ঋতু পরিবর্তনে শিশুর যত্ন
৯ অক্টোবর ২০২৫ ১৫:৫৮
॥ ইমরান হোসেন ॥
বাংলাদেশে শরতের শেষে হেমন্তকাল দ্বারে কড়া নাড়ছে, এরপরই শীতকাল। ঋতু পরিবর্তনের এ সময়ে তাপমাত্রার ওঠানামা ও শুষ্ক বাতাসের কারণে সর্দি-কাশি, জ্বরসহ অন্যান্য রোগব্যাধি দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। শিশুদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম হওয়ায় এ সময়ে তাদের অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। তাই এ সময়ে পরিবারের সবাইকে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে; বিশেষ করে শিশুদের জন্য বাড়তি যত্ন নিতে হবে। চলুন জেনে নিই এ সময়ে কীভাবে সুস্থ থাকা যায় এবং শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়।
ঋতু পরিবর্তনের প্রভাব ও সম্ভাব্য রোগসমূহ : ঋতু পরিবর্তনের সময় ঠাণ্ডা এবং শুষ্ক বাতাসের প্রভাব বেশি থাকে, যা মানুষের শ্বাসযন্ত্রকে প্রভাবিত করতে পারে। বাতাসে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সক্রিয়তা বৃদ্ধি পাওয়ায় সহজেই সর্দি-কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট, এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে এ ধরনের রোগ বেশি দেখা দেয়। এছাড়া এলার্জি এবং ত্বকের শুষ্কতা এ সময়ের সাধারণ সমস্যা।
শিশুর জন্য বিশেষ যত্নের গুরুত্ব : শিশুরা ঋতু পরিবর্তনের সময় বেশ সংবেদনশীল থাকে এবং তাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও কম থাকে। তাই এ সময়ে শিশুদের বিশেষ যত্ন নিতে হবে। তাদের নিয়মিত পর্যাপ্ত পানি পানের অভ্যাস করানো, পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো এবং সুস্থতার জন্য কিছু নিয়ম মানার প্রয়োজন।
ঋতু পরিবর্তনের সময় সুস্থ থাকার জন্য করণীয় : শিশু ও পরিবারের সুস্থতার জন্য ঋতু পরিবর্তনের সময় কিছু সহজ অভ্যাস অনুসরণ করা যেতে পারে।
১. গরম পোশাক পরিধান করা: ঠাণ্ডা থেকে বাঁচতে শিশুদের যথাযথ গরম কাপড় পরানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর গলা, মাথা, হাত-পা ঢাকা থাকবে এমন পোশাক ব্যবহার করা উচিত। ২. সঠিক খাবারের ব্যবস্থা: ঋতু পরিবর্তনের সময় পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো শিশুদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক। ফলমূল, শাকসবজি, প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার এবং পর্যাপ্ত পানি পানের অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।
৩. ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা: হাত ধোয়া, মুখ পরিষ্কার রাখা এবং ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে অনেক ধরনের রোগের ঝুঁকি কমে আসে।
৪. তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা: আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে ঘরের ভেতরেও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন। হিটার বা হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করে ঘরের আর্দ্রতা এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
৫. ভিটামিন ডি নিশ্চিত করা: এ সময়ে সূর্যের আলো কম থাকায় শরীরে ভিটামিন ডি’র অভাব দেখা দিতে পারে। তাই সকাল বেলা কিছুক্ষণ সূর্যের আলোতে থাকতে শিশুকে উৎসাহিত করা যেতে পারে।
৬. ঘুমের সঠিক সময় নিশ্চিত করা: পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক। তাই শিশুকে যথেষ্ট ঘুমানোর জন্য উৎসাহিত করতে হবে।
ঋতু পরিবর্তনের সময় বাইরে যাত্রা করায় সতর্কতা
এ সময়ে ধুলাবালির সংস্পর্শ এড়ানো উচিত। প্রয়োজনে বাইরে গেলে মাস্ক ব্যবহার করা এবং পরে হাতে মুখ ধুয়ে ফেলা গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদেরও এ বিষয়ে সচেতন করা প্রয়োজন।
পরিবারের বয়স্কদের যত্নের গুরুত্ব : শুধু শিশুরাই নয়, পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের প্রতিও বিশেষ নজর দেয়া প্রয়োজন। বয়স্কদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও এ সময়ে দুর্বল হয়ে পড়ে। তাদের পুষ্টিকর খাবার, সঠিক বিশ্রাম, এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা উচিত।
ঋতু পরিবর্তনের সময় বিশেষজ্ঞ পরামর্শ গ্রহণের গুরুত্ব : যদি কোনো সদস্যের সর্দি-কাশি বা জ্বরের মতো লক্ষণ দেখা দেয়, তবে অবহেলা না করে দ্রুত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত। সঠিক সময়ে চিকিৎসা গ্রহণ করলে রোগের জটিলতা কমে এবং দ্রুত সুস্থ হওয়া যায়।
উপসংহার : বাংলাদেশে ঋতু পরিবর্তনের সময় স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়। বিশেষ করে শীতের আগমনী বার্তায় শিশুদের অতিরিক্ত যত্ন ও পরিবারের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সময়মতো প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করলে ঋতু পরিবর্তনের এ সময়ে সুস্থ থাকা সম্ভব।
লেখক : সম্পাদক, ইনসাফ বিশ্ব।