দু’চোখে অশ্রু
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৯:৩৩
॥ আসাদুজ্জামান আসাদ ॥
আল মাহমুদ মায়ের মুখে গল্প শোনার গভীর আগ্রহ নিয়ে সময় পার করছে। মা প্রতিদিন কোনো না কোনো গল্প শোনান। আজ তার ব্যতিক্রম হবে না। মা, আজকে ভাষা সংগ্রামের ইতিহাস শুনব। কীভাবে আমাদের মাতৃভাষা বাংলা হলো। আল মাহমুদ ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র। বাবা মারা যাবার অল্প দিন হলো। মা ফরিদা ইয়াসমিন একজন এমপিওভুক্ত কলেজের শিক্ষিকা। মা-ছেলের ভালোভাবেই দিনকাল যাচ্ছে। আমি মাকে বললাম, ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে যাব। ছেলের গভীর আগ্রহ দেখে, মা খুবই খুশি হলো। অবশ্যই যাবে বাবা। তোমরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। ভাষা সংগ্রাম, স্বাধীনতাসহ সব ধরনের ইতিহাস তোমাদের জানার প্রয়োজন। আজ আমি তোমাকে ভাষা সংগ্রামের গল্প শোনাব।
ফেব্রুয়ারি মাস। ভাষার মাস। এ মাসের ২১ তারিখে সফিক, রফিক, সালাম, জব্বারসহ নাম জানা অজানা অসংখ্য ভাষা শহীদ বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে ভাষাশহীদ হন। এই দিনে প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে বেদনার দ্রুতি অনুভূত হয়। তাই ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার রাজপথে ভাই হারানোর বেদনা, পুত্র হারানো আর্তনাদ, মায়ের বুকফাটা কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। ভাষাশহীদদের ত্যাগের বিনিময়ে আজ পৃথিবীজুড়ে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হচ্ছে, যা আমাদের গৌরবের বিষয়। আবার মায়ের ভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ফিরে পাবার আনন্দ আলাদা। তা থেকে ব্যতিক্রম নয় আমাদের পরিবার। পালা বদলের হাওয়ায় সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না। কথামতো সন্ধ্যা বেলা আম্মু, বাজার থেকে এক গাদা তরতাজা ফুল নিয়ে হাজির। নান রকম রঙিন ফুল দেখে আমি মুগ্ধ। এত ফুল আম্মু। হ্যাঁ, আব্বু। এসব ফুল দিয়ে আমরা রাত জেগে ফুলের মালা তৈরি করব। খুব ভোর রাতে চলে যাব শহীদ মিনারে। শহীদ মিনারে ফুলের মালা দিয়ে ভাষাশহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাব। অনেকে আবার ভাষাশহীদদের জন্য প্রভুর দরবারে হাত তুলে দোয়া করেন।
আমি রাত জেগে মায়ের সাথে ফুলের মালা তৈরির কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। হরেক রকম তরতাজা ফুলে মনোমুগ্ধ কর মালা তৈরি করি। প্রভাত বেলা চলে আসি শহীদ মিনারে। সবার কণ্ঠে এক সাথে মর্মস্পর্শী গান, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ বেজে ওঠে। তারপর প্রভাতফেরীতে সবাই যোগ দেই। এভাবেই আম্মু আমাকে দিয়ে শহীদ মিনারে ফুলের মালা নিবেদন করেন। মুহূর্তেই আম্মুর দু’চোখে অশ্রু জলে ভরে ওঠে। আমি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ি।