সংবাদ শিরোনামঃ

বাকশালের পদধ্বনি ** গাজায় ইসরাইলি হামলা অব্যাহত নিহতের সংখ্যা দুই শতাধিক ** গাজায় ইসরাইলি বর্বরতা : কার্যকর পদক্ষেপ নেই বিশ্বসম্প্রদায়ের ** গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সাংবাদিকদের সংগ্রাম চলবেই ** সর্বনাশা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে ** সংসদ এভাবে চলতে থাকলে সাধারণ মানুষের আস্থা হারিয়ে ফেলবে ** গাজায় ইসরাইলি হামলা বন্ধে বিশ্বকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে ** ‘কূটনৈতিক শিষ্টাচার’ শেখানোর হাস্যকর চেষ্টা ** আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে রোজা ও স্বাস্থ্য ** কবি আল মাহমুদের জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা ** গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি নিষ্ঠুরতা ইতিহাসের সকল বর্বরতাকে হার মানিয়েছে ** ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে খানাখন্দ ঈদে ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগের আশঙ্কা **

ঢাকা, শুক্রবার, ৩ শ্রাবণ ১৪২১, ১৯ রমজান ১৪৩৫, ১৮ জুলাই ২০১৪

আমানুর রহমান, শীর্ষ নিউজ : মিরপুর মডেল থানার এসআই জাহিদের হাত থেকে বাঁচতে কয়েক দফা বাসা পরিবর্তন ছাড়াও বিদেশ যেতে চেয়েছিলেন নিহত মাহবুবুর রহমান সুজন। সেজন্য তিনি তার খালাতো ভাই হাবিবুর রহমান অপু চাকলাদারের সাহায্য চেয়েছিলেন। দেশে থাকলে এসআই তাকে প্রাণে মেরে ফেলতে পারেন বলে গত পাঁচ মাস আগে খালাতো ভাইয়ের বাসায় গিয়ে এই আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন সুজন। তার অনুরোধে খালাতো ভাই বাংলাদেশের বৃটেন দূতাবাসে আবেদনও করেছিলেন। ঈদের পর দূতাবাসে তার ইন্টারভিউ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই ওই এসআই’র নির্যাতনেই তাকে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হলো।

শীর্ষ নিউজকে কথাগুলো বলেছেন পুলিশি হেফাজতে নিহত মাহবুবুর রহমান সুজনের খালাতো ভাই হাবিবুর রহমান অপু চাকলাদার। গত ১৩ জুলাই রোববার বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গের সামনে তিনি এই প্রতিবেদককে এসব কথা বলেন।

এসআই জাহিদ কেন তাকে মেরে ফেলবে? এমন প্রশ্নের জবাবে অপু চাকলাদার বলেন, ‘‘সুজন গত পাঁচ মাস আগে হঠাৎ একদিন আমার বাসায় যায়। তখন সে আমাকে বলে মিরপুর মডেল থানার এসআই জাহিদ তার কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে আসছে। এসআই’র আশানুরূপ টাকা না দিতে পারলে সে তাকে খুন করারও হুমকি দিয়েছে বলে জানায় সুজন। তখন সুজন আমাকে বলে, ‘আমাকে বিদেশ পাঠিয়ে দিন। নয়তো সে আমাকে মেরে ফেলবে।’’ তিনি আরো বলেন ‘তার কথা মতো আমি বাংলাদেশের বৃটেন দূতাবাসে আবেদনও করে দেই। ঈদের পর তার দূতাবাসে ইন্টারভিউ দেয়ার কথা ছিল। সে পর্যন্ত আমি তাকে নিরাপদে থাকতে বলি। এরপর সুজন বাসা পরিবর্তন করে ধানমণ্ডির শঙ্করে ২৭৭ নম্বর বাসা ভাড়া নেয়। কিন্তু তারপরও সে বাঁচতে পারলো না।’

পুলিশি হেফাজতে নিহত সুজনের স্ত্রীর বরাত দিয়ে খালাতো ভাই অপু চাকলাদার শীর্ষ নিউজকে বলেন, ‘গত ১২ জুলাই (শনিবার) রাত সাড়ে ১২টার দিকে সুজনের স্ত্রী মমতা সুলতানা লুচি এবং পাঁচ বছরের শিশু সন্তান মোশাররফকে সহ বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায় এসআই জাহিদের নেতৃত্বে একটি পুলিশ দল।’

তিনি বলেন, ‘বাসায় প্রবেশ করেই সুজন ও তার স্ত্রীর মোবাইল নিয়ে যায় পুলিশ। তাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বাসার জিনিসপত্র তল্লাশি করে। বাসা থেকে নগদ টাকা এবং স্বর্ণালঙ্কার এবং শিশু সন্তান মোশাররফসহ সুজন ও তার স্ত্রীকে  মিরপুর মডেল থানায় নিয়ে যায় এসআই জাহিদ।’

 

সুজনের স্ত্রীর বরাত দিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘থানায় স্ত্রী এবং ছেলেকে একটি কে আটকে রাখা হয়। সুজনকে অন্য একটি কে নিয়ে ব্যাপক নির্যাতন করা হয়। পুলিশের নির্যাতনে সুজন চিৎকার করতে থাকেন। এ সময় সুজনের স্ত্রী যেকোনো কিছুর বিনিময়ে সুজনকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য আকুতি জানান।’

কিন্তু এসআই জাহিদ তার কথায় কান না দিয়ে সুজনকে পেটাতে থাকেন। নির্যাতনের এক পর্যায়ে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে বেকায়দায় পড়ে যান এসআই জাহিদ। এরপর তাকে লতিফা নামের এক হাসপাতালে এবং পরে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসকরা সুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপরই লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়।’

 à¦…পু চাকলাদার বলেন, ‘সুজনের স্ত্রীকে সারারাত যে কে আটকে রাখা হয়েছিল সেটি একটি বাথরুম ছিল বলে সে আমাকে জানিয়েছে।‘

তিনি বলেন, ‘রোববার পুলিশের একটি গাড়িতে করে তাকে সুজনের মায়ের বাড়ি শাহআলীর ই-ব্লকের ৯ নম্বর রোডের ১ নম্বর বাড়িতে নিয়ে যায় পুলিশ। তখনও পুলিশ সুজনের বিষয় পরিবারকে কিছুই জানায়নি। দুপুরে গণমাধ্যম সূত্রে তারা জানতে পারে সুজন পুলিশ হেফাজতে মারা গেছে।’

তিনি আরো বলেন ‘নিহত সুজনের লামিয়া নামের একটি নয় বছরের মেয়ে আছে। সে শাহআলীতে দাদীর সঙ্গে থাকে। সেখানে একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুলের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে সে। তাদের গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জে। সুজনরা চার ভাই। সে ছিল তৃতীয়। বড় ভাই শামীম সাভারে বাড়ি করে সেখানেই ব্যবসা করেন। মেজো ভাই সুমনের মিরপুরে একটি টং দোকান রয়েছে। ছোট ভাই সবুজ, সুজনের সঙ্গে ঝুট ব্যবসা করতো। কিন্তু তাকেও এসআই জাহিদ একটি ভাঙ্গা অস্ত্র দিয়ে ধরে গত দেড় বছর আগে অস্ত্র মামলা দিয়ে আদালতে চালান করে দেয়। সে দেড়বছর ধরেই কারাগারে আছে।’

এদিকে বিকেল ৪টার দিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রিয়াংকা দত্তের উপস্থিতিতে সুজনের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন করেন মিরপুর থানার এসআই আফজাল হোসেন।

তিনি শীর্ষ নিউজকে বলেন, ‘নিহত সুজনের হাত, পা, মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।’

অন্যদিকে নিহত সুজনের স্ত্রী মমতাজ সুলতানা লুচিকে মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার অফিসে ডাকা হয়। বিকেলে উপ-পুলিশ কমিশনার ইমতিয়াজ আহমেদ তার সঙ্গে কথা বলেন।

উল্লেখ্য, গত ১৩ জুলাই রোববার ভোরে মিরপুর মডেল থানায় পুলিশের হেফাজতে মাহাবুব রহমান সুজন (৩৫) নামে ওই ঝুট ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়। থানার এসআই জাহিদের নির্যাতনের শিকার হয়ে সুজন মারা গেছেন বলে পরিবারের প থেকে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় এরই মধ্যে এসআই জাহিদকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনারের কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

তবে মিরপুর মডেল থানার ওসি সালাউদ্দিন আহমেদ দাবি করেছেন, সুজন মিরপুর এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী এবং বিভিন্ন মামলার পলাতক আসামি। তাকে গ্রেফতারের জন্য তারা বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসছিলেন। মিরপুর এলাকায় অপরাধ করে তিনি অন্য এলাকায় চলে যেতেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

তিনি জানান, শনিবার জাকির এবং মিঠুন নামের দুইজনকে ১৪৫ পিচ ইয়াবাসহ মিরপুর থানা এলাকা থেকে আটক করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা সুজন সম্পর্কে তথ্য দেয়।

ওসি আরো জানান, জাকির ও মিঠুনের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই রাতে মিরপুর ১ নম্বর সেকশনের ই-ব্লকের ৯ নম্বর রোডের ১৬ নম্বর বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে সুজনকে আটক করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে দুটি ম্যাগজিন ও ১০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।

পরে সুজনকে থানাহাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সাদা বাবু নামে আরেক সন্ত্রাসীর বিষয়ে তথ্য দেন তিনি। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সুজনকে সঙ্গে নিয়ে বাবুকে গ্রেফতারে অভিযানে নামা হয়। তিনি বলেন, অভিযানে যাওয়ার সময় পথে সুজনের শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দেয়। এরপর তাকে লতিফা হাসপাতালে নেয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।