের ব্যাপক চক্রান্তে পরাজিত বারনাবাস নিক্ষেপ্ত হলে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে, খ্রিস্টান জগতকে জানতে দেওয়া হল না রসূল (সা.) সম্পর্কে।
লেখক : কলাম লেখক

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।