যেকোনো মূল্যে ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ করাই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ০০:০০
আর মাত্র কয়েকদিন পরই শুরু হবে ঈসায়ী ক্যালেন্ডারের নতুন বছর ২০২৫। সাপ্তাহিক সোনার বাংলার সকল পাঠক, গ্রাহক, এজেন্ট, বিজ্ঞাপনদাতা ও দেশবাসীকে জানাচ্ছি নতুন বছরের আগাম শুভেচ্ছা। চলতি ২০২৪-এর জুলাই-আগস্ট থেকে নিয়ে শেষের মাসগুলো আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে পতিত ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান হয়েছিল ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর। এরপর ১/১১-এর হাত ধরে দীর্ঘ দেড় যুগ দেশবাসীর ওপর চলেছে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন। ২০২৪-এর ৫ আগস্ট আবার আমরা আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশকে নিজের করে ফিরে পেয়েছি। ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ প্রভাবশালী ব্রিটিশ ম্যাগাজিন দ্য ইকোনমিস্টের ২০২৪ সালের ‘বর্ষসেরা দেশ’-এর তালিকায় শীর্ষস্থান অর্জন করেছে। আমাদের এ অর্জনের নায়ক দেশের তরুণ শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতা। শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে একটি স্বৈরাচারী শাসন উচ্ছেদের প্রচেষ্টার স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশকে এ মর্যাদা দিয়েছে দ্য ইকোনমিস্ট। গত আগস্টে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত ও দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। হাসিনাকে দুঃশাসক উল্লেখ করে দ্য ইকোনমিস্ট লিখেছে, তিনি নির্বাচনে কারচুপি, বিরোধীদের কারাগারে পাঠানো, গুম, খুন এবং বিক্ষোভকারীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীকে গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং তিনি ও তার দলের নেতা-কর্মীরা বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। দুর্নীতির মাধ্যমে হাসিনা ও তার সমর্থকরা দেড় দশকে আঙুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হয়েছেন। দেশটিতে বর্তমানে নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যাপক সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজ করছে।
আমরা আশা করি, নতুন বছরে সরকার এ সংস্কার কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে একটি সমৃদ্ধ, গণতান্ত্রিক, মানবাধিকারের রক্ষক, ঘুষ, দুর্নীতি ও চাঁদাবাজমুক্ত বাংলাদেশ আমাদের উপহার দেবে। সংস্কার শেষে গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কিন্তু কথায় আছে ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখে দৌড়ায়। বিতাড়িত আওয়ামী লীগ দেশের সরকার, রাষ্ট্র ও এর সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসহ রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও নৈতিক মূলবোধ ধ্বংস করে গেছে। তাই শেখ হাসিনার পতনের পরপরই কিছু কিছু দলের কতিপয় রাজনৈতিক কর্মী পতিত ফ্যাসিবাদের দেখানো পথে চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও দুর্নীতি শুরু করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। তাই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সুফল জনগণ এখনো পুরোপুরি পাচ্ছে না। অভ্যুত্থানের ফলাফল পেতে ঘুরে ফিরে বার বার সংস্কারের প্রসঙ্গ আসছে। বিশেষ করে নির্বাচন ব্যবস্থা, রাজনৈতিক দল ব্যবস্থা নিয়ে জনগণের মধ্যে হতাশার শেষ নেই। এ কথা সত্য, রাজনৈতিক দল পরিচালনা করা টাকা ছাড়া সম্ভব নয়। কিন্তু তার মানে এ নয়, যখন যারা ক্ষমতায় থাকবে কিংবা যার যেখানে প্রভাব, সেখান থেকে সে দলের নাম ভাঙিয়ে জনগণের সম্পদ লুট করবে, চাঁদাবাজি, দখলবাজি করবে- এমন নৈরাজ্য দূর না হলে কোনো দিনই জনগণ দেশের প্রকৃত মালিক হবে না। তাই সব সংস্কারের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার জরুরি। প্রত্যেক গণতান্ত্রিক দেশে দল পরিচালিত হয় নেতা-কর্র্মী, সমর্থক ও দাতাদের দেয়া চাঁদা ও দানে। বিশেষ করে নির্বাচন পরিচালনার ফান্ড গঠনের জন্য তারা ঘোষণা দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তহবিল সংগ্রহ করে থাকে। কিন্তু পতিত স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট হাসিনা লুটপাটের মাধ্যমে দলের জন্য এবং নিজের ও নেতা-কর্মীদের জন্য টাকা সংগ্রহ করলেও বিরোধীদলের দাতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে। জেল-জুলুম এবং এমনকি বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজিয়ে বিনাবিচারে হত্যা পর্যন্ত করেছে। তাই এক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ছিল না, ছিল অস্বচ্ছতার ভীতিকর এক পরিবেশ। গত সংখ্যায় সাপ্তাহিক সোনার বাংলার একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘কথায় আছে মাথায় পচন ধরলে তার মৃত্যু অনিবার্য। রাজনীতিবিদরা হলেন জাতির মাথা। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের ত্যাগ-তিতিক্ষা ছিল এমন যে, তারা রাজনীতি করতে গিয়ে জমিদারি বিক্রি করে নিঃস্ব হয়েছেন, আর এখন নিঃস্বরা রাজনীতি করে মহারাজার মতো বিত্তশালী হচ্ছেন। এজন্যই পাশ্চাত্যের গবেষকরা বলেন, এশিয়া-আফ্রিকায় রাজনীতি হলো বিনা পুঁজির ব্যবসা।’ নতুন বছরের শুরুতে আল্লাহর অশেষ রহমতে আমরা যে বিশেষ সুযোগ লাভ করেছি। ছাত্র-জনতার ত্যাগের বিনিময়ে তিনি আমাদের দান করেছেন দ্বিতীয় স্বাধীনতা। এ স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে নতুন বছরে আমরা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবো। যেকোনো মূল্যে ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ করব এ হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা।