সোনার বাংলা রিপোর্ট: অক্টোবর মাস এলেই স্মৃতির পাতায় ভেসে ওঠে একটি নাম ‘আব্বাস আলী খান।’ কারণ তিনি ১৯৯৯ সালের ৩ অক্টোবর এ দুনিয়ার সফর শেষ করে চলে গেছেন মৃত্যু যবনিকার ওপারের সুন্দর জীবনে। জয়পুরহাট জেলা শহরের প্রশস্ত রাজপথঘেঁষে তার বাড়ির আঙিনায় তাকে দাফন করা হয়। কবরের কাছে রয়েছে তার নিজ হাতে গড়া ইসলামী পাঠাগার। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও জামায়াতের সাবেক সিনিয়র নায়েবে আমীর আব্বাস আলী খান বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম স্মরণীয় রাজনীতিক, ইতিহাসবিদ, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও সংগঠক। ১৯৭১ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত জামায়াতের কঠিন মুহূর্তগুলোয় তিনি জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীরের দায়িত্ব পালন করেছেন।
আব্বাস আলী খান ১৯১৩ সাল বা ১৩২১ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন মাসের শেষ সপ্তাহে সোমবার সকাল ৯টায় জয়পুরহাটে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পূর্বপুরুষগণ ছিলেন পাঠান এবং আফগানিস্তান থেকে আগত। তিনি নিজ ঘরেই পড়ালেখা শুরু করেন। স্থানীয় মাদরাসা থেকে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ওঠার পর তিনি হুগলী মাদরাসায় পড়তে যান। হুগলী মাদরাসায় পড়াশোনা শেষ করে রাজশাহী সরকারি কলেজ এবং রংপুর কারমাইকেল কলেজে অধ্যয়ন করেন। ১৯৩৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ডিস্টিংশনসহ বি.এ. পাস করেন। এরপর তিনি উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য কলকাতা যান। উল্লেখ্য যে, সে সময় কলকাতায় জুমার নামাযে প্রখ্যাত আলেম মাওলানা আবুল কালাম আযাদের খুতবাহ শুনে তার মধ্যে এক উদ্দীপনা ও ভাবধারার সৃষ্টি হয়। এ সময় তিনি মাওলানা আবুল কালাম আযাদের আল জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ ও হিযবুল্লাহ বই দুটি অধ্যয়ন করেন এবং আল জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ ভাব অবলম্বনে ইংরেজিতে প্রবন্ধ লেখেন, যা মাসিক মোহাম্মদী ও তৎকালীন ইংরেজি সাপ্তাহিক ‘মুসলিম’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে তিনি বেঙ্গল সেক্রেটারিয়েটে যোগদান করেন। এ সুবাদে শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের সেক্রেটারি হিসেবে কয়েক বছর নিয়োজিত থাকেন। দেশ বিভাগের পর তিনি পূর্ব পাকিস্তানে সার্কেল অফিসার হিসেবে নিয়োগ পান। কিন্তু তিনি সে পদে যোগদান করেননি। নিজ এলাকার মানুষের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৫২ সালে জয়পুরহাটে স্থানীয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে সীমান্ত পার হয়ে ভারতে চলে যাওয়ায় ম্যাজিট্রেটের অনুরোধে দায়িত্ব নেন।
ভাষা ও সাহিত্যচর্চার প্রতি জনাব খানের আগ্রহ ছিল অপরিসীম। আরবী ভাষা তিনি সুন্দরভাবে লিখতে পারতেন। বাংলা, ইংরেজি ও উর্দু ভাষায়ও তাঁর দখল ছিল এবং এসব ভাষায় বক্তৃতায় তিনি ছিলেন সাবলীল। অতি ব্যস্ততা সত্ত্বেও জনাব খান গ্রন্থ প্রণয়ন ও অনুবাদের কাজ করে গেছেন নিরলসভাবে। আত্মস্মৃতিচারণমূলক তাঁর গ্রন্থ ‘স্মৃতি সাগরের ঢেউ’ শুধু সুখপাঠ্যই নয়, তদানীন্তন সমাজের একটা দর্পণও বটে। বিলেতে সফরের ওপর তার লেখা ‘যুক্তরাজ্যে একুশ দিন’ এবং আমেরিকা-কানাডা সফরের ওপর লেখা ‘বিদেশ পঞ্চাশ দিন’ যেমন উপভোগ্য, তেমনি তথ্যবহুল ও শিক্ষনীয়। অনুবাদ ও মৌলিক রচনা মিলিয়ে জনাব আব্বাস আলী খানের প্রায় পঁয়ত্রিশটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া সমসাময়িক ও নানা ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপরও সংবাদপত্রের প্রবন্ধ লিখে গেছেন। প্রকাশিত এমন নিবন্ধের সংখ্যা তাঁর অনেক। তিনি অনেক ছোট গল্পের লেখক। তিনি বেশ কয়েকটি মৌলিক গ্রন্থও রচনা করেছেন। “বাংলার মুসলমানদের ইতিহাস” তার এমনি একটি রচনা।
এ পাতার অন্যান্য খবর
- সংস্কারের মাধ্যমে পরিবর্তনই প্রত্যাশা
- অনিয়ম-দুর্নীতিতে বিশৃঙ্খল ঢাকার যানজট পরিস্থিতি
- ফ্যাসিস্ট আ’লীগকে রাজনীতির মাঠে চায় না জনগণ
- প্রশাসনের পরতে পরতে পতিত ফ্যাসিবাদের প্রেতাত্মাদের পদধ্বনি
- পাকিস্তানে লালগালিচা সংবর্ধনা জাকির নায়েককে
- রাঙামাটিতে সন্ত্রাসীদের হামলায় আহতদের জামায়াতের আর্থিক সহায়তা বিতরণ
- ডেঙ্গুর তীব্রতা বাড়ছেই
- আশুলিয়ায় শ্রমিক হতাহতে জামায়াতের উদ্বেগ
- বেসামাল নিত্যপণ্যের বাজার