আগস্ট বিপ্লবের পর জনগণের প্রত্যাশা : আমাদের করণীয়
৮ নভেম্বর ২০২৪ ০০:০৫
॥ একেএম রফিকুন্নবী ॥
সুজলা, সুফলা আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। ১৮ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ। সমতলভূমি, পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা, খাল-বিল বিশাল সমুদ্রজুড়ে আমাদের এ বাংলাদেশ। সকালে মানুষের ঘুম ভাঙে আজানের ধ্বনিতে। এমন কোনো গ্রাম নেই, যেখানে মসজিদ নেই। আবার কম হলেও অন্যান্য ধর্মের লোকও দেশে আছে এবং তারা সুখে-শান্তিতে আমাদের সাথে বসবাস করছে।
আমরা জনগণ কী চাই এবং কী আমাদের পাওনা। আমরা সুখে-শান্তিতে দু’মুঠো মাছ-ভাত খেতে চাই, সাধারণ পোশাক পরতে চাই। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার সুযোগ চাই, অসুখের সময় চিকিৎসার ব্যবস্থা চাই। সাধারণ একটি ঘরে বসবাস করতে চাই।
আমরা গ্রাম থেকে রাজধানী ঢাকায় আসি কর্মসংস্থানের জন্য, লেখাপড়ার জন্য, চিকিৎসার জন্য। আমাদের স্বাধীনতার ৫৩ বছর কেটে গেল। কিন্তু বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়ার প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টির শাসনামল আমরা লক্ষ করেছি, কেউ বৈষম্য দূর করতে পারেনি। বৈষম্য দূর হয়নি ভাত-কাপড়, বাসস্থান-শিক্ষা-চিকিৎসার ক্ষেত্রেও।
আমরা এখনো ঠিক করতে পারিনি আমাদের অধিকার কীভাবে সংরক্ষিত হবে। দলবাজ প্রশাসন, দলবাজ স্থানীয় প্রতিনিধি, দলবাজ এমপি-মন্ত্রী; এমনকি প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত। আমাদের সবার সুবিধা নিশ্চিত করে সবার জন্য গ্রহণযোগ্য একটি শাসনতন্ত্র তৈরি করতে পারিনি।
মেধার গুরুত্ব না দিয়ে দলীয় পরিচয়কে প্রাধান্য দিয়ে প্রশাসন, পুলিশ, বিজিবি, সামরিক বাহিনীকে দলীয়করণ করে ফেলেছি।
সর্বশেষ গত ১৬ বছর আওয়ামী লীগ হাসিনার নেতৃত্বে একদলীয় বাকশালের কায়দায় দেশ চালাচ্ছিল। হাসিনার বাবার আদর্শ ছিল বাকশাল। তিনি তার মতো গুম-খুন, হত্যা ও বিনা কারণে জেলে ঢুকিয়ে নির্যাতন, আয়নাঘরের মতো মানবতাবিরোধী কায়দায় মানুষকে দীর্ঘদিন আটকিয়ে রেখে নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়ে কাউকে হত্যা, কাউকে মানসিকভাবে নির্যাতন করে কর্মক্ষমতা হারানোর মতো নিষ্ঠুরতা চালিয়েছে।
বিরোধীদলের লোকদের কল্পিত কারণে সেইফহোমে মিথ্যা সাক্ষীর আস্তানা তৈরি করে, মিথ্যা সাক্ষীর মনগড়া কারণ দেখিয়ে জামায়াতে ইসলামীর ৫ নেতাকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে; মৃত্যু কার্যকর করেছে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার। জামায়াতে ইসলামীর ৫ নেতার মধ্যে দুজন শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, যিনি ৫ বছর দুটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় চালিয়ে প্রমাণ করেছেন সৎ, যোগ্য ও খোদাভীরু লোকেরাই দেশ চালাতে সক্ষম। জামায়াতের আরেকজন মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ তার মন্ত্রণালয় সততা ও যোগ্যতার সাথে চালিয়ে গেছেন। আজ পর্যন্ত তাদের দুজনের ৩টি মন্ত্রণালয়ে কোনো দুর্নীতি আবিষ্কার করতে পারেনি।
জামায়াতের আরেকজন নেতা শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। তিনি ঢাকা শহরে ও তার এলাকায় অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে সততা ও যোগ্যতার পরিচয় রেখে গেছেন।
জামায়াতের আরেক বড় নেতা শহীদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামান একদিকে সাংবাদিক; অন্যদিকে সাংগঠনিক যোগ্যতা দিয়ে দেশের খেদমত করে গেছেন। সর্বাধিক প্রচারিত সাপ্তাহিক সোনার বাংলার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। শহীদ মীর কাসেম আলী বাংলাদেশের অর্থনৈতিক দিগন্তে এক স্মরণীয় নাম। ইসলামী ব্যাংকসহ দেশে আরো বহু প্রতিষ্ঠানে তিনি সততার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। দিগন্ত টেলিভিশন ও নয়া দিগন্ত পত্রিকার মূল চালিকাশক্তি হিসেবে ভূমিকা রেখে গেছেন। তিনি ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ছিলেন। আজ ইসলামী ছাত্রশিবির শুধু দেশেই নয়, গোটা দুনিয়ায় সৎ নেতৃত্বের ভূমিকা রেখে চলেছে।
গোটা দেশে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির সৎ, যোগ্য ও খোদাভীরু নেতৃত্ব সরবরাহ করে দেশের শহর-বন্দর, গ্রাম-জেলা-উপজেলায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, ক্লিনিক, হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে জনগণের সেবা করে যাচ্ছে। জনগণের মধ্যে সৎ মানুষের ভূমিকা রাখতে সক্ষম হচ্ছে।
দেশ গঠনে যুবসমাজকে কাজে লাগাতে হবে। তাদের গুরুত্ব দিতে হবে। আমার নিজ এলাকায় ৩৭ বছর পূর্বে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করে এলাকার মানুষের ছেলেমেয়েদের আদর্শিক মানের নাগরিক তৈরিতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে। এ প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা ছাত্রছাত্রীরা দেশের অনেক ক্ষেত্রে যোগ্যতার পরিচয় দিচ্ছেন। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়ীসহ সব ক্ষেত্রেই সততার স্বাক্ষর রেখে জনগণের সেবা করে যাচ্ছেন। দেশের ৬৪ জেলায়ই একাধিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে দেশের সুনাগরিক তৈরিতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছে।
এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংক, বীমা, কোম্পানি, ওষুধশিল্প, গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় সততার স্বাক্ষর রেখে যোগ্য নাগরিকের দায়িত্ব পালন করছেন। আমরা দেশের সিনিয়র নাগরিক হিসেবে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের এরকম ভূমিকা রাখার জন্য তাদের মোবারকবাদ জানাই। সাথে সাথে বাংলাদেশকে একটি আধুনিক আদর্শ রাষ্ট্র গড়ার কাজে আরো ভূমিকা রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।
গত ১৬ বছর আওয়ামী দুঃশাসনে শেখ হাসিনা দেশকে একটি বাকশালী কায়দায় পুলিশি রাষ্ট্র কায়েম করে বিরোধীদলের লোকদের ব্যবসা-বাণিজ্য, তাদের প্রতিষ্ঠিত স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যাংক-বীমা কোম্পানিগুলো দখল করে তাদের দলীয় লোকদের কামাইয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। লোকেরা বলতো, মাছের রাজা ইলিশ, দেশের রাজা পুলিশ। দেশের অবস্থা এমন করেছিল স্বৈরশাসক হাসিনা বিরোধী রাজনৈতিক দলের অফিস-আদালত বন্ধ করে দিয়েছিল। ব্যবসা-বাণিজ্য দখল করে এলাকাছাড়া করেছিল।
হাসিনা সরকার সীমান্ত রক্ষার কাজকে দুর্বল করতে পিলখানায় বিদ্রোহ নাটক মঞ্চস্থ করে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে। এখানে যেহেতু প্রকাশ্যে দিনে-দুপুরে এ ঘটনা ঘটিয়েছিল, তাই সাক্ষীর কোনো অভাব হবে না। তাই দোষীদের বিচার পুনরায় করতে হবে। স্বৈরাচারী হাসিনা গুলি করে আলেম-ওলামা ও হেফাজতের কর্মীদের হত্যা করেছে। তাদের বিচার সুস্পষ্টভাবে করতে হবে। তাদের খুন-হত্যা, গুম করার সব বিচার করে দায়ীদের ফাঁসির ব্যবস্থা করতে হবে।
হাসিনার পেটোয়া বাহিনী গত ১৬ বছর গ্রাম থেকে শহর-বন্দরে হাট-বাজার দখল করে চুরি, চাঁদাবাজি করে জনগণকে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল। ছাত্রদের যোগ্যতা বাদ দিয়ে কোটার নামে নিজস্ব দলীয় ক্যাডারদের চাকরি দিয়ে পুরো প্রশাসন দলীয়করণ করে বাকশাল প্রশাসন কায়েম করে। আইনকে নিজস্ব গতিতে চলতে না দিয়ে দলীয় বিচারপতি দিয়ে বিচার ব্যবস্থাও ধ্বংস করে দিয়েছিল। ফলে এমপি, মন্ত্রী; এমনকি বিচারপতি পালাতে বাধ্য হয়েছে আগস্ট বিপ্লবের পর। দলীয় লোক বসিয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে পরপর ৩টি নির্বাচন আমরা আর মামুরাই নির্বাচিত হয়ে নির্বাচনী ব্যবস্থা কলঙ্কিত করে ফেলেছিল।
হাসিনা এমনই ফ্যাসিস্টরূপ নিয়েছিল যে, সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের কিছু দাবি-দাওয়াকে তুচ্ছ করে দেখে তাদের রাজাকারের বাচ্চা নাতি-নাতনি বলে তামাশা করে বক্তৃতা দেওয়ায় গোটা দেশের ছাত্রসমাজ ফুঁসে ওঠে। নিজেরা রাজাকারের স্লোগান দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব জায়গা থেকে হাসিনার পেটোয়া ছাত্রলীগের পাণ্ডাদের পিটিয়ে ছাত্রীদের কানে ধরে উঠবস করিয়ে হলছাড়া করেছে।
ইতোমধ্যে দেশপ্রেমিক সেনাদের মধ্যেও দেশপ্রেম জেগে ওঠে। পুলিশের কতিপয় সদস্যের দেশপ্রেম না থাকলেও সাধারণ সেনাদের দেশপ্রেম খাটো হয়নি। তারা বড় অফিসারদের সাফ জানিয়ে দেয় জনগণের মুখোমুখি হতে পারবে না বা জনগণকে গুলি করতে পারবে না। সেনাপ্রধান হাসিনাকে রক্ষা করে ৪৫ মিনিট সময় দিয়ে মোদির দেশে পাঠিয়ে দেন। ৫ আগস্ট দুপুরের দিকে খবর জানার পর গোটা দেশ আনন্দে-উল্লাসে ফেটে পড়ে। মিছিল আর মিছিলে দেশ যেন নতুন স্বাধীনতা লাভ করে।
যাদের জন্য দেশ নতুন স্বাধীন হলো, তাদের শহীদের জন্য আমরা কায়মনোবাক্যে দোয়া করি- মহান আল্লাহ যেন তাদের শহীদের দরজা দান করেন। যারা আহত হয়েছেন, পঙ্গুত্ব বরণ করে অচলাবস্থায় ঘরে অবস্থান করছেন, তাদের জন্য আমরা দোয়া করব- যেন তাদের ধৈর্য ধরার তাওফিক দান করেন। সরকারের কাছে আরজ শহীদ ও আহত পরিবারকে স্থায়ীভাবে চলার ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
মহান আল্লাহ যাদের কুরবানি কবুল করেছেন, তাদের মধ্যে কেয়ারটেকার সরকারের রূপকার অধ্যাক গোলাম আযম রহ., মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী রহ., মাওলানা আব্দুস সুবহান রাহ.সহ আরো অনেক দেশবরেণ্য ওলামায়ে কেরাম- যাদের জেলে নির্যাতন করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে ওই স্বৈরাচারী হাসিনা।
আমরা সকল ছাত্র-জনতা, আলেম-ওলামাসহ সাধারণ জনতা যারা আগস্ট বিপ্লবে সহযোগিতা করেছেন, পুরুষ-মহিলা আমজনতার অংশগ্রহণকারী আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি। মহান আল্লাহ যেন সবার নেক চাওয়া পূরণ করে দেন।
আগস্ট বিপ্লবের পর দেশ-বিদেশ থেকে মানুষের চাওয়ার পরিমাণ বেড়ে গেছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে মহান আল্লাহ তায়ালা ছাত্র-জনতাকে দিয়ে তার অসীম ক্ষমতাবলে আবাবিল পাখির আদলে নাস্তানাবুদ করে দেশ থেকে পালানোর ব্যবস্থা করে দিয়ে বাংলাদেশকে একটি স্বৈরাচারী শাসনের অবসান করেছেন।
আমরা এ বাংলাদেশকে দুনিয়ার বুকে একটি সুখী-সমৃদ্ধশালী দেশ বানাতে চাই। আমাদের উদ্দেশ করে জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান জনগণের প্রত্যাশার কথা বলতে গিয়ে জানিয়েছেন, আমরা বাংলাদেশের জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশ গড়ে তুলব শান্তির নীড় হিসেবে।
শুরুতেই তিনি আমাদের সৎ, যোগ্য হিসেবে গড়ে ওঠার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রথমেই তিনি আমাদের জীবন থেকে মিথ্যার অবসান ঘটাতে বলেছেন। সত্যই হবে আমাদের অবলম্বন। চলনে-বলনে, ঘরে-বাইরে, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে মিথ্যা বর্জন করে সত্যের ওপর বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। মিথ্যা বর্জন করে চললে ঘর ভালো হবে, সমাজ ভালো হবে, দেশ ভালো হবে, ইনশাআল্লাহ। মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ হবে। মহান আল্লাহর বরকত পেতে আমাদের কোনো অসুবিধা হবে না।
আমাদের অন্তরে হিংসা-বিদ্বেষ, হীনম্মন্যতা পরিহার করে জনগণের সাথে মিশতে হবে। তাদের সমাজ উন্নয়নে কাজে লাগাতে হবে। ছোট-বড়, ধনী-গরিব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত সবাইকেই যার যার উপযোগ্য কাজ দিয়ে তাদের সমাজ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখার সুযোগ দিতে হবে।
সমাজ বিনির্মাণে আমাদের সমাজ থেকে গীবতের কালচার দূরীভূত করতে হবে। আমরা নিজেরা জেনেশুনে কারও গীবত করব না। কারো মুখে গীবতের গন্ধ পেলে তাকে স্মরণ করিয়ে দিব- ভাই কথা গীবতের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে, তাই তুমিও বলো না, আমাকেও শুনিও না। আমার মধ্যে যে সব খারাপ গুণ আছে, তা পরিবর্তন করেই অন্যকে সেই ভুল ধরিয়ে দিব। তিনি যেন আপনার ভুল সংশোধন দেখে তিনিও ভুল থেকে নিজে ও সমাজকে পরিবর্তন করতে পারেন।
সমাজকে ভালো করতে হলে সবাইকেই ত্রুটিমুক্ত হতে হবে। একে অপরকে ভালোর দিকে ডাকতে হবে। অন্যকে ভালোর দিকে ডাকতে গিয়ে ভয় পাওয়া যাবে না। মহান আল্লাহকে সাক্ষী রেখে সাহস করে অন্যের ভুল ধরিয়ে দিতে হবে। তার জন্য দোয়াও করতে হবে- যাতে করে আমরা সবাই ভুল, অন্যায় থেকে সমাজকে মুক্ত করতে পারি।
সব দল-মত-ধর্মের লোকদেরও আমরা সমাজ বিপ্লবে কাজে লাগাতে চাই। আওয়ামী ফ্যাসিবাদীরা যেভাবে দেশে লুটতরাজ, চাঁদাবাজি করে দেশের মানুষকে নাস্তানাবুদ করেছে, আমরা বিপ্লবের পর নিজেরা খারাপ কাজ বর্জন করব। অন্যকেও চাঁদাবাজি, লুটতরাজ থেকে উদ্ধার করব। আমরা যেন আবার ফ্যাসিস্ট হয়ে না উঠি।
ইতোমধ্যেই কিছু ঘটনা পত্র-পত্রিকা, মিডিয়ায় এসেছে। দলের ওপর থেকেও সতর্ক করা হয়েছে। অনেককেই বহিষ্কার করা হয়েছে। আগস্ট বিপ্লবের পর আমরা যারা বিপ্লবের সাথে জড়িত ছিলাম। আমাদের অনেক সহযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন, পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। আমাদের দায়িত্ব ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া বিজয় অর্থবহ করতে চাঁদাবাজি, লুটতরাজ সমাজ থেকে ধুয়ে-মুছে ফেলা। প্রয়োজনে জামায়াত, বিএনপিসহ সব দলের লোকদের নিয়ে লুটতরাজ প্রতিরোধ কমিটি করে সমাজকে এগিয়ে নিতে হবে। প্রয়োজনে প্রশাসনকেও কাজে লাগাতে হবে।
বর্তমান অস্থায়ী সরকারকে তাদের ভালো কাজগুলোকে এগিয়ে নেয়ার ব্যাপারে সহযোগিতা করতে হবে। এ সরকারের ব্যর্থতা দেশের ব্যর্থতায় গড়াবে। তাই সজাগ থাকতে হবে। এখন সবচেয়ে বড় কাজ নির্বাচন কমিশন গঠন করা। সৎ, যোগ্য, দলবাজহীন লোক দিয়ে নির্বাচন কমিশন করে; সুষ্ঠু নির্বাচন করে ভালো লোকের সরকার গঠন করতে পারলেই জনগণের প্রত্যাশা পূরণ সম্ভব হবে, ইনশাআল্লাহ।
লেখক : সাবেক সিনেট সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ই-মেইল : [email protected]