সংবাদ শিরোনামঃ

বিদ্যুৎ : কোন সুখবর নেই লোডশেডিং তীব্রতর হবে ** জেনারেল মঞ্জুরকে হত্যার নেপথ্য খলনায়ক কে? ** জামায়াত নেতৃবৃন্দ যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত নন ** কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে আ’লীগ সরকারের কোরআন বিরোধী নারী নীতি ** বিশ্বকাপে বাংলাদেশের স্বপ্ন প্রলম্বিত হোক ** পাকিস্তানকে অস্থিতিশীল করার নায়ক ডেভিস ইস্যুতে পাক জনমত ও আদালতের চাপে সরকার ** ভূমিকম্প আর সুনামির পর পরমাণু আতঙ্কে জাপান ** কোরআন বিরোধী নারীনীতির অনুমোদনের পর সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় ** আশির দশক ও কবি মতিউর রহমান মল্লিক **

ঢাকা শুক্রবার ০৪ চৈত্র ১৪১৭, ১২ রবিউস সানি ১৪৩২, ১৮ মার্চ ২০১১

।। সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদূদী (রহ.) ।।
ইসলামী ইতিহাসের দৃশ্যপটে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সুমহান এবং উন্নত ব্যক্তিত্ব এতটা সমুজ্জ্বল পরিদৃষ্ট হয় যে, শুরু থেকে আজ অব্দি বড় বড় ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব যাদেরকে বিশ্ব জাহানের নায়ক (Heroes) হিসেবে গণ্য করা হয় সকলেই তাঁর মোকাবিলায় তুচ্ছ বলে প্রতীয়মান হয়। পৃথিবীর মহান ব্যক্তিবর্গের মধ্যে এমন একজন ব্যক্তিও নেই যার পূর্ণতার দ্বীপ্তি মানব জীবনের দু’একটি বিভাগ থেকে সম্মুখে অগ্রসর হতে পেরেছে। কেউ দর্শনের সম্রাট কিন্তু বাস্তব কর্মক্ষমতা বর্জিত। কেউ আমলের প্রতিভু কিন্তু চিন্তা শক্তিতে দুর্বল। কারো পূর্ণতা রাজনৈতিক কলাকৌশল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। কেউ কেউ সামরিক প্রতিভার আধার। কারো দৃষ্টি সামাজিক জীবনের এতটা গভীরে নিবদ্ধ যে অন্যান্য দিকগুলো দৃষ্টির অন্তরালে রয়ে গেছে। কেউ আবার নৈতিকতা এবং আধ্যাত্মিকতাকে পাশ কাটিয়ে গেছে। মোটকথা ইতিহাসের সর্বত্রই কেবল একরোখা নায়কই পরিদৃষ্ট হবে। কিন্তু মহানবী (সা.)ই এমন এক ব্যক্তিত্ব যার মধ্যে সমস্ত পূর্ণতার গুণাবলী পরিপূর্ণভাবে বিদ্যমান। তিনি নিজেই একজন দার্শনিক, একজন বিজ্ঞানী যিনি স্বীয় দর্শনকে তাঁর নিজের কর্মজীবনে বাস্তবায়নকারী, একজন রাজনৈতিক কৌশলী, সমর নায়ক, আইন প্রণেতা, নৈতিকতা বিনির্মাণকারী। তিনি নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী একটি স্বতন্ত্র সভ্যতা (Civilization) সৃষ্টি করে দেখিয়ে দেন। জীবনের সকল দিক বিভাগের মধ্যে এমন ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করেন যাতে অতিরঞ্জনের কোন নাম নিশানা পর্যন্ত দৃষ্টিগোচর হয় না। এ ধরনের বহুমুখী গুণাবলীর অধিকারী অন্য কোন একজন মানুষের কথাও কি আপনার জানা আছে?

পৃথিবীর বড় বড় ঐতিহাসিক ব্যক্তিদের মধ্যে কোন একজন মানুষও এমন নেই যে, কমবেশি স্বীয় পরিবেশের সৃষ্ট নয়। কিন্তু একমাত্র মহানবী (সা.)-এর মর্যাদা সকলের চাইতে আলাদা যে, তার জীবন পরিগঠনে সমকালীন পরিবেশের কোনই অবদান দৃষ্টিগোচর হয় না। আর কোন যুক্তিতেই একথা সাব্যস্ত করা যেতে পারে না যে, ঐতিহাসিকভাবে তখনকার পরিবেশ এমন একজন মানুষের আগমন প্রত্যাশিত ছিল। অনেক টেনে হিঁচড়ে আপনি বড়জোর যতটুকু করতে পারনে তা এর চেয়ে বেশী নয় যে, তখনকার ঐতিহাসিক কার্যকারণ এমন এক নেতার আবির্ভাবের দাবি করছিল যে নাকি বিভিন্ন গোত্রীয় বিভেদকে নির্মূল করে একটি মাত্র জাতিতে পরিণত করতো। দেশের পর দেশ জয় করে আরবদের অর্থনৈতিক কল্যাণ সাধন করতো, অর্থাৎ এমন একজন জাতীয়তাবাদী নেতার আবির্ভাবের দাবি করছিলো যেন সে সময়কার সকল আরব বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হতে যে  জুলুম অত্যাচার রক্তপাত প্রতারণা মোটকথা সম্ভাব্য সকল কলাকৌশললের মাধ্যমে তার নিজ জাতিকে সমৃদ্ধশালী করার পথ প্রশস্ত করতো এবং একটি জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য রেখে যেতো। এছাড়া সে সময়কার ইতিহাসের কোন দাবিই আপনি প্রমাণ করতে পারবেন না।

হেগেলের ইতিহাস দর্শন, কিংবা মার্কসের ঐতিহাসিক বস্ত্তবাদী ব্যাখ্যার দৃষ্টিকোণ থেকে আপনি বড়জোর এ সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেন যে, আরবের তদানীন্তন পরিবেশে একটি জাতি গঠন এবং সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার যোগ্যতাসম্পন্ন নেতার আবির্ভাবের প্রয়োজন ছিল কিংবা আবির্ভাব হতে পারতো। কিন্তু হেগেল কিংবা মার্কসীয় দর্শন যা ঘটে গেল তার কি ব্যাখ্যা দিবে? সে সময় সে পরিবেশে এমন এক ব্যক্তি জন্ম নিলেন যিনি সর্বোত্তম নৈতিক চরিত্র শিক্ষা দিলেন। মানবতাকে সুসজ্জিত পরিশীলিত ও সুসংগঠিত করলেন। মানুষের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করলেন। জাহেলী ধ্যান ধারণা এবং হিংসা বিদ্বেষ নির্মূল করলেন। যার দৃষ্টি জাতি গোষ্ঠী এবং দেশের সীমা সরহদ ডিঙ্গিয়ে সমগ্র মানবতার ওপর পরিব্যাপ্ত হয়েছে। যিনি নিজের জাতির জন্যই নয় বরং গোটা বিশ্ব মানবতার একটা নৈতিক, আধ্যাত্মিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করেছেন। যা অর্থনৈতিক কর্মকান্ড, আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে কল্পনার জগতে নয় বরং বাস্তবতার জগতে নৈতিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করে দেখিয়েছেন। আধ্যাত্মিকতা এবং বস্ত্তবাদের এমন সুসম ভারসাম্যপূর্ণ মিশ্রণ তৈরি করেছেন যা সে কালের ন্যায় আজো জ্ঞান ও বিচক্ষণতার শ্রেষ্ঠতম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। এমন এক ব্যক্তিত্বকে আপনি কি করে তৎকালীন আরবের জাহেলী পরিবেশের সৃষ্ট বলতে পারেন? শুধু এতটুকুই নয় যে, সে ব্যক্তি তার পরিবেশের ফসল হিসেবে পরিদৃষ্ট হয় না বরং যখনই আমরা তার কৃতিত্বের প্রতি গভীরভাবে দৃষ্টি নিবদ্ধ করি তখন মনে হয় তিনি স্থান-কাল-পাত্র থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন। তার দৃষ্টি পরিবেশ পরিস্থিতির বন্ধন ছিন্ন করে শতাব্দী ও সহস্রাব্দের (Millenium) সীমানা সম্মুখে এগিয়ে গেছে।

তিনি মানুষকে দেখেছেন সকল যুগ ও পরিবেশের আলোকে। একই সাথে তার জীবন যাপনের জন্য এমন সব নৈতিক এবং ধর্মগত পথ নির্দেশনা দান করেছেন  যা সর্বকালে সর্বাবস্থায় একইভাবে খাপ খেয়ে যায়। তিনি সে সব লোকের অন্তর্ভুক্ত নন ইতিহাস যাদেরকে সেকেলে লোকদের তালিকাভুক্ত করেছে। তাদের পরিচয় আমরা এভাবে দিতে পারি যে, তারা সে যুগের শ্রেষ্ঠ পথ প্রদর্শক ছিলেন। মানবতার জন্য সবচেয়ে ব্যতিক্রম এবং বিশিষ্ট নেতা হলেন ঐ ব্যক্তি যিনি ইতিহাসের চলমান ধারার সাথে (March) এগিয়ে যেতে পারেন। যিনি তার যুগের যেমন আদর্শ ও উত্তম নেতা তেমনি প্রত্যেক যুগেই তিনি আধুনিক (Modern) নেতা প্রমাণিত হন যেমন তার পূর্বের যুগে ছিলেন। আপনি যাদেরকে উদারতার সাথে ইতিহাস সৃষ্টিকারী বলে আখ্যায়িত করেন প্রকৃতপক্ষে তারা ইতিহাসের সৃষ্টি সমগ্র মানবেতিহাস সৃষ্টিকারী ব্যক্তিত্ব একজনই। পৃথিবীর ইতিহাসে যত নেতাই ইতিহাস সৃষ্টি করেছে তার অবস্থার ওপর পর্যালোচনার দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে লক্ষ্য করবেন যে, কার্যকারণ বা উপাদানগুলো স্বয়ং বিপ্লবের লক্ষ্য এবং পন্থা -নির্ধারণ করে দিচ্ছিল। বিপ্লবের নায়ক শুধু এতটুকু ভূমিকা পালন করেছে যে, সময়ের চাহিদানুযায়ী বিপ্লবের দিক ও পথ নির্দেশ করেছিল। বিপ্লবের নেতা অবস্থা ও পরিবেশের চাহিদাকে বাস্তবে রূপায়িত করার জন্য এমন একজন অভিনেতার ভূমিকা পালন করেছেন যার জন্য মঞ্চ পূর্ব থেকে প্রস্ত্তত ছিল। কিন্তু ইতিহাস এবং বিপ্লব সৃষ্টিকারী উভয় শ্রেণীর মধ্যে মহানবী (সা.) এমন ব্যক্তি যেখানে বিপ্লবের উপাদান বিদ্যমান ছিল না সে ক্ষেত্রে তিনি নিজেই বিপ্লবের উপাদান কার্যকারণগুলো উদ্ভাবন করেন যেখানে লোকদের মধ্যে বিপ্লবের সৃষ্টি এবং কর্মক্ষমতার মধ্যে বর্তমান ছিল না সেখানে তার নিজস্ব চেষ্টায় বিপ্লবের উপযোগী লোক তৈরি করেন, নিজের প্রচন্ড ব্যক্তিত্বকে দ্রবীভূত করে সহস্র মানুষের দেহে প্রবিষ্ট করিয়ে তাদের এবং তাদেরকে নিজের মনের মত করে তৈরি করে নিয়েছেন। এমনি একজন ইতিহাস স্রষ্টা এবং এ ধরনের বিপ্লবী মানুষ মানবেতিহাসের কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে কি?
উর্দু ডাইজেস্ট থেকে ভাষান্তর করেছেন আ. হ. ম. নূরুল হুদা

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।