নদনদীর পানি বাড়ছে
বড় বন্যার আশঙ্কা
সুনামগঞ্জে বন্যার পানিতে রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ চরমে
স্টাফ রিপোর্টার : উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে সুনামগঞ্জের প্রধান নদী সুরমার পানি দুটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই অবস্থা দেশের লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নেত্রকোনাসহ দেশের ১১টি জেলায়। বন্যা কবলিত জেলা হচ্ছে : কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, নীলফামারী, রংপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ও জামালপুর। এসব জেলার নদনদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দেখা দিয়েছে বন্যার শঙ্কা। ইতোমধ্যে এসব জেলার কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বড় ধরনের বন্যা হওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড সংশ্লিষ্টরা। খবর নিয়ে জানা গেছে, ভারতের সিকিম রাজ্য থেকে নেমে আসা তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে। উত্তর সিকিম থেকে জলপাইগুড়িতে নেমে আসা তিস্তার পানিতে প্লাবিত হচ্ছে দুই কূল। উত্তর সিকিমে তিস্তায় পানি বেড়ে যাওয়ায় ধসের ঘটনা ঘটেছে। তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় জলপাইগুড়ির গজলডোবা তিস্তা ব্যারাজের ১ হাজার ১০০ কিউসেক পানি গত ১৫ জুন শনিবার ছাড়া হয়েছে। এই পানি ছাড়া হয়েছে তিস্তা ব্যারাজের ছয়টি স্লুইসগেট থেকে। এ গজলডোবা থেকে তিস্তা নদী বাংলাদেশে গিয়ে পড়েছে। গজলডোবা এলাকায় তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন নদীর দুই পারের মানুষ। তাঁদের আশঙ্কা, সিকিম থেকে নেমে আসা তিস্তার পানিতে বন্যা দেখা দিতে পারে।
সুনামগঞ্জে সুরমার পানি বিপৎসীমার ওপরে : উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে সুনামগঞ্জের প্রধান নদী সুরমার পানি দুটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিন সকালে ছাতক পয়েন্টে এবং দুপুরে সুনামগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে। জানা যায়, পাহাড়ি ঢলের তোড়ে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার ও ছাতক উপজেলার সীমান্ত এলাকার রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানি সীমান্ত এলাকার গ্রামগুলোকে প্লাবিত করছে। সুনামগঞ্জের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উপজেলা দোয়ারাবাজার ও ছাতকে অপরিকল্পিত রাস্তাঘাট, পাউবোর ফসলরক্ষা বাঁধের কারণে ঢলের পানি নামতে বাধাগ্রস্ত হওয়ায় এ সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, ‘গত ১৬ জুন রোববার দুপুর থেকে সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি দুই সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ছাতক পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে ভোর থেকে প্রবাহিত হচ্ছে। সুনামগঞ্জে ৭.৮২ মিটার এবং ছাতকে ৯.৩০ মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে।’ বৃষ্টির ওপর এ অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে।
তিস্তার পানি আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে
উজানের ঢল আর বৃষ্টিপাতের প্রভাবে তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে। এতে লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন এলাকার নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল এবং চরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় পানি উঠতে শুরু করেছে। তলিয়ে যাচ্ছে ধান ও পাটক্ষেতসহ ফসলি জমি। আবারও বন্যার আশঙ্কা করছেন নদীপাড়ের বাসিন্দারা। গত ১৯ জুন সকাল ৯টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫১ দশমিক ৯২ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার)। জানা গেছে, তিস্তার পানি বাড়ায় সদর উপজেলার কালমাটি, খুনিয়াগাছ, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, গোবর্ধন, সর্দারপাড়া, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, কাকিনা, হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, পাটিকাপাড়া, সিংগীমারী এবং সিন্দুর্না ইউনিয়ন এলাকার শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা বলেন, গজলডোবায় পানি ছেড়ে দেওয়ার কারণে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে জানান, আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্যানুযায়ী, দেশের উত্তরাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন উজানে মাঝারি থেকে ভারী এবং কিছু জায়গায় অতি ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে নদনদীর পানি বাড়ছে। ফলে দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার ইত্যাদি নদনদীসমূহের পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বেড়েছে ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে কুড়িগ্রাম জেলার প্রধান দুই নদী তিস্তা ও দুধকুমারের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে অপর দুই প্রধান নদী ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বেড়ে তা বিপৎসীমার খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। গত ১৯ জুন বুধবার সকাল ৯টায় পাউবোর দেওয়া তথ্যানুযায়ী, এরই মধ্যে দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে ২২ সেন্টিমিটার এবং তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ৪২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৫ ও ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। অন্যদিকে ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে ৪৬ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে ৩২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার একেবারে কাছাকাছি পৌঁছেছে। কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১৬২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী কয়েকদিন জেলায় বজ্রসহ ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। দুধকুমার ও তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলার রাজারহাট ও নাগেশ্বরী উপজেলার ১২টি গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। পাশাপাশি ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বাড়তে থাকায় সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে এবং চিলমারীর কয়েকটি পয়েন্টে নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
নেত্রকোনায় উব্ধাখালী কংশ, সোমেশ্বরী ও ধনু নদীর পানি বেড়েছে
নেত্রকোণায় বৃষ্টি আর উজানের ঢলে প্রধান কয়েকটি নদনদীর পানি বেড়ে চলেছে। এর মধ্যে উব্ধাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। এতে ওই অঞ্চলে বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত ১৮ জুন মঙ্গলবার সকাল ৯টা নাগাদ উব্ধাখালী নদীর পানি কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। লোকালয়ে এখনো পানি না ঢুকলেও বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় বন্যার আশঙ্কা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারওয়ার জাহান জানান, জেলার প্রধান নদী উব্ধাখালী ছাড়াও কংশ, সোমেশ্বরী ও ধনু নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। উব্ধাখালী নদীর পানি বিপৎসীমা ছাড়িয়ে ২২ সেন্টিমটার ওপর দিয়ে বইছে। কংশ নদের পানি জারিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার মাত্র ৬০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে বইছে। এছাড়া জেলার হাওরাঞ্চলের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া ধনু নদের পানি খালিয়াজুরী পয়েন্টে বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার ও পাহাড়ি নদী সোমেশ্বরীর পানি বেড়ে দুর্গাপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার ১ দশমিক ৪২ মিটার এবং বিজয়পুর পয়েন্টে ৪ দশমিক ১১ মিটার নিচ দিয়ে বইছে। জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ বলেছেন, এখন পর্যন্ত বাড়িঘরে পানি ঢোকেনি। তেমনভাবে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার খবর নেই। তবে বন্যার আশঙ্কায় তা মোকাবিলার জন্য সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ওপর মহলে জানানো হয়েছে। কলমাকান্দা উপজেলা প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শুকনো খাবার প্রস্তুত রাখাসহ প্রশাসন সতর্ক রয়েছে। বন্যা কবলিত কয়েকটি জেলার নদী তীরবর্তী মানুষ ইতোমধ্যে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটতে শুরু করেছে।
এ পাতার অন্যান্য খবর
- রেল করিডোর পাচ্ছে ভারত
- শেখ হাসিনা-নরেন্দ্র মোদি শীর্ষ বৈঠক দিল্লিতে
- বন্যাদুর্গতদের সাহায্যে এগিয়ে আসুন : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান
- দাওয়াই পাচ্ছে না সরকার
- বিএনপিতে কেন নন্দলাল বিতর্ক
- আওয়ামী লীগে অস্বস্তি-দ্বন্দ্ব
- অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার
- পলাশী ট্র্যাজেডি দিবস ২৩ জুন
- সাংবাদিক, সংবাদপত্র ও মিডিয়ার ওপর জুলুম-নিপীড়ন বন্ধ করুন : মিয়া গোলাম পরওয়ার
- জামায়াতে ইসলামীর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এদেশে কুরআনের সমাজ বিনির্মাণ : রফিকুল ইসলাম খান