সংবাদ শিরোনামঃ

বিদ্যুৎ : কোন সুখবর নেই লোডশেডিং তীব্রতর হবে ** জেনারেল মঞ্জুরকে হত্যার নেপথ্য খলনায়ক কে? ** জামায়াত নেতৃবৃন্দ যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত নন ** কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে আ’লীগ সরকারের কোরআন বিরোধী নারী নীতি ** বিশ্বকাপে বাংলাদেশের স্বপ্ন প্রলম্বিত হোক ** পাকিস্তানকে অস্থিতিশীল করার নায়ক ডেভিস ইস্যুতে পাক জনমত ও আদালতের চাপে সরকার ** ভূমিকম্প আর সুনামির পর পরমাণু আতঙ্কে জাপান ** কোরআন বিরোধী নারীনীতির অনুমোদনের পর সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় ** আশির দশক ও কবি মতিউর রহমান মল্লিক **

ঢাকা শুক্রবার ০৪ চৈত্র ১৪১৭, ১২ রবিউস সানি ১৪৩২, ১৮ মার্চ ২০১১

।। ড. মাহফুজুর রহমান আখন্দ ।।
বাংলাদেশ আমাদের প্রিয় জন্মভূমি। এ ভূখন্ডের মানুষের জন্যে একটি বড় নিয়ামত বাংলাভাষা। হাজারো চড়াই উৎরাইয়ের মধ্যদিয়ে পাল ও সেনদের আমল পেরিয়ে মুসলিম শাসনামলে এ ভাষা পরিপুষ্টি অর্জনের পথে এগিয়ে যায়। কোম্পানী ও বৃটিশ আমলে বাংলাভাষার অগ্রযাত্রায় নতুন কোন সহযোগিতা না পেলেও বৃটিশ বিদায়ের ঢেউ শুরু হবার পর থেকে বাংলাভাষা নতুন প্রাণের স্পন্দনে এগিয়ে যাবার প্রয়াস পায়। পাকিস্তানী শাসকদের একচোখানীতিকে অগ্রাহ্য করে উনিশ’শ বায়ান্ন সালে নতুনভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ পায় বাংলাভাষা। আজ স্বাধীন দেশে বাংলাভাষারও রাজধানী ঢাকা। তাইতো এখানকার মানুষের বিশ্বাসের উপাখ্যানসমূহ নিজস্ব ভাষাতেই নির্মিত হচ্ছে। কিন্তু মহানবী (স.) এর আদর্শ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অবাঙ্গালীরাই প্রাথমিকভাবে মৌলিক ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁদের পথ ধরেই বাংলাভাষী মুসলমানগণ এগিয়ে গেছেন। এ নিবন্ধের ক্ষেত্র অনেক বড়। সংক্ষিপ্তভাবে আউলিয়া কিরাম ও মুসলিম শাসকদের ভূমিকাকে পরোক্ষ এবং উলামা সম্প্রদায়, লেখকশ্রেণী এবং সাংগঠনিক প্রয়াসকে প্রত্যক্ষ ভূমিকা হিসেবে এখানে উল্লেখ করা হলো।

আদর্শ প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক প্রয়াস
ব্রাহ্মণ, কায়স্থ, বৈদ্য, শূদ্র এই চার প্রধান বর্ণ ও ছত্রিশ জাত নিয়ে ভারতবর্ষের হিন্দু সম্প্রদায় গঠিত হয়েছে বলা হলেও প্রকৃত অর্থে ৪১টি উপবর্ণের সমন্বয়ে তা গঠিত ছিল। প্রাচীনকালে গোত্র গত পেশার ভিত্তিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্রেণীবিন্যাস করা হয়েছিল। খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতকের মধ্যভাগে আর্যবংশীয় হিন্দুদের সাথে স্থানীয় আদিম জনগোষ্ঠীর বৈবাহিক সম্পর্কের ভিত্তিতে নিম্নবর্ণের হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয়। তৎকালীন সময়ে হিন্দু সমাজে কৌলিন্য প্রথা প্রবল ছিল। কুলীনরা অকুলীন বাড়িতে সচরাচর নিমন্ত্রণ গ্রহণ করতো না; বিশেষ কারণে বিশেষ কোন বাড়িতে নিমন্ত্রণে গেলেও সেখানে যাবার সময় পারিবারিক গোলাম বা দাস দ্বারা নিজেদের থালাবাটি সঙ্গে নিয়ে যেত। বাংলার শাসকগোষ্ঠী হিন্দু ধর্মের অনুসারী হলেও সাধারণ জনগণ বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি ঝুঁকে পড়েছিল। বিশেষত হিন্দুদের বর্ণ প্রথার কারণে নিম্নবর্ণের হিন্দুরা ক্রমশ বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি ঝুঁকে পড়ে। এভাবে ইসলাম আগমণের পূর্ব পর্যন্ত বাঙালি সমাজে হিন্দু ধর্মের পাশাপাশি বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাবও লক্ষ্য করা যেত।

পঞ্চম শতাব্দীর শেষ থেকে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুদের হাতে নিম্নবর্ণের হিন্দু-বৌদ্ধরা ব্যাপকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়। হিজরী প্রথম শতকের শেষ দিকে (৯৬ হি.) ৭১২ খ্রিস্টাব্দে উমাইয়া শাসনামলে মুসলিম সেনাপতি মুহাম্মদ বিন কাসিমের নেতৃত্বে সিন্ধু অঞ্চলে ইসলামের বিজয় নিশ্চিত হবার মধ্যদিয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় রাজনৈতিকভাবে ইসলামের প্রতিষ্ঠা শুরু হয়।

মহানবী (স.) এর আগমনের পূর্বেই তারা ভারতীয় উপমহাদেশ, বার্মা, কম্বোডিয়া ও চীনের ক্যান্টন পর্যন্ত বাণিজ্যিক যোগাযোগ স্থাপন করেছিল এবং ষষ্ঠ ও সপ্তম শতাব্দীর সূচনা লগ্নেই তারা দক্ষিণ ভারতের মালাবার, কালিকট, চরিরবন্দর, তৎকালীন চট্টগ্রাম ও আকিয়ারের সমুদ্রোপকূলে স্থায়ী বাণিজ্যিক উপনিবেশও গড়ে তোলে। পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকেই ইসলাম প্রতিষ্ঠার সমসাময়িক কালের মুসলমানরাও বাণিজ্যিক কারণে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় বাণিজ্য করতে আসে এবং সপ্তম শতাব্দী থেকে একাদশ শতাব্দী পর্যন্ত চীনা বাণিজ্যে মুসলিম প্রভাব অব্যাহত রাখে। তৎকালীন সময়ে দক্ষিণ চীনের ক্যান্টন বন্দর ‘খানফু’ নামে পরিচিত ছিল। মুসলিম বণিকগণ এ সময় ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল বিশেষত মালাবার এবং চট্টগ্রাম থেকে কাঠ, মসলা, সুগন্ধী দ্রব্য ও ঔষধি গাছগাছরা সংগ্রহ করত। বাণিজ্যিক কারণে মুসলমানরা এ সব অঞ্চল সফর করলেও মূলত ইসলাম প্রচার তাদের মূখ্য বিষয় ছিল। কেননা দীনের দাওয়াত দান ও দীন প্রতিষ্ঠার কাজকে প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অত্যাবশ্যকীয় করে দেয়া হয়েছে। দীন প্রচারের এ অনুভূতির প্রেক্ষিতে তারা বাণিজ্যিক কর্মকান্ডের পাশাপাশি ইসলাম প্রচারকে অন্যতম প্রধান কাজ হিসেবে গ্রহণ করার কারণে মহানবীর (স.) জীবদ্দশাতেই ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলাম প্রচারের প্রমাণ পাওয়া যায়।
সপ্তম শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে আরব মুসলিম বণিকগণ চট্টগ্রাম অঞ্চলে বাণিজ্য ব্যাপদেশে মিশন নিয়ে যাতায়াত শুরু করলেও অষ্টম শতাব্দীতে তাদের আগমন আরও বৃদ্ধি পায়। এ সময় চট্টগ্রামে আগত আরব বণিকদের সংস্পর্শে এ এলাকার মানুষ ইসলাম সম্পর্কে অবগত হবার সুযোগ পায়। বণিকরা কেউ স্বপরিবারে আসেননি। অন্যদিকে মৌসুমী বায়ুর জন্য তাদেরকে প্রায় ৫/৬ মাস অপেক্ষা করতে হত। এ সময় তারা স্থানীয় হিন্দু-বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মহিলাদের বিয়ে করতেন। বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ মহিলাগণ যেমন ইসলাম গ্রহণ করতেন তেমনি তাঁদের গর্ভস্থ সন্তানরাও ইসলামের সুমহান আদর্শকে গ্রহণ করেই বেড়ে ওঠে। এভাবে ক্রমশ আরব বণিক, বহিরাগত মুসলিম দরবেশ, সুফি, উলামা ও ইসলাম প্রচারকদের উৎসাহ উদ্দীপনায় চট্টগ্রাম তথা বর্তমান বাংলায় বসবাসরত নির্যাতিত হিন্দু ও বৌদ্ধগণ ব্যাপকহারে ইসলাম গ্রহণ করে। ফলে চট্টগ্রামসহ মুসলিম পরিবারের সমন্বয়ে একটি মুসলিম সমাজ গড়ে ওঠে। দশম শতাব্দীতে সেখানে মুসলিম সমাজের প্রভাব এতটা বৃদ্ধি পেয়েছিল যে, কোন কোন গবেষক এটাকে ছোটখাট মুসলিম রাজ্য হিসেবে চিহ্নিত করে এর আমীরকে ‘সুলতান’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। এ সুলতানের অধীনস্ত এলাকা ছিল মেঘনা নদীর পূর্বতীর থেকে নাফ নদীর উত্তর তীরবর্তী সমুদ্রোপডূলবর্তী ভূভাগ পর্যন্ত। আরাকানের জাতীয় ইতিহাস রাজোয়াং এর সূত্রে তারা উল্লেখ করেন যে, আরাকানরাজ সুলতইঙ্গ-ৎ-চন্দ্র (৯৫১-৯৫৭) ৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে রাজ্য জয়ে বের হন। তিনি নিজ রাজ্যের সীমা অতিক্রম করে ‘থুরতনকে’ পরাজিত করে চত্তাগৌং - এ একটি প্রস্তর নির্মিত বিজয়স্তম্ভ নির্মাণ করে পাত্র মিত্রের অনুরোধে তিনি স্বরাজ্যে ফিরে যান। এ ‘চেত্তাগৌং’; অর্থ যুদ্ধ করা অনুচিত। এ শব্দ থেকেই চট্টগ্রাম নামকরণ হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। উল্লেখ্য যে, এখানে ‘থুরতনকে’ পরাজিত করা বলতে অর্থাৎ সেই মেঘনা অববাহিকায় প্রতিষ্ঠিত নব ইসলামি রাজ্যের সুলতানকে বুঝানো হয়েছে বলে কেউ কেউ মন্তব্য করেন। কিন্তু এ বিষয়টি বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়। তবে বাংলায় ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা হবার অনেক আগেই যে চট্টগ্রাম আরাকানে ইসলামি পরিবেশ সম্বলিত সামাজিক অবকাঠামো নির্মিত হয়েছিল তা নিঃসন্দেহে বলা যায় এবং বাংলায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার পর তা যে আরও সুদৃঢ়রূপ লাভ করেছিল তা সহজেই অনুমান করা যায়।

দশম ও একাদশ শতাব্দীতে আরব বণিক ও সুফি দরবেশদের মধ্যে বদরুদ্দিন (বদর শাহ) নামে ইসলাম প্রচারক এ অঞ্চলে আসেন এবং ধর্মীয় ও সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেন। তার নামানুসারে আসামের সীমা থেকে শুরু করে মালয় উপদ্বীপ পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে ‘বদর মোকাম’ নামে মসজিদও নির্মিত হয়েছে। ড. মুহাম্মদ এনামুল হক ও আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ বলেন ‘‘খ্রিস্টীয় নবম ও দশম শতাব্দীতে আরাকানে ইসলাম বিস্তৃতি ও মুসলমান প্রভাব অন্যান্য ঐতিহাসিক কর্তৃক স্বীকৃত হইয়াছে। এই সময় হইতেই আসামের সীমা হইতে মালয় উপদ্বীপ পর্যন্ত সমুদ্র তীরবর্তী ভূভাগের নানা স্থানে ‘‘বুদ্ধের মোকাম’’ নামক এক প্রকার অদ্ভুত মসজিদ গড়িয়া উঠিতে থাকে; এই মসজিদগুলিকে বৌদ্ধ, চীনা ও মুসলমান জাতি সমভাবে সম্মান প্রদর্শন করিয়া থাকে।’’

বদর নামে অনেক পিরের সন্ধান পাওয়া যায়। পির বদর, বদর শাহ, বদর আউলিয়া, বদর-ই-আলম, পির বদর উদ্দীন বদর-ই-আলম, শাইখ হযরত বদর-ই-আলম, শাইখ বদর-ই-আলম জাহিদী এবং শাইখ বদর-উল-ইসলাম প্রভৃতি নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। শুধু নামই নয়, পির বদরের সমাধিও বিভিন্ন স্থানে দেখা যায়, বর্ধমান জেলার কালনায়, দিনাজপুরের হেমতাবাদে, চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী, পটিয়া, রাউজান এবং রাঙ্গুনিয়া থানার ৪টি স্থানে বদর শাহের দরগাহ দেখা যায়।

এভাবে বগুড়ার মাহী সওয়ার বলখী (রহ.), রাজশাহীর শাহমখদুম রুপোশ (রহ.), সিলেটের শাহ জালাল (রহ.) ও চট্টগ্রামের শাহ আমানতসহ (রহ.) হাজারো অলি বাংলায় ইসলাম প্রচারের জন্য আসেন। বাংলায় আগত ও বসতি স্থাপনকারী এসব আরব বণিক, নাবিক, সূফি, দরবেশ এবং ত্রয়োদশ শতকের পর থেকে তুর্কী, পাঠান ও মোগলদের শাসনামলে মুসলমানদের সাথে এ অঞ্চলের নিম্নবর্ণের হিন্দু ও বৌদ্ধদের সংমিশ্রণ ঘটে এবং তারা ব্যাপকহারে ইসলামে দীক্ষা গ্রহণ করেন। চতুর্দশ শতাব্দীর মরক্কোর পর্যটক ইবনে বতুতা ১৩৪৬ সালে যখন চট্টগ্রাম সফর করেন তখন তিনি সেখানে অনেক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবার দেখেছিলেন।

ত্রয়োদশ শতকের শুরুতেই ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বখতিয়ার খলজী লখনৌতি বিজয় করে বাংলায় ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠার কাজকে এগিয়ে দেন। তাঁর বিজয়ী অঞ্চলে তিনি ইসলামী আদর্শ প্রচারের নানা অবকাঠমো গড়ে তোলেন। মীনহাজ-ই- সিরাজ অত্যন্ত সুস্পষ্ট করে লিখেছেন ‘ঐ অঞ্চলসমুহে অসংখ্য মসজিদ, মাদরাসা ও খানকাহ তার এবং তার আমিরদের প্রচেষ্টায় দ্রুত ও সুন্দরভাবে নির্মিত হয়। বখতিয়ার খলজী লখ্নৌতি রাজ্যের রাজধানীতে, তার আমীরগণ ইক্তার বা প্রদেশের সদর দপ্তরে এবং অন্যান্য খলজী মালিকগণ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মুসলমানদের নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদ, মুসলমানদের সন্তানদের সুশিক্ষার জন্য মাদ্রাসা এবং সূফীদের দ্বারা নওমুসলিমদের ইলমে দ্বীন শিক্ষা দেয়ার জন্য খানকা প্রতিষ্ঠা করেন। শাসনতান্ত্রিক পুনঃবিন্যাসের পর তিনি মুসলিম সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা করেন। মুসলিম সমাজের নিউক্লিয়াস বা কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে মসজিদ। মুসলমানেরা যেখানে গিয়েছে সেখানেই তারা প্রথমে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছে। সেই প্রক্রিয়ায় পরবর্তীতে যেসব মুসলিম শাসক বাংলা শাসন করেছেন তারা প্রত্যেকই মহানবীর আদর্শকে ছড়িয়ে দেবার জন্যে শিক্ষালয় স্থাপন করেছেন। যে সকল মুসলমান অভিযান পরিচালনার সময়ে অথবা তার পরে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য লখ্নৌতে আগমন করেন তাদের সুবিধার জন্য তিনি মসজিদ, মাদরাসা ও খানকাহ প্রতিষ্ঠা করেন। এ প্রসঙ্গে আবদুল করিম লিখেছেন, ‘‘একজন সৈনিক হইয়াও বখতিয়ার খলজী বুঝিতে পারেন যে, মুসলমান সমাজ প্রতিষ্ঠা ব্যতীত লখ্নৌতির মুসলমান রাজ্য শুধু সামরিক শক্তির উপর নির্ভর করিতে পারে না। সামরিক শক্তির প্রয়োজন একদিন শেষ হইবেই, কিন্ত অতঃপর, অর্থাৎ শান্তির সময়ে মুসলমান সমাজ- মুসলমান রাজ্যের স্থায়িত্ব বিধান করিবে’’। আমাদের দেশের আবহাওয়া এবং আমাদের ইতিহাস অসচেতনতা ঐতিহাসিক নিদর্শন দ্রুত নষ্ট অথবা ধ্বংস হয়ে যায়। যার কারণে বখতিয়ার খলজীর আমলের কোন স্থাপত্য নিদর্শন আজও আবিষ্কৃত হয়নি।

দ্বীন প্রচারের কাজকে মুসলিম শাসকগণ মুসলমানদের মৌলিক কাজ বলে মনে করতেন। মুসলিম শাসকদের প্রচেষ্টায় অনেক স্থানীয় অধিবাসী ইসলামে দীক্ষিত হয়েছেন। বখতিয়ারের সময়কার উদাহরণ দিতে গিয়ে এ প্রসঙ্গে মীনহাজ-ই-সিরাজ মন্তব্য করেছেন- ‘কোচ ও মেচ জাতির প্রধানদের মধ্যে একজন-যিনি আলী মেচ নামে পরিচিত হন- মোহাম্মদ বখতিয়ারের হস্তে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন এবং তিনি মোহাম্মদ বখতিয়ারকে পার্বত্য অঞ্চলে নিয়ে যেতে এবং পদ প্রর্দশনে সাহায্য করেন। কোচ এবং মেচ জাতির পরিচয় প্রদান করতে গিয়ে তবকাত-ই-নাসিরীর অনুবাদক আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া লিখেছেন, ‘‘বাংলাদেশের প্রত্যন্ত [উত্তর] অঞ্চলে বিশেষ করে, বৃহত্তর ও অবিভক্ত দিনাজপুর ও রংপুর জেলাসমূহে, বিহারের পুর্নিয়া জেলার কিয়দংশে ও অবিভক্ত আসামের পশ্চিমাঞ্চলে একটি পৃথক নরগোষ্ঠীর অস্তিত্ব দেখা যায়। চ্যাপটা নাক, উন্নত গন্ডাস্থি, বঙ্কিম চক্ষু, উদ্দন্ড কেশ এবং কেশ বিহীন দেহ, কেশ বিরল মুখমন্ডল এর অধিকারী এ নরগোষ্ঠী যে আদিতে মোঙ্গলীয় রক্তধারা থেকে উৎপন্ন তাতে কোন সন্দেহ নেই। অবিভক্ত দিনাজপুর জেলার উত্তরাংশে এদের নিবাস অধিক পরিমাণে কেন্দ্রীভূত ছিল এবং এখনও আছে। রংপুর জেলার উত্তর-উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে আজও এদের ঘনবসতি দেখা যায়।’ মীনহাজের বর্ণনা থেকে এটা সহজে ধারণা করা যায় যে, মেচ জাতির প্রধান আলী মেচকে বখতিয়ার খলজী স্বয়ং দ্বীনের দাওয়াত দেন। সে দাওয়াত গ্রহণ করে আলী মেচ এবং তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা, এমনকি তার মেচ জাতির বহু লোক বখতিয়ারের হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন। আলী মেচকে জোর করে বা তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যে ধর্মান্তরিত করা হয়নি এবং আলী মেচ ও তার লোকেরা যে মোহাম্মদ বখতিয়ারের প্রতি অত্যন্ত আন্তরিকভাবে অনুগত ছিলেন তা সহজে বোঝা যায় বখতিয়ার খলজীর চরম দুর্দিনে তাদের সাহায্যে ও সেবার দৃষ্টান্ত দেখে। বখতিয়ার খলজীর প্রতি যদি তারা বিরূপ থাকতেন তবে তার সেই চরম অসহায় মুহূর্তে ইচ্ছা করলে অতি সহজেই তার এবং তার সঙ্গীদের প্রাণনাশ করতে পারতেন; প্রতিশোধ নিতে পারতেন এবং তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসতেন না। এতে প্রমাণিত হয় যে আলী মেচ ও তার দলবলের সঙ্গে বখতিয়ার খলজীর একটা আন্তরিকতাপূর্ণ দ্বীনি সম্পর্ক ছিল।

বখতিয়ার খলজী নওদীয়াহ ও লৌখনতি বিজয় করে বাংলার উত্তর প্রান্তে একটি মুসলিম রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেখানে তিনি মসজিদ, মাদরাসা ও খানকা প্রতিষ্ঠা করে মুসলিম সমাজের ভিত মজবুত করেছিলন এবং তিনি মুসলিম রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের প্রতীক খোৎবা এবং মুদ্রার প্রচলন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। সেইসাথে তিনি রাজ্যে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ করে মোক্তা, আমীল ও কাজী নিয়োগ দিয়ে একটি উন্নত প্রশাসন প্রবর্তন করেছিলেন এবং রাজ্যে দ্বীন ইসলাম প্রচার করে কোচ- মেচ সহ হাজার ধরনের অমুসলিমকে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে মুসলিম করেছিলন। সেই ধারাবাহিকতায় বাংলার সকল মুসলিম শাসকই এ কাজে আত্মনিয়োগ করেছেন। এমনকি বাংলার নবাবগণও এ কাজে পিছিয়ে ছিলেন না। এসবের সুফল আজকের স্বাধীন, সার্বভৌম ও ইসলামী আদর্শভাবাপন্ন বাংলাদেশ।

আদর্শ প্রতিষ্ঠায় স্থানীয় প্রয়াস
বাংলায় আগত অলি এবং অধিকাংশ শাসকই ছিলেন অবাঙ্গালী। তাদের অনুসারী বাংলাভাষী মুসলমানদের মধ্য থেকে উলামা শ্রেণী তৈরি হয়, যারা রাসূল (স.) এর আদর্শ প্রতিষ্ঠার কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। কেননা জ্ঞানার্জনকে ইসলামে ফরজ করা হয়েছে। জ্ঞান চর্চাকে গুরুত্ব দেবার কারণে ইসলামে আলিম বা জ্ঞানীদের অনেক মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে। সমাজে এঁরা ছিলেন উচ্চশ্রেণীর প্রভাবশালী সম্প্রদায়। সরকারি পদমর্যাদা কিংবা অঢেল সম্পদ না থাকলেও ধর্মানুরাগ, বিদ্যা এবং আদর্শ চরিত্রের জন্য তারা সমাজে উচ্চতম মর্যাদায় অধিষ্ঠিত ছিলেন। তাদের প্রতি লোকের শ্রদ্ধা ও সম্মান তাদেরকে সামাজিক মর্যাদার উচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত করে। জনসাধারণ তাদের নিজেদের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক জীবনে কল্যাণ পাবার আকাঙ্ক্ষায় আলিমদের ফতুয়া ও আদেশ-উপদেশ শ্রদ্ধার সাথে মেনে চলার চেষ্টা করত এবং বাস্তবতার নিরিখে তাঁদের ধর্মীয় নির্দেশের অনুসরণ করত। ধর্মীয় ও নৈতিক জীবনের পথ প্রদর্শক হিসেবে তাঁদের মর্যাদা এবং ইসলামের সুমহান জ্ঞান তাঁদেরকে সামাজিক নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত করত।

মুসলিম শাসনামলে সমসাময়িক জীবনে ন্যায় বিচার, আইন ও নীতিশাস্ত্রীয় বিষয়াদির সঙ্গে সংযুক্ত কাজি, মির, আদল, মুহতাসিম বা লস্কর উজির এবং রাজ্যের বিভিন্ন পদে আলিমদেরকেও নিয়োগ দেয়া হত। মূলত এরা ছিলেন ইসলামি শরিয়তের তত্ত্বাবধায়ক এবং সমাজের নৈতিক ও ধর্মীয় জীবনের অভিভাবক। তারা এ সকল পদসমূহে অধিষ্ঠিত থাকার ফলে সমাজে তাদের যথেষ্ট প্রভাব প্রতিপত্তি ও সামাজিক মর্যাদা ছিল।
আলিমগণ সমাজে মুসলমানদের শিক্ষকের ভূমিকা পালন করতেন। মুসলিম সমাজে বিদ্যা শিক্ষার প্রতি উৎসাহিত করা হত। বিশেষকরে মুসলিম পরিবারের সন্তানকে অবশ্যই মক্তব, মসজিদ কিংবা ইমাম বাড়ায় ইসলামের বিধিবিধান জানার জন্য কোরআন ও হাদিস পড়তে হত। শিক্ষার ক্ষেত্রে মেয়েদেরও উৎসাহিত করা হত। সাধারণত পাঁচ বছর বয়সে ছেলে-মেয়েদের বিদ্যা শিক্ষার জন্য প্রেরণ করা হত। কবি আলাওলের ভাষায়-
পঞ্চম বরিষ যদি হইল রাজবালা
পড়িতে গুরুর স্থানে ছিল ছাত্রশালা \
অন্যান্য জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি মুসলমান ছেলে মেয়েরা যাতে নামাজ রোজাসহ ইসলামের আনুসঙ্গিক বিষয় জানতে আগ্রহী হয় এজন্য সমাজের বুদ্ধিজীবী মহল বিভিন্নভাবে উৎসাহ প্রদান করত। কবি আলাওলের ভাষায়-
তালিব-এলম দেখি হীন জ্ঞান করে
না যাইব তার ইমান সঙ্গেতে আখেরে \
গুরু এ শিশুরে যদি বিসমিল্লাহ পড়াএ
গুরু মাতা পিতা শিশু ভেহেস্তেত যাএ \
পড়নে যাইতে যথ ধুলা লাগে পাএ
নরক হারাম তার করন্ত খোদা এ \

জনসাধারণ থেকে শুরু করে রাজ্যর সর্বোচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিগণের ভক্তি-শ্রদ্ধা ও ভালবাসার কারণে সমাজে লেখক ও বুদ্ধিজীবীদের সামাজিক মর্যাদা ও জীবন যাত্রার মানও ছিল অনেক উন্নত। সেই সাথে মুসলিম সুলতানদের পৃষ্ঠপোষকতার ফলেই বুদ্ধিজীবী মহল পরবর্তী প্রজন্মের জন্য রসুল বিজয় কাব্য, পদ্মাবতী, সয়ফুলমুলুক বদিউজ্জামাল, সতী ময়না ও লোরচন্দ্রানী, শরিয়তনামা, প্রভৃতি অসংখ্য মূল্যবান রচনা উপহার দিয়েছেন। কবি আফজল আলী, শাহবারিদ খান, সৈয়দ সুলতান, মহাকবি দৌলতকাজী, আলাওল, কোরেশী মাগন ঠাকুর, নসরুল্লাহ খোন্দকার প্রমুখ প্রথিতযশা কবি সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী শুধু বাংলা ভাষাকে নয় বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্য ও মহানবী (স.) এর আদর্শের আলোকে সামাজিক চিত্রকে যেমন চিরঞ্জীব করে রেখেছেন তেমনি বাস্তব চরিত্রেও বুদ্ধি চর্চা এবং দ্বীনি আমলের মধ্যে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছিলেন।

সুতরাং বলা যায় যে, উলামা ও বুদ্ধিজীবী মহল যেমন বাস্তব জীবনে ইসলামের অনুসারী ছিলেন তেমনি তাঁদের আদেশ দাতা, আশ্রয়দাতা ও পৃষ্ঠপোষকগণও ইসলামের পূর্ণাঙ্গ অনুসারী ছিলেন, ফলে সমাজে ইসলামের প্রসার ও প্রভাব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীকালে ইসমাঈল হোসেন সিরাজী, মোজাম্মেল হক, কায়কোবাদ, কাজী নজরুল ইসলাম, মাওলানা আকরম খাঁ, গোলাম মোস্তফা, ফররুখ আহমদ, মতিউর রহমান মল্লিকসহ হাজারো লেখক-কবি-সাহিত্যিক মহানবী (স.) এর আদর্শ প্রচার ও প্রতিষ্ঠার কাজ করে গেছেন।

আলিম ও লেখকশ্রেণীর পাশাপাশি সাংগঠনিক প্রক্রিয়াতেও রাসূল (স.) এর আদর্শ প্রতিষ্ঠার কাজ চলে আসছে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন ও রাসূল (স). এর আদর্শকে বাস্তবায়নের জন্য বালাকোর্টের সংগ্রাম, তিতুমীর-শরীয়তুল্লাহর আন্দোলন বিশেষ ভূমিকা পালন করে। পরবর্তীতে ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের মধ্য দিয়ে যে আন্দোলনের সূত্রপাত হয় তারই রেশ ধরে ১৯০৬ সালে মুসলিমলীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। বাস্তব ক্ষেত্রে তারা সফল না হলেও মূলত মহানবীর আদর্শিক ভিত্তিকে ধারণ করেই তাদের প্রচারণা চালিয়ে এসেছে এবং স্বাধীনতা আন্দোলনকে বেগবান করেছে। অপরদিকে জামায়াতে ইসলামীও মহানবীর আদর্শকে বাস্তবায়নের জন্য ১৯৪১ সাল থেকে কাজ করে আসছে। পাশাপাশি নেজামে ইসলাম, খেলাফত মজলিশ, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনসহ বেশকিছু ইসলামী রাজনৈতিক দল মহানবীর আদর্শকে বাস্তবায়নের জন্যে কাজ করে যাচ্ছে। সেইসাথে অরাজনৈতিক ময়দানে জমঈয়তে আহলে হাদীস, আহলে হাদীস আন্দোলন যেমন কাজ করে যাচ্ছে তেমনি দ্বীনের মেহনত হিসেবে মসজিদভিত্তিক কাজ করে যাচ্ছে তাবলীগ জামায়াত। ছাত্রসমাজের মাঝেও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির, ইসলামী ছাত্র মজলিশসহ বেশ কিছু ছাত্র সংগঠন মহানবীর আদর্শ প্রতিষ্ঠার কাজে তৎপর রয়েছে। এছাড়াও শিরক-বিদআতের প্রশ্নের ডামাডোলের মধ্যে ঘুরপাক খাওয়া কিছু আবেগী সংসগঠনও এ কাজে সময় ও শ্রম বিনিয়োগ করছে। তবে আশার চেয়ে আশংকার কথা যে, মহানবীর আদর্শ প্রতিষ্ঠার কাজে যতোটা তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে তার চেয়ে সরাসরি মহানবীর আদর্শ বিরোধী কিংবা আদর্শবাদিতার মুখোশে নির্মিত সংগঠনসমূহের তৎপরতা আরো বেশি প্রবল। দুঃখের সংবাদ যে, আদর্শবাদিতার মুখোশ পড়ে অনেক সংগঠন শিরক-বিদআতের আখড়ায় পরিণত হচ্ছে। যুগের চলমান বৈরি হাওয়া, স্থানীয় রাজনীতিবিদগণের স্বার্থসংশ্লিষ্টতা এবং বর্হিবিশ্বের ইহুদি-খৃস্টান চক্রের ইস্যু বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে তারা বেশ জৌলুসের সাথেই এগিয়ে যাচ্ছে। মুসলমানদের এ বিষয়ে সতর্ক হবার এখনই সময়। লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, mrakhanda@gmail.com.

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।