আসমা খাতুন : দিন শেষে একজন নারী চায় ভরসা করার মতো দুটি হাত। মাথা রাখার মতো একটা কাঁধ। সে বন্ধু হয়ে থাকুক সারা জীবন। দিক না ভুল হলে বকা। করুক না একটু-আধটু শাসন। মন খারাপের সময় আলতো করে চোখের পানি মুছে দিলেই হলো। থাকুক না মানুষটা অভিভাবক হয়ে পাশে। লাখ টাকার গহনা চায় না, ভালোবেসে ফুটপাত থেকে দু’পয়সার গহনাই নারীর সুখ।
একজন নারী কখনোই পুরুষের সৌন্দর্যে বিমোহিত হয় না। পুরুষ মানুষের সৌন্দর্যে নারী আটকায় না। নারী আটকায় পুরুষের দায়িত্বে। তার প্রতি শ্রদ্ধায়। তার প্রতি মায়ায় এবং সম্মান ও ভালোবাসায়। যে ভালোবাস ভরসা দেয়। দেয় নির্ভরতার প্রতিশ্রুতি। যে মানুষটা কখনো তাকে ঠকাবে না। বিপদে-আপদে ছাদ হয়ে সব ঝড় একা সামলে নেবে। সব ঝড় একা সামলাতে না পারুক পাশে তো থাকবে। ছেড়ে তো যাবে না। এমনই সাহসী, এইন্ পরিশ্রমী এবং আত্মবিশ^াসী পুরুষকে চায় একজন নারী। সিক্সপ্যাক, বডিবিল্ডার, হ্যান্ডসাম পুরুষের চেয়ে দায়িত্ববান পুরুষ অনেক উত্তম।
কাশফিয়া জানে, তার স্বামীর গহনা কিনে দেয়ার পয়সা নেই, তাতে কী? মাঝেমধ্যে ফুটপাতের ফুচকা তো খাওয়াতে পারবে। এখানেই তো নারীর তৃপ্তি। তৃপ্ততা নিয়েই তো সুখীময় জীবন। এ জীবন কে না চাই।
এজন্যই ইসলামে আর্থিক অধিকারের চেয়েও ব্যবহারিক ও অন্যান্য অধিকার বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কোনো স্বামী তার স্ত্রীকে সকল আর্থিক সুবিধা দিয়ে, তার সাথে খারাপ ব্যবহার করলে চলবে না। স্ত্রীকে সম্পত্তির মতো বিবেচনা করা ঠিক নয়। তার মানসিক দিক দেখত হবে।
বৈবাহিক সম্পর্ক মানসিক ও দৈহিক সব ক্ষেত্র আল্লাহর নেয়ামত।
একদিন কাশফিয়া পাশের বাড়িতে বেড়াতে যায়। তার চাচাতো জা স্বামী ও শাশুড়ির ওপর বিরক্ত হয়ে মন খারাপ করে বসে আছে। সে মোলায়েম কণ্ঠে এর কারণ জানতে চাইল।
সুলতানা চোখের পানি মুছে সব বলল।
কাশফিয়া দ্রুত সরে গিয়ে তার চাচি শাশুড়ির রুমে গিয়ে বসে।
সালাম দিয়ে ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করল।
আর ভালো থাকা রে মা।
কেন, কী হয়েছে?
কী আর হবে!
শরীর খারাপ?
না।
তাহলে?
চাচি শাশুড়ি গড়গড় করে বলতে শুরু করলেন, ছেলেকে বিয়ে করালাম। একটু আরাম-আয়েশে থাকব। পুত্রের বউ শুধু বাপের বাড়ি বেড়াতে যেতে চায়।
কাশফিয়া মাথা নাড়ে।
চাচি আম্মা আপনি নামায পড়েন?
আল্লাহই দিলে পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ি। কুরআন পড়ি।
কেন পড়েন?
তিনি একটু রাগান্বিত চোখে তাকালেন।
সুলতানা স্মিত হাসে।
আল্লাহর হুকুম। তাঁর সন্তুষ্টির জন্য পড়ি।
কাশফিয়া হাতে হাত রেখে মোলায়েম কণ্ঠে বলে, বেশ ভালো। আল্লাহর সন্তুষ্টি চান। মহান আল্লাহ তায়ালা আপনার ইবাদত কবুল করুন। আমীন। কিন্তু চাচি আম্মা, বউমার মনে সামান্য আঘাত দেওয়াতে যদি আল্লাহ আপনার ওপর নারাজ হন?
মানে!
মানুষের মনে কষ্ট দেওয়া কি ভালো? পুত্রবধূদের মেয়ের চেয়ে বেশি স্নেহ করতে হয়। তাহলে আপনি সহজেই মায়ের আসনে উপনীত হতে পারবেন।
আমার বউমাকে আমি ঢের ভালোবাসি।
তাহলে সুলতানার চোখে পানি কেন?
দুই মাস পরপর বাপের বাড়ির জন্য বায়না ধরে। জমিলার বউ ছয় মাসে একবারও বাপের বাড়ির নাম মুখে নিতে পারে না। সেই তুলনায় আমি যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা দিই। তবু আমি খারাপ।
কাশফিয়া বুঝিয়ে বলে, সুবিধা দেয়ার মূলত আমরা কেউ নই।
কিঞ্চিত কপালে ভাঁজ পড়ল চাচি আম্মার।
হাদীস অনুসারে একজন নারী মাসে দুইদিন তার বাপের বাড়ি যাওয়ার অধিকার রাখে। এ অধিকার থেকে কাউকে বঞ্চিত করা ঠিক নয়। তাছাড়া...!
তাছাড়া কী?
একজন নারীর মন খারাপ থাকলে সংসারের কাজে অমনোযোগী হবে। স্বাস্থ্য খারাপ করবে। তার কাছের মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার করবে। সম্পর্কে ভাঙনের সৃষ্টি হবে।
কথাগুলো শোনার পর কুঁচকে যাওয়া কপালটা হাইরোডের মতো প্রশস্ত হতে লাগল।
এভাবে তো ভাবিনি!
এখন তো ভাবতে হবে। আল্লাহর সন্তুষ্টি শুধু তার ইবাদতে সীমাবদ্ধ নয়। অনেক কিছুর সঙ্গে রিলেটেড।
আমাদের সকলকে মনে রাখতে হবে,
Basic human needs as a hierarchy a progression from simple. Physical needs to more complex emotional needs.
একজন স্ত্রীর মন খারাপ থাকলে সে কি শ^শুর-শাশুড়ি ও স্বামীর সাথে উত্তম আচরণ করতে পারবে। স্বামীর সন্তুষ্টির জন্য রাতের ঘুম বিসর্জন দেবে! সংসারকে টিকিয়ে রাখতে হলে আমাদের উভয়কে ছাড় দিতে হবে। সংসারের পূর্বে সম্পর্কের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।
বেসিক নিড বলতে শুধু আমরা-
Physiological needs-Air, food, Water, Shelter, Cloth, Treatment, Education... এসব বুঝতাম। এর সাথে আরো অনেক কিছু রিলেটেড।
যেমন-
Safety needs- protection, security, order law, limits, stability etc.
Belongingness and love needs – family, affection, relationship, tender, care love etc. Self esteem needs – achievement status, responsibility reputation etc.
Self schematization- personal growth and fulfillment etc.
Reference – Maslow’s hierarchy needs.
রুম থেকে সুলতানার স্বামীর উদ্দেশে কাশফিয়া বলল, আপনি তো আপনার মাকে বুঝিয়ে বলতে পারেন। সন্তানের কোনো কথা কি মা ফেলতে পারেন।
আসলে... সুলতানার স্বামী আমতা আমতা করতে থাকে।
সুলতানা জানতে চায়, আসলে কী?
স্ত্রীর চোখে চোখ রেখে গাল টিপে হেসে বলে, আমিও তোমাকে ছাড়তে চাই না।
বাহ! এতো ভালোবাস আমাকে?
হুম!
এ পাতার অন্যান্য খবর
- কুরবানির ইতিহাস ও তাৎপর্য
- আরাফাতের দিনের গুরুত্ব ও ফজিলত
- জায়নবাদ এবং তার সখা
- নতজানু
- বখতে নসরের চোখ
- আবুল খায়ের নাঈমুদ্দীন-এর দুটি কবিতা
- চাঁদের জোসনা
- আলম শামস-এর একগুচ্ছ
- বিদ্রোহী কবি সম্রাট
- সাফা মারওয়া
- ঈদের নামায
- কুরবানি ঈদের পূর্বপ্রস্তুতি
- আনুগত্য ও ত্যাগের মহিমায় হযরত ইব্রাহীম (আ.) ও তার পরিবার
- কুরবানি ঈদের রান্না
- হজ মহাসম্মেলন
- বিদায় হজের ভাষণ
- নূহা রাহির মিশুবিষয়ক সুসমাচার
- ঈদ ভাবনায় আঁকা জীবন
- কুরবানির শিক্ষা