কপোতাক্ষ নদের প্রবল স্রোতে হুমকির মুখে বাঁকা ব্রিজ


১৫ মে ২০২৫ ১৬:১২

মো. আব্দুল আজিজ, পাইকগাছা (খুলনা) : কপোতাক্ষ নদের প্রবল স্রোতে হুমকির মুখে পড়েছে সাতক্ষীরা ও পাইকগাছার সংযোগ বাঁকা ব্রিজ। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসন থেকে ব্রিজ দিয়ে ভারি যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ব্রিজের আশপাশের মাটি ধসে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। দুই জেলার মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করতে দ্রুত ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ ব্রিজ সংস্কারসহ নতুন ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
সাতক্ষীরার কুল্যামোড় হয়ে আশাশুনি ইউনিয়নের দরগাহপুর এবং খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার সাথে যোগাযোগের সংযোগস্থল হচ্ছে বাঁকা ব্রিজ। কপোতাক্ষ নদের তীব্র স্রোতে ওই ব্রীজের দুই প্রান্তে পিলারের নিচের মাটি ধসে যাওয়ায় ব্রিজটি হুমকির মুখে পড়েছে। সেই সাথে আশপাশে ঘরবাড়ি, দোকানঘর ও ফসলিক্ষেত ও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এখনাই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে যেকোনো মুহূর্তে ব্রিজটিসহ অন্যান্য স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী। এমনটি হলে সাতক্ষীরার দরগাহপুর ও পাইকগাছার রাড়ুলী ইউনিয়নের বাঁকাবাজারের মধ্যে জনগুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম সড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে পাইকগাছা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্ঘটনা ও ঝুঁকি এড়াতে ভারী যানবাহন বাস মিনিবাস, ট্রাকসহ সকল ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পুঁতে রাখা হয়েছে ব্রিজের দুই প্রান্তে সড়কের মাঝখানে গাছ। ফলে সাতক্ষীরা ও আশাশুনি থেকে দরগাপুর হয়ে পাইকগাছা রুটে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। দুর্ভোগ এড়াতে চরম ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজটি রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন দুই প্রান্তের মানুষ। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, কেশবপুর-যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদাসীনতায় বিচ্ছিন্ন হতে বসেছে এ দুই প্রান্তের যোগাযোগ ব্যবস্থা। কারণ ২০২০ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোর ‘কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্পে (২য় পর্যায়)’ খননের আওতায় কয়রার আমাদী থেকে তালা উপজেলার শালিখা পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার নতুন করে কপোতাক্ষ নদ খনন করা হয়। ২০২৪ সালে প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হলে দরগাহপুর এবং বাঁকা বাজার পয়েন্টে সাতক্ষীরা এবং খুলনার পাইকগাছা সংযোগকারী ব্যস্ততম সড়ক থাকায় এলাকাবাসী নদীতে নতুন ব্রিজ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত উক্ত জায়গাটি খনন করতে বাধা দেয়। উল্লেখ্য, ওই স্থানে কপোতাক্ষ নদের চরভরাটির জন্য ১৯৯২ সালের ছোট্ট ব্রিজ তৈরি করা হয়। গত বর্ষায় অধিক প্লাবনের কারণে জলাবদ্ধতা নিরসনে এলাকাবাসী জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ব্রিজের নিচ দিয়ে ছোট একটি ক্যানেল তৈরি করে উভয় পাশে সংযুক্ত করে দেয়। পরবর্তীতে ওই ছোট ক্যানেলটি এখন গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্যানেলটি প্রবল স্রোতে পূর্ণাঙ্গ খরস্রোত নদীতে রূপান্তরিত হয়। পার্শ্ববর্তী বহু ঘর, বসতভিটা ও দোকান নদের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অবশিষ্ট রয়েছে ব্রিজটি। কিন্তু ব্রিজের অবস্থা এতই ঝুঁকিপূর্ণ, প্রবল স্রোতের কারণে নিচে মাটি ধসে এমন অবস্থা হয়েছে, যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে এ ব্রিজ। এ বিষয়ে অনেকবার পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোর জেলার অধীন কেশবপুর কর্মকর্তাকে অবহিত করা হলেও এখনো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। এ কারণে এলাকাবাসীর মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। স্থানীয় শাহিন, মহিবুল্লাহ, রফিকরা জানিয়েছেন, আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বার বার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু তারা কোনো প্রকার কর্ণপাত করেনি। সেই সাথে উনারা দাবি করেন দ্রুত নতুন ব্রিজ নির্মাণ করে নদী অবমুক্ত করার। ব্যবসায়ী রমেশ, তালহা মাহমুদ বলেন, যদি কোনোভাবে এ ব্রিজটি ধসে যায়, তাহলে চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হবে এবং এর দায় কে নেবে? এ বিষয়ে প্রশ্নত্তোরে যশোর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জি বলেন, ভাঙন ঠেকাতে আমরা খুব দ্রুত সেখানে জিও ব্যাগের ব্যবস্থা করছি এবং যাতে কোনোভাবেই যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত না হয়, এজন্য যেসকল স্থানে ধস নেমেছে সেখানে সংস্কারের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, অত্র সড়ক দিয়ে এ অঞ্চলের অগণত মানুষ সাতক্ষীরা জেলা শহরসহ প্রতিবেশী দেশ ভারতে যাতায়াত করে থাকে।