ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সকল হত্যা ও নির্যাতনের বিচার চাই
৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৮:৩২
নারীদের মর্যাদা সমুন্নত রেখে ধর্মে-বর্ণে হানাহানি ভুলে যেতে হবে। দুর্নীতিমুক্ত এবং সামাজিক সুবিচার ও মানবিক সমাজ গড়তে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। হিংসার রাজনীতি থেকে বের হয়ে মানুষকে মর্যাদা দিতে হবে। দেশ ও মানুষের কাছে দায়বদ্ধ শাসন ব্যবস্থা সম্পন্ন দেশ গড়তে পারলে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো হবে।
গত ১ ডিসেম্বর রোববার দুপুরে ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে এক বিশাল কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে ৪১ সাল পর্যন্ত লিজ দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সেনাবাহিনী ও বিডিআর এর মতো শক্তিশালী দুটি বাহিনীকে ধ্বংস করে দিয়েছে। যারা সত্যিকারের দেশপ্রেমিক, তারা কখনো দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় না। কিন্তু আওয়ামী লীগ দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়ে দেশ থেকে পালিয়ে গেছে।
জেলা জামায়াত আমীর মাও. মুহাম্মদ বদরুদ্দীনের সভাপতিত্বে এ সময় বক্তব্য রাখেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য অধ্যাপক আব্দুত তাওয়াব, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক আব্দুল ওহাব, সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের ছেলে আলী আহমাদ মাবরুর প্রমুখ।
আমীরে জামায়াত আরো বলেন, বিগত ১৬ বছর জগদ্দল পাথরের মতো পতিত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার এ দেশের জনমানুষের ওপর চেপে বসেছিল। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের লগি-বৈঠার তাণ্ডবে পথ হারিয়েছিল বাংলাদেশ। পিলখানার ৫৭ জন চৌকশ সেনা অফিসার হত্যার মাধ্যমে এ দেশের সামরিক বাহিনী ও তৎকালীন বিডিআরকে ধ্বংসের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছে তারা। জামায়াতের শীর্ষ ৫ নেতাকে বিচারিক হত্যার মাধ্যমে জামায়াতকে নেতৃত্ব শূন্য করার চেষ্টা করেছিল। দেশের মানুষের অংশগ্রহণ ছাড়াই ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনা ভোটে ১৫৪ জন এমপি নির্বাচিত হয়েছিল। সেদিনের সেই ভোটে জনগণের পরিবর্তে নির্বাচন কেন্দ্রগুলোয় কুকুরের আনাগোনা দেখা গিয়েছিল। ২০১৮ এর নির্বাচনে কৌশল পরিবর্তন করে দিনের বদলে আগের রাতেই ভোট নিয়ে নিয়েছিল তারা। এরপর ২০২৪ সালে ‘আমি আর ডামি’ নির্বাচনের মাধ্যমে ২০৪১ সাল পর্যন্ত রাজত্ব বহাল রাখার স্বপ্ন দেখেছিল। তারা বলতো আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছাড়লে এদেশে ৫ লাখ লোককে হত্যা করা হবে। কিন্তু তা হয়নি। আওয়ামী লীগ দায়িত্ব জ্ঞাণহীন হলেও এ দেশের মানুষ দায়িত্বহীন নয়। তাই তাদের সেই আশঙ্কা মিথ্যা প্রতিপন্ন হয়েছে। বিগত ১৫ বছর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ওপর সবচেয়ে বেশি জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছে আওয়ামী লীগ। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা ও জেলে ঢুকিয়েছে। এমনকি অনেকের বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সকল হত্যা ও নির্যাতনের বিচার চাই।
উন্নয়নের নামে লুটপাট করে বিদেশে টাকা পাচার করেছে। প্রতিবাদ জানালে হত্যা-নির্যাতন চালিয়েছে তারা। বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো আমাদের সন্তানদের ইতিহাস কখনো ভুলে যাবো না।
তিনি বলেন, আমরা এমন একটি রাষ্ট্র চাই যেখানে সবার অধিকার সমান হবে। আমাদের কলিজার টুকরো ছেলে-মেয়েরা চাকরির জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াবে না। বরং একটি মানবিক ও নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে তাদেরকে চাকরির সুব্যবস্থা করা হবে। ধর্মে-বর্ণে হানাহানি থাকবে না, কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে পাহারা দিতে হবে না।
কিছু লোক বলে জামায়াত ক্ষমতায় আসলে মহিলাদেরকে জোর করে বোরখা পরানো হবে। আমরা এটা বলি না। তিনি জামায়াত কর্মীদেরকে নৈতিক মান ও জাগতিক মান উন্নতির আহ্বান জানান।
তার আগমন উপলক্ষে ফরিদপুরবাসীর যাতায়াতের কষ্ট হওয়ায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমরা শুধু আল্লাহর জন্যই পরস্পরকে ভালোবাসি। তিনি ফরিদপুরবাসীর নিকট দোয়া প্রার্থনা করেন এবং ফরিদপুরবাসীর জন্যও দোয়া করেন।
এদিকে সকাল থেকে বিভিন্ন স্থান থেকে নেতাকর্মীরা মিছিল সহকারে সম্মেলনস্থলে জড়ো হয়। এক পর্যায়ে রাজেন্দ্র কলেজ মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। বেলা ৩টার দিকে আমীরে জামায়াত মঞ্চে এসে হাত নাড়িয়ে সকলকে সালাম ও শুভেচ্ছা জানান। এ সময় গোটা এলাকা শ্লোগানে শ্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে।
হাসিনা নির্দোষ আলেমদের কোমরে দড়ি পরিয়েছে, আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠেছিল
বরিশাল সংবাদদাতা : শেখ হাসিনা সরকারের আমলে সারা দেশকে একটি কারাগারে পরিণত করা হয়েছিল। কথা বলার স্বাধীনতাও কেড়ে নেয়া হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আমীর ডা. শফিকুর রহমান। গত ১ ডিসেম্বর রোববার সন্ধ্যায় আমীরে জামায়াতের বরিশাল সফর উপলক্ষে নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে বরিশাল মহানগর জামায়াত আয়োজিত পথসভায় এসব কথা বলেন।
আমীরে জামায়াত আরও বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বহু মানুষকে গুম ও খুন করা হয়েছে। বহু মানুষকে নির্মমভাবে অত্যাচার করা হয়েছিল শুধুমাত্র সত্যের পক্ষে থাকার জন্য। প্রবীণ ও বিজ্ঞ আলেমদেরও তারা জেলে দিতে দ্বিধা করেনি। তাদের পায়েও ডান্ডাবেড়ি পরিয়েছে, কোমরে দড়ি পরিয়েছে আমি বিশ্বাস করি, আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠেছিল এ নির্দোষ আলেমদের জন্য। কুরআনের পাখি আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে তারা তিলে তিলে খুন করেছে। আমাদের সিপাহসালার বহু নেতাকে তিলে তিলে খুন করা হয়েছে।
অনেক সাংবাদিক আমাকে বলেন, আপনাদের কারা ২৪-এর এই আন্দোলনে শহীদ হয়েছে। আমি বলি, যারা শহীদ হয়েছে, তারা কোনো দলের হতে পারে না, তারা সবাই আমাদের সম্পদ। তারা বুক চিতিয়ে রাস্তায় নেমে বলছিল বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর। এই শহীদরা সবাই আমাদের সম্পদ। আবু সাঈদ কি করেছিল, সে কি হাতে গুলি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। না, সে শুধু বলেছিল আমার অধিকার দাও। কিন্তু এ জালিমরা ৩টা গুলি করে তাকে শহীদ করেছে।
আমরা এ সকল শহীদ পরিবারের কাছে ঋণী। আমরা প্রত্যেকটা পরিবারকে আশ্বস্ত করতে চাই, আমরা আপনাদের পাশে আছি। আমরা আমাদের সামর্থানুযায়ী আপনাদের পাশে আছি। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে লড়াই করে অধিকার আদায় করবো।
আমাদের ২ জন শীর্ষস্থানীয় নেতা তিনটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। আমরা গর্বের সাথে বলতে পারি তাদের হাত ছিল দুর্নীতিমুক্ত। সেই দলের মানুষগুলোই আজ জামায়াতে ইসলামী করেন। আল্লাহর রাসূল বলেছেন, যে রাষ্ট্রে মুসলমান থাকবে সংখ্যাগরিষ্ঠ সেখানে সংখ্যালঘুরা তাদের কাছে আমানত। কেউ যদি এ আমানত রক্ষা না করে তবে আমি কিয়ামতের দিন তার বিরুদ্ধে দাঁড়াবো।
মহানগর আমীর অধ্যক্ষ জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবরের সভাপতিত্বে ও মহানগর সেক্রেটারি মাওলানা মতিউর রহমানের সঞ্চালনায় প্রোগ্রামে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন, বরিশাল জেলা আমীর অধ্যাপক আব্দুল জব্বার, ভোলা জেলা আমীর জাকির হোসাইন, পটুয়াখালী জেলা আমীর অ্যাডভোকেট নাজমুল আহসান, ঝালকাঠি জেলা আমীর অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমান।
গৌরনদী (বরিশাল) সংবাদদাতা : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, এদেশের আকাশে কালো শকুনি ও কালো মেঘ ঘোরাফেরা করছে, আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। একদল লোক আছে যারা মানুষকে ভালোবাসে না, মানুষকে ধোঁকা দিয়ে, মানুষের সম্পদ লুট করে, এরা ডাকাত। যারা মানুষের ইজ্জত লুণ্ঠন করে, সম্পদ লুণ্ঠন করে, জীবন হরণ করে, মানুষকে খুন করে, গুম করে, আমরা তাদের শিখিয়েছি এটা না করে দেশের মানুষকে ভালোবাসতে। গত ১ ডিসেম্বর রোববার রাত ৮টার দিকে বরিশালের গৌরনদী বাসস্ট্যান্ডে উপজেলা জামায়াত আয়োজিত পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াতের আমীর রোববার বিকেলে সড়কপথে ফরিদপুর সদর থেকে বরিশালের উদ্দেশে রওনা হয়ে ওইদিন রাত ৮টার দিকে বরিশাল-ঢাকা সহাসড়কের গৌরনদী বাসস্ট্যান্ডে এসে পৌঁছেন। এরপর গৌরনদী উপজেলা জামায়াত আয়োজিত পথসভায় তিনি প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর গৌরনদী উপজেলা আমীর মাওলানা মো. আল-আমীনের সভাপতিত্বে পথসভায় বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামী বরিশাল জেলা ওলামা বিভাগের সভাপতি হাফেজ মাওলানা কামরুল ইসলাম খান, আগৈলঝাড়ার উপজেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক মো. আলাউদ্দিন মিয়া, গৌরনদী উপজেলা জামায়াতের সাবেক নায়েবে আমীর মাওলানা জাকির হোসেন, গৌরনদী উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মো. বায়েজিদ হোসেন শরীফ, পৌর জামায়াতের আমীর হাফেজ মাওলানা মো. হাফিজুর রহমান, সেক্রেটারি অধ্যাপক আজিজুর রহমান, গৌরনদী উপজেলা জামায়াতের অর্থ সম্পাদক মো. রুহুল আমীন সবুজ প্রমুখ। গৌরনদী উপজেলার সকল ইউনিয়ন পৌরসভার সকল নেতাকর্মী এবং আগৈলঝাড়ার উপজেলার সকল ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ পথসভায় উপস্থিত ছিলেন।
ঝালকাঠিতে ইউনিয়ন দায়িত্বশীল সমাবেশ
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, দেশকে স্থিতিশীল রাখতে জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। পতিত স্বৈরাচারের দোসররা নানামুখী চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করে দেশকে অস্থিতিশীল করতে উসকানি দিচ্ছে। এ ব্যাপারে দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। তারা যতই চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করুক, তাদের পাতানো ফাঁদে পা দেয়া যাবে না। একটি উগ্রগোষ্ঠী বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চট্টগ্রাম আদালতের এক আইনজীবীকে হত্যা করেছে। তারা চেয়েছিল বাংলাদেশকে উত্তপ্ত করতে। কিন্তু এদেশের শান্তিপ্রিয় মুসলমানরা তাদের সেই পাতানো ফাঁদে পা দেয়নি।
গত ২ ডিসেম্বর সোমবার সকাল সাড়ে ৮টায় ঝালকাঠিতে ইউনিয়ন দায়িত্বশীল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জেলা জামায়াতের আমীর ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য এডভোকেট হাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মোবারক হোসাইন, জামায়াত নেতা মাসুদ সাঈদী প্রমুখ। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।