হজের এবারও কোটা পূরণ হলো না
৩০ অক্টোবর ২০২৫ ১৭:৪৬
স্টাফ রিপোর্টার : হজের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করেছে সৌদি আরব। যেসব দেশ হজযাত্রী পাঠাচ্ছে, সেসব দেশ থেকে ইতোমধ্যে হজযাত্রীদের সংখ্যা জেনে নিয়েছে দেশটি। বাংলাদেশ সরকারও সৌদিকে হজযাত্রীর চূড়ান্ত সংখ্যা জানিয়ে দিয়েছে। তবে গত কয়েক বছরের মতো এবারও সৌদি আবরের দেওয়া কোটা পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। কোন দেশের কতজন হজ করতে পারবেন, তা নির্ধারণ করে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)। ওআইসির তথ্যানুযায়ী, দেশের মুসলিম জনগোষ্ঠীর ১ শতাংশ প্রতি বছর হজে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে আসছেন। সে অনুযায়ী ১০ বছর ধরে বাংলাদেশ ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের কোটা পেয়ে আসছে। হজ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে ৮২ হাজার হজযাত্রী হজ পালন করবেন। সৌদি সরকারের গাইডলাইন অনুযায়ী, গত ২৩ অক্টোবর বাংলাদেশি হজযাত্রীদের চূড়ান্ত সংখ্যা জানানো হয়। বেসরকারি এজেন্সিগুলো আরও সময় বাড়ানোর দাবি করলেও ধর্ম মন্ত্রণালয় আর সময় না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক এ প্রতিবেদককে এমন তথ্যই জানিয়েছেন। আল-খায়ের ট্রাভেলস অ্যান্ড টুরস এজেন্সির দেওয়া তথ্যানুযায়ী, আগামী ২০২৬ সালের হজের প্রথম ফ্লাইট শুরু হবে ১৮ এপ্রিল।
গত কয়েক বছর ধরে হজ কোটা পূরণ করতে পারছে না বাংলাদেশ। উড়োজাহাজের ভাড়া বৃদ্ধি, সৌদি আরবে খরচ বেড়ে যাওয়া এবং মানুষের আয় কাক্সিক্ষত পরিমাণে না থাকায় এমন পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। চলতি বছর ২৭ জুলাই থেকে হজযাত্রীদের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়। সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী আগামী বছর এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজে যাওয়ার কথা। কিন্তু সেটি সম্ভব হচ্ছে না। প্রতি বছরের মতো এবারও হজে যেতে আগ্রহী ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের নিবন্ধনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল ধর্ম মন্ত্রণালয়। গত ১৬ অক্টোবর ছিল সরকারি ও বেসরকারি- এ দুই ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধনের শেষ সময়। কিন্তু এবার কাক্সিক্ষত সাড়া মেলেনি। অনেকের ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও অতিরিক্ত বিমান ভাড়া ও নিবন্ধনের বাড়তি আর্থিক চাপ সামলাতে না পেরে নিয়ত করেও হজে যেতে পারছেন না। হজের নিবন্ধনের সময়ও আর বৃদ্ধি করা হবে না বলে জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। গত ২৮ সেপ্টেম্বর সরকারিভাবে তিনটি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে ধর্ম মন্ত্রণালয়। ঘোষিত হজ প্যাকেজ-১ (বিশেষ) এর খরচ ধরা হয়েছে ছয় লাখ ৯০ হাজার ৫৯৭ টাকা। হজ প্যাকেজ-২ এ খরচ ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ৫৮ হাজার ৮৮১ টাকা এবং হজ প্যাকেজ-৩ এ খরচ ধরা হয়েছে চার লাখ ৬৭ হাজার ১৬৭ টাকা। এ প্যাকেজের বাইরে রয়েছে খাবার খরচ। একইভাবে একদিন পর বেসরকারিভাবে তিনটি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হবে। এর মধ্যে সাশ্রয়ী হজ প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ১০ হাজার টাকা। গত বছরের চেয়ে এবার খরচ কমানো হলেও কাক্সিক্ষত সাড়া মেলেনি এবারও।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে নিবন্ধিত অনেকে ২০২০ সাল থেকে হজে যেতে পারেননি। করোনার ধাক্কা ২০২২ সাল পর্যন্ত ছিল। ২০২২ সালে হজে গিয়েছিলেন ৫৯ হাজার ৯০৯ জন। ২০২৩ সালে গিয়েছিলেন ১ লাখ ২২ হাজার ৮৮৪ জন, ২০২৪ সালে ৮৫ হাজার এবং ২০২৫ সালে ৮৭ হাজার ২০০ জন।
মন্ত্রণালয় সূত্রে আরও জানা যায়, ২০১৯ সালে সরকারি হজ প্যাকেজ ছিল ৩ লাখ ৪৪ হাজার থেকে ৪ লাখ ১৮ হাজার টাকা। ২০২২ সালে তা বেড়ে হয় ৪ লাখ ৬২ হাজার ১৫০ থেকে ৫ লাখ ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। ২০২৩ সালে শুধু এক প্যাকেজে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৫ টাকা ছিল। ২০২৪ সালে করা হয় ৫ লাখ ৭৮ হাজার থেকে ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৫৬৬ টাকা, ২০২৫ সালে করা হয় ৫ লাখ ৪৭ হাজার ৭২০ থেকে ৬ লাখ ৭৩ হাজার ৭০ টাকা এবং আগামী বছরের জন্য করা হয় ৪ লাখ ৬৭ হাজার ১৬৭ থেকে ৬ লাখ ৯০ হাজার ৫৯৭ টাকা। এদিকে প্রতি বছরই সরকারি হজ প্যাকেজ ঘোষণার পরপরই বেসরকারি হজ এজেন্সির মালিকরাও বেসরকারি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে আসছেন। তাঁরা বরাবরই উড়োজাহাজের ভাড়া কমানোর পক্ষে বলে আসছেন। তবে বর্তমানে সৌদি আরব অংশে সব ধরনের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মোট খরচ বেড়েছে বলে তারা জানান।
এজেন্সি মালিকদের ভাষ্য, অনেকেই ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ওমরাহ করছেন। এতে গ্রামগঞ্জের মানুষের ধারণা, তাদের হজ পালন হয়ে গেছে। এ কারণে অনেকে নিবন্ধন করার পরও তাদের টাকা ফেরত নিয়েছেন। গত বছর কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার তিনজন বাসিন্দা হজ নিবন্ধন করার পরও হজে যাননি। পরে তারা ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ওমরাহ পালন করে আসেন বলে জানা গেছে। বেসরকারি হজ এজেন্সির মালিকদের সংগঠন হজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর মহাসচিব ফরিদ আহমেদ মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেন, উড়োজাহাজের ভাড়া অস্বাভাবিক বাড়ায় সৌদি আরবে খরচ অনেক বেড়ে যাওয়া ও ব্যবসায় মন্দা থাকায় অনেকেই হজে যেতে পারছেন না।