রেজি : ডিএ ৫১৭ ॥ ৬৩ বর্ষ : ২৮তম সংখ্যা ॥ ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১ ॥ ৩০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী ॥ ৪ অক্টোবর ২০২৪

প্রয়োজন সহযোদ্ধা রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য
॥ হারুন ইবনে শাহাদাত ॥
ট্র্যাজেডির নায়করা হন উদার এবং বোকা। শুধু ফিকসন নয়, ঐতিহাসিক নায়কদের ক্ষেত্রেও এ তথ্য সমান সত্য। বাংলা, বিহার, ঊড়িষ্যার শেষ নবাব সিরাজ-উদদৌলাকে পলাশীর যুদ্ধে পরাজয় এবং পরবর্তীতে ইংরেজ অনুগত মীর জাফরের সেনাদের হাতে আটক হওয়ার সময়ের ঘটনা নিয়ে লেখা নাটক, উপন্যাসে অতি বোকা হিসেবে চিত্রিত করেছেন অধিকাংশ লেখক। এর কারণ তিনি জেনে-বুঝে তার শত্রুপক্ষের অনেককেই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রেখেছিলেন জাতির সংকটকালে। তার যুক্তি ছিল, জাতির এ সংকটকালে যোগ্যতা ও দক্ষতার বিচারে যারা এগিয়ে, তাদের কাজে লাগাতে হবে। তাহলে তার জন্য বহিঃশত্রু ইংরেজদের মোকাবিলা করা সহজ হবে। এ যুক্তিতেই তিনি মীর জাফর, মীরণ, রাজা রায়বল্লভ জগৎশ্রেষ্ঠ, ইয়ার লতিফ, উমিচাঁদদের শাস্তি দেননি। তার পাশে থেকে সহযোগিতার শপথবাক্য পাঠ করিয়ে শুদ্ধ করার বৃথা চেষ্টা করেছিলেন। পরের ফলাফল সবার জানা। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারে ফ্যাসিস্ট ও তাদের দোসরদের আধিক্য দেখে রাজনীতি বিশ্লেষকদের মনে প্রশ্ন জাগছে- তিনিও নবাব সিরাজ-উদদৌলার মতো ভুল করছেন না তো?
 কেন এ প্রশ্ন?
এমন প্রশ্ন জাগাচ্ছে? কারণ গণঅভ্যুত্থানে কোনো ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর প্রয়োজন হয় বৈপ্লবিক সংস্কার, কিন্তু তিনি সে পথে হাঁটছেন না। কোন পথে হাঁটছেন, তা-ও পরিষ্কার নয়। এখন পর্যন্ত ৩৬ জুলাই বা ৫ আগস্ট বিপ্লবের নায়কদের সকল মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়নি। খুনের মামলার অজুহাত তুলে যারা জীবনবাজি রেখেছে, তাদের মামলা প্রত্যাহার না করে জাতীয় বীরদের নাম আসামির খাতায় রেখে অপমান করছেন। অহিংস নিরস্ত্র আন্দোলনেও কিছু সহিংস ঘটনা ঘটেছে সত্য। কিন্তু এ সত্যের জন্য কেউ প্রস্তুত ছিল না। এমন পরিবর্তনকালে এমন কিছু ঘটনা না চাইলেও ঘটে যায় বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। ফ্যাসিস্ট সরকারের পুলিশ বাদী হয়ে যেসব মামলা করেছে তা কোনো যুক্তিতেই আমলযোগ্য নয়। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে নিয়ে ২০২৪ সালের ৬-৭ আগস্ট পর্যন্ত ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করলে সহজেই বিষয়টি অনুমান করা যায়।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী কিশোর হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজের হাতে হাতকড়া ও মাজায় দড়ি বাঁধা একটি ছবি আন্দোলনের সময় গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা হয়। পুলিশ কী অমানুষিক নির্যাতন করে তার নিকট থেকে পুলিশ হত্যার মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করেছিল- এ কথা কারো অজানা নয়। গত ৪ আগস্ট সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে থানায় হামলা চালিয়ে ১৩ পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পালিয়ে বাঁচা এক পুলিশ সদস্য সূত্রে বিভিন্ন মিডিয়া ঘটনার পর জানিয়েছিল, ছাত্র-জনতার মিছিলে নির্দেশমতো গুলি না করায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা থানায় হামলা করে পুলিশ সদস্যদের হত্যা করেছে। অন্যকে ফাঁসাতে ছাত্রলীগ, যুবলীগ; এমনকি পুলিশ নিজে খুন করে সে দায় আন্দোলনকারীদের ওপর চাপিয়েছে এমন আরো অনেক ঘটনা দেশবাসী জানেন। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার তারপরও নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে, যা আন্দোলনে নির্যাতনের শিকার প্রত্যেক স্বাধীনতা-সংগ্রামী এবং ফ্যাসিস্টবিরোধী নাগরিকদের জন্য কষ্টকর। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের জুন-জুলাই ২০২৪ এর তীব্রতা হাসিনার পদত্যাগের একদফায় পরিণত হয় সত্য। কিন্তু ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সূচনা হয়েছে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে। রাষ্ট্র সংস্কারের কাজে হাত দেয়ার আগে এ বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের ভুলে গেলে চলবে না বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকমহল। তাদের দাবি, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে নিয়ে ফ্যাসিস্টকে ক্ষমতায় বসানোর নীলনকশা বাস্তবায়নকারী ১/১১-এর সরকার এবং পতিত স্বৈরাচার হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলনের কারণে যত মামলা হয়েছে, সব মামলা বাতিল করতে হবে। এমনকি আন্দোলনরত অবস্থায় অঘটনের দায়ে তাদের বিরুদ্ধে করা ফৌজদারি মামলাগুলোও বাতিল করতে হবে। কারণ তৃতীয় বিশে^র কোনো দেশে ফ্যাসিস্ট সরকার পতন আন্দোলন সবসময় সোজাপথে চলে না- এ কথা কারো অজানা নয়। অন্তর্বর্তী সরকার এ সত্য না বোঝায় তারা গড়িমসি করছে- এমন ভাবনা থেকেই জনমনে সন্দেহ দানা বাঁধছে, ফ্যাসিবাদের দোসররা বর্ণবদল করে অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসেন ভূমিকা পালনে তৎপর। জনগণ খোলা চোখে দেখছে।
 অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব সংস্কার প্রশ্নে সৃষ্ট এসব সন্দেহ দূর করা। তারা কোন ধরনের কলাকৌশল অনুসরণ করে অগ্রসর হচ্ছেন, তা-ও পরিষ্কার নয় সাধারণ জনগণ, ২০২৪ স্বাধীনতা-সংগ্রামী ছাত্র-জনতা;  এমন কি বিজ্ঞানী-সমাজবিজ্ঞানীদের কাছে।
সংস্কারের কলাকৌশল
তিনটি প্রধান কৌশলের মাধ্যমে সংস্কারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে বলে মনে করেন আধুনিক সমাজবিজ্ঞানীরা ।
১. ব্লিটসক্রিগ (Blitzkrieg):  এ কৌশল অনুযায়ী সংস্কারক যথাপূর্বেই তার সকল লক্ষ্য প্রকাশ করে দেন। সংস্কারক যত বেশিসংখ্যক লক্ষ্য অর্জন করতে পারবেন এবং করার জন্য সচেষ্ট হন, তিনি যথাসম্ভব তত বেশিসংখ্যক লক্ষ্য অর্জনের আশা জাতির সামনে উপস্থাপন করেন।
২. সহিংসতা (Violence): সকল সমাজেই সংস্কার আনয়নের ক্ষেত্রে সহিংস কার্যকলাপ পরিলক্ষিত হয়। সমাজের অপেক্ষাকৃত বঞ্চিত গোষ্ঠীসমূহ এ সহিংসতাকে তাদের দাবি-দাওয়া আদায়ের উপায় হিসেবে ব্যবহৃত করে।
৩. ফেবিয়ান (Fabian) : এ কৌশল অনুযায়ী সংস্কারক তার লক্ষ্যসমূহ গোপন রাখেন। একটি সংস্কারকে অন্য প্রত্যেকটি হতে পৃথক রাখেন এবং একসময়ে কেবলমাত্র একটি পরিবর্তন আনয়নের জন্য সচেষ্ট হন।
বিপ্লব, সংস্কার, অভ্যুত্থান যে পরিভাষাই ব্যবহার করা হোক না কেন, সবার লক্ষ্যই থাকে পরিবর্তন। সেই পরিবর্তনের আশা থাকে ইতিবাচক। কিন্তু পথ ভুল করলে তা বাঁকবদল করে আরো কঠিন নেতিবাচক বিপর্যয় ডেকে আনার আশঙ্কাও অমূলক নয়। তাই সতর্ক থাকতে হবে। আন্দোলনের সহযোদ্ধা শক্তি ও রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যের বন্ধন সুদৃঢ় রাখতে হবে। কারণ ফাঁক থাকলে সেই পথেই প্রতিবিপ্লবীরা ফিরে আসে, নয়তো লক্ষ্য অর্জনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
গত ১ অক্টোবর থেকে সংস্কারের জন্য গঠিত কমিটিগুলো কাজ শুরু করেছে। যদিও এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। কোনো দৃশ্যমান কিছু ঘটেনি।
সংস্কারে ছয় কমিশন
সরকারের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ছয় সংস্কার কমিশন শিগগিরই কাজ শুরু করবে।  সংস্কার কমিশনগুলো পুরোদমে কাজ শুরুর আগে অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আরেক দফা আলোচনা করবেন।
 প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সম্প্রতি বলেছেন, ‘কমিটির প্রধানদের যখন নাম ঘোষণা হয়েছে, তখন কমিশনের কাজ কিছুটা হলেও শুরু হয়েছে। যেহেতু এখানে রাজনৈতিক দলগুলো একটি অংশীজন। তাই তাদের সঙ্গে আলাপ করে মতামত চাওয়া হবে।’
এর আগে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, সংবিধান ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠনের কথা জানান। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সরফরাজ হোসেন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী আর সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে প্রথমে বিশিষ্ট আইনজীবী শাহদীন মালিকের নাম ঘোষণা করা হলেও পরে তা পরিবর্তন করে অধ্যাপক আলী রীয়াজকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সংস্কার কমিশনের অফিসগুলো ঠিক করছে নিজ নিজ মন্ত্রণালয়। যেমন বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের অফিস নির্ধারণ করা হয়েছে জাতীয় সংসদের এমপি হোস্টেলের ১ নম্বর ব্লকে। অন্যদিকে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীর বসার জন্য সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দোতলায় সাবেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরটি নির্ধারণ করা হয়েছে।
সংস্কারের পর নির্বাচন, তবে কবে...
সংস্কারের পর নির্বাচন। তবে কতদিনের মধ্যে সে নির্বাচন এবং ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগ এবং তার দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কিনা, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। যদিও রয়টার্সকে দেওয়া সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সাক্ষাৎকারে নির্বাচনের বিষয়টিও আলোচনায় আসে। এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, রয়টার্সের রিপোর্টের ষষ্ঠ প্যারায় বলেছে, ফলোয়িং দ্য রিফর্মস, তারপর বলেছে ওই ১৮ মাস।... সেই জায়গায় এটা ১৬ মাস, না ১৮ মাস, না ১২ মাস নাকি ৬ মাস, সেটা সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশের জনগণ। প্রেস সচিব আরো উল্লেখ করেন, এটা কবে হবে? এটি ১৬ মাস পর হবে, নাকি ১২ মাস পর, নাকি ৮ মাস পর, সেটা এখনই নির্ধারিত করা যাচ্ছে না। তিনি মনে করেন, সেনাপ্রধান এখানে ওপিনিয়ন (মতামত) দিয়েছিলেন। গত ১ অক্টোবর সংস্কারের জন্য গঠিত কমিশন কাজ শুরু করলে তিন মাস হবে আগামী ৩১ ডিসেম্বর। এদিন সংস্কার কমিটি প্রস্তাবনা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জমা দেয়ার কথা। তাদের প্রস্তাবের আলোকে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা হবে। নতুন কমিশন, নতুন ভোটার তালিকা প্রণয়নসহ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করবে। নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বাচন কমিশন সংস্কার, নতুন কমিশন গঠন, ভোটার তালিকা প্রণয়ন এবং জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি এক বছরের মধ্যেই সম্পন্ন করা সম্ভব।
 সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ও নির্বাচন সংস্কার কমিটির প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘নির্বাচন কখন হবে, এটা আমার জানার কথা নয়। আমার ধারণা, সরকার ও রাজনৈতিক দলের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়েই নির্বাচনের দিনক্ষণ নির্ধারিত হবে। তবে নির্বাচন কমিশন সংস্কারে আমাদের ৯০ দিন সময় দেয়া হয়েছে। রাজনৈতিক দল ও সরকারের মধ্যে সংলাপ হবে। নির্বাচনী ব্যবস্থার সব দিক নিয়ে আমরা পর্যালোচনা করব এবং এর ভিত্তিতে সুপারিশ প্রণয়ন করব।’
নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. আব্দুল আলীম বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে আইনি কাঠামো যা আছে, সেগুলো সংস্কার করা খুব জরুরি। অর্থাৎ পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়া রিভিউ করতে হবে। শুধু নির্বাচনের আগে না, ভোটের পরও নির্বাচনী বিরোধগুলো বছরের পর বছর ঝুলে থাকে, সেগুলো নানা সংকটে সমাধান হয় না, সেসব বিষয়ও এ পর্যালোচনায় উঠে আসতে পারে। এগুলো দ্রুত করা সম্ভব।’
নির্বাচন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘সংস্কারে সংবিধানের বিষয়টি থাকবে মৌলিক। সংবিধান সংস্কার করা হলে তার ওপর ভিত্তি করেই নির্বাচন প্রক্রিয়ার অন্য কাজগুলো শুরু করতে হবে।’
পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন। বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) গত বছর জাতীয় নির্বাচনের আগে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের যেসব প্রস্তাব দিয়েছে, তার মধ্যে আছে সংসদে সংখ্যানুপাতিক ভোটপদ্ধতি চালু করা। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এ প্রস্তাব দেশের প্রেক্ষাপটে ইতিবাচক।
সংখ্যানুপাতিক ভোটপদ্ধতি কী?
 সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে ভোট হলে প্রতি ১ শতাংশ ভোটের জন্য তিনটি আসন পাওয়া যাবে। যে দল ৫০ শতাংশ ভোট পাবে, তারা সংসদে আসন পাবে ১৫০টি। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এ ব্যবস্থায় ছোট-বড় সব রাজনৈতিক দল প্রাপ্ত ভোট অনুযায়ী সংসদে প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে। জাতীয় সংসদ হয়ে উঠবে সর্বদলীয়। এতে একদিকে দেশের রাজনীতি যে দ্বিদলীয় বৃত্তে আটকে গেছে, সেখান থেকে যেমন বেরিয়ে আসবে, তেমনি নির্বাচন ঘিরে কালো টাকা ও পেশিশক্তির দৌরাত্ম্য কমবে। এ পদ্ধতির একটা বড় সুবিধা হলো, ভোটাররা দলীয় মার্কা দেখে ভোট দেবেন, বিধায় নির্দিষ্ট আসনের প্রার্থী নির্বাচনে কারচুপি বা প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করলেও নিশ্চিত হতে পারবেন না যে, তিনি সংসদে যাচ্ছেনই। এর ফলে ভোট কেনাবেচা কিংবা কারচুপির প্রচেষ্টা অনেকটাই নিরুৎসাহিত হবে। কমে আসবে এলাকাভিত্তিক সহিংসতা। দক্ষিণ এশিয়ার নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ইউরোপের নেদারল্যান্ডস ও স্পেনসহ প্রায় ৯৫টি দেশে কয়েক ধরনের সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা চালু আছে।
সংস্কারের গঠিত ৬টি কমিটির মধ্যে অবশ্যই সমন্বয় থাকতে হবে। বিশেষ করে নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারের সাথে সংবিধান সংস্কারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। কারণ সংবিধানের আলোকেই এ সংস্কারকাজ এগিয়ে নিতে হবে। দেশের এককক্ষ বিশিষ্ট সংসদীয় ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন আছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষায় দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ সময়ের দাবি। যেখানে সংসদীয় গণতন্ত্রের সূতিকাগার ব্রিটেনের হাউস অব লর্ডসের মতো উচ্চকক্ষ থাকবে সকল পর্যায়ের বিশিষ্টজন ও প্রতিনিধিদের নিয়ে।
সংস্কার কমিটিগুলোর কাজ কার্যত এখনো শুরু হয়নি। জনগণের প্রত্যাশা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ট্র্যাজেডির নায়ক নন, সফল সংস্কারক হিসেবে ইতিহাসের পাতায় উজ্জ্বল থাকবেন তার কাজের মাধ্যমে। তাই তাকে সবসময় মীর জাফর ও জগৎশ্রেষ্ঠদের ব্যাপারে আরো বেশি সতর্ক থাকবে হবে।

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।