রেজি : ডিএ ৫১৭ ॥ ৬৩ বর্ষ : ১২তম সংখ্যা ॥ ঢাকা, শুক্রবার, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ ॥ ৭ জিলহজ ১৪৪৫ হিজরী ॥ ১৪ জুন ২০২৪

॥ আব্দুল ওয়াদুদ সরদার ॥
আরাফাতের এ দিনে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. তাঁর সাহাবীদের সামনে রেখে বিদায হজের  ভাষণ দিয়েছিলেন। তিনি সাহাবা আজমাইন ও তার অনুসারীদের সামনে রেখে যে নসিহত পেশ করেছিলেন, সেটিকে আজ বিদায় হজের ভাষণ বলা হয়। এ ভাষণটি মুসলিম উম্মাহর জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ এবং সেটি হচ্ছে আজকে আমাদের জীবনের পাথেয়।
তিনি এ ভাষণ শেষ করে সাহাবাদের কাছ থেকে তার তাঁর দায়িত্বের স্বীকৃতি চাইলে উপস্থিত সকলেই সমস্বরে বলেছিলেন, হ্যাঁ, আপনি আপনার সব দায়িত্ব আমাদের যথাযথভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন। তখন তিনি শাহাদাত আঙুল উঁচু করে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, হে আল্লাহ! আপনি সাক্ষী থাকুন আমি আমার রিসালতের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছি এবং আমার অনুসারীদের তা বুঝিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছি। তখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আল কুরআনে এ আয়াত নাজিল করেন, ‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দীন পূর্ণাঙ্গ করেছি ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করেছি এবং ইসলামকে জীবনবিধান হিসেবে মনোনীত করে দিয়েছি।’ (সূরা মায়েদা : ৩)।
মহানবী সা.-এর বিদায় হজের এ ভাষণটি ছিল ১০ম হিজরী অর্থাৎ ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দ আরাফাতের ময়দানে রাসূল মুহাম্মদ সা. কর্তৃক প্রদত্ত খুতবা বা ভাষণ। হজের দ্বিতীয় দিনে আরাফাতের মাঠে অবস্থানকালে জাবাল-এ-রাহমাত টিলার শীর্ষে দাঁড়িয়ে উপস্থিত সমবেত মুসলমানদের উদ্দেশে তিনি এ ভাষণ দিয়েছিলেন। রাসূল সা.-এর জীবনে এটিই ছিল শেষ ভাষণ। তাই সচরাচর এটিকে বিদায় খুতবা বলে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। ইসলামের প্রকৃত মূল্যবোধ অনুযায়ী মুসলমানদের করণীয় সম্পর্কে এ ভাষণ চূড়ান্ত দিকনির্দেশনা।
আবদুল্লাহ বর্ণিত বিদায় হজের ভাষণের নিম্নোক্ত দীর্ঘ বর্ণনা পাওয়া যায়। এছাড়া ইবনে ইসহাক ও আল জাহিজও প্রায় হুবহু একই বর্ণনা প্রদান করেছেন, যা নিম্নরূপ-
উপস্থিত জনমণ্ডলী! আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনো। হয়তো আমি আর কখনো এখানে তোমাদের সঙ্গে একত্রিত হতে পারব না।
হে জনমণ্ডলী! আজকের এ দিন (জুমার দিন), এই মাস (জিলহজ মাস) ও এ শহর (মক্কা) যেমন পবিত্র; তোমাদের জানমাল, ইজ্জত-আবরু, মান-সম্মান কিয়ামত পর্যন্ত এমনই পবিত্র। কারো কাছে যদি কোনো আমানত রক্ষিত থাকে, তাহলে সে যেন তা আমানতকারীর কাছে পৌঁছে দেয়। আজ থেকে সব ধরনের সুদ রহিত করা হলো। তোমাদের কেবল মূলধনের ওপর অধিকার রইল। তোমরা অন্যের ওপর অত্যাচার করবে না, নিজেরাও অত্যাচারিত হবে না। সর্বপ্রথম আমি হজরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিবের সুদ রহিত করছি। অন্ধকার যুগের সব কৌলীন্য বিলুপ্ত করা হলো। শুধু কাবাঘরের তত্ত্বাবধান ও হাজীদের পানি পান করানো ছাড়া। আজকের পর তোমাদের ভূখণ্ডে শয়তানের উপাসনার ব্যাপারে সে নিরাশ হয়ে গেছে। কিন্তু কিছু ব্যাপার, যেগুলোকে তোমরা বড় পাপ মনেই করো না। তার অনুসরণ করলে শয়তান খুশি হবে।
হে জনমণ্ডলী! তোমাদের নিজ স্ত্রীদের ওপর যেমন তোমাদের অধিকার রয়েছে, তদ্রƒপ তাদেরও তোমাদের ওপর অধিকার রয়েছে। স্ত্রীদের ওপর তোমাদের অধিকার হচ্ছে, তারা যেন নিজ স্বামী ছাড়া পরপুরুষের সঙ্গে সম্ভোগে লিপ্ত না হয়। যদি তারা তা করে, তাহলে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের তাদের প্রতি কঠোরতা প্রদর্শনের অনুমতি দিয়েছেন। এমতাবস্থায় তোমরা তাদের শয্যা পৃথক করে দেবে। এবং মৃদু প্রহার করবে। তাতে তারা বিরত হলে নিয়মমাফিক তাদের ভরণপোষণের প্রতি লক্ষ রাখবে। স্ত্রীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে। তারা তোমাদের সাহায্যকারিণী। তোমরা তাদের আল্লাহর নির্ধারিত কালিমা বাক্যের (ইজাব-কবুল) মাধ্যমে নিজেদের জন্য হালাল করেছো। সুতরাং তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করো। হে জনমণ্ডলী! সব মুমিন পরস্পর ভাই ভাই। কারো জন্য অন্যের সম্পদ বৈধ নয়। তবে যদি কেউ স্বেচ্ছায় কাউকে কিছু দেয়, তাহলে সেটা স্বতন্ত্র ব্যাপার। আমার পর তোমরা কুফরিতে ফিরে যেও না। পরস্পর খুনাখুনি করো না। আমি তোমাদের মাঝে এমন দুটি জিনিস রেখে গেলাম, তোমরা তা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরলে কখনো বিভ্রান্ত হবে না। তা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব (পবিত্র কুরআন) ও তাঁর রাসূলের হাদিস। জনমণ্ডলী! তোমাদের প্রভু একজন। তোমাদের পিতাও একজন। তোমরা সবাই আদম থেকে আর আদম মাটি থেকে সৃষ্টি। তোমাদের মাঝে যারা সর্বাধিক মুত্তাকি, খোদাভীরু তারাই আল্লাহর কাছে সর্বাধিক মর্যাদাবান। তাকওয়া ছাড়া কোনো অনারবের ওপর কোনো আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই। আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক উত্তরাধিকারীর অংশ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। উত্তরাধিকারীর জন্য কোনো অসিয়ত প্রযোজ্য নয়। অন্যদের জন্য এক-তৃতীয়াংশের অধিক অসিয়ত করা বৈধ নয়। আমাদের কিয়ামত দিবসে জিজ্ঞাসা করা হবে। তোমাদেরও জিজ্ঞাসা করা হবে। তখন তোমরা আমার ব্যাপারে কী বলবে? আমি কি তোমাদের নিকট আল্লাহর দীন পৌঁছে দিয়েছি? উপস্থিত সাহাবায়ে কেরাম উত্তর দিলেন, আমরা সাক্ষ্য দেব যে, আপনি আপনার দায়িত্ব পৌঁছে দিয়েছেন। হিত কামনা করেছেন। অতঃপর মুহাম্মদ আকাশের দিকে হাত তুলে তিনবার বললেন, আল্লাহ আপনি সাক্ষী থাকুন। তারপর বললেন, তোমরা এখানে যারা উপস্থিত আছো, তারা অনুপস্থিতদের কাছে (কথাগুলো) পৌঁছে দেবে।
সহিহ মুসলিম শরীফ-এ বর্ণনাটি নিম্নরূপ-
“হে মানবমণ্ডলী! তোমরা হৃদয়ের কর্ণে ও মনোযোগ সহকারে আমার বক্তব্য শ্রবণ কর। আমি জানি না, আগামী বছর এ সময়ে, এ স্থানে, এ নগরীতে সম্ভবত তোমাদের সাথে আমার সাক্ষাৎ আর হবে না।”
“হে মানব সকল! সাবধান! সকল প্রকার জাহেলিয়াতকে আমার দু’পায়ের নিচে পিষ্ট করে যাচ্ছি। নিরপরাধ মানুষের রক্তপাত চিরতরে হারাম ঘোষিত হলো। প্রথমে আমি আমার বংশের পক্ষ থেকে রাবিয়া বিন হারেস বিন আবদুল মুত্তালিবের রক্তের দাবি প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। সে বনি লাইস গোত্রে দুধ পান করেছে, হুযাইল তাকে হত্যা করেছে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র থেকে ‘সুদ’কে চিরদিনের জন্য হারাম ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো। আমি আজ আমার চাচা আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিবের যাবতীয় সুদের দাবি প্রত্যাহার করে নিচ্ছি।”
“হে লোকসকল! বল আজ কোন দিন? সকলে বলল আজ মহান আরাফার দিন, আজ হজের বড় দিন।”
সাবধান! তোমাদের একের জন্য অপরের রক্ত তার মাল সম্পদ, তার ইজ্জত-সম্মান আজকের দিনের মতো, এ হারাম মাসের মতো, এ সম্মানিত নগরীর মতো পবিত্র আমানত। সাবধান! মানুষের আমানত প্রকৃত মালিকের নিকট পৌঁছে দেবে।
হে মানব সকল! নিশ্চয়ই তোমাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ একজন, তোমাদের সকলের পিতা হযরত আদম। আরবের ওপর অনারবের এবং অনারবের ওপর আরবের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই, সাদার ওপর কালোর আর কালোর ওপর সাদার কোনো মর্যাদা নেই। ‘তাকওয়াই’ শুধু পার্থক্য নির্ণয় করবে।
হে লোকসকল! পুরুষদের নারী জাতির ওপর নেতৃত্বের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। তবে নারীদের বিষয়ে তোমরা আল্লাহ তায়ালাকে ভয় কর। নারীদের ওপর যেমন পুরুষদের অধিকার রয়েছে, তেমনি পুরুষদের ওপর রয়েছে নারীদের অধিকার। তোমরা তাদেরকে আল্লাহর জামিনে গ্রহণ করেছ। তাদের ওপর তোমাদের অধিকার হচ্ছে নারীরা স্বামীগৃহে ও তার সতীত্বের মধ্যে অন্য কাউকেও শরিক করবে না, যদি কোনো নারী এ ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করে, তবে স্বামীদের এ ক্ষমতা দেয়া হচ্ছে যে, তারা স্ত্রীদের থেকে বিছানা আলাদা করবে ও দৈহিক শাস্তি দেবে, তবে তাদের চেহারায় আঘাত করবে না। আর নারীগণ স্বামী থেকে উত্তম ভরণ পোষণের অধিকার লাভ করবে। তোমরা তাদেরকে উপদেশ দেবে ও তাদের সাথে সুন্দর আচরণ করবে।
হে উপস্থিতি! মুমিনরা পরস্পর ভাই আর তারা সকলে মিলে এক অখণ্ড মুসলিম ভ্রাতৃ সমাজ। এক ভাইয়ের ধন-সম্পদ তার অনুমতি ব্যতিরেকে ভক্ষণ করবে না। তোমরা একে অপরের ওপর জুলুম করবে না।
হে মানুষ! শয়তান আজ নিরাশ হয়ে পড়েছে। বড় বড় বিষয়ে সে তোমাদের পথ ভ্রষ্ট করতে সমর্থ হবে না, তবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়ে তোমরা সতর্ক থাকবে ও তার অনুসারী হবে না। তোমরা আল্লাহর বন্দেগি করবে, দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত প্রতিষ্ঠা করবে, রমজান মাসের সিয়াম পালন করবে, যাকাত আদায় করবে ও তোমাদের নেতার আদেশ মেনে চলবে, তবেই তোমরা জান্নাত লাভ করবে।
সাবধান! তোমাদের গোলাম ও অধীনস্থদের বিষয়ে আল্লাহ তায়ালাকে ভয় কর। তোমরা যা খাবে তাদের তা খেতে দেবে। তোমরা যা পরবে তাদেরকেও সেভাবে পরতে দেবে।
হে লোকসকল! আমি কি তোমাদের নিকট আল্লাহ তায়ালার পয়গাম পৌঁছে দিয়েছি? লোকেরা বলল, ‘হ্যাঁ’ তিনি বললেন ‘আমার বিষয়ে তোমাদের জিজ্ঞাসা করা হবে, সে দিন তোমরা কি সাক্ষ্য দিবে, সকলে এক বাক্যে বললেন, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আপনি আমাদের নিকট রিসালাতের পয়গাম পৌঁছে দিয়েছেন, উম্মতকে সকল বিষয়ে উপদেশ দিয়েছেন, সব গোমরাহির আবরণ ছিন্ন করে দিয়েছেন এবং ওহির আমানত পরিপূর্ণভাবে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব পালন করেছেন।’ অতঃপর আল্লাহর রাসূল নিজ শাহাদাত অঙ্গুলি আকাশের দিকে তুলে তিনবার বললেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি সাক্ষী থাকুন, আপনি সাক্ষী থাকুন, আপনি সাক্ষী থাকুন।’
হে মানুষ! আল্লাহ তায়ালা তোমাদের সম্পদের মিরাস নির্দিষ্টভাবে বণ্টন করে দিয়েছেন। তার থেকে কম বেশি করবে না। সাবধান! সম্পদের তিন ভাগের এক অংশের চেয়ে অতিরিক্ত কোনো অসিয়ত বৈধ নয়। সন্তান যার বিছানায় জন্মগ্রহণ করবে, সে তারই হবে। ব্যভিচারের শাস্তি হচ্ছে প্রস্তরাঘাত। (অর্থাৎ সন্তানের জন্য শর্ত হলো তা বিবাহিত দম্পতির হতে হবে। ব্যভিচারীর সন্তানের অধিকার নেই)। যে সন্তান আপন পিতা ব্যতীত অন্যকে পিতা এবং যে দাস নিজের মালিক ব্যতীত অন্য কাউকে মালিক বলে স্বীকার করে, তাদের ওপর আল্লাহ তায়ালা, ফেরেশতাকুল এবং সমগ্র মানবজাতির অভিশাপ এবং তার কোনো ফরজ ও নফল ইবাদত কবুল হবে না।
হে কুরাইশ সম্প্রদায়ের লোকেরা! তোমরা দুনিয়ার মানুষের বোঝা নিজেদের ঘাড়ে চাপিয়ে যেন কিয়ামতে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ না কর। কেননা আমি আল্লাহর আজাবের মোকাবিলায় তোমাদের কোনো উপকার করতে পারবো না। তোমাদের দেখেই লোকেরা আমল করে থাকবে। মনে রেখ! সকলকে একদিন আল্লাহ তায়ালার নিকট হাজির হতে হবে। সে দিন তিনি প্রতিটি কর্মের হিসাব গ্রহণ করবেন। তোমরা আমার পরে গোমরাহিতে লিপ্ত হবে না, পরস্পর হানাহানিতে মেতে উঠব না। আমি সর্বশেষ নবী, আমার পরে আর কোনো নবী আসবে না। আমার সাথে ওহির পরিসমাপ্তি হতে যাচ্ছে।
হে মানুষ! আমি নিঃসন্দেহে একজন মানুষ। আমাকেও আল্লাহ তায়ালার ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যেতে হবে। আমি তোমাদের জন্য দুটি বস্তু রেখে যাচ্ছি যতদিন তোমরা এ দুটি বস্তু আঁকড়ে থাকবে, ততদিন তোমরা নিঃসন্দেহে পথভ্রষ্ট হবে না। একটি আল্লাহর কিতাব ও অপরটি রাসূলের সুন্নাহ।
হে মানবমণ্ডলী! তোমরা আমীর বা নেতার আনুগত্য করো এবং তার কথা শ্রবণ করো যদিও তিনি হন হাবশি ক্রীতদাস। যতদিন পর্যন্ত তিনি আল্লাহর কিতাব অনুসারে তোমাদের পরিচালিত করেন, ততদিন অবশ্যই তাঁর কথা শুনবে, তাঁর নির্দেশ মানবে ও তাঁর প্রতি আনুগত্য করবে। আর যখন তিনি আল্লাহর কিতাবের বিপরীতে অবস্থান গ্রহণ করবে, তখন থেকে তাঁর কথাও শুনবে না এবং তাঁর আনুগত্যও করা যাবে না।
সাবধান! তোমরা দীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি থেকে বিরত থাকবে। জেনে রেখো, তোমাদের পূর্ববর্তীগণ এ বাড়াবড়ির কারণেই ধ্বংস হয়ে গেছে। (এ নির্দেশনাটি হচ্ছে অমুসলিমদের ক্ষেত্রে) অর্থাৎ কোনো বিধর্মীকে বাড়াবাড়ি বা জোরজবরদস্তি করে ইসলামে দীক্ষা দেয়া যাবে না। তবে একজন মুসলমানকে অবশ্যই পরিপূর্ণ ইসলামী জিন্দেগি অবলম্বন করে জীবনযাপন করতে হবে। এক্ষেত্রে সুবিধাবাদের কোনো সুযোগ নেই)। আবার বললেন, আমি কি তোমাদের নিকট আল্লাহর দীন পৌঁছে দিয়েছি? সকলে বললেন, “নিশ্চয়ই”।
হে উপস্থিতিগণ! অনুপস্থিতিদের নিকট আমার এ পয়গাম পৌঁছে দেবে। হয়তো তাদের মধ্যে কেউ এ নসিহতের ওপর তোমাদের চেয়ে বেশি গুরুত্বের সাথে আমল করবে। ‘তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।’ বিদায়।
এটিই মহানবী সা.-এর শেষ নসিহত বা বিদায় হজ।
আরাফাতের দিনের ফজিলত সম্পর্কে বুখারি শরিফে বর্ণিত আছে, ইহুদিরা হজরত ওমর রা.-কে বলল, আপনারা এমন একটি আয়াত পড়ে থাকেন, তা যদি আমাদের ওপর নাজিল হতো, তবে আমরা সেটিকে ঈদ হিসেবে উদযাপন করে দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতাম। হজরত ওমর রা. বললেন, এটি কখন ও কোথায় অবতীর্ণ হয়েছে আর নাজিলের সময় রাসূলুল্লাহ সা. কোথায় ছিলেন তা আমি জানি। আল্লাহর শপথ! আমরা সবাই এ সময় আরাফাতে ছিলাম। এ দিন আমাদের জন্য দুটি ঈদ ছিল, প্রথমত সেদিন ছিল জুমাবার যাকে আমরা ঈদ হিসেবে উদযাপন করি। দ্বিতীয়ত, সে দিন ছিল ইয়াওমে আরাফাত, যাকে হাদিসে ঈদের দিন হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে (বুখারি)।
জুমার দিন ও আরাফাতের দিন ঈদের দিন। কেননা হাদিসের মধ্যে এ দুই দিনকে ঈদের দিন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
হজরত ওমর (রা.) বলেন, আল্লাহর শোকর যে, জুমা ও আরাফাত আমাদের জন্য ঈদের দিন। যতক্ষণ পর্যন্ত একজন মুসলমানও পৃথিবীতে থাকবে, ততদিন এ দুটি দিন মুসলমানের জন্য ঈদের দিন হিসেবে গণ্য থাকবে। (আবু দাউদ)।
আরাফাতের দিনে আরাফাতের ময়দানে নবীজি ও সাহাবায়ে কেরাম যখন উকুফে আরাফাত করছিলেন তখনই আল্লাহ তায়ালা নবীজি সা.-এর ওপর কুরআনুল কারিমের সর্বশেষ আয়াত নাজিল করে দীনকে পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। আর সেটি হলো সূরা মায়েদার ৩নং আয়াত। এ আয়াত নাজিল করে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য পরিপূর্ণ দীন হিসেবে মনোনীত করলাম।’ এ আয়াত নাজিলের পর নবীজী (সা.) মাত্র ৮১ দিন পৃথিবীতে জীবিত ছিলেন। (আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া : ২/২৪২)।
হজরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রা. সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন, ‘আরাফাত দিবসের চেয়ে উত্তম কোনো দিন নেই। এ দিনে আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীবাসীকে নিয়ে গর্ব করে বলেন, তোমরা আমার ওইসব বান্দাদের দেখো, যারা বিক্ষিপ্ত ও এলোমেলো চুল নিয়ে অনেক দূরদূরান্ত থেকে আমার রহমতের আশায় ও শাস্তির ভয়ে আমার কাছে এসেছে। সুতরাং আরাফাত দিবসের চেয়ে বেশি দোজখ থেকে মুক্তির আর কোনো দিন নেই। এই দিনে যে সংখ্যক লোক দোজখ থেকে পরিত্রাণ লাভ করবে অন্য কোনো দিন করবে না। (সহিহ ইবনে হিব্বান)।
হজরত ইবনে ওমর রা. এক হাদিসে বর্ণনা করে বলেন, ‘আমি রাসূল সা.-কে বলতে শুনেছি, ‘আল্লাহ তায়ালা আরাফাতের দিন স্বীয় বান্দার প্রতি দৃষ্টিপাত করেন। যার অন্তরে বিন্দুমাত্র ঈমান থাকবে, তাকে অবশ্যই ক্ষমা করে দেয়া হবে।’
হজরত নাফে রা. বলেন, ‘আমি ইবনে ওমর রা.-কে জিজ্ঞেস করলাম, এ ক্ষমা কি সব ঈমানদারের জন্য নাকি শুধু আরাফাতবাসীর জন্য? উত্তরে তিনি বলেন, ‘এ ক্ষমা সব ঈমানদারের জন্য।’ (ইবনে রজব হাম্বলি রহ:, লাতায়েফুল মাআরিফ, পৃষ্ঠা-৪৭১)।
সহিহ মুসলিম শরিফে আবু কাতাদা রা. সূত্রে বর্ণিত। নবীজি সা. এরশাদ করেন, ‘আরাফাত দিবসে রোজা রাখলে আশা করি আল্লাহ তায়ালা রোজাদারের এক বছর আগের ও এক বছর পরের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (মুসলিম)।
তবে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত। নবী সা. আরাফাত দিবসে হাজিদের আরাফাতের ময়দানে সমবেত হওয়ার দিন রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন। (হুলিয়াতুল আউলিয়া : ৩/৩৯৭)।
অনেকেই হাজি সাহেবদের জন্য এ দিনে রোজা রাখা মাকরূহ বলেছেন। কারণ এ দিন তাদের জিকির, দোয়া ও মোনাজাতে লিপ্ত থাকতে হয় এবং অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয়। রোজার কারণে যাতে তারা দুর্বল হয়ে না যায়, সে কারণে হাজীদের সে দিন রোজা রাখা থেকে বিরত থাকার জন্য বলেছেন। তবে যারা সামর্থ্যবান তথা রোজার কারণে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকবে না, তাদের জন্য রোজা রাখাই উত্তম।
আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা হাজীদের জন্য ফরজ। আরাফাতের ময়দানে হাজীরা হাজির হয়ে আল্লাহার রহমতের আশায় থাকেন। সমবেত সবাই ইবাদত-বন্দেগি ও গুনাহ মাফের জন্য কান্নাকাটি করে আল্লাহর জিকির, দোয়া, মোনাজাতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে থাকেন। আর আল্লাহ তায়ালাও বান্দাদের ইবাদত-বন্দেগি ও কান্নাকাটির বিনিময়ে তাদের ক্ষমা ও জান্নাত লাভের ঘোষণা দেন।



অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।