সংবাদ শিরোনামঃ

বিদ্যুৎ : কোন সুখবর নেই লোডশেডিং তীব্রতর হবে ** জেনারেল মঞ্জুরকে হত্যার নেপথ্য খলনায়ক কে? ** জামায়াত নেতৃবৃন্দ যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত নন ** কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে আ’লীগ সরকারের কোরআন বিরোধী নারী নীতি ** বিশ্বকাপে বাংলাদেশের স্বপ্ন প্রলম্বিত হোক ** পাকিস্তানকে অস্থিতিশীল করার নায়ক ডেভিস ইস্যুতে পাক জনমত ও আদালতের চাপে সরকার ** ভূমিকম্প আর সুনামির পর পরমাণু আতঙ্কে জাপান ** কোরআন বিরোধী নারীনীতির অনুমোদনের পর সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় ** আশির দশক ও কবি মতিউর রহমান মল্লিক **

ঢাকা শুক্রবার ০৪ চৈত্র ১৪১৭, ১২ রবিউস সানি ১৪৩২, ১৮ মার্চ ২০১১

মোশাররফ হোসেন খান
মহান রাববুল আলামিন সমগ্র মানবজাতির জন্য তাঁর প্রেরিত সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব রাসূল মুহাম্মাদকে (সা.) ‘হিদায়াত’ স্বরূপ, ‘সুসংবাদ দানকারী’, ‘সতর্ককারী’, ‘রহমতস্বরূপ’ ও ‘পথপ্রদর্শক’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। এমন আরও বহুতর বিশেষণে রাসূল (সা.)  বিশেষত। আল-কুরআনে বলা হচ্ছে-
‘তিনি তাঁর রাসূলকে পথনির্দেশ ও সত্য দীনসহ প্রেরণ করেছেন, সমস্ত দীনের ওপর তাকে জয়যুক্ত করার জন্য। সাক্ষী হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সূরা আল ফাতহ : আয়াত ২৮)
আল্লাহপাক চান বান্দা হিসাবে মানুষ একমাত্র তাঁরই দাসত্ব করবে এবং তাঁর মনোনীত রাসূলকেই (সা.) অনুসরণ করবে। এটাই মহান আল্লাহর চূড়ান্ত ঘোষণা।

পৃথিবীতে বহু মানুষের বসবাস। প্রতিটি মানুষেরই রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন কর্মক্ষেত্র এবং জীবন যাপনের পৃথক কর্মপন্থা। মানসিকতা, চিন্তা ও ব্যক্তিসত্তার ক্ষেত্রেও রয়েছে অজস্র ভিন্নতা। প্রতিটি সমাজ, দেশ ও জাতি-গোষ্ঠীর জন্য রয়েছে পৃথক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নিজস্ব একটি স্বাতন্ত্রিক বৈশিষ্ট্য। সেটা থাকতেই পারে। পৃথিবীর ভারসাম্যপূর্ণ চলমানতার জন্য সেটার প্রয়োজনীয়তাও অনস্বীকার্য। কিন্তু সকল কিছুর ওপর প্রকৃত সত্য এই যে, কর্ম ও জীবনপ্রণালী কিংবা সামাজিক ও বৈশ্বিক ভৌগোলিক কারণে মানুষের মধ্যে যত প্রভেদই থাকুক না কেন-এক আল্লাহর দাসত্ব স্বীকার এবং রাসূলের (সা.)সর্বান্তকরণে অনুসরণ ছাড়া, একমাত্র ইসলামের বিধান, শাসন, জীবনপদ্ধতি, সামগ্রিক আদর্শ ও সংস্কৃতি জীবনের জন্য একান্ত অপরিহার্য হিসাবে গ্রহণ করা ছাড়া আখিরাতে চূড়ান্ত সফলতার অন্য কোনো পথই মানুষের জন্য খোলা রাখা হয়নি। বিজয়ের তো প্রশ্নই ওঠে না। এমনকি, পার্থিব যে বৈষয়িক চিন্তা কিংবা তার জন্য পেরেশানি, যশ-খ্যাতি বা জাগতিক স্বার্থের পেছনে ছুটে চলা- এটাকেও রাববুল আলামিন অত্যন্ত তুচ্ছতর ও লঘু দৃষ্টিতে বিবেচনা করেছেন। তিনি পরিষ্কার ভাষায় বলে দিয়েছেন-

‘‘যারা শুধুমাত্র এই দুনিয়ার জীবন এবং এর শোভা-সৌন্দর্য কামনা করে তাদের কৃতকর্মের সমুদয় ফল আমি এখানেই তাদেরকে দিয়ে দিই এবং এ ব্যাপারে তাদেরকে কম দেয়া হয় না। কিন্তু এ ধরনের লোকদের জন্য আখিরাতে আগুন ছাড়া আর কিছুই নেই। [সেখানে তারা জানতে পারবে] যা কিছু তারা দুনিয়ায় বানিয়েছে [তা সবই] বরবাদ হয়ে গেছে এবং এখন তাদের সমস্ত কৃতকর্ম ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে।’’ (সূরা হুদ : আয়াত ১৫-১৬)
বলাই নিষ্প্রয়োজন যে, যারা শুধুমাত্র বৈষয়িক ভোগ-বিলাস, লাভ, লোভ, ক্ষমতা, যশ-খ্যাতি কিংবা উন্নতি সমৃদ্ধি অর্জন করাকেই কেবল তাদের জীবনের লক্ষ্যবস্ত্ততে পরিণত করেছে- আল্লাহর এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ তাদের জন্য আদৌ শুভ ও কল্যাণবহ নয়।

আখিরাতের জীবনের তুলনায় দুনিয়ার জীবন খুবই নগণ্য। এতই নগণ্য যে এক ফোঁটা বুদবুদের সাথেও এর তুলনা চলে না। সুতরাং এই সাময়িক, ততোধিক ক্ষণস্থায়ী সময়ের জন্য মহামূল্যবান একটি জীবনকে বিলিয়ে দিয়ে নিজেকে সমূহ বিপন্ন ও ভয়ঙ্কর ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত করা কোনো বিবেকসম্পন্ন মানুষ বা ব্যক্তির কাজ হতে পারে না। দুনিয়া ও আখিরাতের লাভ-ক্ষতির সুবিশাল প্রভেদ সামনে নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করলে কোনো উজবুকের পক্ষেও এমন পতন ও পচনশীলতাকে গ্রহণ করা সম্ভবপর হওয়ার কথা নয়। কিন্তু আফসোসের বিষয়, এসব বিচার বিশ্লেষণ তো দূরে থাক, চিন্তার সামান্য কণা পরিমাণও এ সকল ক্ষেত্রে ব্যয় করতে অনেকেই রাজি নয়। এর চেয়ে পার্থিব লাভ-লোকসান, হিংসা-বিদ্বেষ, আপন স্বার্থ অর্জনের যাবতীয় কূটকৌশল, ক্ষমতার লিপ্সা, ব্যবসায়িক হিসাব-নিকাশ, এমনকি শেয়ার ও টেন্ডারের মত জটিল বিষয় নিয়ে দর কষাকষি করে একটি জীবন পার করে দিতে তারা অধিক পরিমাণে আগ্রহী। অথচ রাববুল আলামিন তাদেরকে ‘জঘন্য জীবের’ সাথে উপমিত করেছেন- যারা তাদের জ্ঞান-বুদ্ধিকে দীনের পথে, আল্লাহর সৃষ্টি জগতের জন্য, সৎ ও শুভ কর্মের দিকে ধাবিত করে না।

আগেই উল্লেখ করেছি, ভৌগোলিক কিংবা দেশ ও সমাজের মধ্যে আমাদের যতই দূরত্ব কিংবা সীমারেখা কিংবা বৈচিত্র্য থাকুক না কেন, কিন্তু মানুষ হিসাবে আমাদের একটা ক্ষেত্রে ঐক্যকে সুসংহত, সুদৃঢ় ও সংযত করার প্রয়াস থাকতেই হবে, আর সেটা হচ্ছে- মহান রাববুল আলামিনের নিরঙ্কুশ দাসত্ব স্বীকার করে একমাত্র তাঁরই প্রতি আনুগত্যে মাথা নত করা এবং আমাদের জীবনের পথের সকল কর্মকান্ডে ও চিন্তার গভীরে আল্লাহর মনোনীত দীন ও রাসূলের (সা.)আনুগত্য করা। এ ছাড়া দ্বিতীয় কোনো দরোজা আমাদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়নি। আল্লাহ পাকের স্পষ্ট ঘোষণা-
‘হে মুহাম্মদ! বলে দাও- হে লোকেরা! তোমাদের কাছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে সত্য এসে গেছে। এখন যারা সোজা পথ অবলম্বন করবে সোজা পথ অবলম্বন তাদের জন্যই কল্যাণকর হবে এবং যারা ভুল পথ অবলম্বন করবে ভুল পথ অবলম্বন তাদের জন্যই ধ্বংসের কারণ হবে।’’ (সূরা ইউনুছ : আয়াত ১০৮)

আল্লাহর বান্দা তথা খলিফা হিসাবে, মুমিন হিসাবে আমাদের কখনো ‘ভুল পথ’ গ্রহণ করা সমীচীন নয়। আর যদি সেটা পরিহার করে ‘সোজা পথ’ অবলম্বন করি তাহলে আল্লাহপাকের তরফ থেকে আমাদের জন্য রয়েছে সফলতাসহ জম্মানজনক পুরস্কার। যেমন তিনি বলছেন- ‘যারা ঈমান আনে এবং সৎ কাজ করে এবং নিজের রবের একনিষ্ঠ অনুগত বান্দা হয়ে থাকে, তারা নিশ্চিত জান্নাতের অধিবাসী এবং জান্নাতে তারা চিরকাল থাকবে।’’ [সূরা হুদ : আয়াত ২৩]

আল্লাহপাকের ওয়াদা হচ্ছে : ‘যে ব্যক্তিই ঈমানসহকারে সৎ কাজ করবে, সে পুরুষ হোক কিংবা নারী- আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করবো।’ (সূরা আন নহল : আয়াত ৯৭)
আল্লাহর এই সকল ঘোষণা থেকে পরিষ্কার বোঝাই যায়, রাববুল আলামিন ঘোষিত এই পুরস্কার ও সম্মানের অধিকারী একমাত্র মুমিনরাই। তাদের জন্য আল্লাহপাকের সকল ইতিবাচক ও সম্মানজনক আয়োজন। আর এ জন্যই তিনি রাসূলকে (সা.)‘সতর্ককারী’, ‘রহমতস্বরূপ’ ও ‘পথপ্রদর্শক’ হিসাবে মনোনীত করেছেন। রাসূলকে (সা.)সম্বোধন করে আল্লাহপাক বলছেন- ‘‘যারা তোমার বায়াত গ্রহণ করে তারা তো আল্লাহর বায়াত গ্রহণ করে। আল্লাহর হাত তাদের হাতের ওপর। সুতরাং যে তা ভঙ্গ করে, তা ভঙ্গ করার পরিণাম তারই এবং যে আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার পূর্ণ করে আল্লাহ তাকে মহাপুরস্কার দেন।’’ (সূরা আল ফাতহ : আয়াত ৮-১০)

প্রকৃতঅর্থে কোনো মুমিনই ‘বায়াত’ বা শপথ ভঙ্গ করতে পারে না। সেটা তার জন্য বাঞ্ছনীয় তো নয়ই, বরং চরম লাঞ্ছনার বিষয়। অতএব, আল্লাহ এবং তাঁর মনোনীত দীন ও রাসূলের (সা.)সর্বান্তকরণে আনুগত্য, অনুসরণ, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর দিকনির্দেশনা সঠিক ও সার্বিক বাস্তবায়নের ওপরই কেবল আমাদের সফলতার সীমা কিংবা বিষয়-আশয় নির্ভর করে। পার্থিব কিংবা জাগতিক লাভ-ক্ষতি কোনো মুমিনের জন্যই বিবেচ্য বিষয়ে পরিণত হতে পারে না। বরং মুমিনের জন্য ইসলাম পরিপূর্ণ আনুগত্যের দাবি করে। বিভ্রান্তি ও কুহকের সকল জাল ও মোহ ছিন্ন করে, সকল চিন্তাপ্রবাহকে একমাত্র আল্লাহর দীনের দিকে স্থির ও অবিচল রাখাই একজন প্রকৃত মুমিনের কাজ। বস্ত্তত রাসূলের (সা.)জীবনই আমাদের জন্য একমাত্র আদর্শ ও অনুসরণীয়। তাঁর কর্মপ্রবাহ ও জীবনধারায় শিক্ষা, সমাজ, সভ্যতা, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, যুদ্ধনীতিসহ এমন কোনো ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়ও নেই যার আদর্শ রাসূল (সা.)বাস্তবে উপস্থাপন করেননি। জীবন ও জগতের সকল বিষয়ে প্রতিটি ক্ষেত্রে রাসূলের (সা.)দৃপ্ত, সফল পথনির্দেশনা ও দৃষ্টান্ত রয়ে গেছে অমলিন।

একজন মুমিনের জন্য ইসলাম যে আদর্শ, সমাজ-সংস্কৃতি ও সভ্যতার দিকনির্দেশনা পেশ করেছে, এর বাইরে আমাদের জন্য আর কোনো কল্যাণকর আদর্শ, সংস্কৃতি কিংবা সভ্যতা থাকতে পারে না। তেমনটি ভাবাও ঈমান আকিদার পরিপন্থী কাজ হিসেবে গর্হিত অপরাধ বলে বিবেচিত। সুতরাং একমাত্র দীনের মধ্যেই খুঁজতে হবে আমাদের জীবনের সামগ্রিক কল্যাণকর মুক্তির পথ। চলমান স্রোতের সাথে মিশে যাওয়া কোনো মুমিনের চরিত্র হতে পারে না, বরং সকল অবাঞ্ছিত স্রোতধারা, থেকে, সকল কুহকের মরীচিকা থেকে মুখ ফিরিয়ে একমাত্র দীনের ওপরই আমাদের চিন্তা ও কর্মপ্রবাহকে স্থির ও সুদৃঢ় রাখতে হবে। যারা হতভাগা, তাদের কথা ভিন্ন। কিন্তু যারা মুমিন- তাদেরকে অবশ্যই রাসূলের (সা.)জীবনকেই অনুসরণ করতে হবে সকল ক্ষেত্রে। এর মধ্যেই নিহত রয়েছে আমাদের জন্য সকলপ্রকার কল্যাণ ও একমাত্র মুক্তি।

সর্বদা স্মরণ রাখতে হবে যে, রাসূলই (সা.)আমাদের জন্য একমাত্র অনুসরণযোগ্য আদর্শ মহামানব। সুতরাং আমাদের জীবনের সকল দিক হোক সে ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি অর্থনীতি, সাহিত্য-সংস্কৃতি- সকল ক্ষেত্রেই রাসূলের (সা.) নির্দেশিত পথ অনুসরণ করতে হবে। এ ছাড়া বিকল্প আর কোনো পথ নেই, দরোজাও খোলা নেই আমাদের জন্য।
লেখক: কবি, সম্পাদক মাসিক নতুন কলম।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।