ক্যাপসিকামে স্বপ্ন বুনছেন কুষ্টিয়ার কৃষকরা
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০০
কুদরতে খোদা সবুজ, কুষ্টিয়া: গ্রামের ২৯ জন কৃষক মিলে কাজ করছে একটি জমিতে। কেউ জমি প্রস্তুতের কাজ করছে, কেউবা সার মিশিয়ে দিচ্ছে, কেউ ছিটাচ্ছে জৈবসার। কেউ নালা করছে, কেউ বেড তৈরি করছে আবার কেউবা বসে জিরিয়ে নিচ্ছে। সেই সাথে কেউ ধরেছে মনের সুখে গান। মিলে মিশে যেন সবাই একাকার হয়ে কাজ করছে মাঠে। দেখলে মনে হবে যে শ্রমিকেরা মাঠে কাজ করছে, কিন্তু না তারা কেউ এ জমির শ্রমিক নয়। কেউ টাকার বিনিময়ে কাজ করছে না এখানে। সবাই এসে এখানে স্বপ্ন বুনছে। আধুনিক পদ্ধতিতে উচ্চমূল্য সবজি ক্যাপসিকাম চাষ করার। বাণিজ্যিকভাবে ক্যাপসিকাম চাষ করা লাভজনক হলেও গরিব কৃষকদের জন্য এটি চাষ মোটেও সহজ নয়। ব্যয়বহুল এ চাষকে সহজ করতে তারা একটি সমিতির মাধ্যমে কাজ করছেন। আর উচ্চমূল্যের এ ক্যাপসিকাম চাষে তাদের সহযোগিতা করছে যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্প। কৃষকদের প্রযুক্তি সম্প্রসারণের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় উপকরণ ও আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে এ কৃষি প্রকল্পটি। যার ফলে বেশ আগ্রহ নিয়ে খুশি মনে মিলে মিশে কাজ করছেন কৃষকরা।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের নিয়ামতবাড়ীয়া গ্রাম। স্থানীয় কৃষক তরিকুল ইসলাম জানান, ক্যাপসিকামের চাষ কীভাবে করে সেটি আমরা জানি না। তবে শুনেছি এর জন্য অনেক খরচ করা লাগে। তাই আমরা সমিতির মাধ্যম এবারই প্রথম ক্যাপসিকাম চাষ করছি। আমাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ক্যাপসিকাম চাষের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছে। এবং কৃষি অফিসের লোকজন এসে আমাদের কীভাবে কী করতে হবে, সেটি দেখিয়ে দিচ্ছে। ঐ এলাকার কৃষকরা নিজেদের অর্থায়নে অল্প কিছু কিছু করে সঞ্চয় জমিয়ে “জঙ্গলি আধুনিক কৃষি সমবায় সমিতি” নামের একটি সমিতির মাধ্যমে এ চাষ করছে।
সমিতির সভাপতি ইলিয়াস খান জানান, আমরা ২৯ জন কৃষক মিলে এই সমিতিতে সঞ্চয় করি। সেই টাকা দিয়ে আমরা জমি বর্গা নিয়ে এবার এ ক্যাপসিকামের চাষ শুরু করেছি। উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে আমরা যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় ক্যাপসিকাম চাষের ওপরে ৩ দিনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছি। সেই সাথে প্রকল্প থেকে কিছু সহযোগিতা পেয়েছি। যার মাধ্যমে এ কাজে আমরা বেশি আগ্রহী হয়েছি। যদি এবার ক্যাপসিকাম ভালো হয়, তাহলে আরো বিস্তীর্ণ এলাকায় আমরা ক্যাপসিকামের আবাদ করবো।
স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ক্যাপসিকাম যেহেতু এ এলাকার জন্য নতুন একটি ফসল এবং কৃষকরা এটির চাষ সম্পর্কে ততটা অভিজ্ঞ নয়। আমরা সার্বক্ষণিক তাদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি ভালোভাবে চাষের জন্য। এছাড়া তাদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণও দিচ্ছি এ ক্যাপসিকাম চাষে।
কুমারখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবাশীষ কুমার দাস জানান, ক্যাপপিসাম খুবই পুষ্টিসমৃদ্ধ এবং স্বাস্থ্যকর সবজি। সবজি হিসেবে এবং সালাদ হিসেবেও এটি খাওয়া যায়। এর বাজার মূল্য অন্য সবজির তুলনায় অনেক বেশি। কৃষকরা এটি চাষ করে বেশ লাভবান হতে পারে। গত বছর কুমারখালীতে ক্যাপসিকাম চাষ করে সবুজ নামের এক যুবক বেশ লাভবান হওয়ায় এলাকার অনেক কৃষক এ চাষে আগ্রহ দেখিয়েছেন। আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনীর মাধ্যমে এ ক্যাপসিকাম চাষে উদ্বুদ্ধ করছি।
যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, কৃষকরা যাতে নিরাপদ উপায়ে ক্যাপসিকাম চাষ করতে পারে এজন্য আমরা প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ প্রদান করছি।
তিনি আরো জানান, আমরা বিভিন্ন সবজি ও ফসলের সংগ্রহোত্তর ক্ষতি কমিয়ে মুল্য সংযোজন করার জন্য কৃষক পর্যায়ে বিভিন্ন উপকরণ বিতরণ ও উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে কাজ করছি।
কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুফি মো. রফিকুজ্জামান জানান, বর্তমানে কৃষকরা লাভজনক কৃষির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এখন ক্যাপসিকাম চাষের জন্য উপযুক্ত সময়। তাই কৃষকরা মাঠে জমি তৈরি ও চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছে।