সংবাদ শিরোনামঃ

বাকশালের পদধ্বনি ** গাজায় ইসরাইলি হামলা অব্যাহত নিহতের সংখ্যা দুই শতাধিক ** গাজায় ইসরাইলি বর্বরতা : কার্যকর পদক্ষেপ নেই বিশ্বসম্প্রদায়ের ** গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সাংবাদিকদের সংগ্রাম চলবেই ** সর্বনাশা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে ** সংসদ এভাবে চলতে থাকলে সাধারণ মানুষের আস্থা হারিয়ে ফেলবে ** গাজায় ইসরাইলি হামলা বন্ধে বিশ্বকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে ** ‘কূটনৈতিক শিষ্টাচার’ শেখানোর হাস্যকর চেষ্টা ** আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে রোজা ও স্বাস্থ্য ** কবি আল মাহমুদের জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা ** গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি নিষ্ঠুরতা ইতিহাসের সকল বর্বরতাকে হার মানিয়েছে ** ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে খানাখন্দ ঈদে ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগের আশঙ্কা **

ঢাকা, শুক্রবার, ৩ শ্রাবণ ১৪২১, ১৯ রমজান ১৪৩৫, ১৮ জুলাই ২০১৪

॥ হারুন ইবনে শাহাদাত ॥
গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত এবং নির্বাচনকে হাইজ্যাক করে ক্ষমতা দখলকারী সরকারের গ্রহণযোগ্যতা ও মর্যাদার ফারাক কতটা তা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নৈতিক শক্তির অভাবে ভিতর থেকে ভেঙে পড়ছে দেশের প্রাচীন এই রাজনৈতিক দলটি। গত ৫ জানুয়ারির অবৈধ একতরফা নির্বাচনের পর দৃশ্যত একঘরে হয়ে পড়েছে তারা। বিগত এই নির্বাচনের ব্যাপারে ইউরোপ-আমেরিকাসহ সারা বিশ্ব ছিলো একদিকে, শুধু ভারতের তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের ওপর ভরসা করে, একতরফা নির্বাচনের নাটক সাজিয়ে, ক্ষমতা গ্রহণ করে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ। ভারতের সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ভরাডুবিতে প্রমাণ হলো, পরের জন্য গর্ত করলে সেই গর্তে পরে নিজের প্রাণ হারানোর আশঙ্কাও থাকে। বাংলাদেশের সাড়ে নয় কোটি ভোটারের ভোটাধিকার হরণ করার অভিশাপের সাপের প্যাচে পড়ে কংগ্রেস তার দেশে বিরোধী দলের মর্যাদা হারানোর পর্যায়ে চলে গেছে।

সূত্রে প্রকাশ, কংগ্রেস এখন উপলদ্ধি করছে, বাংলাদেশের একটি বিশেষ দলের সাথে বিশেষ সম্পর্ক রক্ষা করতে গিয়ে বিশ্ববাসীর কাছে তারা গণতন্ত্রের দুশমন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। তারা বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের স্বার্থ রক্ষার কথা বলে আওয়ামী লীগকে বিশেষ সুবিধা দিতো। কিন্তু আওয়ামী লীগের বিগত প্রায় একদশকের শাসনে কংগ্রেসের ভুল ভেঙেছে। ভারতীয় গোয়েন্দাসংস্থার গোপন প্রতিবেদন দেখে প্রণব বাবুদের চোখ চড়কগাছ। এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত চার দলীয় জোট সরকারের চেয়ে আওয়ামী লীগ আমলে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা বেশি নির্যাতিত হয়েছে।  প্রতিবেদন দেখে কংগ্রেসের শীর্ষ পর্যায়ের একজন নেতা মন্তব্য করেছেন, এতদিন আমরা দুধ কলা দিয়ে সাপ পুষেছি। কংগ্রেসের সাথে আওয়ামী লীগের দূরত্ব দিন দিন  বাড়ছে বলে সূত্রটি জানিয়েছে।

নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে গঠিত ভারতীয় জনতা পার্টির নতুন সরকারের সাথে আওয়ামী লীগ সরকরের দূরত্ব যে আরো কয়েক ধাপ বেশি তা পরিস্কার হলো বাজেট ঘোষণার পর। বার্তা সংস্থা পিটিআইয়ের বরাত দিয়ে বিজনেস স্টান্ডার্ডের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে, ভারতের ২০১৪-১৫ অর্থ বছরের বাজেটে প্রতিবেশী ও উন্নয়নশীল দেশে বহুপীয় ও দ্বিপীয় সাহায্য ও সহযোগিতামূলক কর্মসূচিতে এবারের বাজেটে বরাদ্দের পরিমাণ বাড়লেও বাংলাদেশের জন্য সহায়তা বরাদ্দ কমানো হয়েছে। গত অর্থ বছরে বাংলাদেশের জন্য এই বরাদ্দ ছিল ৫৯০ কোটি রুপি। কিন্তু তা কমিয়ে এবার ৩৫০ কোটি রুপি প্রস্তাব করা হয়েছে। নতুন সরকারের আমলে বাংলাদেশের জন্য সহায়তা বরাদ্দ কমেছে ২৪০ কোটি রুপি।

ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটির ২০১৪-১৫ অর্থ বছরের বাজেটে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ বেড়েছে ২৫ শতাংশ। প্রতিবেশী সবগুলো দেশের েেত্র সহায়তার পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু কমেছে শুধু বাংলাদেশের।

সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভুটানে ভারতের সাহায্য বেড়েছে সবচেয়ে বেশি; প্রায় ৫০ শতাংশ। আগের বছরের ৪ হাজার ১০৯ কোটি রুপি থেকে বেড়ে এ বছর বরাদ্দ হয়েছে ৬ হাজার ৭৪ কোটি রুপি। উল্লেখ্য, দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম বিদেশ সফরে গত মাসে ভুটান যান নরেন্দ্র মোদী। আফগানিস্তানকে এ বছর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৬৭৬ কোটি রুপি, যা গত বছর ছিলো ৫২৫ কোটি রুপি। এছাড়া নেপালকে ৩৮০ কোটি রুপি থেকে বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে ৪৫০ কোটি রুপি। শ্রীলঙ্কার জন্যও আগের বছরের থেকে ৯০ কোটি রুপি বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

 à¦¶à§‡à¦– হাসিনার সরকারের সাথে মোদী সরকারের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বিবিসির বাংলা বিভাগের সাবেক প্রধান বিশিষ্ট সাংবাদিক সিরাজুর রহমান ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের বাংলাদেশ সফর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে একটি জাতীয় দৈনিকে লিখেছেন, ‘গোপনে সুষমা শেখ হাসিনাকে কী বলে গেছেন আমাদের জানার কথা নয়। কিন্তু সরকার বাহ্যত জাহির করতে চাইছে যে দিল্লির নতুন সরকার তাদের সাথে লেনদেন করবে বলে আশ্বাস দিয়ে গেছেন মিজ স্বরাজ। সরকারের দিক থেকে কৃত্রিম উল্লাসের অবধি নেই। তাদের পোষ্য মিডিয়া ঢাকঢোল পেটাচ্ছে সে নিয়ে। চুলচেরা বিচার করলে দেখা যাবে, এ আশ্বাস রীতি রা ছাড়া আর কিছু নয়। আধুনিক কালের অবস্থা এমনই যে, এক দেশ অন্য দেশের সাথে লেনদেন না করেই পারে না; অন্তত বেশির ভাগ েেত্র। সে জন্যই রীতি বা প্রথা হচ্ছে, যে সরকার গদিতে আছে অন্য দেশগুলো বাধ্য হয়ে সে সরকারের সাথেই লেনদেন করে।

গত ৫ জানুয়ারির তামাশার নির্বাচনকে ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, চীন কিংবা জাপান কেউই বিশ্বাসযোগ্য কিংবা জনমতের প্রতিফলন বলে স্বীকার করেনি। কিন্তু প্রহসনের নির্বাচনে ‘বিজয়ী’ সরকারের সাথে লেনদেন করতে তারা বাধ্য হচ্ছে। তার অর্থ এই নয় যে, এ সরকারকে তারা বৈধ কিংবা বন্ধু মনে করে। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ওয়াশিংটনে ধরনা দিয়েও পোশাক রফতানির জিএসপি আদায় করে আনতে পারেননি। ব্যর্থ হয়ে উল্টোপাল্টা কথাবার্তা বলছেন। এ দিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভারত থেকে প্রথমে আম, পরে পান আমদানির লাভজনক ব্যবসায় বন্ধ করে দিয়েছে।

সুষমা স্বরাজ এমন কিছু কথা বলেছেন, যা আমার আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়। তিনি বলেছেন, ভারতের নতুন সরকার বিশেষ কোনো রাজনৈতিক দল কিংবা বিশেষ কোনো দলের সরকারের প্রতি আনুকূল্য দেখানোর পরিবর্তে জাতিতে জাতিতে সুসম্পর্কের ওপর জোর দিতে চায়। একটু খতিয়ে দেখলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, অতীতে, বিশেষ করে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারগুলোর আমলে, দিল্লি আওয়ামী লীগের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে, বিশেষ একটি পরিবারকে স্বজনের মতো যতœ করেছে। তারা দেশে দেশে এবং জাতিতে জাতিতে সুসম্পর্কের পরিবর্তে কংগ্রেস-আওয়ামী লীগেই সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। বাংলাদেশে আর কে কী ভাবছে সেটাকে তারা গ্রাহ্য করেনি। দিল্লির নতুন সরকার যদি এই অশুভ গোলকধাঁধা ভঙ্গ করতে পারে, তাহলে দুই দেশের এবং গোটা উপমহাদেশে সম্পর্কের েেত্র নতুন যুগের সূচনা হতে পারে।

খোন্দকার মোশতাক আহমদের সরকার চেষ্টা করেও দিল্লির মন জয় করতে পারেনি- যদিও সেটাও ছিল আওয়ামী লীগ দলীয় একটা সরকার। জিয়াউর রহমান শুধু স্বাধীনতার ঘোষক এবং প্রথম প্রেসিডেন্টই ছিলেন না, অবশ্যই তাকে গণতন্ত্র ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পুনঃপ্রবর্তক বলতেই হবে। তার বন্ধুত্বের ডাকে দিল্লি সাড়া দেয়নি। এ দিকে, নতুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সার্ক সম্বন্ধে উৎসাহী বলেই মনে হয়। এই সার্কের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল রাষ্ট্রপতি জিয়ার উদ্যোগে। ভারতসহ দণি এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতাই ছিল তার উদ্দেশ্য। কিন্তু ভারত সরকার তখন থেকে সার্ককে সতীনপুত্রের মতোই দূরে দূরে সরিয়ে রাখতে চেয়েছে।’

 à¦¸à¦¿à¦°à¦¾à¦œà§à¦° রহমানের এই বিশ্লেষণে কংগ্রেস সরকার ও নরেন্দ্র মোদী সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির ফারাক তিনি সুষ্ঠুভাবে তুলে ধরেছেন।

সুষমার বাংলাদেশ  সফরের সময় খালেদা জিয়ার সাথে তার বৈঠক ছিলো খুবই তাৎপর্যপূর্ব। যে সময় বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, সুষমার সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠকের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার আপত্তি করেছিল। এসব আপত্তি উপেক্ষা করে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভারত যে কোনো দল নয়, বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক করতে চায়, এই বৈঠক তারই প্রতিফলন। এখন প্রশ্ন হলো এমন অবস্থায় আওয়ামী লীগ কী করবে? এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক মাহফুজ উল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগ নিজেও বুঝতে পারছে, গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে তারা যে সরকার গঠন করছে, তার আইনগত ভিত্তি থাকলেও নৈতিক বৈধতা নেই। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ছাড়া রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা সম্ভব নয়। তারপরও দলের কিছু নেতাদের দিয়ে এই সরকার ৫ বছরই ক্ষমতায় থাকবে, এমন বক্তৃতা দিয়ে আসলে মাঠের অবস্থা বুঝার চেষ্টা করছে।

রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করেন, আওয়ামী লীগ অনৈতিকভাবে যতদিন বেশি দিন ক্ষমতায় থাকবে, তত দ্রুত দলটি ভিতর থেকে ভেঙে পড়বে। তাদের এই ভাঙন ঠেকানোর একমাত্র মিত্র ভারতের কংগ্রেসও গণবিচ্ছিন্ন এই দলটির প্রতি মোহাবিষ্ট থাকবে না। বিগত লোকসভা নির্বাচনে ব্যাপক ভরাডুবির কারণে কংগ্রেস এখন নিজেদের ঘর সামলাতেই ব্যস্ত। এমন অবস্থায় নিজের স্বার্থে আওয়ামী লীগের উচিত দ্রুত একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করা।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।