বেদনাহত কবি সম্রাট বাহাদুর শাহ্ জাফর
২৯ মে ২০২৫ ১১:২২
॥ মনসুর আহমদ ॥
পৃথিবীর এ রঙ্গমঞ্চে কতশত বিচিত্র নাটকের অভিনয় ঘটে চলছে প্রতিদিন, প্রতি যুগে, শতাব্দীতে শতাব্দীতে, সে সবের খবর রাখা সাধ্য কার? এসব বিচিত্র ঘটনার মধ্যে এমন দু-একটি ঘটনা রয়েছে, যা যুগ যুগ ধরে মানবের হৃদয় তন্ত্রীতে বেদনার সুর বাজাতে থাকে। এমন কে বেদনার সুর ঝংকৃত হয়েছিল মোগল বংশের শেষ সম্রাট বাহাদুর শাহ্ জাফরের জীবনে, যা যুগ যুগ ধরে একদিকে স্বাধীনতা প্্িরয় মানুষের হৃদয়ে স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা উদ্বেলিত করেছে; অপরদিকে তাঁর রচিত কাব্যকথার করুণ রস মানব হৃদয়ে বড়ই বেদনার ঝড় বইয়ে দিয়েছে।
বাহাদুর শাহ্ জাফর ছিলেন মোগল বংশের শেষ সম্রাট, দেশপ্রেমিক মজলুম বাদশাহ্ ও এক বেদনাহত অমর কবি। তাঁর আসল নাম সিরাজ উদ্দীন মুহাম্মদ, ডাক নাম জাফর। বাহাদুর শাহ্ জাফরের পিতা দ্বিতীয় আকবর শাহ এবং মাতার নাম ছিল লাল বাই। তিনি ১৭৭৫ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার মৃত্যুর পর ৬২ বছর বয়সে বাহাদুর শাহ্ জাফর সিংহাসনে আসীন হন। যে বয়সে মানুষ সাধারণত মৃত্যু ও তার পরবর্তী নিয়ে চিন্তাভাবনা করে, সেই বয়সে তিনি বিরাট মোগল সাম্রাজ্যের দায়িত্বভার কাঁধে নিয়ে জীবনে এক বিরাট অসঙ্গতি ডেকে আনেন। এ অসঙ্গতি মোগল শাসনের পতনকে ত্বরান্বিত করে।
মোগল শাসকদের অন্দর মহলে সম্রাট আকবরের বেগম হিসেবে দেখা যায় যোধা বাইকে, আর শেষে দেখা যায় আকবর শাহ্-এর মহলে লালা বাইকে। বাহাদুর শাহ জাফরের মহলে প্রবেশ করেন জীনাত মহল। কোনো মহলে যখন প্রবেশ করে কোনো ভিন আদর্শ ও সংস্কৃতির নারী, তখন সে হেরেমে যারা জন্মগ্রহণ করে তাদের চিন্তাধারায় একটি মিশ্র চেতনা ও জীবনবোধের ধারা প্রবাহিত হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এ স্বাভাবিকতার ঊর্ধ্বে অবস্থান করেছিলেন বাহাদুর শাহ্ জাফর। তবে তাঁর অলসতা ও ভীরুতার জন্য হয়ত তাঁর রক্তে যোধা বাই, লালা বাইদের রক্ত প্রবাহ দায়ী।
তখন ভারতে ইংরেজরা সর্বেসর্বা। ১৭৫৭ সালে বাংলা, ১৭৫৯ সালে মহীশুর চলে যায় ইংরেজদের হাতে। এক এক করে ১৮৫৭ সাল অবধি গোটা মোগল সাাম্রজ্য চলে যায় ইংরেজদের দখলে। বাহাদুর শাহ্ জাফর পরিণত হলেন মোগল সাম্রাজ্যের প্রতিনিধি প্রতীক। যেহেতু তিনি সাম্রাজ্যের অধিপতি ছিলেন, তাই সাম্রাজ্যের প্রতি ছিল ন্যায্য দাবি। তাই ইংরেজরা তাকে করুণা করে একটি অংকের বৃত্তি প্রদান করলো। দিল্লির শাহী দুর্গে তাঁর জন্য আরাম-আয়েশে জীবনযাপনের ব্যবস্থা করলো। বাহাদুর শাহ্ তাতেই খুশি। তিনি তাঁর অলস সময়কে ব্যয় করত লাগলেন কাব্য চর্চায়। তিনি এড়িয়ে চলতে থাকেন সব ধরনের ঝঞ্ঝা ঝামেলা।
যখন বাহাদুর শাহ্ জাফরের রক্ত হীম হয়ে আসছিল, তখন লাল কেল্লার ভেতরে সম্রাজ্ঞী জীনাত মহলের রক্তে জেগে ওঠে স্বাধীনতা ও ঐতিহ্য চেতনার বন্যা। জগৎ তোলপাড় করা মোগল ডাইনেস্টি এমন করুণভাবে ভারতের বুক থেকে মুছে যাবে- এ কথা ভাবতে কষ্ট হয় জীনাত মহলের। কিন্তু বৃদ্ধ সম্রাট চুপচাপ। এত বড় ইংরেজ শক্তিকে তিনি ঘাটাতে চান না এ বয়সে এসে। কিন্তু জীনাত মহলের সংগ্রামী মন বাধা মানছে না। অপরদিকে দেশের বীর সিপাহি-জনতার মনে এ চিন্তা-চেতনা দানাবেঁধে ওঠে যে, কোনোক্রমেই দিল্লির মসনদের পতন ঘটবে তা মেনে নেওয়া যায় না। নিজেদের দেশে ইংরেজদের অধীনতা পাশে আবদ্ধ থাকবে এটা মেনে নিতে রাজি নয় বীর সিপাহি-জনতা।
জীনাত মহল এ সুযোগটি গ্রহণ করলেন অতি দক্ষতার সাথে। তিনি গোপনে গোপনে যোগাযোগ করলেন এসব দেশপ্রেমিক সৈনিকদের সাথে। তিনি এসে দাঁড়ালেন সম্রাটের কাছে দেশের সৈনিকদের উৎসাহ জোগাতে। তিনি সম্রাটকে বোঝাতে সক্ষম হলেন ইংরেজদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রয়োজনীয়তা। বেগম জীনাত মহলের প্রস্তাবে সম্রাটের চেতনা ফিরে এল। তিনি রাজি হলেন ইংরেজদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে। সম্রাটের সমর্থন লাভ করে সিপাহি-জনতার সাহস অনেক গুণ বেড়ে গেল। একের পর এক ঘটনার মধ্য দিয়ে উত্তাল হয়ে উঠল দিল্লি। অযোধ্যা, আম্বালা, কানপুর, ঝাঁসি, বহরম পুর, লক্ষেèৗ ইত্যাদি অঞ্চল গুলো থেকে সেনাদল দলে দলে এসে জমায়েত হতে লাগল দিল্লিতে। দিল্লির দুর্গে গোপনে সংগ্রামপূর্ব প্রস্তুতি নিতে লাগলেন জীনাত মহল। তিনি তাঁর তীক্ষè বুদ্ধি দিয়ে সিপাহি বিপ্লবকে কীভাবে সার্থক করা যায়, তা নিয়ে বিপ্লবী সেনাদের সাথে পরামর্শ করলেন। অবশেষে ১৮৫৭ সালের ২৩ জুন বিপ্লবের দিন ঠিক করা হলো।
ঠিক এক শত বছর আগে এমন এক দিনে বাংলার স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলা থেকে ইংরেজরা কেড়ে নিয়েছিল স্বাধীনতার লাল সূর্য; একশত বছর পরে হারিয়ে যাওয়া সূর্যকে পুনরায় ছিনিয়ে আনবে তেজোদীপ্ত সিপাহি-জনতা। কিন্তু তাদের এ পরিকল্পনা ব্যর্থ হলো এক অত্যুৎসাহী মঙ্গল পাণ্ডের কর্ম কাণ্ডে। সে ২৯শ মার্চ সবাইকে অবাক করে দিয়ে সে একাই ঝাঁপিয়ে পড়ল ইংরেজদের ওপর। তার হাতে কয়েকজন ইংরেজ সামরিক অফিসার নিহত হলো। বন্দি হলো মঙ্গল পাণ্ডে। একুশে এপ্রিল ফাঁসিতে ঝোলানো হলো পাণ্ডেকে। পাণ্ডের ফাঁসির প্রতিশোধ নিতে চারদিকে বিপ্লবের আগুন ছড়িয়ে পড়ল। সিপাহী-জনতা বুকের রক্ত ঢেলে প্রতিশোধ নিয়ে চললো। অতিশিগগিরই দিল্লি নগরী বিপ্লবীদের দখলে এলো। বিভিন্ন স্থান থেকে পালিয়ে এসে বিপ্লবীরা আশ্রয় নিতে শুরু করল দিল্লিতে। জীনাত মহলের প্রাণ কেঁদে উঠল। তিনি আশ্রয় দিতে লাগলেন সিপাহি-জনতাকে। তিনি আশ্রয় দিতে লাগলেন দিল্লির আশপাশে বসবাসরত সাধারণ ইংরেজদের, যারা সিপাহি-জনতার আক্রমণের ভয়ে বেগমের পাশে আশ্রয় নিয়েছিল।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিপ্লবীদের রক্ষা করা গেল না। ইংরেজদের চক্রান্ত, লোভ ও তাদের কুটিল বুদ্ধিতে জড়িয়ে পড়ল অনেক সেনা ও দেশীয় নেতা। ফলে বিপ্লবের ধারা ঘুরে গেল। এ অবস্থায় জীনাত মহলের আর কিছু করার ছিল না। তিনি ইংরেজদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে চাইলেন। কিন্তু ইংরেজদের পক্ষ থেকে উত্তর এল নেতিবাচক। এ অবস্থায় জীনাত মহল পালিয়ে জীবন বাঁচানোর জন্য পরামর্শ দিলেন দেশপ্রেমিক সিপাহি-জনতাকে। বৃদ্ধ সম্রাট শাহ্ জাফরকে নিয়ে তিনি আত্মগোপন করলেন হুমায়ুনের সমাধিতে। সেখনে এক মুসলমান ফকির তাঁদেরকে আশ্রয় দিয়েছিল। মোগল সাম্রাজ্যের শেষ সম্রাটকে এভাবে এক ফকিরের সাহায্য গ্রহণ করতে হয়েছিল হুমায়ুনের মাকবারাতে। শোনা যায়, এ ফকিরই অবশেষে একদিন ইংরেজ গুপ্তচর হাড্সনের হাতে ধরিয়ে দেয় অসহায় সম্রাট এবং তাঁর সংগ্রামী স্ত্রী জীনাত মহলকে।
অসহায় সম্রাট ও তাঁর সংগ্রামী বিবি জীনাত মহল ২২ সেপ্টেম্বর বন্দি হলেন ইংরেজদের হাতে। ইংরেজরা অনেক সিপাহিকে হত্যা করল এবং ২৩ সেপ্টেম্বর নির্দয়ভাবে সম্রাটের তিন পুত্রকে হত্যা করে তাঁদের খণ্ডিত মস্তক পেশ করল অসহায় পিতা সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের সামনে।
এবারে শুরু হলো বিচারের প্রহসন। অনেকে উৎসুক হয়ে তাকিয়ে ছিলো হয়তো বৃদ্ধ সম্রাটকে ক্ষমা করে দেবে ইংরেজরা। বিপ্লবের সময় অনেক ইংরেজকে আশ্রয় দিয়েছিলেন জীনাত মহল। তাই তিনিও হয়তো মুক্তি পাবেন ভেবে ছিল অনেকে। কিন্তু না, ইংরেজরা কঠোর সিদ্ধান্ত নিল। সম্রাট ও বেগম জীনাত মহলকে দণ্ড দিয়ে নির্বাসনে পাঠান হলো রেঙ্গুনে। বাহাদুর শাহ্ আক্ষেপ করে লিখলেন-
না কেসি কী আঁখ কা নূর হোঁ ,
না কেসি কী দিল কা কারার হোঁ।
যু কেসি কে কাম না আ সেকে,
ম্যাঁয় ও এক মস্ত গুবার হোঁ।
মেরা রঙ্গরূপ বিগড়ে গিয়া মেরা ইয়ার,
মুঝ সে, বিছড় গিয়া, যো চমন যাজাসে উজাড়
গেয়া, ম্যাঁয় তো উসকি ফসলে বাহার হোঁ।
মৈঁ নেহি হুঁ নগ্ন -এ জাফিজা
মুঝে সুনকে কোঈ করেগা ক্যেয়া,
মৈঁ বড়ে বিরোস কী হুঁ সদা
মৈঁ বড়ে দুখো কী পুকার হো।
অর্থাৎ- এখন আমি কারো চোখের আলো নই, মনের শান্তি নই।
মানুষের কোনোদিন কাজে অসে না যে ধূলিকণা, আমি তাই।
আমার রূপ রং বদলে গেছে। আমি আজ রুষ্ট।
কানন হতে বৃন্তচ্যুত ছিন্ন যে পুষ্প,
আমার সঙ্গে এখন কেবল তারই তুলনা চলে।
আমি এখন কারও মনমুগ্ধকর গীত নই,
আমার এ বেদনা বাণী কাউকে কাউকে বিরক্ত করে,
আমার এ হাহাকার ব্যথিতের ক্রন্দন ছাড়া কিছু নয়।
স্বভাব কবি বাহাদুর শাহ্ জাফরের কাব্যগুরু ছিলেন কবি মুহাম্মদ ইবরাহীম জওক ও পিতামহ দ্বিতীয় শাহ আলম। তাঁর লেখা গ্রন্থাবলীর মধ্যে ‘র্শাহ -গুলিস্তান’ এবং ‘চারন্দীওয়ান’ অন্যতম।
যৌবনে বাহাদুর শাহ জাফর ছিলেন অস্থির চিত্তের অধিকারী। যে কারণে তাঁর পিতা দ্বিতীয় আকবর তার চেয়ে তার বড় ভাইকে সিংহাসনের অধিকতর যোগ্য মনে করতন। যৌবনকালে তাঁর অস্থির চিত্ততার সাথে ছিল অপরের ত্রুটি সম্পর্কে অধিক সচেতনতাবোধ। কিন্তু পরিণত বয়সে তাঁর এ বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ঘটে। এ ব্যাপারে তিনি নিজেই বলেছেন-
না থি হাল কী যব হামে আপনি খবর রাহে দেখতে,
আওরকো আও বেহুনার পঢ়ি আপনি বুরাইয়া পর
যো নজর তো নেগাহমে কুই বুরা না রহে ।
অর্থাৎ এমন এক দিন ছিল যখন কিছু বুঝতাম না। তখন অন্যের ত্রুটি আগে আমার চোখে আসতো। এখন নিজের ত্রুটিই আগে নজরে পড়ে। সুতরাং আমার কাছে আজ সকলেই ত্রুটিহীন।
বাহাদুর শাহ যখন বাদশাহী হারিয়ে হুমায়ুনের কবর গাহে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তখন তাঁর মনে কত বেদনা গুমড়ে মরছিলো, তা আমাদের পক্ষে চিন্তা করা সম্ভব নয়। সম্রাট নিদারুণ মানসিক যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে লিখলেন-
হামা আজ দস্তে গায়ের নালা কুনাদ্
শাদী। আজ দস্তে খেশতান ফরিয়াদ।
অর্থাৎ-নিজের হাতেই যখন নিজের গালে চড় বসিয়ে দেয়, তখন হে শাদী! অন্যের হাতে মার খাওয়া নিয়ে খেদ করে লাভ কী!
ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, সম্রাট বাবরের প্রতিষ্ঠিত মোগল রাজবংশের শেষ সম্রাটের ভাগ্যে কবরও জুটল না স্বদেশের মাটিতে। জীবনের অন্তিম মুহূর্তে তাই তিনি আফসোস করে লিখেছিলেনÑ
কেতনা বদ্ নসীব হ্যায় জাফর
কে দাফন কি লিয়ে,
দু’গজ জমিন ভী মিলনা সেকে
কুয়ে ইয়ার মে।
অর্থাৎ জাফর, তুমি কতই না হতভাগা যে, দাফনের জন্য তোমার প্রিয় জন্মভূমিতে দু’গজ মাটিও মিলল না!
বাহাদুর শাহ জাফরের রক্তে বয়ে চলছিল বংশীয় কাব্য ধারার স্রোত। মোগল শাসকের সকলেই কমবেশি কাব্যচর্চা করে গেছেন। সম্রাট বাবর আত্মজীবনীসহ কবিতাও লিখেছেন। বাবর পুত্র মির্জা কামরানও কবিতা লিখতেন। সম্রাট জাহাঙ্গীর লিখেছিলেন আত্মজীবনী। বাদশাহ শাহ্জাহানও ‘দস্তরুল আমান’ নামে ভ্রমণ কাহিনী লিখেছেন। এছাড়া মোগল হেরেমের গুলবদন, নূর জাহান , জাহানারা ও জেবুন্নেসা সকলেই ছিলেন কাব্যপ্রতিভার অধিকারিণী। কাব্যচর্চার এ ধারাবাহিকতায় বাহাদুর শাহ্ জাফরের মধ্যেও কাব্য প্রতিভা পয়দা হয়েছিল। তবে তাঁর কাব্যে করুণ সুরই বার বার মূর্ছিত হয়েছে।
বাহাদুর শাহ্ জাফর নিজে কবি ছিলেন, তিনি তাঁর রাজসভায় কবিদের প্রচুর মর্যাদা দিয়েছিলেন। এমন এক সম্মানিত কবি মীর্জা গালিব। গালিব জাফরের কৃতজ্ঞতা স্মরণ করে লিখেছিলেন-
তুমিই আমারে দিলে সম্মান
বাইরে লোকের মাঝে,
জীবনে আমার দিলে কোলাহল
সাজালে এমন সাজে।
আমার মতন অণু, তাই হলো
আকাশে চন্দ্র তারা,
আমার মতন গুমনাম হলো
প্রকাশে সূর্য পারা।
জীবনের আলো হারিয়ে কবি সম্রাটকে আশ্রয় নিতে হলো গভীর অন্ধকারে। অন্ধকারকে ভালোবেসে কবি লিখলেন-
য়ে সামা! তু হঠ কর জ¦ল
মেরে মাজার সে,
ম্যায় খোদহি জ¦ল রহু হোঁ
দিলে বেকারার সে।
অর্থাৎ হে আলো তুমি আমার কাছ থেকে দূরে গিয়ে জ¦লো। কারণ এখন আমি নিজের অন্তরের কাছে জ¦লে মরছি।
ধীরে ধীরে জীবন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল বাহাদুর শাহ জাফরের। তিনি মরণকোলে ঢলে পড়লেন ১৮৬২ সালের ৭ নভেম্বর শুক্রবারে। সাড়ে তিনশত বছরের মোঘল ডাইনেস্টির গৌরবময় ইতিহাস বিজয়-পরাজয়; প্রেম-বিরহ ইত্যাদির স্মৃতি পিছনে ফেলে মজলুম সম্রাট চলে গেলেন চির অজানার দেশে। আজও তাঁর শেষ পরিণতির স্মৃতি স্মরণে এলে স্বাধীনতা প্রিয় জনতার চোখে বাঁধভাঙা অশ্র প্লাবন বইতে শুরু করে। স্মরণে ভেসে ওঠে কবি সম্রাটের আক্ষেপ বাণী-
কার মৃত্যুকে আমি মনে রাখবো
আর কে শুনবে আমার ফরিয়াদ,
আমার মৃত্যুর পর কেউ থাকবে না হয়তো
দু’ফোঁটা অশ্রু ফেলার জন্য।
কবি সম্রাটের কবরে দু’ফোঁটা অশ্রু বিসর্জনের অনেক মহান হৃদয়ের মানুষ আছেন এখনো জগতে। যারাই রেঙ্গুনে যান তারাই বাহাদুর শাহ্ জাফরের কবরকে দু’ফোঁটা অশ্রু দিয়ে সিক্ত করে থাকেন।