দুনিয়ার ইসলামী আন্দোলন ভূ-রাজনীতি
২৪ মে ২০২৫ ১১:৫৩
॥ ফজল মুহাম্মদ ॥
দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে ইসলাম ও মুসলমানদের সমস্যা সমাধানে অনেক ব্যক্তি, সংগঠন ও রাজনৈতিক ল কাজ করছে। আমার মনে হয় তারা দুই ধরনের সমস্যার মধ্যে পড়ে গেছে। এক. বস্তুবাদী উপায়-উপকরণ সংগ্রহে কিছু লোক বেশি ঝুঁকে গেছে। দুই. আরেক দল ইসলামী ভাবধারা বজায় রাখতে কায়েমি সুবিধাবাদী নেতাদের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ লড়াই করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে। চলতি দুনিয়ার হাল-হাকিকত না বুঝলে আমাদের তো আরো চরম পরীক্ষা দিতে হবে। একজন সৈনিক যুদ্ধের ময়দানে তার নিজের ভুলের জন্য হয়তো শহীদ হতে পারে অথবা বন্দি। কিন্তু একজন সেনাপতির ভুলের কারণে জাতি পরাজিত হয়ে যায়। যারা মনে করেন যে, উনারা সংগঠনের থিঙ্কট্যাঙ্ক হিসেবে কাজ করতে পারবেন; উনাদের উচিত এ বিষয়টা নিয়ে চিন্তাভাবনা করার। অনেকে বলে থাকেন তুরস্কের এরদোগান এ কে পার্টি করে অনেক সফল হয়েছেন। জি, এটা আলবত সত্য কথা। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, দক্ষিণ এশিয়ার যে এলাকার বাসিন্দা আমরা ঐ দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর চিফ হতে হলেও পড়শী দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সার্টিফিকেট জোগাড় করতে হয়। কারণ আমাদের দেশের Deep Establishment-এর যারা কর্তা, মহাজন, উনাদের নাটাইয়ের সুতা অন্য জায়গা থেকে নিয়মিত তদারকি করা হয়ে থাকে। আমি যখন কানাডায় ২০০৭/২০০৮ সালে Geo Politics of North America বিষয়ে ফেলোশিপ করি, তখন এ বিষয়ে এমন কিছু তথ্য পেয়েছি, যা শুনলে সাধারণ মানুষের কলিজার মধ্যে আগুন লাগবে। আমরা তখন আরো হতাশ হয়ে যাব। ৩৬ জুলাই বিপ্লব ২০২৪ আমাদের তরুণ বাহিনীর সাহসী সিপাহসালারগণ পড়শী দেশের গোয়েন্দা সংস্থার বিস্তৃত সকল গোয়েন্দা নেটওয়ার্ককে ব্যর্থ করে দিয়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী বাকশালী দলকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ময়দান থেকে মুছে ফেলেছে।
ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ জনতার এ বিপ্লব আমাদের জন্য এক নতুন রাজনৈতিক পথ চলার দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছে। আমাদের তরুণ বাহিনীর অনেক দায়িত্ব বেড়ে গেছে। তরুণ বাহিনীকে এটা খেয়াল রাখতে হবে যে, কালো টাকার বিলিয়ন ডলারের মাফিয়া ডন ওদের বিপ্লবকে ছিনতাই করতে পারে অথবা বেহাত করে ফেলতে পারে। কারণ যুগের পর যুগ ধরে ঐসব কালো টাকার মাফিয়া ডন কতিপয় রাজনৈতিক ও আমলা গংদের পেছনে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করে। ঐসব মাফিয়া ডন তাদের বিলিয়ন ডলারের অবৈধ কালো টাকার ব্যবসা-বাণিজ্যের নামে লুটপাট অব্যাহত রেখেছে। আমাদের তরুণ বাহিনীকে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতির ময়দানে কৌশলগত অবস্থান নিতে হবে। কোনো পড়শী দেশের সাথে অতিভক্তি গোলামি বা অতিবিরোধী হওয়া উচিত নয়। হ্যাঁ, আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে আঘাত এলে প্রকৃতির আইন মোতাবেক আমরা প্রতিঘাত করতে মোটেও বিলম্ব করব না। অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য আমরা নিজেদের স্বার্থ আগে দেখব। বিশ্বব্যাংক (World Bank), আইএমএফ (IMF), এডিবি (ADB) এবং তথাকথিত দেশি-বিদেশি দালাল অর্থনৈতিক পালের গোদাদের বয়কট করতে হবে। নিজেদের ফসলের জেনেটিক হেফাজত করতে হবে। দেশীয় বিশ্বাসঘাতক মীরজাফর মঈন উ আহমেদ গং যে ভিনদেশি কলোনিয়াল ছদ্মবেশী কূটনৈতিক গংদের সাথে যৌথ উদ্যোগে অনাগত ভবিষ্যতে আমাদের দেশের বিরুদ্ধে কোনো চক্রান্ত করতে না পারে, সেজন্য ছিদ্রগুলো বন্ধ করতে হবে। এজন্যই যুবক-যুবতীদের বাধ্যতামূলক দুই বছরের সামরিক প্রশিক্ষণ দিতে হবে। নৈতিকতা শিক্ষা দিতে হবে। দেশ বাঁচাতে জিহাদ করা ঈমানের দাবি এ মৌলিক শিক্ষা দিতে হবে। আর যারা এখনো ঔপনিবেশিক ভিনদেশিদের অদৃশ্যমান গোলামি করতে চাইছে বা করে যাচ্ছে, ঐসব নেতাদের বয়কট করতে হবে। বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের বিশাল বাজারে ভিনদেশি বেনিয়া লুটেরা গং নানা কায়দা-কানুন করে বিজনেস বা সেবার নামে অনেকভাবে লুণ্ঠন করে যাচ্ছে। ঐসব লুটপাটের পথ চিহ্নিত করে সঠিকভাবে আমাদের অর্থনৈতিক চাকা ঘোরাতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে- সেই সুলতানী বাংলার শাসক সুলতান গিয়াস উদ্দীন আযম শাহ স্বাধীন বাংলায় দিল্লির পরিবর্তে পূর্বমুখী চীনের সাথে কূটনৈতিক ও ব্যবসায়ী সম্পর্ক যখন ঘনিষ্ঠ করে তোলেন, তখন তাকে শহীদ করে রাজা গণেশ মসনদ দখল করে নেয়। বাংলাদেশের দুইজন রহমান রাষ্ট্রপতি যখন ওআইসিসহ পশ্চিমা বিশ্বের পরিবর্তে পূর্বমুখী চীনের সাথে সম্পর্ক গভীর করে তুলছিলেন, তখন তাদেরও হত্যা করে ফেলা হয়েছে। আমাদের তরুণ বাহিনীর এটা প্রচণ্ডভাবে মনে রাখতে হবে- পশ্চিমা বিশ্বের নেতারা আমাদের বন্ধু নন। ওরা এখনো আমাদের ওদের কলোনিয়াল দাস বা গোলাম মনে করে।
আমি ছাব্বিশ বছর যাবত এ ৭ দেশের একটি দেশে বসবাস করছি। আমি ওদের সদর-অন্দর সকল অলিগলির খবর জানি।
লেখক : ফজল মুহাম্মদ, কানাডাপ্রবাসী। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের দমনমূলক কূটনীতি বইয়ের লেখক এবং ইসলামিক সার্কেল অব নর্থ আমেরিকা (ICNA CANADA) একজন এমজিএ দাওয়া।