জাতি আগস্ট বিপ্লবের শহীদ ও আহতদের প্রতি কৃতজ্ঞ
২ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:১৭
॥ একেএম রফিকুন্নবী ॥
স্বৈরাচারী হাসিনার দীর্ঘদিনের দুঃশাসন থেকে জাতি ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে মুক্তি পেয়েছে। মানুষের চোখে মুক্তির যেমন দিশা দেখা যাচ্ছে, তেমনি আবার যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আবার শহীদদের পরিবার ভবিষ্যৎ চলার পথও খুঁজে পাচ্ছে না। যারা আহত হয়েছেন, তাদের চিকিৎসার যেমন সঠিক নির্দেশনা নেই, আবার ভবিষ্যতে তাদের চলার পথও সুগম নয়।
এ পর্যন্ত প্রায় ১৬শ’ তরুণ-যুবক শহীদদের খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া কত যে লাশ গুম হয়েছে, আমাদের জানা নেই। আপনাদের জানা থাকার কথা, আশুলিয়ায় একটি ভ্যানভর্তি লাশ পুড়িয়ে দেয়ার খবর এসেছে। ভিডিও ফুটেজেও লক্ষ করা গেছে, লাশের ভ্যান আগুনে পুড়ছে। অন্যদিকে প্রায় ৩২ হাজার ছাত্র-জনতা আহত হয়েছেন। চিকিৎসার জন্য তারা কাতরাচ্ছেন।
শুধুমাত্র শেরেবাংলা পঙ্গু হাসপাতালেই প্রায় ৮০০ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এখনো ৫৯ জন চিকিৎসাধীন আছেন। এভাবে শেরেবাংলা চক্ষু হাসপাতালে ৭০০ জন চোখের বিভিন্ন চিকিৎসা নিয়েছেন। আরো ৫৫০ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এখনো ৪০ জন যুবক চোখের চিকিৎসা নিচ্ছেন। ঢাকা মেডিকেলে এখন পর্যন্ত ২৭০০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এখনো কিছু রোগী ভর্তি অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এদের মধ্যে অনেকের চোখের মধ্যে গুলি রয়ে গেছে। ঐ চোখ আর তার ভালো হবে না। আবার অনেকের পায়ে গুলি লেগেছে। পা কেটে ফেলতে হয়েছে। কোনোদিনই আর সে স্বাভাবিক অবস্থায় হাঁটতে পারবে না। আমাদের টাকায় বেতন পাওয়া পুলিশ ছাত্র-জনতার ওপর প্রকাশ্যে গুলি করে চোখ নষ্ট করে দিয়েছে। কারো হাত, কারো পা, কারো মাথায় গুলি করে শহীদ করেছে। কেউবা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দিনযাপন করছে, কেউবা নিজের বাড়িতেই চিকিৎসার অভাবে সময় কাটাচ্ছে।
আগস্ট বিপ্লবের ফল ভোগ করছে ১৮ কোটি মানুষ। আমাদের দায়িত্ব নিহত-আহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো। নিহতদের পরিবারকে খুঁজে বের করে তাদের পরিবারকে এককালীন ভালো সাপোর্ট দিতে হবে। অন্যদিকে ঐ পরিবারগুলোকে চিহ্নিত করে তাদের মধ্য থেকে কাউকে সরকারি বা বেসরকারি সংস্থায় চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে। যারা আহত আছে, তাদের খুঁজে বের করতে হবে। তাদের চিকিৎসার সুব্যবস্থা করতে হবে। নিহত ও আহতদের তালিকা করার এখনো কোনো নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান পাওয়া যায়নি। আমার চিন্তিত মতামত হলো : ১. স্বাস্থ্য উপদেষ্টার নেতৃত্বে শক্তিশালী কমিটি করতে হবে, ছাত্র সমন্বয়কদের যুক্ত করে। ২. জাতীয়ভাবে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে সার্কুলার দিতে হবে প্রত্যেক উপজেলায়। উপজেলা থেকে ইউএনও প্রত্যেক ইউনিয়নের প্রতিনিধিকে ডেকে মিটিং করে তাদের ৭ দিনের সময় দিয়ে সার্কুলার দিতে হবে। তাদের গ্রামগুলো থেকে কয়জন শহীদ ও আহত হয়েছেন নাম-ঠিকানাসহ জানাতে হবে টেলিফোন নম্বরসহ। ৩. উপজেলাগুলোকে মনিটরিং করবেন জেলা প্রশাসক। জেলা প্রশাসক ১৫ দিনের মধ্যে উপজেলা কর্মকর্তাদের থেকে শহীদ ও আহতদের তালিকা নিয়ে সঠিকতা যাচাই করে সরাসরি ঢাকায় স্বাস্থ্য দফতরে পাঠাবেন। ৪. রাজধানীর স্বাস্থ্য দফতর থেকে গোটা দেশের আহতদের ধরন নির্ধারণ করে চোখের চিকিৎসার জন্য সরকারি ও বেসরকারি চোখের হাসপাতালের তালিকা করে উপজেলা থেকে জেলা বিভাগের এবং কেন্দ্রীয় রাজধানীর হাসপাতালগুলোকে ভাগ করে দিতে হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং করতে হবে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে। এ কাজ করলে আশা করা যায় আগস্ট বিপ্লবের কোনো আহত ব্যক্তি চিকিৎসার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে না। কোনো ব্যক্তি গ্রামে থাকুক বা শহরে থাকুক, তাদের খোঁজ পাওয়া যাবেই। এভাবে আমরা বিপ্লবের আহতদের চিকিৎসার নিশ্চয়তা দিতে পারি।
নিহতদের ব্যাপারে আগেই বলেছি, তাদের আহতদের মতো লিস্ট করে তাদের পরিবারের কোনো ব্যক্তিকে সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে। এ ব্যাপারে গ্রাম থেকে শহরে বিভিন্ন এমপিওভুক্ত স্কুল ও কলেজেও নিহতদের প্রতিনিধিদের চাকরির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। মনে রাখতে হবেÑ আগস্ট বিপ্লবের ফলভোগকারীদের আমাদের জাতীয়ভাবেই দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং কোনো বিকল্প নেই। আহত ও নিহতদের তালিকা করে তাদের ব্যাপারে সুষ্ঠু পদক্ষেপ নিতে পারলেই তাদের প্রতি দায়িত্ব পালন হবে বলে আমি মনে করি।
হাসিনা সরকারের ঋণ অনেক বেশি হয়েছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আনুকূল্যে মোদির দেশ থেকে বাংলাদেশে আসার সুযোগ পেয়েছিলেন। তিনি হাসিনাকে কৃপা করেছিলেন, তা হাসিনা মূল্য দিতে ব্যর্থ হয়েছে। শুধু তাই নয়, হাসিনা শেখ মুজিবের মৃত্যুর সাথেও জিয়াকে ট্যাগ লাগিয়েছে। এই হাসিনা শহীদ জিয়াউর রহমানকে পাকিস্তানের চর বলতেও লজ্জা করেনি। অথচ জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক, একজন মুক্তিযোদ্ধা। হাসিনা বেগম জিয়াকে ঘরছাড়া করেছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ করে হাসিনার বিচারের আওতায় আনতে আহ্বান করছি।
এইমাত্র হাসিনার বড় পাপের ঘটনা আমাদেরকে স্মরণ করে দিয়ে গেল ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের বর্বর ঘটনা। সেদিন দিনে-দুপুরে পল্টনের সড়কে প্রকাশ্যে হাসিনার সরাসরি নির্দেশে লগি-বৈঠা দিয়ে শিবির-জামায়াতের লোকদের পিটিয়ে মেরে তাদের লাশের ওপর নাচানাচি করা দেশের মানুষ দেখেছে। সারা দুনিয়ার লোক দেখেছে। সাক্ষীর অভাব নেই। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অনতিবিলম্বে হত্যাকাণ্ডগুলোর সঠিক বিচারের পদক্ষেপ নিতে হবে। তাড়াহুড়ো যেমন চাই না, আবার বিলম্বও করা যাবে না। বিচার বিলম্ব হলে বিচার না হওয়ার শামিল হয়ে যায়।
আগস্ট বিপ্লবের শ্রেষ্ঠ নায়ক রংপুরের আবু সাঈদ দিনে-দুপুরে প্রকাশ্যে বুক ফুলিয়ে আন্দোলনে শরিক হওয়ায় পুলিশ তাকে গুলি করে রক্ত ঝরায়। তার প্রাণ যায়। তিনি ছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র। কয়েকদিন পূর্বে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের তালিকায় তার নাম পাওয়া যায়। ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা, আইজিসহ অনেকেই আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেছেন। বাবা-মার সাথে দেখা করে সান্ত্বনা দিয়েছেন। কিন্তু আবু সাঈদকে কি ফিরিয়ে দিতে পারবেন? পারবেন না। এ রকম প্রায় ১৬শ’ তাজা প্রাণ এ হাসিনা ঘোষণা দিয়ে হত্যা করে ক্ষমতা রক্ষার চেষ্টা করেছে। লাভ হয়নি। মহান আল্লাহর অশেষ কৃপায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।
আমরা দেশে এনে সুষ্ঠু বিচার করে হাসিনাকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে প্রকাশ্যে ফাঁসি দেয়ার আবেদন করছি।
হাসিনা শুধু এ ১৬ বছরেই শহর-বন্দরে মানুষ হত্যা করেনি। সে ক্ষমতায় এসেই আমাদের চৌকস ৫৭ জন সেনা অফিসারকে হত্যা করেছে। কয়েক হাজার সীমান্তরক্ষীকে বিনা দোষে শাস্তি দিয়েছে। ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্র শাপলা চত্বরে হাজার হাজার আলেম-ওলামাকে পাখির মতো হত্যা করেছে। কোনো বিচার হয়নি। এভাবে পল্টনে লগি-বৈঠার হত্যাকাণ্ড, হেফাজতের হত্যাকাণ্ড, বিডিআর হত্যাকাণ্ডসহ আগস্ট বিপ্লবের ছাত্র-জনতা হত্যার দায়ে হাসিনাকে বিচারের আওতায় এনে অনতিবিলম্বে ফাঁসি দিতে হবে।
হাসিনার ফাঁসির জন্য আরো যে বিষয়গুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। বিচারপতি খায়রুল হককে দিয়ে দেশের নির্বাচনব্যবস্থা ভেঙে দিয়েছে। ২০১৪, ২০১৮, ২০২৪ সালে নির্বাচনের নামে প্রহসন করে দেশের ১৮ কোটি মানুষকে ধোঁকা দেয়া হয়েছে। নির্বাচনের নামে কোটি কোট টাকা অপচয় করা হয়েছে। সবকিছুর জন্যই হাসিনা সরাসরি জড়িত। তাই তাকে দৃষ্টান্তমূলক সাজার আওতায় এনে ১৮ কোটি মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা প্রতিফলন ঘটাতে হবে।
বাংলাদেশের মানুষ আর ঠকতে চায় না। হাসিনার কারণেই গোটা দেশে ‘সিন্ডিকেট’ করে মানুষের বিড়ম্বনা বাড়ানো হয়েছে। একদিকে কৃষক বা উৎপাদনকারীরা তাদের উৎপাদিত দ্রব্যের দাম পাচ্ছেন না; অন্যদিকে সিন্ডিকেটওয়ালারা কোনো টাকার বিনিয়োগ ছাড়াই জিনিসপত্রের দাম কয়েকগুণ বাড়ানোর কাজ অব্যাহত রেখেছে। ১০ টাকার ডিম ১৫ টাকায়ও কিনতে হয়েছে। আবার কেজিপ্রতি মরিচের দাম ১০০ টাকার বদলে ৪৮০ টাকায় কিনতে হয়েছে। জনগণের নাভিশ^াস উঠেছে বাজার করতে গিয়ে। এ সিন্ডিকেট ভাঙতেই হবে। বাণিজ্য উপদেষ্টা বিশেষ পদক্ষেপ নিয়ে আগস্ট বিপ্লবের ফল হিসেবে আপনারা জনগণের পাশে দাঁড়ান। জনগণকে এ সিন্ডিকটে থেকে উদ্ধার করুন।
জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির ইতোমধ্যে আগস্ট বিপ্লবের শহীদ ও আহতদের সাহায্যের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। তাদের খুঁজে বের করে আর্থিক সাহায্য এবং কর্মসংস্থানের কাজ করে যাচ্ছে। ফ্যাসিস্টরা ছাড়া সব দল-মতের লোকদের এ কাজে অংশগ্রহণের জোর আহ্বান জানাচ্ছি। শহীদ ও আহতদের সাহায্য করা আমাদের জাতীয় দায়িত্ব। এ দায়িত্বের কোনো অবহেলা করা যাবে না। একদিকে শহীদদের শাহাদাত কবুলের জন্য দোয়া করতে হবে। তাদের পরিবারের জন্য সহানুভূতি দেখাতে হবে। আহতদের খুঁজে বের করে স্বেচ্ছাসেবীদের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। স্থানীয় ও শহরের হাসপাতালগুলোয় তাদের পাঠাতে হবে। এমনকি আমাদের সোনার বাংলা অফিসে যোগাযোগ করলেও আমরা তাদের সহযোগিতা করব, ইনশাআল্লাহ। শহীদ ও আহতদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করা আমার-আপনার দায়িত্ব আগস্ট বিপ্লবের স্বার্থেই।
সম্প্রতি উপদেষ্টা পরিষদ আহত ছাত্রদের বিশ^বিদ্যালয় পর্যন্ত ভর্তি এবং মাসিক বেতন মওকুফ করেছে। এটা ভালো উদ্যোগ। বিষয়টি বাস্তবায়িত হচ্ছে কিনা মনিটরিং করতে হবে।
ইতোমধ্যে যেসব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন-হাসপাতাল আগস্ট বিপ্লবের আহতদের সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে তাদের আমরা মোবারকবাদ জানাই। অনেক আহত আছেন, যাদের হাত নাই, পা নাই, চোখের অবস্থা খারাপ, তাদের দীর্ঘদিন চিকিৎসা লাগতে পারে। তাদেরও দীর্ঘদিন চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। মসজিদে; বিশেষ করে জুমার দিনে ইমামদের আগস্ট বিপ্লবের শহীদ ও আহতদের জন্য দোয়া ও সহযোগিতার হাত বাড়ানোর আহ্বান জানানোর জন্য অনুরোধ করছি। বিপ্লবের শহীদ ও আহতদের পরিবারের প্রতিও আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হবে। দেশ ও জাতি তাদের জন্যই আজ স্বাধীনতার সুফল ভোগ করছে। আগস্ট বিপ্লবের শহীদ ও আহতদের তালিকা করে তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আহত ও শহীদরা আমাদের নতুন স্বাধীনতার অবিস্মরণীয় এক অধ্যায়। আমরা রাজনৈতিক দলগুলো যা পারিনি, তা মহান আল্লাহ তায়ালা ছাত্র-জনতার মাধ্যমে স্বৈরাচারী হাসিনা ও তাদের পেটোয়া বাহিনীকে ক্ষমতাছাড়া করেছে আর দেশছাড়াও হয়েছে। ৩০০ এমপিসহ অনেক ব্যবসায়ী যারা ব্যবসার নামে দেশের ১৮ কোটি মানুষকে চুষে খেয়েছে, দেশের টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করেছে, ব্যাংকগুলো ফাঁকা করে ফেলেছে, নামে-বেনামে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। এক সাবেক ভূমিমন্ত্রী বিদেশে ৬০০ ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছে। একজন পুলিশ অফিসারের ৩ হাজার কোটি টাকার সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতি দমন বিভাগ। তাকে বিমানবন্দর থেকে সদ্য পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে। আগস্ট বিপ্লবের কারণেই তারা ধরা পড়ছে। আমরা আগস্ট বিপ্লবের শহীদ ও আহতদের মূল্যায়ন চাই।
লেখক : সাবেক সিনেট সদস্য, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়। ইমেইল:[email protected]