নাগরপুর সদরের জমিদার বাড়ি এখন মহিলা কলেজ


১ মে ২০২৫ ২২:৫২

এম.এ. মান্নান, নাগপুর (টাঙ্গাইল) : টাঙ্গাইলের ইতিহাস ও ঐতিহ্যবাহী নাগরপুর মহিলা অনার্স কলেজের ইতিকথা। ইতিহাস থেকে যতদূর জানা যায়-সুবিদ্ধা-খাঁ-র সূত্র ধরেই চৌধুরী বংশ নাগরপুরে জমিদারি শুরু করেন।
চৌধুরী বংশের প্রথম পুরুষ যদুনাথ চৌধুরী। প্রায় ৫৪ একর জমির ওপর জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেন। তাদের বংশক্রমে দেখা যায়-এমন তার তিন ছেলে – উপেন্দ্র মোহন চৌধুরী, জগদীন্দ্র মোহন চৌধুরী, শশাঙ্ক মোহন চৌধুরী ।
ব্রিটিশ সরকার উপেন্দ্র মোহন চৌধুরীর বড় ছেলে সতীশ চন্দ্র রায় চৌধুরীকে সাধারণ জনগোষ্ঠীর জন্যে বিভিন্নমুখী সেবামূলক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ রায় বাহাদুর খেতাবে ভূষিত করে। ছোট ছেলে সুরেশ চন্দ্র রায় চৌধুরী অপেক্ষাকৃত পাশ্চাত্য সংস্কৃতিঘেঁষা। তিনি ছিলেন অনেকের চেয়ে সৌখিন প্রকৃতির মানুষ। তিনি ছিলেন খুব ক্রীড়ামোদী। উপমহাদেশের বিখ্যাত ফুটবল দল ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি। পাশ্চত্য এবং মোগল সংস্কৃতির মিশ্রণে এক অপূর্ব নান্দনিক সৌন্দর্যে নির্মিত এ বৈঠকখানা বিল্ডিংয়ের ওপরে ছিল নহবতখানা।
সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রতিদিন ভোর সকালে সানাই-এর ভৈরবী ধ্বনিতে চৌধুরী বংশের তথা এলাকার প্রজাবৃন্দের ঘুম ভাঙত। শোনা যায় রায় বাহাদুরের ছোট ভাই সুরেশ চৌধুরীকে নাগরপুরে রেখে সম্পূর্ণ রাজধানী কলকাতার আদলে নাগরপুরকে সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। চৌধুরী বাড়ির রঙ্গমহলের পাশে এক সুদৃশ্য চিড়িয়াখানা ছিল। সেখানে শোভা পেত ময়ূর, কাকাতোয়া, হরিণ, ময়না আর শেষ দিকে সৌখিন সুরেশ চৌধুরীর ইচ্ছায় চিড়িয়াখানায় স্থান করে নীল বাঘ এবং সিংহ। ১৯৪৭-এর দেশ বিভক্তির পর একসময় তদানীন্তন সরকার চৌধুরী বাড়ির সকল সম্পদ অধিগ্রহণ করে। অট্টালিকাটির অভ্যন্তরের পুরো কাজটি সুদৃশ্য শ্বেত পাথরে গড়া। বর্তমানে দৃশ্যমান চৌধুরী বাড়ির এই মূল ভবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নাগরপুর মহিলা অনার্স কলেজ। কলেজের কেঁচি গেটের মধ্যেই রয়েছে চারটি তালা উক্ত জমিদারি আমলের, এটা দৃশ্যমান।
অত্র কলেজের অধ্যক্ষ মো. আনিসুর রহমান জানান, ২৬-৮-১৯৮৯ ইংরেজি সালের কলেজ প্রতিষ্ঠালগ্নে এর নাম দেয়া হয়েছিল রওশন এরশাদ মহিলা বিদ্যালয়। এখানে জমিদারদের জমির পরিমাণ ছিল ২২ একর। কলেজের নামে বরাদ্দ দেয়া হয় ৫:৮১ একর।