৬ মে এটিএম আজহারের আপিল শুনানি

স্টাফ রিপোর্টার
২৪ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:৪৫

স্টাফ রিপোর্টার: আওয়ামী লীগ সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মামলায় মৃত্যুদ-ের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের আপিলের ওপর আগামী ৬ মে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি হবে। গত প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ দিন ধার্য করেছেন। আদালত বলেছেন, ওইদিন আপিলটি কার্যতালিকার শীর্ষে থাকবে। আদালতে এ টি এম আজহারের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক ও মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক।
শুনানি পেছানোর বিষয়ে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, এ টি এম আজহারুল ইসলামের আপিল শুনানির জন্য ধার্য ছিল। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চে শুনানির জন্য উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু প্রধান বিচারপতি ইচ্ছা পোষণ করেছেন এ মামলার গুরুত্বের বিচারে এবং আইনি জটিল ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ থাকায় মামলাটি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি করবেন। তিনি বলেন, এখন যে বেঞ্চে শুনানির জন্য আছে, তা চার সদস্যের। কিন্তু আপিল বিভাগের বিচারপতির সংখ্যা এখন সাতজন। পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ৬ মে নির্ধারণ করেছেন আদালত। আদালত বলেন, যে রায়টি আমরা পরিবর্তন করতে চাচ্ছি, সেই রায়টি দিয়েছিল আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ। এজন্য এ মামলার নিষ্পত্তি নিয়ে ভবিষ্যতে কোনো ধরনের প্রশ্ন যাতে উত্থাপন করা না হয় এবং সঠিকভাবে আইনি ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে মামলাটি যেন নিষ্পত্তি করা যায়, এজন্যই পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে গুরুত্বের বিবেচনায় তালিকার শীর্ষ রেখে এ মামলার শুনানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আদালত।
আইনজীবী শিশির মনির আরো বলেন, আমরা এ মামলায় জামায়াতে ইসলামীর নেতা আবদুল কাদের মোল্লার মামলার রায় এবং তার পরবর্তীতে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীসহ যত রায় হয়েছে, সেখানে অবিচার হয়েছে মর্মে প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়েছে। ফেয়ারনেসের জন্য এবং ন্যায়বিচারের জন্য এ মামলায় আন্তর্জাতিক আইন মানতে হবে, যা পূর্বে মানা হয়নি। এজন্য প্রধান বিচারপতি বলেছেন পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে বসেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
শিশির মনির বলেন, আমরা আশা করি, ওইদিন শুনানি হবে এবং মামলার গুরুত্ব বিচার করে আদালত উপযুক্ত রায় দেবেন। এ মামলা শুনার জন্য গুরুত্ব বিচারে ৬ মে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ বসবে।
তিনি আরো বলেন, আন্তর্জাতিক আইন যদি মানা হতো, তাহলে যাদের ফাঁসি দেয়া হয়েছে এবং আজকে যার আপিল শুনানির জন্য আবেদন করছি তাদের সবাইকেই বেকসুর খালাস দিতে হতো। গত ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার এ টি এম আজহারুল ইসলামের আপিলের শুনানি দেখতে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, এডভোকেট মোয়াযযম হোসেন হেলাল আপিল বিভাগে এসেছিলেন। এছাড়া জামায়াতপন্থী সব আইনজীবীও আদালত কক্ষে উপস্থিত ছিলেন।
৫ আগস্টের পর সবাই মুক্তি পেলেন শুধু একটা লোক মুক্তি পেলেন না, আমরা বিস্মিত-ব্যথিত: গোলাম পরওয়ার
আপিল শুনানির বিষয়ে আইনজীবীর ব্রিফিংয়ের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, এ টি এম আজহারুল ইসলামের এখনো মুক্তি না হওয়ায় আমরা হতাশ নই, তবে আমরা বিস্মিত ও ব্যথিত। তিনি বলেন, ৫ আগস্টের সরকার পরিবর্তনের পর যারা আওয়ামী ফ্যাসিবাদের হাতে মজলুম ছিল, অন্যায়ভাবে আটক ছিল, অন্যায় বিচারে যাদের ফাঁসি দেয়া হয়েছে, গুম করা হয়েছে, অন্যায়ভাবে শাস্তি দেয়া হয়েছে তাদের প্রায় সবাই মুক্তি পেয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের মজলুম জননেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে যেসব মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে, সেসবের কোনো একটি অভিযোগের সাথে তার তিলমাত্র সম্পর্ক নেই। আদালতে আমাদের পক্ষে আইনজীবীরা যথার্থভাবে সেটা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। তারপরও এ মামলার যেকোনো ব্যাখ্যা আইনজীবীরা দিতে পারেন। আদালতের কাছে একটা ব্যাখ্যা থাকতে পারে। কিন্তু এরই মধ্যে যে আট মাস পার হয়েছে। সারা দেশের লাখো কোটি আমাদের নেতাকর্মী শুভাকাক্সক্ষী যারা ন্যায়বিচারের প্রত্যাশায় দিন গুনছেন, তারা ব্যথিত। আমরা আদালতের কাছে সুবিচার প্রার্থনা করে ধৈর্যধারণ করছি। আমরা আশা করি, আদালত সুবিচার করবেন। আমরা ধৈর্য ধরব। আদালতের নিয়মের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। আমরা আশা করব, পাবলিক পারসেপশন এবং তিনি যে মজলুম এবং সবাই মুক্তি পেলেন, আর একটা লোক মুক্তি পেলেন না। এর জবাব, এর দায় শুধু আমাদের নয়। এদেশের জনগণ, সরকারের, প্রশাসনের। আর বিচার বিভাগে যারা আছেন; তারাও মানুষ। তাদেরও বিবেক আছে। সেদিকেই আমরা একটি রাজনৈতিক দলের কর্মী হিসেবে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় মৃত্যুদ-ের রায়ের বিরুদ্ধে এ টি এম আজহারুল ইসলামকে আপিলের অনুমতি দিয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে আপিলের সারসংক্ষেপ জমা দিতে বলেছেন। চারটি গ্রাউন্ডে লিভ (আপিলের অনুমতি) মঞ্জুর করে ২২ এপ্রিল আপিলের শুনানির দিন ধার্য করে ছিলেন আপিল বিভাগ। আদালতে রিভিউ আবেদনের শুনানি করেন ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিক। তাকে সহায়তা করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির, ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন ও সৈয়দ মো. রায়হান উদ্দিন।
আপিল বিভাগের আদেশের বিষয়ে ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিক বলেছিলেন, চারটি গ্রাউন্ডে এ টি এম আজহারের রিভিউ মঞ্জুর হয়েছে। দুটি মেইন গ্রাউন্ড। প্রথম গ্রাউন্ড হচ্ছে আপিল বিভাগ ২০১৯ সালে এ মামলায় যে রায় দিয়েছিলেন, সেখানে উনারা আন্তর্জাতিক আইন মানেননি। ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে রিকয়ারমেন্ট ছিল আন্তর্জাতিক আইন প্রতিপালন করা। এটা একটা বড় গ্রাউন্ড। আইনেই বলা আছে আন্তর্জাতিক আইন মানতে হবে। কিন্তু উনারা মানেননি। এই মেইন গ্রাউন্ডে রিভিউ মঞ্জুর হয়েছে।
গত ৯ জানুয়ারি রিভিউ আবেদনের বিষয়টি উত্থাপন করেন সিনিয়র আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেছিলেন, এ টি এম আজহার ১০ বছর ধরে মৃত্যুর সেলে আছেন। জরুরি ভিত্তিতে উনার রিভিউ আবেদন শুনানি করা দরকার। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে ২৩ জানুয়ারি শুনানির দিন ঠিক করেন।
২০২০ সালের ১৯ জুলাই খালাস চেয়ে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিভিউ আবেদন করেছিলেন এ টি এম আজহারুল ইসলাম। ২৩ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ১৪টি যুক্তি দেখিয়ে উনার খালাস চাওয়া হয়। ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর এ টি এম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদ- দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির পর ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর এ টি এম আজহারুল ইসলামকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদ-াদেশ বহাল রেখে রায় দেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
আপিল বিভাগের রায়ে এ টি এম আজহারের বিরুদ্ধে আনা ২, ৩ ও ৪ নম্বর ভিত্তিহীন অভিযোগে হাসিনার গড়া ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদ- বহাল রাখা হয়। এছাড়া ৫ নম্বর অভিযোগে অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণসহ অমানবিক অপরাধের দায়ে ২৫ বছর কারাদ- থেকে খালাস দেয়া হয়। এছাড়া ৬ নম্বর অভিযোগে নির্যাতনের দায়ে পাঁচ বছর কারাদ-াদেশ বহাল রাখা হয়। ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি ১১৩ যুক্তিতে এ টি এম আজহারকে নির্দোষ দাবি করে খালাস চেয়ে আপিল করেন তার আইনজীবীরা। ২০২০ সালের ১৫ মার্চ এ মামলার আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।