কটিয়াদীতে মাঠভরা সবুজ ধানের শীষে কৃষকের স্বপ্ন
২৪ এপ্রিল ২০২৫ ১৯:২৭
মো. আশরাফুল ইসলাম সুমন, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ): বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে জমিতে সোনালি ধান রোপণ করেন গ্রামের মেহনতি কৃষকরা। ঘামঝরানো শ্রমের বিনিময়ে উৎপাদিত এসব ধানের ন্যায্য মূল্য পেয়ে আপনজন নিয়ে কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্যে থাকবেন- এমনটাই আশা তাদের। এর ব্যতিক্রম নয় এ উপজেলার কৃষকরা। কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে ঘন সবুজের সমারোহ। বাতাসে বোরো ধানের সবুজ ঢেউ উপজেলার সকল কৃষকের মন ভরিয়ে দিচ্ছে। ঢেউয়ের মতো খেলে যাচ্ছে ধানগাছের সবুজ পাতা ও কাঁচা শীষ। কয়েকদিনের মধ্যেই শীষে দুধ-দানা গঠন শুরু হবে।
আর এমন সবুজ সমুদ্রের ঢেউয়ে দুলে উঠছে প্রকৃতি। ইরি-বোরো ধানের শীষে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। ধানের কাঁচা শীষ দেখে আনন্দে বুকভরে ওঠে কৃষকের। যেন হারিয়ে যায় সবুজ মাঠে। দিগন্তজোড়া সবুজ ফসলের মাঠ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরো বিকশিত করে তুলেছে।
অনুকূল আবহাওয়া, কৃষকের নিবিড় পরিচর্যা, যথাসময়ে জমিতে সার ও কীটনাশক প্রয়োগের কারণে বোরোর বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগ। ফলে মাঠে দোল খাওয়া নতুন ধানের নতুন স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। উপজেলা কৃষি অফিসসূত্রে জানা যায়, চলতি বছর উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ১২ হাজার ৩১০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড জাতের ৪৬১০ হেক্টর, উফশী জাতের ৭ হাজার ৬৫০ হেক্টর এবং স্থানীয় জাতের ৫০ হেক্টর জমি। কদিন পরেই ধানের সবুজ চারা এবং কাঁচা শীষ হলুদ বর্ণ ধারণ করবে। এরপর সোনালি ধানের শীষে ঝলমল করবে মাঠের পর মাঠ। মাঠভরা ফসলের স্বপ্ন দেখে কৃষকদের চোখে মুখে ফুটে উঠবে আনন্দের ছোঁয়া। রাশি রাশি সোনালি ধানে ভরে উঠবে কৃষানির শূন্য গোলা। বোরো মৌসুমকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখে এ অঞ্চলের চাষিরা। এ বছর নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ছিল। সার, বীজ ও বালাইনাশক সংকট ছিল না। ফলে ফসলের মাঠ অনেক সুন্দর হয়েছে। তাই এবার ধানের বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চলতি বোরো মৌসুমে ইরি-বোরো ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা।
সরেজমিন দেখা গেছে, কটিয়াদী চান্দপুর ইউনিয়নের ম-লভোগ গ্রামের ইরি-বোর ধানের মাঠে সবুজের সমারোহ। ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটছে কৃষকের। কৃষকরা মাঠে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধানগাছের পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেছে। মাঠে সেচ, সার, কীটনাশক প্রয়োগ, আগাছা পরিষ্কার এবং পার্চিং ব্যবহার করেছেন কেউ কেউ।
কৃষকরা জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ধানক্ষেতে পোকামাকড়ের আক্রমণ, কিছুটা ব্লাস্ট রোগ হয়েছে। তারপরও চলতি মৌসুমে বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। এখন আবার কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টির আশঙ্কার ফলে বোরো ধানের ফলন ঘরে তুলা নিয়ে কৃষক-কৃষানিরা দুশ্চিন্তায় সময় পার করছেন।
কৃষকরা আরো জানান, কৃষি অফিসের সহযোগিতা ও পরামর্শে চাষাবাদকৃত ইরি-বোরো ধান গতবারের চেয়ে এবার ভালো হয়েছে। বৈশাখ মাসের মাঝামাঝি ধান কাটা শুরু হবে। তখন পূরণ হবে কৃষকের স্বপ্ন।
উপজেলার ম-লভোগ গ্রামের কৃষক ওসমান গনি মশাল ও আব্দুল কাইয়ুম গঙ্গা বলেন, চলতি বছর ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছি। কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে বিগত বছরের তুলনায় এবার ভালো ফলন ঘরে তুলতে পারব। কটিয়াদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম জানান, ইরি-বোরো ধানের বাম্পার ফলন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে আমরা মাঠপর্যায়ে কাজ করছি। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। তাই ইরি-বোরো ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছি। অল্প কিছুদিনের মধ্যে ধান পাকা শুরু হয়েছে। এ বছর কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য পাবে।