রেজি : ডিএ ৫১৭ ॥ ৬৩ বর্ষ : ৮ম সংখ্যা ॥ ঢাকা, শুক্রবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ ॥ ৮ জিলকদ ১৪৪৫ হিজরী ॥ ১৭ মে ২০২৪

চীন ভারত যুক্তরাষ্ট্র কোন মুখী হবে সরকার : কৌশলগত নানা হিসাব প্রতিদ্বন্দ্বী শিবিরে

আতঙ্ক পিছু ছাড়ছে না

॥ ফারাহ মাসুম ॥
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রার বাংলাদেশ সফরের পর আমেরিকার সহকারী পররাষ্ট্র সচিব ডোনাল্ড লু’র ঢাকা সফর নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন আবার বেশ সরগরম হয়ে উঠেছে। চীনা কর্মকর্তারা চুপচাপ ঢাকা ঘুরে যাওয়ার কারণে তা নিয়ে আলোচনা কমই হয়। তবে আগামী জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেইজিং সফরে যাওয়ার কর্মসূচি ঠিক হয়ে আছে। তার আগের মাস অর্থাৎ জুন মাসের ৪ তারিখে ভারতের পরবর্তী মেয়াদে কারা ক্ষমতায় আসবে, সেটি নির্ধারণে ফলাফল ঘোষণা করা হবে। এরপর শেখ হাসিনাকে দিল্লি সফরে যেতে হবে। এ নিয়ে প্রকাশ্য রাজনৈতিক আলোচনার আড়ালে আরো অনেক কৌশলগত সমীকরণের বিষয় সক্রিয় বলে মনে করা হচ্ছে। এ সমীকরণ অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে প্রধানমন্ত্রী হঠাৎ করে সরকারকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করার ষড়যন্ত্র সম্পর্কে বক্তব্য রাখার কারণে। তিনি ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘আমার পরে কে ক্ষমতায় আসবে, সেটি কি ঠিক করেছেন?’
প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য শান্ত-নিস্তরঙ্গ রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে নতুন করে ঢেউ তুলেছে। অনেকে নানা হিসাব-নিকাশ করতে শুরু করেছেন। দৃশ্যপটের আড়ালে নানা তৎপরতাও দেখা যাচ্ছে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের ঢাকা সফরকালে তাৎপর্যপূর্ণ নানা প্রস্তাবের পর ডোনাল্ড লু’র ঢাকা আগমনে এক ধরনের আতঙ্ক অনুভূত হচ্ছে বলে মনে হয় শাসক শিবিরে। সরকারের সেতুমন্ত্রী ও শাসকদলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের পরিষ্কার বলেছেন, মার্কিন স্যাংশন-ভিসানীতি এসব পরোয়া করে না আওয়ামী লীগ।
যে কারণে লু নিয়ে আগ্রহ
ডোনাল্ড লু’র ঢাকা সফরের অন্তরালে নানা ধরনের রাজনৈতিক হিসাব রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ সফরে তিনি সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করেছেন। কথা বলেছেন সরকারের শীর্ষপর্যায়ের নীতিপ্রণেতাদের সাথে। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্র সচিব লু ভারত-শ্রীলঙ্কা ঘুরে তিন দিনের সরকারি সফরে বাংলাদেশে আসেন। ঢাকা-ওয়াশিংটনের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদারের বিষয় উল্লেখ হলেও তার সফর নিয়ে অনেক হিসাব-নিকাশ চলছে। কূটনীতি বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, লু’র সফরে এবার রাজনীতিতে প্রকাশ্যে উচ্ছ্বাস কম থাকলেও অন্তরালে আওয়ামী লীগ-বিএনপি এবং অন্যান্য দলসহ বিশেষ মহলের কাছে রাজনৈতিক হিসেবেই এটি বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। ভূ-রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশ নিয়ে অনেক সমীকরণ যুক্ত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র এ সফরে বাংলাদেশের সঙ্গে অন্য মিত্র রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের গভীরতার হিসাব খুঁজবে। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ঢাকায় অবস্থান করে লু যেসব বার্তা দিয়ে গিয়েছিলেন, তার বাস্তবতা এবং উপেক্ষিত বিষয় নিয়েও জবাব চাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এ সফরে। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশিক্ষণ ও অস্ত্রসংক্রান্ত চুক্তির বিষয়েও কথা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় থাকার পরও বর্তমানে ঋণের ভারে জর্জরিত হয়ে পড়েছে সরকার। আয় করা রাজস্বের বেশিরভাগই চলে যাচ্ছে সুদ দিতে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে এসে ঠেকেছে। লু’র ঢাকায় আসার দিনই ভারতীয় পত্রিকায় বাংলাদেশে আরেক দফা রিজার্ভ চুরির খবর বেরিয়েছে। নতুন করে ভারতীয় হ্যাকারদের দ্বারা ৫ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ চুরির এ খবর পুরোপুরি অসত্য বলে বাংলাদেশ ব্যাংক উল্লেখ করেছে। এ খবর এমন একসময় প্রকাশ হয়েছে, যেদিন ডোনাল্ড লু বাংলাদেশে এসেছেন আর এদিনই প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের নৈশভোজ সভায় লু জানতে চেয়েছেন তার দেশের বিনিয়োগকারীরা তাদের লাভের ডলার দেশে ফেরত নিয়ে যেতে পারবেন কিনা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক তথ্যে নিট রিজার্ভ এখন ১৩ বিলিয়ন ডলারের কোটায় বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ এক মাস আগে এক অঙ্কে নেমে এসেছে বলে খবর বের হয়। সেখান থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার খোয়া যাওয়ার ভারতীয় মিডিয়ার খবর সত্যি হলে রিজার্ভ শূন্যে নেমে আসতে সময় লাগবে বলে মনে হয় না। এর মধ্যে প্রথম প্রজন্মের একটি শীর্ষ বেসরকারি ব্যাংকের মালিকানা সরকারের আনুকূল্যে থাকা অলিগার্কদের অধিগ্রহণের খবর বের হয়েছে। আরো ব্যাংক এ লাইনে রয়েছে বলে উল্লেখ করা হচ্ছে।
সার্বিক এসব বিষয়ে মার্কিন অবস্থান কূটনীতি এবং রাজনীতির আগামীর প্রেক্ষাপট তৈরিতে সর্বাধিক গুরুত্ব পাচ্ছে। লু ভোট পূর্বের সফরে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও গ্রহণযোগ্য ভোটের বিষয়ে বার্তা দিয়ে গেলেও এবার তিনি কী বার্তা দেবেন, সেদিকেই দৃষ্টি সচেতন মহলের। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সর্বাধিক ভূমিকা পালন করা শীর্ষ এ ব্যক্তি ঢাকা পৌঁছালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক তাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান। এ সময় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসসহ দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন।
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রিন্সিপাল ডেপুটি মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল তার সফর নিয়ে বলেন, প্রতিটি দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার এবং অবাধ, উন্মুক্ত ও সমৃদ্ধ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য মার্কিন সমর্থন প্রদর্শন করতে এ সফরে রয়েছেন ডোনাল্ড লু। অন্যদিকে কূটনৈতিক বিষয়ে চোখ রাখা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে ওয়াশিংটনের স্বতন্ত্র অবস্থান ছিল, যা এখনো বিদ্যমান। ভোট-পূর্ব রাজনীতিতে বাড়তি উত্তাপ থাকায় ওই সময় উজরা জেয়া ও ডোনাল্ড লু’র  যুগল সফরটি কূটনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক সাড়া ফেলে ছিল। উজরা জেয়া ও ডোনাল্ড লু সেদিন সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে বৈঠক করেছিলেন। রাজনৈতিক সভা-সমাবেশেও লু’র সফর নিয়ে গরম হাওয়া বয়ে গিয়েছিল। ঢাকা সফরের পর গত বছরের ১৩ নভেম্বর আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে শর্তহীন সংলাপের জন্য চিঠি দিয়েছিলেন ডোনাল্ড লু। শাসকদলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে মন্ত্রণালয়ে গিয়ে চিঠি পৌঁছে দেন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। কিন্তু সেই আহ্বানে কাজ হয়নি। সংলাপ তো নয়ই, বরং আওয়ামী লীগ একতরফা নির্বাচন করে ফের ক্ষমতায় ফিরেছে।
ঢাকা সফরের প্রথম দিন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের নৈশভোজে যোগ দেন লু। এদিন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেন। সফরের দ্বিতীয় দিন প্রথমে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে ও পরে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা  হয়েছে।
সফরের প্রাক্কালে এ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের যে কমন স্ট্যান্ড গণতন্ত্র, নাগরিক অধিকার, মানবাধিকার সেই বিষয়গুলো নিয়ে সাধারণভাবে কথা বলতে পারেন লু। তবে এর আগে হওয়া বেশকিছু আলোচনার ফলোআপও তারা জানতে চাইবেন। কয়েক মাস আগে বড় একটা ডেলিগেশন এসেছিল। তার ফলোআপ হতে পারে। তাদের এখন হয়তো মনোযোগ অর্থনৈতিক দিকে। এর সঙ্গে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও রাজনীতি নিয়ে তারা বলেই যাবে।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ডোনাল্ড লু’র সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় যে আলোচনা, তাতে রাজনীতি থাকবেই। কারণ দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মধ্যেই রাজনীতি রয়েছে। রাজনীতি নিয়ে কী আলোচনা হলো, তা প্রকাশ করা হলে তো জানা যাবেই; এমনকি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো না হলেও তা প্রকাশ পাবে বলে মনে করেন তিনি। তবে রাজনীতিতে কিল খেয়ে কিল হজম করে ফেলবে যুক্তরাষ্ট্র এটা আমি মনে করি না।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র যে মুক্ত, অবাধ ও সমৃদ্ধ ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল দেখতে চায়, ডোনাল্ড লু’র সফরে সেটাই গুরুত্ব পাবে। ঢাকা সফরে দুই দেশের সহযোগিতার সম্পর্ক ছাড়াও জলবায়ু সংকট ও দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার হওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং বাংলাদেশের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত ভিসানীতি ঢাকা-ওয়াশিংটনের সম্পর্কে কিছুটা দূরত্ব তৈরি করেছে। সেগুলো (র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি) যাতে সহজ করা হয় আলোচনায় যুক্ত থাকবে।
সালমান এফ রহমান ডোনাল্ড লু’র সাথে নৈশভোজের পর নিজ বাসভবনে তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতকে পাশে নিয়ে ব্রিফিং করেন। তিনি জানান, ডলার সংকটের কারণে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করা মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের লাভের অংশ নিজ দেশে নিয়ে যেতে পারছে না। এ অর্থ বাংলাদেশ থেকে কবে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে, তা জানতে চেয়েছেন ঢাকা সফররত ডোনাল্ড লু।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, আমরা মার্কিনিদের জানিয়েছি যে, যদিও আমাদের অর্থ পরিশোধে একটু সমস্যা হচ্ছে, একটু দেরি হচ্ছে, তবে আমাদের অর্থছাড় ক্রমাগত হচ্ছে। আমরা একেবারে অর্থছাড় বন্ধ করিনি।
চীন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে সালমান এফ রহমান বলেন, এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। ভিসানীতি নিয়েও কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানান তিনি। আলোচনার অগ্রাধিকার নিয়ে জানতে চাইলে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘মার্কিনিরা জানিয়েছেন যে, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ভালো করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশও এ বিষয়ে তাদের স্বাগত জানিয়েছে। নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে ভুল বোঝাবুঝি ছিল, তা আলোচনায় মার্কিনিরাও তোলেনি, আমরাও তুলিনি। তারা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে বিশ্বাস পুনরায় স্থাপন করতে চায়।’
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, আমরা সবাই জানি, নির্বাচনের আগ পর্যন্ত, নির্বাচনের পরেও উনাদের তরফ থেকে একটা রিজার্ভেশন ছিল। কিন্তু নির্বাচনের পর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যখন চিঠি লিখলেন প্রধানমন্ত্রীকে। সেটার পর আমরা ভাবলাম যে, নির্বাচনটা তারা মেনে নিয়েছেন। আমাদের সরকারকেও তারা মেনে নিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের চিঠিটা তো সবাই দেখেছেন, এটা খুবই পজিটিভ চিঠি ছিল। তারপর থেকে আমরা যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে এনগেজমেন্ট শুরু করি।
যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার নিয়ে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সঙ্গে বাংলাদেশের শ্রম নিয়ে যে পথনকশা রয়েছে, সেটি মেনে শ্রমনীতি ও আইনটি করা হলে যুক্তরাষ্ট্রের আর কোনো আপত্তি থাকবে না। র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে জানতে চাইলে সালমান এফ রহমান বলেন, এ বিষয়টি আইন দপ্তরে রয়েছে।
বিএনপি নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনাÑ এ প্রশ্নে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, বিএনপি, বিরোধীদল, রাজনীতি, মানবাধিকার, গণতন্ত্র, নির্বাচনÑ এগুলো কোনো কিছু নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আলাপ তোলা হয়নি। এগুলো নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
লু’র সফরের আনুষ্ঠানিক বিষয়গুলো প্রকাশ করা হলেও এর অনেক কিছু জানতে সময় লাগবে। পরবর্র্তী রাজনৈতিক উন্নয়নের ব্যাপক প্রভাব থাকবে বলে মনে হয়।
চীন সফরের দিকে তাকিয়ে অনেকে
আগামী জুলাইয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বেইজিং সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছে চীন। আগে চীন না ভারতÑ কোন দেশ সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী, এ বিষয়ে কৌশলী জবাব দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘দিল্লি তো আমাদের কাছে, বেইজিং একটু দূরে। প্রধানমন্ত্রীর অনেক আগে থেকে ভারত সফরের কথা রয়েছে। ভারতে এখন নির্বাচন চলছে। নির্বাচনের পর সরকার গঠন হবে। তারপর প্রধানমন্ত্রীর সফর কখন হবে, তা ঠিক হবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে বোঝা যায়, প্রধানমন্ত্রী চীন সফরের আগে দিল্লি সফর করবেন। এ সফরে চীনের সহযোগিতা গ্রহণে ঢাকা কতদূর এগোতে পারবেন, বিষয়টা দিল্লি সফরের ওপর বেশ খানিকটা নির্ভর করতে পারে।
চীন যেসব প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে চাইছে, তার প্রায় সব ক্ষেত্রে দিল্লির পক্ষ থেকে বিকল্প প্রস্তাব আসতে শুরু করেছে। চীন বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার সংকট মেটাতে ৫ বিলিয়ন ডলারের সম পরিমাণ বাণিজ্য অর্থায়ন করতে রাজি হয়েছে। তিস্তা ব্যারাজ, পায়রা বন্দর সাবমেরিন প্রকল্পসহ অন্যান্য অবকাঠামো ক্ষেত্রে দীর্ঘ মেয়াদে ৪৬ বিলিয়ন ডলারের সম পরিমাণ বিনিয়োগের আশ্বাস দিয়েছে বেইজিং। দিল্লি মনে করছে, চীনের এ প্রস্তাবের ফাঁদে না পড়ে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও জাপানের মতো সূত্র থেকে অর্থ সহায়তা নিতে পারে ঢাকা।
শেষ পর্যন্ত ঢাকা কতটা কী সিদ্ধান্ত নেয়, তার অনেকখানি নির্ভর করবে সরকার কোন পথে আগামীতে হাঁটবে, সে সিদ্ধন্ত গ্রহণের ওপর।
শেখ হাসিনার আগের সরকার মিত্র দেশগুলোর মধ্যে এক ধরনের ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করেছিল। এবারের একতরফা নির্বাচনের পর সে সুযোগ সীমিত হয়ে আসছে বলে মনে করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনার সরকার চীন থেকে মুখ ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে নির্বাচন নিয়ে সক্রিয় না হতে দিল্লি রাজি করিয়েছিল। এখন সরকার যদি আবার অর্থায়নের ব্যাপারে চীনের দিকে ঝুঁকে পড়ে, তাহলে সরকারকে টিকিয়ে রাখতে সমর্থন করা দিল্লির পক্ষে কঠিন হতে পারে।
এ বিষয়ে ত্রিপক্ষীয় একটি বোঝাপড়ার জন্য সরকার খুব বেশি সময় পাবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের কিছুু কৌশলগত চাওয়া-পাওয়া রয়েছে, যা চীনামুখী নীতি নিলে ঢাকা দিতে পারবে না বলে মনে করে ওয়াশিংটন। ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারে সরকার এমন এক জংশনে এসে পৌঁছেছে, যেখান থেকে একদিকে যাওয়াকে বেছে নিতে হতে পারে।
ভিসানীতি নিষেধাজ্ঞাকে কেয়ার করি না
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্র সচিব ডোনাল্ড লু নিজ দেশের এজেন্ডা বাস্তবায়নে আলোচনা করতে এসেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্র সচিব ডোনাল্ড লু বাংলাদেশে এলেও তাদের ভিসানীতিসহ কোনো ইস্যুকেই আমরা কেয়ার করি না। তিনি কোনো মন্ত্রীও নন, তাকে নিয়ে এত মাতামাতি কেন? তাকে আমরা নিমন্ত্রণ করে আনছি না, তারা তাদের বিভিন্ন প্রয়োজনে এদেশে আসেন। সম্পর্ক থাকলে আসতে হয় তাই আসেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির সঙ্গে তাদের কী আছে, তারাই ভালো জানে। ওপরে ওপরে বিএনপি তাদের পাত্তা দেয় না বললেও, তলে তলে বিএনপি কী করে, তারাই তা ভালো জানে। আমরা মার্কিন স্যাংশন, ভিসানীতি পাত্তা দিই না।
বিএনপির নেতারা এখন বলছে, গরম কমলে আন্দোলন করবেন। এভাবে তো ১৫ বছর পার হয়ে গেল, আর কত সময় নেবে বিএনপি- প্রশ্ন ওবায়দুল কাদেরের।
ভয়ে প্রলাপ বকছেন
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্র সচিব ডোনাল্ড লু’র বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতারা কিছু না বললেও ওবায়দুল কাদের সাহেবরা খুব উত্তেজনার ভেতরে আছেন। তাদের উত্তেজনা কোনোভাবেই প্রশমিত হচ্ছে না। কাদের সাহেবরা মানসিক অস্থিরতায় ভুগছেন। ভয়ে তারা প্রলাপ বকছেন।
উপজেলা নির্বাচন বর্জনের আহ্বানে লিফলেট বিতরণ শেষে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির নেতারা মনে করেন লু এসে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিয়ে যাবেন, সেই আশায় আছেন। কিন্তু বিএনপির নেতারা কোথাও এ বিষয়ে কিছু বলেননি। ওবায়দুল কাদের সাহেবরা ভয় থেকে প্রলাপ বকছেন। তিনি কী জ্বরে ভুগছেন? মনে হয় তিনি বড় ধরনের অস্থিরতায় মধ্যে আছেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামসহ ২৫ থেকে ২৬ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে তারা (সরকার) গ্রেফতার করেছিল। সে নির্বাচনে অন্য কোনো দল অংশ নেয়নি। জনগণও তাদের ভোট দিতে যায়নি। গোটা বাংলাদেশকে কারাগারে পরিণত করে এখন জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য নানা কথা বলছে।
এদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, সীমান্ত হত্যা নিয়ে বিএনপি এবং যুগপৎ আন্দোলনের জোট ও দলগুলো কর্মসূচি দেয়ার চিন্তা করছে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
গত ১৩ মে সোমবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
বাংলাদেশের রাজনীতি আবার উত্তেজনামুখর হতে শুরু করেছে। এর সাথে যুক্ত দেশি-বিদেশি সব পক্ষ তাদের হিসাব মেলাতে শুরু করেছে। দেশের অর্থনীতির অবস্থাও ভালো নয়। সব মিলিয়ে বড় ধরনের অস্থিরতা আসন্ন বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা ধারণা করছেন।

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।