অস্থির চালের বাজার ক্রেতারা ক্ষুব্ধ


১০ জানুয়ারি ২০২৫ ১২:০০

ডিম তেলে স্থিতি, স্বস্তি সবজিতে
স্টাফ রিপোর্টার : বাজারের কিছু নিত্যপণ্যমূল্য স্থিতিশীল থাকলেও চরম অস্থিরতা চলছে চালের বাজারে। বেশ কিছুদিন ধরেই চালের দাম বাড়ছে। উৎপাদন মৌসুমে চালের মূল্যবৃদ্ধির কোনো যৌক্তিকতা দেখছেন না ভোক্তারা। অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না ক্রেতাদের। অন্যদিকে বাজারের মাছ ও গোশত বিক্রি হচ্ছে বাড়তি মূল্যে। নীরবে মূল্য বাড়িয়ে পকেট কাটছেন ব্যবসায়ীরা। তবে স্বস্তি এখন শুধু শাক সবজিতে। শীত মৌসুমে উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারের এর ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে।
এক সপ্তাহ আগেও আলুর মূল্য ছিল ৬০ টাকা। এখন সেই আলুর মূল্য ৪০ টাকা। তবে বাজার সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকলে এ সময় আলুর মূল্য ২০ টাকার মধ্যে থাকার কথা। বাজারে ডিমের মূল্য স্থিতিশীল রয়েছে। বৃদ্ধির পর অতিনিত্য এ খাদ্যের মূল্য এক জায়গায় অবস্থান করছে। তবে বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে ডিমের মূল্য ডজনে আরও অন্তত ৩০ টাকা কমে পেতেন ক্রেতারা, এমনটাই জানান ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, বেশি দামে কিনলে তো আর লোকসান দিয়ে বিক্রি করা যাবে না।
বাজারে গিয়ে অস্থির হয়ে পড়ছেন চাল ক্রেতারা। ভাত খাওয়ায় অভ্যস্ত নাগরিকরা আর যা কিনুক বা না কিনুক চাল অবশ্যই কিনতে হবে। আর সেই চালের মূল্যই অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। ৬ জানুয়ারির কথা, মিনিকেট নামে বাজারের যে চাল বিক্রি হয়, দুই কেজি সেই চাল একজন ক্রেতা কিনলেন ৮০ টাকা দরে ১৬০ টাকা দিয়ে, যা রীতিমতো অবিশ্বাস্য। অথচ এটাই এখন চালের বাজারের বাস্তবতা। রাজধানীর ডেমরার একজন বাসিন্দার ভাষ্য হচ্ছে, তিনি ৪ হাজার টাকা নিয়ে ৫০ কেজি নাজিরসাইল চাল (রয়েল কোম্পানির) কিনতে গেলেন। যে চালের ২৫ কেজি বস্তা এর আগে তিনি ১৯শ’ টাকায় কিনেছিলেন। কিন্তু ৫ জানুয়ারি দোকানে গিয়ে তিনি দেখলেন সেই ২৫ কেজি চালের মূল্য ২২শ’ টাকা। অর্থাৎ ৫০ কেজিকে তাকে বাড়তি গুনতে হবে অন্তত ৬শ’ টাকা।
বাজারের সামগ্রিক মূল্যের চিত্র প্রায় একই রকম। দেখা গেছে, কয়েক সপ্তাহ ধরেই ঊর্ধ্বমুখী চালের দাম। প্রায় সব ধরনের চালের দামই বেড়েছে। এদিকে কর অব্যাহতির পরও প্রভাব পড়েনি চালের দামে, উল্টো বাড়ানো হয়েছে দাম। এখন বাড়তি দামেই চাল কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে বেড়েছে মিনিকেট চালের দাম। অন্যান্য চালের দামও বাড়তি। দুই সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি মিনিকেটের দাম ছিল ৭৫ টাকা, যা বর্তমানে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মিনিকেটের পর সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে নাজিরশাইল চালের দাম। দুই সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি নাজিরশাইল ছিল ৭০ থেকে ৭৮ টাকা, শুক্রবার তা বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৮৮ টাকায়।
দুই সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি বিআর-২৮ জাতের চাল বিক্রি হয়েছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকায়। ২ থেকে ৫ টাকা দর বেড়ে তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। এ সময় মোটা চাল (গুটি স্বর্ণা) কেজিতে বেড়েছে ৫ টাকার মতো। দুই সপ্তাহ আগে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া মোটা চাল কিনতে ক্রেতাদের খরচ করতে হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা। এছাড়া বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি পুরোনো আটাশ ৬৫ টাকা, পাইজাম ৬০ টাকা, কাটারিভোগ ৮৫ টাকা, বাসমতী ৯৪ থেকে ৯৮ টাকা, পোলাওয়ের চাল ১২০ থেকে ১২৫ টাকা ও আমন ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বিদায়ী বছরের নভেম্বর মাসে চাল আমদানির ওপর ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর রেখে বাকি আমদানি শুল্ক ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করে নিয়েছে এনবিআর। তবুও আমদানি করা চালের দামে কোনো প্রভাব পড়েনি। চালের বাড়তি দামে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে ক্রেতাদের মধ্যে। তারা বলছেন, ভরা মৌসুমে কেন দাম বাড়ছে? এর কোনো উত্তর নেই।
এদিকে ফুলকপি, মুলা, শালগমসহ শীতকালীন সবজিতে ভরপুর রাজধানীর বাজার। দামও ক্রেতাদের হাতের নাগালে। সপ্তাহের ব্যবধানে ৫ থেকে ১০ টাকা কমেছে সবজির দাম। তবে ডিম, মাছ ও গোশতের দাম স্থিতিশীল রয়েছে।
বাজারে মুলা বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়, গোল বেগুন ৫০ টাকা, লম্বা বেগুন ৩০ টাকা থেকে ৪০, কলার হালি ৩০ টাকা, লাউ প্রতিটি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপি ও বাঁধাকপি ১০ টাকা কমে ৩০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, শালগম ৪০ টাকায, শিম ৪০ থেকে ৫০ টাকা, শসা ও টমেটো ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া করলা, পটোল, ঝিঙা ও ধুন্দল প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, গাজর ৬০ টাকা, লালশাক, পালং ও কলমিশাক প্রতি আঁটি ১০ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজিতে ৫ টাকা কমে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া দেশি রসুন ২৫০ টাকা ও ভারতীয় রসুন প্রতি কেজি ২২০ টাকা, চায়না আদা ২০০ টাকা, নতুন ভারতীয় আদা ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে ভোজ্যতেল। বোতলজাত ৫ লিটারের সয়াবিন ৮৫০ এবং এক লিটার ১৭৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া খোলা পামওয়েল প্রতি লিটার ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকায়। প্রতি ডজন ডিম ১৩০-১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গত সপ্তাহের ৩৫০ টাকার সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৩০ থেকে ৩৪০ টাকায়। এক কেজি ওজনের ব্রয়লার মুরগি ২০০ থেকে ২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া গরুর গোশতের কেজি কেনা যাচ্ছে ৭০০-৭৫০ টাকায়। অপরিবর্তিত দেখা গেছে মাছের বাজার। বাজারে ছোট রুই প্রতি কেজি ২৫০ টাকা, পাবদা আকারভেদে ৪২০ থেকে ৪৫০ টাকা, চাষের শিং ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা, পাঙাশ ২০০ টাকা, কৈ আকারভেদে প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।