অসহনীয় যানজটে স্থবির ঢাকা
৬ মার্চ ২০২৫ ১২:২৯
স্টাফ রিপোর্টার : এমনিতেই রাজধানীর সড়কের অধিকাংশই অবৈধ দখলদারদের দখলে রয়েছে। হকাররা ফুটপাত দখলের পর রাস্তার অধিকাংশ দখলে নিয়েছে। ফলে সড়কে যানবাহন চলাচলের জায়গা খুবই কম। আর এ কারণেই প্রচুর যানবাহনের এ শহরে স্বাভাবিক সময়ও জট লেগে থাকে। তবে রোজা এলে যানজটের পরিমাণ অনেকটা বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে দুপুরের পর শহরের সড়কগুলো অনেকটা থমকে থাকে। যান যেন চলেই না। কারণ একসঙ্গে প্রায় সব সরকারি-বেসরকারি অফিস ছুটি হয়, একসঙ্গে ঘরে ফেরার তাড়া থাকে সবার। ফলে যানজট অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে।
রাজধানীর কোথায় যানজট নেই? বিকেল হলেই গুলিস্তান, পল্টন, মৎস্যভবন, মিন্টো রোড, কাকরাইল, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, শ্যামলী, তেজগাঁও, বিজয় সরণি, রামপুরা, হাতিরঝিল, বাড্ডা, গুলশান, বনানী, নতুন বাজারসহ সব এলাকায় ব্যাপক যানজট লেগে থাকে। যানবাহনের চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ।
অফিস ছুটির পর সবার টার্গেট থাকে বাসায় গিয়ে ইফতার করার। কিন্তু যানজটের কারণে অনেক ক্ষেত্রে সেটি সম্ভব হয়ে ওঠে না। কিন্তু কেন এত যানজট? বিশেষজ্ঞদের মতে, যত্রতত্র পার্কিং, যেখানে-সেখানে বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করা, ফুটপাত দখল, গাড়ির তুলনায় রাস্তার সংকট, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, ট্রাফিক ব্যবস্থাপকদের অদক্ষতা, দুর্নীতি ও অনিয়ম, পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার অভাব, আইনের বাস্তবায়ন না হওয়া, রাজধানীকেন্দ্রিক শিল্পকারখানা স্থাপন এবং অফিস-আদালত ঢাকাকেন্দ্রিক হওয়ায় যানজটও ক্রমবর্ধমান হারে বেড়ে যাচ্ছে।
তাছাড়া রাজধানীতে ক্রমইে বাড়ছে বাস, ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজি অটোরিকশা, অ্যাম্বুলেন্স, রিকশা, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, মালবাহী ভ্যান, কাভার্ডভ্যান, ঠেলাগাড়ি ও ট্রাকের সংখ্যা। সড়কের তুলনায় যানবাহনের মাত্রাতিরিক্ত সংখ্যাধিক্য এবং অবাধ ও অনিয়ন্ত্রিত চলাচলই যানজট বাড়ার অন্যতম কারণ, যার ধকল পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে।
গণঅভ্যুত্থানের পর জনরোষের শিকার হয় পুলিশ। থানা ও সড়ক ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যান পুলিশ সদস্যরা। এ অবস্থায় ছাত্র-জনতা সড়কে ট্রাফিক সামলানোর দায়িত্ব নেয়। সেসময় অনিয়ন্ত্রিত ট্রাফিক অবস্থার সুযোগ কাজে লাগিয়ে রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোয় উঠে আসে ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ হাজারো অবৈধ যানবাহন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ট্রাফিক পুলিশ সড়কে এলেও সড়ক আইন মানতে চাননি এসব যানবাহনের চালকরা। এমন কি ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তাচ্ছিল্য করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন তারা। আগে শহরের অলিগলিতে চললেও ৫ আগস্টের পর থেকে প্রধান সড়কে ব্যাপক হারে বেড়েছে ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা। এতে সড়কে ঘটছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে বিশৃঙ্খলা ও যানজট।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) নগর ও অঞ্চল বিভাগের অধ্যাপক নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান গণমাধ্যমকে বলেন, ঢাকা শহরে গাড়ির সংখ্যা যে হারে বাড়ছে, সে অনুযায়ী রাস্তা বাড়ছে না। গত কয়েক বছরে ঢাকায় ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেলের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। যেখানে প্রাইভেট গাড়ি কমানোর কথা, সেখানে প্রতিনিয়তই গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। এক্সিসটিং রোড এত গাড়ির ভার নিতে পারছে না। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের ভাষ্য, এখন অফিস শেষ করে মানুষ ইফতারের আগে বাসায় পৌঁছাতে চায়। যার ফলে বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে রাস্তায় ব্যাপক চাপ পড়ে। ফলে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যানজট বাড়ে।