রেজি : ডিএ ৫১৭ ॥ ৬৩ বর্ষ : ৮ম সংখ্যা ॥ ঢাকা, শুক্রবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ ॥ ৮ জিলকদ ১৪৪৫ হিজরী ॥ ১৭ মে ২০২৪

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের গভীর উদ্বেগ

দেশে গণতন্ত্র আইনের শাসন মানবাধিকার বলতে কিছু অবশিষ্ট নেই

গত ১৩ মে সোমবার কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের বৈঠকে সভাপতির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান

সরকার মূলত দেশকে একটি নির্বাচনহীন রাষ্ট্রে পরিণত করেছে  : ডা. শফিকুর রহমান
সোনার বাংলা রিপোর্ট : দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও মানবাধিকার বলতে কিছু অবশিষ্ট নেই। গত ১৪ মে মঙ্গলবার দলের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের এক বৈঠকে দেশে বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে এ মতামত ব্যক্ত করা হয়। গত ১৩ মে সোমবার কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, সরকার মূলত দেশকে একটি নির্বাচনহীন রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। তারা নির্বাচনব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেশকে একটি নির্বাচনহীন রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। আমরা দেশে নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পরিবর্তন চাই।
বৈঠকে গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছে যে, দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার ও জনগণের ভোটাধিকার বলতে কিছু অবশিষ্ট নেই। সরকার ৭ জানুয়ারি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে। গত ৮ মে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সরকারি দলের অভ্যন্তরীণ সংঘাত, সংঘর্ষ, গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণে অর্ধশতাধিক লোক আহত ও যানবাহন ভাঙচুর এবং ভোট কারচুপি ও অনিয়মে জড়িত থাকায় ৩ জন প্রিসাইডিং অফিসার এবং ২ সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারকে গ্রেফতারের ঘটনার মাধ্যমে জাতির সামনে আবারো প্রমাণ হয়েছে যে, দেশে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। সরকার বলেছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও এমপিগণ তাদের নিকটাত্মীয়দের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনীত করতে এবং নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন না। কিন্তু ৮ মে’র উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও এমপিদের পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন ব্যাপকভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন এবং জাতীয় সংসদের ডামি নির্বাচনের মতোই উপজেলা নির্বাচনে আরেকটি ডামি নির্বাচনের আয়োজন করে নিজেদের প্রার্থী বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। এ থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, আওয়ামী সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে পারে না। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ দৃঢ় অভিমত ব্যক্ত করছে যে, কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটে সরকার প্রতিষ্ঠা ব্যতীত দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো পরিবেশ তৈরি হতে পারে না। সেজন্য সর্বাগ্রে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। জনগণ এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে রাজি নয়। তাই তারা একতরফা জাতীয় সংসদ ও উপজেলা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। সরকার জনমতের তোয়াক্কা না করে স্থানীয় নির্বাচনের আয়োজন করে নিজেদের পছন্দের ডামি প্রার্থীদের বিজয়ী করে ক্ষমতায় বসাতে চায়। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ প্রহসনের উপজেলা নির্বাচন বর্জন করায় জনগণকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছে। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ লক্ষ করছে যে, ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার যে হীনপন্থা অবলম্বন করেছে, তাতে দেশের নির্বাচনব্যবস্থা বলতে আর কিছু অবশিষ্ট থাকবে না, যা গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ মনে করে, সরকার দুর্নীতি, ব্যাংক লুটপাট, শেয়ারবাজারে ধস তৈরি করে ও বিদেশে অর্থ পাচার করে নিজেদের আখের গোছানোর জন্য তারা দেশে যে নির্বাচনহীন পরিবেশ তৈরি করেছে, তা থেকে মুক্তি পেতে হলে ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বিরোধী রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠন ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহের ঐক্যবদ্ধভাবে সোচ্চার হওয়ার মধ্য দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথ সুগম হতে পারে। এজন্য সর্বাগ্রে কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠা করে জনগণের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার করতে হবে। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সকল রাজনৈতিক দল ও সংগঠন এবং দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তোলার মাধ্যমে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করে জাতিকে বর্তমান সংকট থেকে উদ্ধার করার জন্য সকলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে।’
আমীরে জামায়াতের বক্তব্য : গত ১৩ মে সোমবার কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের এক বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, সরকার মূলত দেশকে একটি নির্বাচনহীন রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। আমরা দেশে নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন চাই। সংগঠনের কর্মপরিষদ সদস্য হিসেবে আমাদের সবাইকে সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করতে হবে। নেতারা জনবান্ধব হলে সংগঠনের জনসমর্থন যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি গণভিত্তিও মজবুত হয়। কল্যাণমূলক কাজের মাধ্যমে মজবুত সংগঠন গড়ে তুলে সামগ্রিক পরিবর্তন করা সম্ভব।
সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের পরিচালনায় কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের বৈঠকে আমীরে জামায়াত বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের পূর্ণাঙ্গ বৈঠক করতে পেরে মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি, আলহামদুলিল্লাহ। আমি গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মানের সাথে স্মরণ করি সাবেক আমীরে জামায়াত অধ্যাপক গোলাম আযম এবং সাবেক আমীরে জামায়াত ও সাবেক মন্ত্রী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক নায়েবে আমীর মাওলানা একেএম ইউসুফ, অধ্যাপক একেএম নাজির আহমাদ, মাওলানা আবদুস সুবহান ও আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লা এবং সাবেক কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীকে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাদের সকলকে কবুল করুন এবং তাদের জান্নাতে উচ্চ মাকাম দান করুন।
আমীরে জামায়াত বলেন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য হিসেবে আপনারা এ সংগঠনের অভিভাবক এবং দেশ ও জাতির বিনির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী। বাংলাদেশ আজ এক কঠিন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহ ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। দেশে আইনের শাসন, মানবাধিকার, ন্যায়বিচার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সংবিধান প্রদত্ত সভা-সমাবেশ করার অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রের আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। ব্যাংক ও ব্যাংকিং খাত আজ লুটেরাদের দখলে। দেশে শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, উৎপাদন-বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের পথ আজ রুদ্ধ হয়ে পড়েছে। সরকার অর্থের উৎসসমূহ ও বিদেশি সংস্থা থেকে ঋণ গ্রহণ করে ঋণের টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করছে। দেশের অর্থনীতি আজ বিধ্বস্ত।
দুনিয়ায় মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল হচ্ছে আদালত। সেই আদালতে মানুষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে সরকার আদালতকে ব্যবহার করে সাজা প্রদানের ব্যবস্থা করেছে। দেশের নির্বাচনব্যবস্থা বলতে আজ কিছু নেই। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন, এ সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনসমূহ এবং অতি সম্প্রতি উপজেলা নির্বাচনে সরকারি দলের কেন্দ্র দখল ও ভোট লুটপাটের ঘটনা দেশে নির্বাচন ব্যবস্থাকে পরিপূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে। সরকার মূলত দেশকে একটি নির্বাচনহীন রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।
এ অবস্থায় গোটা জাতিকে পুনর্গঠন করা ছাড়া বিপর্যয়ের হাত থেকে দেশ ও দেশের মানুষকে উদ্ধার করা সম্ভব নয়। আমি কর্মপরিষদের সদস্যদের দরদি মন নিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের নিজেদের সর্বপ্রথম দাঈ ইলাল্লাহ হিসেবে ভূমিকা পালন করতে হবে। মানুষকে সচেতন করতে হবে। জাহান্নামের আজাব থেকে নিজেদের, নিজেদের পরিবারবর্গ, প্রতিবেশী, সমাজ ও দেশকে বাঁচাতে হবে।
আমীরে জামায়াত বলেন, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য শিক্ষা কারিকুলামে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। অনৈতিক ও আদর্শহীন শিক্ষা আমাদের যুবসমাজকে ধ্বংসের দিকে ধাবিত করছে। এ অবস্থায় আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনৈতিক ও অপসংস্কৃতির সয়লাব থেকে মুক্ত রাখার জন্য অভিভাবকসুলভ ভূমিকা পালন করতে হবে।
আমীরে জামায়াত কর্মপরিষদ সদস্যদের উদ্দেশে আরো বলেন, এ সরকার জামায়াতকে নেতৃত্বশূন্য করার জন্য আমাদের শীর্ষনেতৃবৃন্দকে সাজানো মামলায় ফাঁসির দণ্ড দিয়ে ফাঁসি কার্যকর করেছে। তারা ভেবেছিল জামায়াত নেতৃত্বশূন্য হয়ে যাবে এবং জেল-জুলুম-নির্যাতনের মাধ্যমে জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব হবে। কিন্তু তাদের সকল পরিকল্পনা নস্যাৎ হয়ে গেছে। তাদের প্রতিটি আঘাতে জামায়াত আরো শক্তিশালী হয়েছে। কর্মপরিষদ সদস্যদের সংগঠনের কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে।

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।