বিলুপ্তির পথে মহেশখালীর ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বেতশিল্প
১৭ এপ্রিল ২০২৫ ১৪:৪৬
সরওয়ার কামাল, মহেশখালী (কক্সবাজার): কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলায় আধুনিকতার ছোঁয়ায় প্রায় বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বেতশিল্প। একসময় মানুষের দৈনন্দিন জীবনে বাঁশ ও বেতের ব্যবহার প্রচুর থাকলেও বর্তমানে এর ব্যবহার নাই বললেই চলে। দ্বীপাঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দৈনন্দিন জীবনের নানা কাজে আবহমানকাল থেকে বাঁশ ও বেতের ব্যবহার চলে আসছে। উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় বাঁশ ও বেতের উৎপাদন থাকায় গ্রামীণ জনপদের নিম্ন আয়ের মানুষ যারা কাঠ, টিন অথবা ইটের তৈরি ঘরবাড়ি তৈরি করতে পারতোনা তারা বাঁশের তৈরি ঘরবাড়ি থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় গৃহস্থালি কাজের উপকরণ ডালি, কুলা, চালনা থেকে শুরু করে মাছ ধরার ডারকি, পলুই তৈরিসহ বিভিন্ন কাজে বাঁশের ব্যবহার করতো।
উপজেলার কালারমারছড়া, হোয়ানক, ছোট মহেশখালী, শাপলাপুর ও বড়মহেশখালী ইউনিয়নের একটি অংশ বাঁশ ও বেতের সাহায্যে পণ্যসামগ্রী তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব গ্রামের লোকেরা রাস্তার ধারে, বাড়ি আঙিনায় বাঁশের চটা দিয়ে চাটাই, কুলা, ডালা, চাঙ্গারি, চালান, মাছ রাখার খালই, ঝুড়ি, মোড়া, ঝাকা, মুরগির খাঁচাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরির কাজ করত। তাদের পাশাপাশি গৃহিণীরাও রান্না-বান্না ও ঘরের কাজ শেষে এসব তৈরিতে যোগ দিত। তৈরি সামগ্রী গ্রামে গ্রামে ফেরি ও এলাকার বাজারে বিক্রি হতো। চাহিদা বেশি থাকায় এ শিল্পের সাথে জড়িতদের জীবিকার জন্য অন্য কোনো পেশার প্রয়োজন ছিল না। এখনো উপজেলার নতুনবাজার, টাইমবাজার, কালারমারছড়া বাজার, শাপলাপুর বাজার, ছোট মহেশখালী লম্বাঘোনা বাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় বাঁশের তৈরি স্বল্প পরিমাণে শৌখিন জিনিসপত্র বিক্রির দৃশ্য চোখে পড়ে।
উপজেলার একাধিক কুটির শিল্পীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে প্লাস্টিক সামগ্রীর সহজলভ্যতা, শিল্পীদের দরিদ্রতার কারণে পুঁজির অভাব এবং বাঁশ ও বেতের তৈরি পণ্যের ন্যায্য মূল্যের অভাবে মহেশখালীর বাঁশ ও বেতশিল্প বিলুপ্ত হওয়ার পথে। ফলে এ শিল্পের সাথে জড়িত লোকজন বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। অনেকে এ পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় ঝুঁকে পড়ছে।
এ শিল্পের সাথে জড়িত হোয়ানকের আলী আহমদ জানান, বর্তমানে বাঁশের মূল্যবৃদ্ধির ফলে নিরুপায় হয়ে বহু কষ্টে লোকসান হওয়ার পরেও সবাই মিলে পৈত্রিক পেশা হিসেবে এ শিল্প ধরে রেখেছেন। শত প্রতিকূলতার মধ্যে বাঁশ শিল্পরীা তাদের পৈতৃক পেশা ধরে রাখতে চান। বিদেশেও বাঁশের তৈরি শৌখিন জিনিসপত্রের অনেক কদর আছে। সরকার এসব শিল্পীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং স্বল্প মূল্যে কারিগরি উপকরণ সরবরাহ করলে বাঁশ ও বেত শিল্পীরাও দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারবে।
কালারমারছড়া ইউনিয়নের সালেহ আহমদ বলেন, বর্তমানে স্বল্প দামে প্লাস্টিক সামগ্রী পাওয়ায় কুটির শিল্পের চাহিদা তেমন নেই। তাছাড়া দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে এ শিল্পের কাঁচামাল বাঁশ ও বেত। এখন আগের মতো বাড়ির আশপাশে বাঁশ ও বেত গাছ রাখছে না কেউ। সেগুলো কেটে বিভিন্ন চাষাবাদসহ ঘরবাড়ি তৈরি করছে মানুষ। তাই কাঁচামাল আর আগের মতো সহজে পাওয়া যায় না। তাই তো এ শিল্পের কোনো ভবিষ্যৎ দেখছি না।