আওয়ামী নেতাদের আয়েশ বনাম কর্মীদের খায়েশ
১৭ এপ্রিল ২০২৫ ১৪:৩০
॥ সরদার আবদুর রহমান ॥
প্রায় ৯ মাস হতে চললো আওয়ামী লীগের ক্ষমতা ছেড়ে পলায়ন করার বয়স। এখন চলছে এ ঘটনাসংশ্লিষ্ট বিষয়াদির নানা মূল্যায়ন। তবে এ সময়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে এসেছে একদিকে বিদেশে নেতাদের আরাম-আয়েশ এবং অন্যদিকে স্বদেশে কর্মীদের মিছিলের খায়েশ।
কদিন আগে অনুষ্ঠিত হলো পবিত্র ঈদুল ফিতর। বিগত দেড় দশকজুড়ে যে দমবন্ধ পরিবেশ বিরাজমান ছিল, তাতে ‘ঈদ’ উদযাপিত হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু তাতে ‘আনন্দ’ ছিল না। ছিল একপ্রকার নিরানন্দ পরিবেশ, কেবলই ঈদের আনুষ্ঠানিকতা। এবারের ঈদ ছিল মুক্ত পরিবেশের প্রথম ঈদ। তাই এ নিয়ে বিশেষ আলোচনা-পর্যালোচনা উঠে আসছে স্বাভাবিকভাবেই। বিশেষ করে মুক্ত মানুষদের অনুভূতির পাশাপাশি বিশ্লেষণ করা হচ্ছে ক্ষমতাচ্যুত ও পলাতকদের অবস্থান। দৃশ্যপটে উঠে আসছে বিদেশে পলাতকদের আরাম-আয়েশে দিনযাপনের চিত্র। বিপরীতে দেখা যাচ্ছে স্বদেশে দিশেহারা কর্মী-সমর্থকদের হালকা-পাতলা লম্ফঝম্প। এ বৈপরীত্য রাজনীতির মুখরোচক আলোচনার বিষয় না হয়ে পারে না।
লুটপাটতন্ত্র কায়েম
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তারা দেশে গণতন্ত্রহীন এক লুটপাটতন্ত্র কায়েম করে রেখেছিলেন সাড়ে ১৫ বছর। অর্থনীতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতিকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন হাসিনা, সরকারের সক্রিয় পৃষ্ঠপোষকতায় বিদেশে পাচার করা হয়েছিল কয়েক লাখ কোটি টাকা। হাসিনার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-সংসদ সদস্য, নেতা-কর্মী, হাসিনার পৃষ্ঠপোষকতাধন্য অলিগার্ক ব্যবসায়ী এস আলম, সালমান এফ রহমান, সামিটের আজিজ খান, বসুন্ধরার আকবর সোবহান, ওরিয়ন গ্রুপের ওবাইদুল করিম, নাসা গ্রুপের নজরুল ইসলাম মজুমদার প্রমুখ এ পুঁজি লুণ্ঠন ও পুঁজি পাচারযজ্ঞের প্রধান কুশীলব। এভাবে আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের প্রায় সব নেতা-কর্মীই গত সাড়ে ১৫ বছরে কোনো না কোনোভাবে অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কোটিপতি হওয়ার মিশনে অংশগ্রহণ করেছেন। এমনকি উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়ের ছাত্রলীগ নেতা এবং প্রধানমন্ত্রীর পিয়ন অব্দি শত শত কোটি টাকার কুমির বনে যায়।
নজিরবিহীন পলায়ন
জুলাই ২০২৪-এর দিনগুলোয় যখন রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে, তখন গর্বভরে শেখ হাসিনা বলছিলেন, ‘শেখ হাসিনা পালায় না।’ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে হাসিনা বলেন, “দেশকে যখন আমরা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করছি, তখন দফায় দফায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। আন্দোলনের মধ্যে গুজব ছড়ানো হয়েছে, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন। কিন্তু বলে দিতে চাই, শেখ হাসিনা পালায়নি, পালায় না।” এমনকি ১ আগস্টও এক অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা ‘দেশ থেকে পালিয়ে না যাওয়ার’ অঙ্গীকার করেন। কিন্তু মসনদ ছেড়ে কেবল শেখ হাসিনা পলায়ন করেননি, পালিয়েছে পুরো মন্ত্রিসভা, পালিয়েছে প্রায় পুরো সংসদ, আমলা-পুলিশের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ, ব্যবসায়ী ও সাংবাদিকদের অনেকেই; এমনকি জাতীয় মসজিদের খতিব এবং ঈদগাহের ইমামও। যাদের কেউ কেউ শেখ হাসিনাকে মুখরোচক উপাধিতে ভূষিত করে দুনিয়াবি ফায়দা লোটার সুযোগ গ্রহণ করেছিলেন। এমন নজিরবিহীন পলায়ন বাংলাদেশের ইতিহাসে তো নয়ই- বিশ্বযুদ্ধ ছাড়া পৃথিবীর ইতিহাসেও ঘটেছে কিনা সন্দেহ।
এর মধ্যে যে বিষয়টি বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, তা হলো- শেখ হাসিনা ও রেহানাসহ শেখ পরিবারের প্রতিটি আণ্ডা-বাচ্চা আগেই পালিয়ে যেতে সমর্থ হয়। আগস্টের প্রথম দিন থেকেই তারা আঁচ করতে পারে যে, পরিস্থিতি যে কোনো সময় পাল্টে যেতে পারে। তাই সময় থাকতে তারা বাক্স-পেটরা গুছিয়ে নেয়। এভাবে কেউ কেউ পরিবারের অন্য সদস্যদের আগাম পার করে দেয়। এভাবে আগস্টের চার তারিখের মধ্যে ‘শেখ’ তকমাধারীদের বেশিরভাগ নিরাপদ প্রস্থান করে। অবশিষ্টরা ৫ তারিখ এবং পরের কয়েকদিন পলায়নের সুযোগ গ্রহণ করে।
বিদেশ-বিলাস
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য মোতাবেক এ পর্যন্ত যে চিত্র পাওয়া গেছে, তাতে দেখা যায়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতা আর প্রচণ্ড দাপট হারালেও বিদেশে বসে বিলাসী জীবনযাপন করছেন আওয়ামী লীগের পলাতক সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় অনেক নেতা। গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে এসব নেতার জৌলুসময় জীবনযাপনের খবর পাওয়া যাচ্ছে। তথ্যানুযায়ী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের থাকছেন কলকাতার অভিজাত রাজারহাট নিউটাউন এলাকায়। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও কলকাতা নিউটাউন এলাকায় আয়েশি জীবনযাপন করছেন। আর সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম কলকাতার অভিজাত এলাকা টাটা হাউজিং অ্যাভিনিউতে বড় আকারের দুটি ফ্ল্যাট নিয়ে থাকছেন। কলকাতা থেকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডের মামলার আসামি এসব পলাতক নেতা বিদেশে আয়েশিভাবে থাকছেন। কোনো কিছুরই অভাব নেই সেখানে। গাড়ি-বাড়ি, ব্যক্তিগত কর্মী, ব্যক্তিগত চিকিৎসক থেকে শুরু করে নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে থাকছেন তারা। কেউ কেউ ভারতে তাদের সন্তানদের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছেন। তাদের অনেকেরই ভারতে ব্যবসা-বাণিজ্য আর সম্পদ আছে। তাই ফেরারি থেকেও অর্থ-সম্পদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ, যুব মহিলা লীগ ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক একাধিক নেতা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের অনেক নেতা-কর্মী কলকাতায় পালিয়ে আছেন। সাবেক কিছু মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগের এ নেতারা ক্ষমতায় থাকার সময় অবৈধভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। এসব টাকা দিয়ে বিদেশে বাড়ি, রেস্টুরেন্ট, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসহ নানা ধরনের সম্পদ গড়ে তুলেছেন। তাদের অনেকেই কানাডার ‘বেগমপাড়ায়’ পরিবারসহ আরাম-আয়েশে দিন কাটাচ্ছেন। কেউ কেউ বিলাসবহুল গাড়ি কিনে বিদেশি শহরগুলোয় ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
কী এক পরিণতি!
যতই দিন যাচ্ছে, থলের বিড়ালগুলো একে একে বেরিয়ে আসছে। যদিও বিষয়গুলো বহুল আলোচিত ছিল, কিন্তু তা এখন প্রমাণসহ প্রকাশ্যে আসছে। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, কেন্দ্রীয় নেতা ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা রাজনীতিকে কীভাবে লুটপাটের ক্ষেত্র বানিয়েছিলেন, তা ভাবতে বিস্মিত হতে হয়। ফলে শেখ হাসিনার শাসনামলে তাঁরা বিপুল অর্থসম্পদের মালিক বনে যান। এখন দেশ থেকে পালিয়ে গিয়েও তাঁরা বিলাসী জীবনযাপন করতে পারছেন। অন্যদিকে দেশে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের অনেক নেতা-কর্মী আছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকে জেলহাজতে আছেন। আবার অনেকে পলাতক। আওয়ামী লীগের এসব অন্ধ কর্মী-সমর্থক জানে না, বিদেশে নেতারা কীভাবে বিলাসী জীবনযাপন করছেন। তৃণমূল কর্মীদের এতিমের মতো রেখে শেখ হাসিনার পাশাপাশি বড় বড় নেতা, মন্ত্রী-এমপি বিদেশে পালিয়েছেন। শেখ হাসিনাসহ এদের মধ্যে কেউ কেউ দেশের মধ্যে থাকা কর্মীদের উসকানি দিচ্ছেন আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর মতো কাজ করতে। এছাড়া আওয়ামী লীগের কিছু পুরনো ফ্যাসিবাদী অভ্যাসও কাজ করছে। তারা অনলাইনে হত্যা ও ধর্ষণের হুমকি দিচ্ছে, যা তাদের জনবিরোধী হওয়ার আরো দলিল সাপ্লাই দিচ্ছে। এখনো তারা অনুশোচনাহীন। তারা কীসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছে, সেটাও স্পষ্ট নয়। হাসিনা ও তার পরিবার-আত্মীয়-স্বজন হয়তো বিদেশে পাচার করা অর্থে আরাম-আয়েশে দিন-গুজরান করতে পারবে, কিন্তু লাখ লাখ আওয়ামী নেতা-কর্মীকে আরো বহুদিন চোর-পুলিশের জীবন কাটাতে হবে।
এ অবস্থায় দলের কর্মী-সমর্থক ও ছোট ছোট নেতারা পড়েছেন বেকায়দায়। অপরাধপ্রবণ এসব মানুষ ভয়ে বাড়িঘরে থাকতে পারছেন না। বাইরে থাকা অনেকে যোগাযোগ রাখতে পারছেন না পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে। কেউ কেউ আছেন আর্থিক সংকটে। অপরাধ ও অসহায়ত্ব তাদের তাড়া করে ফিরছে। অন্যদিকে পলাতক নেতারা পাচারকৃত টাকায় বিলাসী জীবনযাপন করছেন বিদেশে। সেখানে বসে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। শীর্ষনেতা ও সাবেক মন্ত্রীদের বিদেশে বিলাসী ঈদ উদযাপনের ছড়িয়ে পড়া ছবি দেখে অনেকেই বলছেন, তাদের সঙ্গে উপহাস করা হয়েছে। এসব নেতার বিরুদ্ধে জনসাধারণের মাঝেও তীব্র ঘৃণা সৃষ্টি হয়েছে। নাম প্রকাশ না করে সাবেক এক ছাত্রনেতা ও আওয়ামী লীগের এক কর্মী বলেন, ‘আমরা দেশে নানা জায়গায় পালিয়ে বেড়াচ্ছি। পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন। নিজের ঈদগাহেও যেতে পারছি না। নেতারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে না, আমরা ফোন দিলে ধরে না। অথচ তারা বিদেশে বসে রাজকীয় ঈদ উদযাপন করে সেলফি দিচ্ছেন। কর্মীদের সঙ্গে এটা তো মশকরা।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আওয়ামী লীগের সাবেক এ প্রভাবশালী নেতাদের বিলাসী জীবনযাত্রা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে কতটা দুর্নীতিগ্রস্ত ছিল তাদের শাসনামল। মাত্র ছয় মাস আগেও এদের দাপটে দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও একসময় তটস্থ থাকতো। তবে ৫ আগস্টের পর নৌকা ডুবিয়ে তারা গা-ঢাকা দিয়েছেন। সচিবালয়-মন্ত্রীপাড়া ও দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ছিল যাদের আধিপত্য, তারা এখন দলের বিপদ দেখে সটকে পড়েছেন।
জুলাই আন্দোলনের সময় রাজপথে ছাত্র-জনতার ওপর সবচেয়ে বেশি নির্যাতন করেছে আওয়ামী লীগের অঙ্গ, সগযোগী সংগঠনগুলো। বিশেষ করে ছাত্রলীগ। সারা দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় তারা সাধারণ ছাত্রদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে। মহিলা আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ, যুব মহিলা লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, তাঁতী লীগ, মৎস্যজীবী লীগ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদসহ আওয়ামী লীগের সহযোগী হয়ে অসংখ্য ‘লীগ’ পরিচয়ধারী সংগঠন গজিয়ে ওঠে এবং এদের দাপট রাজনৈতিক অঙ্গন ছাড়িয়ে শিক্ষা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিকসহ পেশাজীবীদের প্রতিটি সিঁড়িতে দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করে।
মৃদুমন্দ লম্ফঝম্প
আকস্মিকভাবে ক্ষমতা হারিয়ে দিশেহারা অংশটি- যারা ক্ষমতায় থাকাকালে লুটপাটের রাজনীতির মধু আহরণে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল, তারা নিজেদের সামাল দিতে পারছে না। ফলে তারা মৃদুমন্দ লম্ফঝম্প দিয়ে টিকে থাকতে চাইছে। মাঝেমধ্যে দিল্লিপ্রবাসী শেখ হাসিনার ইন্টারনেট মাধ্যমে অবৈধ প্রচারণা এ ক্ষুদ্র অংশটিকে লাফাতে উৎসাহ জোগায়। কিন্তু তাতে কোনো সাড়া মেলে না। মানুষের স্মৃতি এতটা দুর্বল নয় যে, এই সন্ত্রাসী লুটেরাদের নির্যাতনের ক্ষতের কথা তারা ভুলে যাবে।
অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ার লক্ষণ
রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের এত দ্রুত অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ার লক্ষণ প্রকাশিত হওয়াটাও বিস্ময়কর বটে। বিশ্লেষকদের মতে, শেখ হাসিনার পতন বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এটি দেখিয়ে দিয়েছে যে, যেকোনো স্বৈরাচারী শাসক জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে টিকে থাকতে পারে না।
গণহত্যার অপরাধ, রাজনৈতিক দমন-পীড়ন এবং অনুশোচনাহীন আচরণ আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চিত করে ফেলেছে এবং অচিরেই নির্মূল হয়ে যাওয়ার পথেই এগোচ্ছে এ সন্ত্রাসী সংগঠন। পতিত এ জাহেলি শক্তির ফিরে আসাকে বুদ্ধিজীবীরা যতটা জটিল মনে করছেন, পরিস্থিতি সম্ভবত তার চাইতেও জটিল।
ফ্যাসিস্ট যুগের দমন-পীড়নের পর আওয়ামী লীগেরও কোনো নৈতিক অবস্থান অবশিষ্ট নেই। ষোলো বছর তারা যে নিষ্ঠুরতা দেখিয়েছে, তা তাদের গণবিরোধী হিসেবেই দাঁড় করিয়ে রাখবে ইতিহাসে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, নেতাকর্মীদের অনেকে রাজনীতি ছেড়ে দেয়ার কথা ভাবছেন। বিভিন্ন স্থানে কাউকে কাউকে দুধ দিয়ে গোসল করে দল ত্যাগ করতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের এখনকার যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে, তাতে এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায়, বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনাও শেষ, সাথে সাথে আওয়ামী লীগও শেষ।
শেখ হাসিনার বিদেশে পলায়ন শুধু তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎই ধ্বংস করেনি, একই সাথে আওয়ামী লীগের রাজনীতির ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত করে দিয়েছে।