রেজি : ডিএ ৫১৭ ॥ ৬৩ বর্ষ : ১২তম সংখ্যা ॥ ঢাকা, শুক্রবার, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ ॥ ৭ জিলহজ ১৪৪৫ হিজরী ॥ ১৪ জুন ২০২৪

॥ মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ॥
আরাফাতের দিন হলো এক মর্যাদাসম্পন্ন দিন। জিলহজ মাসের ৯ তারিখকে আরাফাতের দিন বলা হয়। এ দিনটি অন্যান্য অনেক ফজিলত সম্পন্ন দিনের চেয়ে বেশি মর্যাদার অধিকারী। ইসলাম ধর্মের পূর্ণতা লাভ, বিশ্ব মুসলিমের প্রতি আল্লাহ্র নিয়ামতের পরিপূর্ণতা প্রাপ্তির দিন। হাদিসে বলা হয়েছে,  তারিক ইবনে শিহাব (রাহ.) থেকে বর্ণনা করেন যে, ইহুদিরা ওমর (রা.)-কে বলে, ‘আপনারা এমন একটি আয়াত তিলাওয়াত করে থাকেন যদি সে আয়াতটি আমাদের প্রতি অবতীর্ণ হতো, তাহলে আমরা সে দিনটিকে ঈদ হিসেবে উদযাপন করতাম।’ ওমর (রা.) এ কথা শুনে বলেন, ‘আমি অবশ্যই জানি কখন তা অবতীর্ণ হয়েছে, কোথায় তা অবতীর্ণ হয়েছে, আর অবতীর্ণ হওয়ার সময় রাসূলুল্লাহ (সা.) কোথায় ছিলেন। হ্যাঁ, সে দিনটি হলো আরাফাতের দিন, আল্লাহ্র শপথ! আমরা সে দিন আরাফাতের ময়দানে ছিলাম। আয়াতটি হলোÑ
‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দীন পূর্ণাঙ্গ করেছি ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করেছি এবং ইসলামকে তোমাদের জীবনবিধান হিসেবে মনোনীত করেছি।’ সূরা মায়িদা : ৩, (সহিহ বুখারি)।
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে রজব (রহ.)সহ অনেক ওলামায়ে কেরাম বলেছেন যে, এ আয়াত নাজিলের পূর্বে মুসলিমগণ ফরজ হিসেবে হজ আদায় করেননি। তাই হজ ফরজ হিসেবে আদায় করার মাধ্যমে দীনে ইসলামের পাঁচটি ভিত্তি মজবুতভাবে প্রতিষ্ঠিত হলো। (ইবনে রজব, লাতায়েফুল মাআরেফ, পৃ. ৪৮৬)।
ওমর (রা.) বর্ণিত হাদিসের ব্যাখ্যায় ইবনে আববাস (রা.) বলেন, সূরা মায়িদার এ আয়াতটি নাজিল হয়েছে দুটি ঈদের দিনে। তা হলো জুমার দিন ও আরাফাতের দিন। (সহিহ জামি তিরমিযী)।
এ দিন হলো ঈদের দিনসমূহের একটি দিন। আবু উমামাহ (রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আরাফাতের দিন, কুরবানির দিন ও আইয়ামে তাশরিক (কুরবানি পরবর্তী তিন দিন) আমাদের ইসলামের অনুসারীদের ঈদের দিন। আর এ দিনগুলো খাওয়া ও পান করার দিন।’ (সহিহ সুনানে আবু দাউদ)।
ইতোপূর্বে আলোচিত ওমর (রা.) বর্ণিত হাদিসের ব্যাখ্যায় ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘সূরা মায়িদার এ আয়াতটি নাজিল হয়েছে দুটি ঈদের দিনে। তা হলো জুমার দিন ও আরাফাতের দিন।’ (সহিহ জামি তিরমিযী)।
এ হাদিস দুটি দ্বারা বোঝা যায় যে, আরাফাতের দিনকে ঈদের দিনের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য করা হয়েছে।
আরাফাতের দিনে সিয়াম পালন করা : আবু কাাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আরাফাতের দিনের সাওমের (রোজা) বিনিময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে বিগত ও আগত বছরের গুনাহের ক্ষমার আশা করি। (সহিহ মুসলিম)।
মনে রাখতে হবে যে, আরাফাতের দিনে সাওম তারাই রাখবেন যারা হজ পালনরত নন। যারা হজ পালনে রত তারা আরাফাতের দিনে সাওম পালন করবেন না। আরাফাতের দিনে হজ পালনরত ব্যক্তি রাসূলে করিম (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করেই সে দিনের সাওম পরিত্যাগ করবেন। যেন তিনি আরাফাতে অবস্থানকালীন বেশি বেশি করে জিকির, দোয়াসহ অন্যান্য আমলে তৎপর থাকতে পারেন।
কিন্তুএ দিনে আরাফাতের ময়দানে অবস্থানকারী হাজীগণ সাওম পালন করবেন না। হাদিসে এসেছে, মুসলিম জননী মাইমূনা (রা.) থেকে বর্ণিত। লোকজন ‘আরাফাতের দিন নবী (সা.)-এর রোজা রাখার সম্পর্কে সন্দেহ করছিল। (তিনি বলেন,) তখন আমি তাঁর নিকটে কিছু দুধ পাঠালাম। এ সময় তিনি আরাফাতে অবস্থানরত ছিলেন। তখনি দুধটুকু তিনি পান করে ফেললেন। আর লোকজন তা দেখছিল।
আর এ দিনে শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোকে সকল হারাম ও অপছন্দনীয় কাজ থেকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। হাদিসে বলা হয়েছে, মুসনাদে আহমদে ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এ দিনে যে ব্যক্তি নিজ কান ও চোখের নিয়ন্ত্রণ করবে তাকে ক্ষমা করা হবে। (মুসনাদে আহমদ ও হাকেম, হাদিসটি সহিহ)।
মনে রাখা দরকার যে, শরীরের অঙ্গসমূহ হারাম ও অপছন্দনীয় কাজ থেকে হেফাজত করা যেমন সাওমের দাবি তেমনি হজেরও দাবি। কাজেই সর্বাবস্থায় এ দিনে এ বিষয়টির প্রতি যত্নবান হতে হবে। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.) এর আদেশ বাস্তবায়ন ও নিষেধগুলোকে পরিহার করতে হবে।
আরাফাতের দিনে অধিক পরিমাণে জিকির ও দোয়া করা
নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘সবচেয়ে উত্তম দোয়া হলো আরাফার দিনের দোয়া । আর সর্বশ্রেষ্ঠ কথা যা আমি বলি ও নবীগণ বলেছেন, তা হলো- আল্লাহ ব্যতীত সত্যিকার কোনো মাবুদ নেই। তিনি একক তাঁর কোনো শরিক নেই। রাজত্ব তাঁরই আর সকল প্রশংসা তাঁরই প্রাপ্য এবং তিনি সর্ববিষয়ে শক্তিমান। (সুনানে তিরমিযী, মুয়াত্তা মালেক, হাদিসটি সহিহ)।
এ হাদীসের ব্যাখ্যায় ইবনে আবদুল বার (রহ.) বলেছেন, ‘এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে আরাফাতের দিনের দোয়া নিশ্চিতভাবে কবুল হবে আর সর্বোত্তম জিকির হলো লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ।’ (ইবনে আবদুল বার, আত-তামহিদ)
ইমাম খাত্তাবি (রহ.) বলেছেন, ‘এ হাদিস দ্বারা বোঝা যায় যে দোয়া করার সাথে সাথে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রশংসা ও তাঁর মহত্ত্বের ঘোষণা দেয়া উচিত।’ (ইমাম খাত্তাবি, শান আদ-দোয়া, পৃ. ২০৬)।
আরাফাতের দিন গুনাহ মাফ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের দিন : আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আরাফার দিন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর বান্দাদের এত অধিকসংখ্যক জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন, যা অন্য দিনে দেন না। তিনি এ দিনে বান্দাদের নিকটবর্তী হন ও তাদের নিয়ে ফেরেশতাগণের কাছে গর্ব করে বলেন, তোমরা কি বলতে পার আমার এ বান্দাগণ আমার কাছে কি চায়?’ (সহিহ মুসলিম)।
ইমাম নববি (রহ.) বলেছেন, ‘এ হাদীসটি আরাফাতের দিনের ফজিলতের একটি সুস্পষ্ট প্রমাণ।’
ইবনে আবদুল বার (রহ.) বলেছেন, ‘এ দিনে মুুমিন বান্দারা ক্ষমাপ্রাপ্ত হন। কেননা, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন গুনাহগারদের নিয়ে ফেরেশতাগণের কাছে গর্ব করেন না। কিন্তু তওবা করার মাধ্যমে ক্ষমা-প্রাপ্তির পরই তা সম্ভব।’
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলে করিম (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আরাফাতে অবস্থানকারীগণকে নিয়ে আসমানের অধিবাসীদের কাছে গর্ব করেন। আল্লাহ বলেন, ‘আমার এ সকল বান্দার দিকে চেয়ে দেখ! তারা এলোমেলো কেশ ও ধুলায় ধূসরিত হয়ে আমার কাছে এসেছে।’ (সহিহ ইবনে খুজাইমা : ২৮৩৯)।


অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।