শুল্কছাড়েও নিত্যপণ্যে সুফল পাচ্ছে না সাধারণ ক্রেতা


৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ১২:০০

উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে নজরদারি করতে হবে
॥ সাইদুর রহমান রুমী ॥
ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ভাঙতে অন্তর্বর্তী সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও বিভিন্ন রূপে ফিরে সক্রিয় রয়েছে তারা। তাই স্বস্তি ফিরছে না ভোক্তাদের। বাজার স্থিতিশীল রাখতে চাল, আলু, পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল ও ডিম আমদানিতে শুল্কছাড়, নিত্যপণ্যের বাজার পরিস্থিতি ও সরবরাহ ব্যবস্থা পর্যালোচনা করতে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন, টিসিবি ও ওএমএস এবং খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিবিষয়ক নীতিমালা যুগোপযোগী করাসহ জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। তারপরও খুচরা এবং পাইকারি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ভোক্তাদের জিম্মি করে বেশকিছু নিত্যপণ্যের দাম বাড়াতে তৎপর।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে অন্তর্বর্তী সরকার নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে চাল, খেজুর, তেল, চিনি, পেঁয়াজ, আলু ও ডিম আমদানিতে শুল্কছাড় দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু ডিমের দাম কমলেও বাকি ৬ পণ্যের দাম কমেনি আশানুরূপভাবে। অসাধু আওয়ামী সিন্ডিকেট বিভিন্ন রূপে ফিরে আসছে। গত ১৬ বছর যারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করেছে, মূলত তাদের নেপথ্য কারসাজিতে এখনো পণ্যের দাম বাড়ছে। পরিস্থিতি এমনÑ মাসের ব্যবধানে ভোজ্যতেল লিটারে সর্বোচ্চ ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে। হিমাগারের ৩০ টাকা কেজি দরের আলু ভোক্তা কিনছেন ৮০ টাকায়। ৪৮-৫২ টাকার পেঁয়াজ খুচরায় এসে ১০০-১২০ টাকা হয়ে যাচ্ছে। আর চাল কিনতে কেজিতে ক্রেতার বাড়তি গুনতে হচ্ছে ২-৬ টাকা। পাশাপাশি অন্যান্য পণ্যের দামও কমছেই না। এমনিভাবে প্রতি বছর ভোক্তাকে জিম্মি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বাজারে নিয়ন্ত্রণ আনতে গত ৭ অক্টোবর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজার ও সরবরাহ পরিস্থিতি তদারকি এবং পর্যালোচনার জন্য জেলা পর্যায়ে ১০ সদস্যের বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া নিয়মিত বাজারে অভিযান চালাচ্ছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থা।
ভোজ্যতেল
বাজারে ভোজ্যতেলের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে গত ১৭ অক্টোবর পরিশোধিত সয়াবিন তেল ও পরিশোধিত পাম তেল সরবরাহের ক্ষেত্রে স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে আরোপিত ১৫ শতাংশ এবং স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে আরোপিত ৫ শতাংশ মূসক অব্যাহতি দিয়েছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এছাড়া অপরিশোধিত সয়াবিন তেল, অপরিশোধিত পাম তেল ও পরিশোধিত পাম তেলসহ অন্যান্য পরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানির ক্ষেত্রে মূসক ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছিল। এত সুবিধার পরও দাম নিয়ন্ত্রণের বদলে উল্টো বাড়তে শুরু করে। ফলে আবার গত ১৯ নভেম্বর ভোজ্যতেলের ওপর প্রযোজ্য আমদানি পর্যায়ের মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়। এতে বর্তমানে দাম কিছুটা কমলেও তা বিক্রি হচ্ছে শুল্ক হ্রাসের আগের চেয়ে বেশি দামে। বর্তমানে বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৬৫-১৬৮ টাকা, আর খোলা পাম তেল ১৫৭-১৬০ টাকা। এর আগে দুই দফা শুল্ক কমানোর আগে যথাক্রমে বিক্রি হয়েছিল ১৫৬ টাকা ও ১৪৬ টাকায়। ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ সুবিধা কার্যকর থাকবে। ব্যবসায়ীদের এতগুলো সুযোগ দেয়ার পরও আন্তর্জাতিক বাজারের কথা বলে দাম বাড়াচ্ছে দফায় দফায় দাম বাড়াচ্ছে হাতে গুটিকয়েক আমদানিকারক এবং তাদের মূল পাইকাররা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভোজ্যতেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে চার থেকে পাঁচটি কোম্পানি। তাদের কারসাজিতে এখনো জিম্মি ভোক্তা। দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে কাওরানবাজারে কথা হয় বিভিন্ন তেল কোম্পানির ডিলারদের সঙ্গে। তারা জানান, কোম্পানি থেকে আমাদের তেল সরবরাহ করছে না। কম করে সয়াবিন তেল সরবরাহ করছে। যেখানে একজন ডিলারের চাহিদা ১০০ কার্টন, সেখানে কোম্পানি ২০-৩০ কার্টন তেল দিচ্ছে। এ কারণে বাজারে সরবরাহ কমাতে হচ্ছে। খুচরা পর্যায়ে বোতলজাত তেলের সংকট দেখা দিচ্ছে।
আলু
গত ৫ সেপ্টেম্বর এক প্রজ্ঞাপনে এনবিআর আলু আমদানিতে বিদ্যমান ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করে। একই সঙ্গে আলু আমদানিতে যে ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আছে, তা-ও সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে। আলু আমদানিতে এ শুল্ক সুবিধা বহাল ছিল ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত নতুন আলু ভালোভাবে ওঠা পর্যন্ত। এতে ব্যবসায়ীরা বিরাট সুবিধা পেলেও বাজারে এর তেমন প্রভাব নেই। কেজিপ্রতি মাত্র ৫ টাকা কমলেও বর্তমানে আবার দাম বেড়ে সে আলু প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৮০ টাকা। বাজারে নতুন আলু উঠতে শুরু করলেও তার প্রভাব পড়েনি দামে। ভারতের সাথে বিরূপ পরিস্থিতির ধুয়া তুলে নতুন আলু দামও কমানো হচ্ছে না। নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজিতে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের ভিত্তিতে কম শুল্কের আলু দেশের বাজারে এসেছে। পাশাপাশি দেশীয় আলু বাজারে ভরপুর। তারপরও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট কমাচ্ছে না আলুর দাম। সূত্র জানায়, ভারত থেকে আলু আমদানি করতে কেজিপ্রতি খরচ পড়ে ২১ থেকে ৩০ টাকা ৬০ পয়সা। পরিবহন খরচ ও অন্যান্য খরচ এবং লাভসহ এ আলু ২৫ থেকে ২৮ টাকা বিক্রির কথা। আর পাইকারি হয়ে খুচরা পর্যায়ে একই আলু ভোক্তা পর্যায়ে ৩০-৩৫ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু সেই আলু ক্রেতা ৭৫ টাকা কেজি দরে কিনছেন। আর এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে আমদানিকারক ও ঢাকার শ্যামবাজারের আড়তদার সিন্ডিকেট। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি কেজি ৪০ টাকা দরের আলু হিমাগার পর্যায় থেকে দাম বাড়িয়ে ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। সেই আলু পাইকারি বাজার হয়ে খুচরা পর্যায়ে ৭৫-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানায়, কোল্ডস্টোরেজে যারা আলু সংরক্ষণ করছেন, তারা এখন দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। যে কারণে আলুর দাম বেশি বেড়েছে। এখানে গুটিকয়েক ব্যবসায়ী আছেন, যারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। সূত্র জানায়, সরকারের তদারকিতে সিন্ডিকেট হোতার নাম ফাঁস হয়ে যাবে বলে এখন এ চক্রের সদস্যরা হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করছে বেনামে। যাতে তাদের নাম প্রকাশ্যে চলে না আসে। মূলত তারাই আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। তাদের কারসাজিতে হিমাগার পর্যায়ে দাম বাড়ালে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম বেড়ে যায়।
পেঁয়াজ
গত ৫ সেপ্টেম্বর এক প্রজ্ঞাপনে সরকার পেঁয়াজ আমদানিতে বিদ্যমান ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করে। এতেও বাজার নিয়ন্ত্রণে না এলে গত ৬ নভেম্বর পেঁয়াজ আমদানিতেও শুল্ককর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে এনবিআর। এ সুবিধা ২০২৫ সালের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বহাল থাকবে। তবে বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা শুল্ক কমানেরা সব সুবিধা নিয়েও দাম কমাচ্ছে না। বর্তমানে খুচরায় প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১১৫-১২০ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯৫-১০০ টাকায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কমিশন বাণিজ্যের নামে বাড়তি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করছে পুরনো সেই সিন্ডিকেট চক্র। আমদানি করা কেজিপ্রতি ৪৮ টাকার পেঁয়াজ খরচ ধরে ৫১ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু সেই পেঁয়াজ কমিশন বাণিজ্যের নামে আড়তে পাঠানো হচ্ছে। আড়ত পর্যায়ে কেজিপ্রতি ১০৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। আর আড়ত থেকে পাইকারি ও খুচরা বাজারে আসছে। খুচরায় বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১১৫-১২০ টাকা। বিক্রেতারা বলছেন, পেঁয়াজের কালি ওঠায় এবং আমদানি করা পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ায় দাম কমতে শুরু করেছে পণ্যটির। তবে নতুন দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসার আগ পর্যন্ত দাম ১০০ টাকার নিচে নামার সম্ভাবনা কম।
চাল
দেশের চালের বাজারে স্বস্তি ফেরাতে গত ২০ অক্টোবর চালের ওপর বিদ্যমান আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ, বিদ্যমান রেগুলেটরি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ এবং বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে বর্তমান সরকার। এতে দাম না কমলে গত ৩১ অক্টোবর চাল আমদানিতেও শুল্ক পুরোপুরি তুলে নিয়েছে সরকার। বর্তমানে বাজারে আসতে শুরু করেছে নতুন পাইজাম ও আটাশ চাল। তবে পর্যাপ্ত পরিমাণে না আসায় বাজারে তেমন প্রভাব পড়েনি, আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে চাল। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট ৭০-৭২ টাকা, আটাইশ ৬০-৬২ টাকা, নাজিরশাইল ৭৬-৮২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর কারওয়ানবাজারের আল্লাহর দান রাইছ এজেন্সির বিক্রেতা জানান, নতুন করে আর না বাড়লেও চালের দাম কমেনি। বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট ৭০-৭২ টাকা, আটাশ ৬০-৬২, নাজিরশাইল ৭৬-৮২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে নতুন পাইজাম ও আটাশ চাল বাজারে আসতে শুরু করেছে। সামনে দাম কমতে পারে হয়ত।
চিনি
গত ৮ অক্টোবর পরিশোধিত ও অপরিশোধিত চিনির ওপর বিদ্যমান নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করেছে এনবিআর। নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৫০ শতাংশ হ্রাস করা সত্ত্বেও বাজারে পরিশোধিত চিনির সরবরাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এক সপ্তাহের মধ্যে পুনরায় পরিশোধিত চিনির ওপর বিদ্যমান আমদানি শুল্ক প্রতি মেট্রিক টন ৬ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে প্রতি মেট্রিক টন ৪ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করে।
এতে বাজারে কিছুটা কমতে শুরু করেছে দাম। বর্তমানে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১২৫-১৩০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৩০-১৩৫ টাকা।
ডিম
ডিমের অস্থির বাজার নিয়ন্ত্রণে গত ১৭ সেপ্টেম্বর আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করে দেয় সরকার। এর পাশাপাশি ঝটিকা অভিযান, সভা ও ডিম আমদানিসহ নানা নাটকীয়তার পর স্বস্তি ফিরেছে ডিমের বাজারে। বিক্রি হচ্ছে সরকার নির্ধারিত দামে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, উৎপাদক পর্যায় থেকে কম দামে ডিম কিনতে পারলে পাইকারি ও খুচরা বাজারেও নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করা সম্ভব হবে। বর্তমানে প্রতি ডজন লাল ডিম খুচরা পর্যায়ে ১৪৪-১৪৫ টাকা ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা।
খেজুর
পবিত্র রমজান মাসেই দেশে খেজুরের বেশি চাহিদা থাকে। এটিকে পুঁজি করে ফ্যাসিস্ট হাসিনার সময় বিগত বছরগুলোয় খেজুরের অসহনীয় দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছিল, যাতে সাধারণ রোজাদারগণ খেজুর কিনতে পারেনি। তবে এবার রোজার আগেই সরকার আসন্ন রমজানে দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে খেজুর আমদানিতে শুল্ক ও অগ্রিম কর কমানোর পাশাপাশি আগাম কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, খেজুর আমদানির ওপর বিদ্যমান কাস্টমস ডিউটি ২৫ শতাংশ হতে কমিয়ে ১৫ শতাংশ, অগ্রিম আয়কর ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ এবং বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে। অর্থাৎ মোট করভার ৬৩ দশমিক ৬০ শতাংশ হতে কমিয়ে ৩৮ দশমিক ৭০ শতাংশ করা হয়েছে। তবে ভোক্তারা বলছেন, শুধু আমদানি শুল্ক হ্রাস বা বিদেশ থেকে পণ্য আনলেই হবে না, দাম নিয়ন্ত্রণ করতে কঠোর বাজার মনিটরিংও জরুরি যাতে অসাধু ব্যবসায়ীরা কোনো কারসাজি করতে না পারে।
কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা
ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাব বলছে, ব্যবসায়ীদের মানসিকতার পরিবর্তন না হলে শুল্ক কমানোর কোনো উদ্যোগই কাজে আসবে না। ক্যাব সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, সরকার পতনের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়ীরা পোশাক বদলেছে, কিন্তু তাদের আগের চরিত্র বদলায়নি। তারা কারসাজি করে যাচ্ছে। কারওয়ানবাজারের পাইকারি বাজারের তুলনায় কাঁচা শাকসবজি মহল্লার দোকানেও দাম প্রায় দ্বিগুণ। অর্থাৎ খুচরা ব্যবসায়ীদেরও এখন বিরাট সিন্ডিকেট। পাইকারি পর্যায়ে ব্যাপক অভিযানে দাম কিছুটা কমলেও খুচরা ব্যবসায়ীরা গলাকাটা লাভ করছে। খুচরা বাজারে কোনো অভিযান বা জবাবদিহি না থাকায় তারা ইচ্ছেমতো দাম রাখছে সাধারণ ক্রেতা হতে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, রাজধানীর সব এলাকায় পাইকারি বাজার এবং মহল্লার খুচরা বাজারের দামের পার্থক্য প্রায় একই রকম। অর্থাৎ মহানগরীর সব খুচরা ব্যবসায়ীর মধ্যে একটি অঘোষিত সমঝোতা রয়েছে; যার মাধ্যমে সব পণ্যের দাম নির্ধারিত হয়। একাধিক খুচরা ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, প্রতিদিন ভোরে পাইকারি বাজারে কেনাবেচার সময়ই খুচরা বাজারের দাম নির্ধারণ হয়ে যায়। মোবাইল ফোন অথবা অন্য কোনো মাধ্যমে সব খুচরা ব্যবসায়ী এ দাম সম্পর্কে অবহিত হয়ে যান এবং প্রায় একই দামে সব এলাকায় পণ্য বিক্রি করেন।
বিশ্লেষকরা জানান, বাজার সিন্ডিকেট বলতে আগে বড় ব্যবসায়ীদেরই বোঝানো হতো। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বড় বড় আমদানিকারক কিংবা পাইকারি ব্যবসায়ীরা সমঝোতা করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে থাকেন। তবে বর্তমানে খুচরা বাজারে সিন্ডিকেটের আকার বেশ বড়। হাজার হাজার সদস্য নিয়ে এমন সিন্ডিকেট তৈরি করা হয়। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এটি অনেক সহজ হয়ে গেছে। এভাবেই বাজার সিন্ডিকেটের বিস্তৃতি ঘটেছে তৃণমূল পর্যন্ত। সবচেয়ে বেশি দাম বাড়ানোর ঘটনাটি ঘটছে এ তৃণমূল সিন্ডিকেটে। জানা যায়, পণ্যের দাম কমাতে সরকার কঠোর অবস্থানে না গিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সমোঝতার দিকে হাঁটছে। বড় কয়েক আমদানিকারকের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মীর্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত একটি নজরদারি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে বলে মনে করেন তিনি।