মাওলানা নিজামীর শাহাদাতবার্ষিকীর আলোচনা সভায় রফিকুল ইসলাম খান

শহীদ নিজামীর খুনিদের বিচার এ বাংলার মাটিতে হবে, ইনশাআল্লাহ


১৫ মে ২০২৫ ১৫:১৯

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, শহীদ নিজামীর খুনিদের বিচার এ বাংলার মাটিতেই হবে, ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আর কোনো ফ্যাসিবাদকে আসতে দেওয়া হবে না। গত ১১ মে রোববার পাবনার সাঁথিয়া সরকারি ডিগ্রি কলেজ মাঠে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর শাহাদাত উপলক্ষে মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, মাওলানা নিজামী একটি ইতিহাস, একটি নাম। তাঁর সাথে সর্বশেষ দেখা হয়েছে জেলখানায়। সেদিন তিনি জীবনের অনেক কিছু আমার কাছে বলেছেন। তিনি বলেন, পাবনার এ সাঁথিয়ার নাম কয়জন জানতো-চিনতো? তাও আবার মন্মথপুরের ছেলে নিখিল পাকিস্তান ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ছিলেন।
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ভারত মাওলানা নিজামীর নেতৃত্বকে ভয় পেতো। ভারত জানতো, দুই মহিলার নেতৃত্ব না থাকলে মতিউর রহমান নিজামী বাংলাদেশের নেতৃত্বে দেবেন। তাই ভয় পেয়ে জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করতেই এ বিচারের আয়োজন করেছিল। মিথ্যা মামলা, মিথ্যা সাক্ষী, মিথ্যা তদন্ত কর্মকর্তা এবং মিথ্যা বিচারপতিদের দিয়ে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলেছে, এটা ছিল বিচারিক গণহত্যা। বাংলাদেশের মানুষ জানে, এটা (মাওলানা নিজামীর ফাঁসি) রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড।
তিনি বলেন, মিথ্যা ও প্রহসনমূলক বিচারের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। কারণ এরা খুনি। নইলে বাংলাদেশের জনগণ এদের বিচার করতে বাধ্য করবে। শুধু তা-ই নয়, হাসিনা তার বাহিনী দিয়ে গুম, খুন, হত্যা করেছে। কারাগারে আটক করে রেখেছিল অনেক মানুষকে। কারণ একটাই ক্ষমতা চিরস্থায়ী করা।
রফিকুল ইসলাম খান জোর দিয়ে বলেন, হাসিনা পালিয়েছে, তার মন্ত্রী-এমপিরা পালিয়েছে। আমাদের নেতারা ফাঁসির মঞ্চে কালেমা পড়তে পড়তে গিয়েছেন, কিন্তু পালাননি।
তিনি শহীদ মীর কাসেম আলীর উদাহরণ টেনে বলেন, তিনি বিদেশে থেকে যেতে পারতেন। তিনি এয়ারপোর্টে নেমে আমাকে ফোন করলেন। বললেন, নিজামী ভাইদের জেলে রেখে আমেরিকা থাকতে পারি না। আমাদের নেতারা পালাননি। আপনারা পালালেন কেন? শুধু প্রধানমন্ত্রী পালাননি। জাতীয় মসজিদের ইমাম পর্যন্ত পালিয়েছেন। তারা বাংলাদেশকে ভারতের করদরাজ্যে পরিণত করেছিলেন।
আমরা দাবি জানাই সকল গণহত্যার বিচার করতে হবে। ফাঁসিতে ঝুলিয়ে বিচার করতে হবে। অনেক ফ্যাসিবাদের দোসর পোশাক পরিবর্তন করে জুলাইযোদ্ধা সাজার চেষ্টা করছে। কোনো কিছুর বিনিময়ে তাদের প্রশ্রয় দেওয়া হলে প্রশ্রয়কারীদেরও একই কাতারে রাখা হবে। তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। পাচারের টাকা ফেরত আনতে হবে। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে আগে স্থানীয় নির্বাচন পরে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। যেনতেন নির্বাচন দেওয়া চলবে না। এই দেশ কারো বাপ-দাদার নয়। ১৮ কোটি মানুষ সিদ্ধান্ত নেবে তারা কাকে আগামী দিনে ক্ষমতায় পাঠাবে। সচিবালয় থেকে শুরু করে চায়ের দোকানে রব উঠেছে সব দল দেখা শেষ জামায়াতে ইসলামীর বাংলাদেশ।
রফিকুল ইসলাম খান উল্লেখ করেন, ফ্যাসিবাদী হাসিনা জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছে। হাসিনা পালিয়েছে, তার এমপিরা পালিয়েছে। তার বিচারপতিরা পালিয়েছে। কিন্তু এখনো জামায়াতের নিবন্ধন ফেরত দেওয়া হলো না কেন? নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, শহীদদের স্বপ্ন আল্লাহর আইন আর সৎ লোকের শাসন কায়েম না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে। জামায়াতে ইসলামী মানুষের কল্যাণে কাজ করছে। মাঝখানে কোনো বিরতি নেই।
রফিকুল ইসলাম খান বলেন, মাওলানা নিজামীর অবর্তমানে তার যোগ্য সন্তান ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান মোমেনকে রেখে গেছেন। তিনি বেঁচে থাকলে তিনি নির্বাচন করতেন। তার ছেলেকে আগামী নির্বাচনে সমর্থন এবং ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
শহীদ মাওলানা নিজামীর ছেলে ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান মোমেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও সাবেক জেলা আমীর মাওলানা আবদুর রহীম, জেলা আমীর অধ্যাপক আবু তালেব মণ্ডল, সিরাজগঞ্জ জেলা আমীর মো. শাহিনুর আলম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ডা. আবদুল বাসেত খান, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার নজরুল ইসলাম, জেলা নায়েবে আমীর মাওলানা জহুরুল ইসলাম খান, প্রিন্সিপাল ইকবাল হোসাইন, জেলা সেক্রেটারি মাওলানা আবদুল গাফফার খান, সাপ্তাহিক সোনার বাংলার চেয়ারম্যান একেএম রফিকুন্নবী প্রমুখ।
আবু তালেব মণ্ডল বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা চেয়েছিলেন আমাদের শীর্ষনেতাদের শহীদ করে জামায়াতে ইসলামীকে নির্মূল করতে। কী নির্মম পরিহাস, এক বছরের মধ্যে তাদেরকেই জনগণ নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, আজও আমাদের নেতা এটিএম আজহার ভাই মিথ্যা মামলায় কারাগারে। তিনি নির্দোষ। সাঁথিয়া বেড়া ইসলামের দুর্গে পরিণত হয়েছে। একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র নির্মাণ করে আমরা শহীদের প্রতি ফোটা রক্তের বদলা নেবো।
প্রিন্সিপাল ইকবাল হোসাইন বলেন, শুধুমাত্র দীনের দায়িত্ব পালনের কারণে আওয়ামী লীগ ২০১৬ সালের ১১ মে মাওলানা নিজামীকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়েছে। এটা মহান আল্লাহ তায়ালার সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, বাংলাদেশে একমাত্র জামায়াতে ইসলামী মজলুম দল। আগামী নির্বাচনে জামায়াত মনোনীত পাবনার ৫ প্রার্থীকে বিজয়ী করার আহ্বান জানান।
আবদুল গাফফার খান বলেন, শহীদের ময়দান থেকে আমরা ঘোষণা করতে চাই আওয়ামী লীগের ঠাঁই বাংলার মাটিতে হবে না। মাওলানা নিজামীর প্রতি ফোঁটা রক্তের মূল্য আদায় করে ছাড়বো।
ডা. আবদুল বাসেত খান বলেন, ১১ তারিখ মাওলানা নিজামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিল। তিনি সাঁথিয়াতে নিজামী সাহেবের ছেলে ব্যারিস্টার নাজিব মোমেনকে নির্বাচনে বিজয়ী করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বিজয় আমাদের কড়া নাড়ছে। আমরা নিজামী সাহেবের চরিত্র থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবো। ‘বুনইয়ানুমমারসুছ’ সিসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় আমরা থাকবো এবং পাবনায় জামায়াতে ইসলামীকে বিজয়ী না করে মাঠ ছাড়বো না।
শহীদ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মাওলনা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী, মাওলানা আবদুস সুবহানের ছেলে নেসার আহমেদ নান্নু, শহীদ আলী আহসান মুজাহিদের ছেলে আলী আহমাদ মাবরুর, শহীদ কামারুজ্জামানের ছেলে হাসান ইমাম ওয়াফি, শহীদ মীর কাসেম আলীর ছেলে ব্যারিস্টার আহমাদ বিন কাসেম আরমান, শহীদ আবদুল কাদের মোল্লার ছেলে হাছান জামিল মিলাদ মাহফিলে অংশ নেন।
বেড়া উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা মোজাম্মেল হক ও সাঁথিয়া উপজেলা সেক্রেটারি অধ্যাপক আনিসুর রহমানের সঞ্চালনায় মিলাদ মাহফিলে আরও বক্তব্য রাখেন সাঁথিয়া উপজেলা আমীর মাওলানা মোখলেসুর রহমান, বেড়া উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা আতাউর রহমান, পাবনা আলহেরা স্কুল এন্ড কলেজের সাবেক প্রিন্সিপাল মকসুদ আলম চৌধুরী, সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলা আমীর মাওলানা মিজানুর রহমান, ইসলামী ছাত্রশিবির পাবনা জেলা শাখার সভাপতি ইসরাইল হোসেন শান্ত, পাবনা শহর শাখার সভাপতি ফিরোজ হোসেন।
উপস্থিত ছিলেন পাবনা পৌর জামায়াতের আমীর উপাধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল লতিফ, জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি আবু সালেহ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের জেলা সভাপতি অধ্যাপক রেজাউল করিম। সভা শেষে ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান মোমেন দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।