নির্বাচন কোনোভাবেই জুনের পরে যাবে না : আসিফ নজরুল

প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের নির্দিষ্ট ডেটলাইন দেননি : মির্জা ফখরুল


১৭ এপ্রিল ২০২৫ ১৪:০৫

গত বুধবার ১৬ এপ্রিল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বৈঠক

স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চেয়েছে। জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন করতে চান। তবে সুনির্দিষ্ট কোনো ডেডলাইন দেননি। এতে একেবারেই সন্তুষ্ট নয় বিএনপি।’
গত ১৬ এপ্রিল বুধবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সঙ্গে যমুনায় পৌনে দুই ঘণ্টা বৈঠক শেষে বেরিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মির্জা ফখরুল বলেন, ডিসেম্বরেই আমরা নির্বাচন চাই। প্রধান উপদেষ্টা বলেননি যে ডিসেম্বরে ভোট হবে না। উনি ডিসেম্বর থেকে ছাব্বিশের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে বলে জানিয়েছেন। তবে আমরা পরিষ্কার বলেছি যে, আওয়ার কাটআউট টাইম ইজ ডিসেম্বর। ডিসেম্বরের মধ্যেই ভোট হতে হবে।
নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা না দেওয়ায় বিএনপি অসন্তুষ্ট জানিয়ে দলটির মহাসচিব বলেন, তারা বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় ‘একেবারেই সন্তুষ্ট নন’।
প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ না দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, দল ও মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা করে ‘আমরা আবার আপনাদের সামনে আসব’।
নির্বাচনের তারিখ প্রলম্বিত করা হচ্ছে বলে মনে করছেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় বলা হচ্ছে ডিসেম্বর থেকে জুন। ‘তিনি এ কথা বলেননি যে ডিসেম্বরে (নির্বাচন) হবে না। কিন্তু জুন পর্যন্ত (সময়) নিয়েছেন। আমরা এ কথাটা পরিষ্কার করে বলেছি যে, আওয়ার কাটআউট টাইম ইজ ডিসেম্বর।’
আগেরবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে ‘আশ্বস্ত’ বিএনপি এবার কেন ‘সন্তুষ্ট’ নয়- জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একই প্রশ্ন কেন অন্যভাবে নিচ্ছেন। অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, এটাই (নির্বাচন) ছিল মুখ্য বিষয়।’
প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক নিয়ে বিএনপিকে খুশি মনে হয়েছে : আসিফ নজরুল
প্রধান উপদেষ্টার সাথে বিএনপি নেতাদের বৈঠকের পর তাদের আনন্দিত মনে হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তাৎক্ষণিক এক সংবাদ সম্মেলনে এ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে আসিফ নজরুল বলেন, ‘বিএনপি মহাসচিবের এটা বলার অবশ্যই অধিকার আছে। আমার কাছে ওনাদের দেখে হ্যাপি লেগেছে, যখন আমাদের ডায়ালগটা শেষ হয়েছে। মনে হয়েছে ওনাদের মনে যে প্রশ্ন ছিল, সেগুলোর উত্তর তারা পেয়েছেন। আমার কাছে তা মনে হয়েছে, ফখরুল ভাইয়ের কাছে অন্যরকম মনে হতে পারে।’
নির্বাচনের সময় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ডিসেম্বর থেকে জুন মানে আমরা ইচ্ছা করে দেরি করে মে বা জুন মাসে করব, সেটা না। ডিসেম্বর থেকে জুন মানে এর মধ্যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা করব। অকারণে আমরা এক মাস দুই মাস থাকব, বিষয়টা সেটা না। ক্ষমতায় থাকার জন্য দেরি করা হবে না।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘জনগণের একটা আকাক্সক্ষা আছে যেন আমরা বিচার করে যাই। হাজারের বেশি মানুষ জীবন দিয়েছে। আমরা যদি কোনো বিচার না করি, তাহলে মানুষ কেন, নিজেদের বিবেকের কাছে জবাব দেবো কীভাবে।’
তিনি জানান, ‘ফলে ইলেকশন সংস্কার বিচার আরো কিছু পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করে ডিসেম্বর থেকে জুন টাইমলাইনটা বলা হয়। আমরা ক্যাটাগরিকেলি বলেছি, এটা কোনো অবস্থাতেই জুনের পরে যাওয়া হবে না। এর মধ্যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। অযথা কালক্ষেপণের কোনো সম্ভাবনা নেই। যতটা সম্ভব সংস্কার আমরা করে যেতে চাই।’
বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে আমরা আমাদের উদ্বেগের কারণগুলো জানিয়েছি। প্রধান বিষয়টি ছিল নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ। আমরা বলেছি, বর্তমানে রাজনৈতিক যে পরিস্থিতি এবং দেশের যে অবস্থা, তাতে আমরা বিশ্বাস করি, এখানে অতিদ্রুত একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়েই সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে। একইসঙ্গে চলমান যে সংস্কার কমিশনগুলো করা হয়েছে, উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে, আমরা সেগুলোয় সম্পূর্ণভাবে সহযোগিতা করছি।
প্রতিনিধিদলে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এবং মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।