আ’লীগের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
৬ মার্চ ২০২৫ ১১:১৮
স্টাফ রিপোর্টার : ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতা ও দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই নিষ্ক্রিয় দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা এ দলটি। দলীয় কার্যক্রম থেকে নিষ্ক্রিয় থাকলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা গুজবে ব্যস্ত দলটির সমর্থকরা। দেশে ও বিদেশে বসে নামে-বেনামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় রয়েছে অপপ্রচারে। অন্যদিকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর নানা ষড়যন্ত্রেও লিপ্ত দলটির এক্টিভিস্টরা। দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর ক্ষমতায় থেকে শেখ হাসিনা এবং তার দোসররা দেশে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করেছিল। খুন-গুম দুর্নীতির মহোৎসবে মেতে উঠেছিল দলটি। ফলে হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পর প্রশ্ন উঠেছে ছাত্র-জনতার আন্দোলন থামানোর জন্য রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করে গণহত্যাকারী এ দলটির রাজনীতি করার সুযোগ রয়েছে কিনা।
এদিকে গত ১৬ বছরের শাসনামলে শেখ হাসিনা ও তার দলের বিরুদ্ধে গুম-খুন ও হত্যাযজ্ঞ চালানোর প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) তথ্যানুসন্ধান দল। জাতিসংঘ সম্প্রতি শেখ হাসিনা ও তার দলের গুম, খুন নিয়ে যেই প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, তাতে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছে শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ১০৮টি হত্যা মামলা হয়েছে, যার মধ্যে ১৬টি ট্রাইব্যুনালে গেছে। সম্প্রতি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াও এ বিষয়ে কথা বলেন। সরকার নিয়ন্ত্রিত বার্তা সংস্থা বাসসকে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে বর্তমান সরকার শিগগিরই পদক্ষেপ নেবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এটা অত্যন্ত ইতিবাচক যে, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও এক ধরনের ঐকমত্য তৈরি হচ্ছে।’
৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং তাদের আরেকটি সংগঠন জাতীয় নাগরিক কমিটি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে আসছে। তারা বলছে, শেখ হাসিনার বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসন অসম্ভব। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, ‘জাতিসংঘের প্রতিবেদনের পর শেখ হাসিনা এখন আন্তর্জাতিভাবে স্বীকৃত সন্ত্রাসী। তার দল আওয়ামী লীগও সন্ত্রাসী দল। গণহত্যার মাস্টারমাইন্ড শেখ হাসিনা সরকারের পুলিশ, প্রশাসন ও তার দলকে ব্যবহার করে মানুষ হত্যা করে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছে। শেখ হাসিনা এখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা অপ্রাসঙ্গিক বিষয়। আর বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ রাখতে হবে।’
ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী মনিরা শারমিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আয়নাঘরের ভয়ঙ্কর চিত্র তো আমরা দেখলাম। একই দিনে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে এটা স্পষ্ট যে, শেখ হাসিনা এবং তার দল গণহত্যায় জড়িত। আমরা শুধু আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ নয়, আওয়ামী লীগের বিচারও চাই। সেজন্য যদি আইনের কোনো সংশোধন দরকার হয়, সকারকে তা করতে হবে। আর শুধু শেখ হাসিনা নয়, যারা যারা গণহত্যায় জড়িত, তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
সম্প্রতি বেসরকারি টেলিভিশন যমুনার একটি অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলেছেন তরুণ রাজনীতিবিদ ও জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ। ওই অনুষ্ঠানে প্রাচীন এ দলটির ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগের একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড হয়েছে। যে কারণে এক অর্থে তখন দলটির পতন হয়েছে। কিন্তু এবারের পতন ভিন্ন। তিনি বলেন, জেনারেল এরশাদের পতন হওয়ার তিন দিনের মাথায় মিজান চৌধুরী তার বাড়িতে দল বানিয়েছিল বা দলের অফিস বানিয়েছিল। এখন ৭ মাস হয়ে গেল আওয়ামী লীগ কিন্তু একটা কুঁড়ে ঘরও পায়নি। এখন কুঁড়েঘর পায়নি নাকি কুঁড়েঘর খোঁজেনি, সেটা একটা বড় প্রশ্ন। হাসিনার ঘুরে দাঁড়ানোর রাজনীতি কতটা সফল হবে, এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ঘুরে দাঁড়ানোর যে রাজনীতি সেখানে একটা নৈতিক জায়গা থাকে। আওয়ামী লীগ কিন্তু ৭৫-এর পরও ঘুরে দাঁড়িয়েছে, এই দলটি কিন্তু ওয়ান-ইলেভেনের পরও ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এখন আওয়ামী লীগ চোর, দুর্নীতিবাজ, হত্যাকারী। এখনকার আওয়ামী লীগ এস আলমের পকেটে, দরবেশের পকেটে আরও অনেকেরই পকেটে। এক একটা এমপি, মন্ত্রীর ২৫০-৩০০ বাড়ি। শুধু তাই নয়, একজন পিওনের কাছে ৪শ’ কোটি টাকা। এ দায়গুলো আপনার নিতে হবে’। তরুণ এ রাজনীতিবিদ বলেন, আওয়ামী লীগের এখন দেশে-বিদেশে বদনাম হয়ে গেছে। এ দলটির হাতে এখন রক্ত, তিনবার তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। তো এতগুলো অপকর্মের দায় নিয়ে এমন কোনো নেতা আছে যে, এসে বলবে আমি ঘুরে দাঁড়াব।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেছেন, ‘যতদিন না পর্যন্ত খুনি হাসিনাকে ফাঁসির মঞ্চে দেখছি, ততদিন যেন কেউ ভুলক্রমেও নির্বাচনের কথা না বলে।’
গত ৪ মার্চ মঙ্গলবার সকালে ঢাকার রায়েরবাজারে অভ্যুত্থানের সময় শহীদ হওয়া ছাত্র-জনতার কবর জিয়ারত করতে যান এনসিপির নেতারা। সেখানে সারজিস আলম এ কথা বলেন।
প্রসঙ্গত, সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার আদালতে বলেছেন, তিনি আওয়ামী লীগের কোনো পদে নেই এবং তিনি আর রাজনীতি করবেন না। গত ৩ মার্চ সকালে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ কথা বলেন কামাল মজুমদার। আদালতে এক সাংবাদিক কামাল মজুমদারকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি রাজনীতি থেকে কবে অব্যাহতি নিয়েছেন?’ জবাবে কামাল মজুমদার বলেন, ‘আপনারা বলতে পারেন, আজ থেকেই আমি রাজনীতি থেকে অব্যাহতি নিয়েছি। আমি আর রাজনীতি করব না।’ তখন আরেকজন সাংবাদিক কামাল মজুমদারকে প্রশ্ন করেন, ‘কেন আপনি রাজনীতি করবেন না?’ জবাবে কামাল মজুমদার বলেন, ‘এই দেশে রাজনীতি করার কোনো পরিবেশ নেই। ৭৬ বছর বয়সে রাজনীতি করা যায় না। আমরা চাই, নতুন নেতৃত্ব আসুক।’