মূল্যবোধের সাংঘর্ষিক সুপারিশ প্রত্যাখ্যান, নয়া কমিশন দাবি
২৪ এপ্রিল ২০২৫ ১৯:০৪
স্টাফ রিপোর্টার : নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে ৪৩৩টি সুপারিশ প্রতিবেদন আকারে দাখিল করে। ওই প্রস্তাবগুলো নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে ইসলাম ধর্মের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন রয়েছে অনেক সুপারিশে। কোনো কোনো সুপারিশে সমাজের বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। ফলে কমিশনের সব সুপারিশ বাতিল এবং পুরো কমিশন বাতিলের দাবি উঠেছে সব মহল থেকে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ সব ইসলামী দল, আলেম সমাজ, অরাজনৈতিক সংগঠন এবং অধিকাংশ নাগরিক এ সুপারিশের বিপক্ষে অবস্থান করছেন। ইতোমধ্যে এ কমিশনের সুপারিশের বিরুদ্ধে সোচ্চার দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। দেশের সাধারণ মানুষও এমন কমিশনের এমন সুপারিশে বিব্রত। রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন এবং নাগরিকরা এ সব সুপারিশ বাতিল এবং পুরো কমিশন বাতিল করে নতুন কমিশন গঠনের দাবি জানান।
কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ : বেসরকারি সংস্থা ‘নারীপক্ষ’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরীন পারভীন হককে প্রধান করে গত ১৮ নভেম্বর নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। কমিটি ২০ এপ্রিল সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। সেখানে ৪৩৩টি সুপারিশ করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ওই কমিশনের কিছু সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছেন বলে গত ১৯ এপ্রিল শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। কমিশন মোটাদাগে সংবিধান, আইন ও নারীর অধিকারÑ এ তিন বিষয়ে সুপারিশ করেছে, যেখানে সমতা ও সুরক্ষার ভিত্তি জোরালো করার কথা বলা হয়েছে। নারীর অগ্রগতির জন্য আছে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও জাতীয় সংস্থাগুলোর দক্ষতা বাড়ানোর সুপারিশও এসেছে। গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো হলো অভিন্ন পারিবারিক আইনের মাধ্যমে সব ধর্মের নারীদের জন্য বিয়ে, তালাক, উত্তরাধিকার ও ভরণপোষণে সমান অধিকার নিশ্চিত করা। অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইন, ১৮৯০ সংশোধন করে সন্তানের ওপর নারীর জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করা। পরবর্তী সময়ে নির্বাচিত সরকারের জন্য বিভিন্ন ধর্মের পারিবারিক আইন সংশোধন করা এবং মুসলিম ও অন্যান্য ধর্মীয় উত্তরাধিকার আইন সংশোধন করে নারীদের সম্পত্তিতে ৫০-৫০ ভাগ নিশ্চিত করা। সংসদীয় আসন বাড়িয়ে ৬০০ করে সেই আসন থেকে ৩০০ আসন নারীর জন্য সংরক্ষিত রেখে সরাসরি নির্বাচন। বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ককে ধর্ষণ হিসেবে ফৌজদারি আইনে অন্তর্ভুক্ত করা। যেকোনো উপস্থাপনায় অহেতুক নারীর প্রসঙ্গ টেনে নারীবিদ্বেষী বয়ান, বক্তব্য ও ছবি পরিবেশন থেকে বিরত থাকা। শ্রম আইন সংশোধন করে যৌনকর্মীদের মর্যাদা ও শ্রম অধিকার নিশ্চিত করা।
পাশাপাশি নারীর মৃত্যুদ- বিলোপ করা, যৌন পেশাকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত না করা এবং শ্রম আইন সংশোধন করে যৌনকর্মীদের মর্যাদা ও শ্রম অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। আন্তর্জাতিক চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ‘নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদের (সিডো) দুটি ধারার ওপর সংরক্ষণ প্রত্যাহার, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার ১৮৯ ও ১৯০ অনুচ্ছেদ অনুস্বাক্ষর করার সুপারিশ করেছে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন। একই সঙ্গে সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো সব প্রতিষ্ঠানে মাতৃত্বকালীন ছয় মাস ছুটি দেয়া এবং পূর্ণ বেতনসহ পিতৃত্বকালীন ছুটি দেয়া, প্রতিষ্ঠানগুলোয় শিশু দিবাযতœ কেন্দ্র স্থাপনের মতো সুপারিশ রয়েছে প্রতিবেদনে। কমিশনের প্রতিবেদনে গণমাধ্যমের প্রতিটি শাখা ও স্তরে ৫০ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা ২০১৪ অনুসরণ করে সব ধরনের গণমাধ্যমে নারীর নেতিবাচক উপস্থাপন বন্ধ করার সুপারিশ করা হয়েছে। গণমাধ্যমে অংশগ্রহণের জন্য নারীকে যৌনবস্তু হিসেবে ব্যবহার না করা, অহেতুক নারীর প্রসঙ্গ টেনে নারীবিদ্বেষী বয়ান বন্ধ করার সুপারিশ করা হয়েছে। নারীর স্বার্থ ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় পর্যায়ের উন্নয়ন, নারী ও মেয়েশিশুর জন্য সহিংসতামুক্ত সমাজ, জনপ্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণ, নারীর অগ্রগতির জন্য শিক্ষা, প্রযুক্তি ও দক্ষতা বাড়ানো, সব বয়সি নারীর জন্য সুস্বাস্থ্য, শ্রমে অংশগ্রহণ ও সম্পদের অধিকার, নারী শ্রমিকের নিরাপদ অভিবাসন, দারিদ্র্য হ্রাসে টেকসই সামাজিক সুরক্ষা, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিতে নারীর অন্তর্ভুক্তি ও বিকাশ, দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা নারীদের জীবন ও সম্পদ রক্ষার সুপারিশ করা হয়েছে।
বিস্মিত আমীরে জামায়াত
নারী সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। তিনি তার ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে এ বিস্ময় প্রকাশ করেন। তার দেওয়া পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো। ‘১৯ এপ্রিল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন। তাদের সুপারিশকৃত রিপোর্ট দেখে বিস্মিত! দেশে যখন নৈতিকতার অভাবে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক এবং পারিবারিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে, সেই প্রেক্ষাপটে নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের ভিত্তিতে সামাজিক শৃঙ্খলা ও সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনার পরিবর্তে উক্ত সুপারিশমালায় এমন কিছু গর্হিত বিষয় নিয়ে আসা হয়েছে, তা সমাজকে অনিশ্চয়তা ও চরম অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিবে। কতিপয় সুপারিশ কুরআন এবং হাদিসের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। পাশাপাশি সকল ধর্মের মূল্যবোধকে তছনছ করে দিবে। বাংলাদেশের জনগণ একবাক্যে তা প্রত্যাখ্যান করবে।’
ওলামা মাশায়েখ পরিষদ
দেশের শীর্ষ ওলামায়ে কেরাম নির্দিষ্ট মতাদর্শিক আন্দোলনের নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করে গভীর ক্ষোভ জানিয়ে এক যৌথভাবে বিবৃতি প্রদান করে বলেন, উক্ত প্রতিবেদন নির্দিষ্ট মতাদর্শের রুচির বহিঃপ্রকাশ। এর সাথে আমাদের দেশের স্বকীয়তা, মৌলিক বিশ্বাস ও বাঙালি নারীর কোনো সম্পর্ক নেই ।
শীর্ষ ওলামায়ে কেরাম বলেন, নারী সংস্কার কমিশন গত ১৯ এপ্রিল শনিবার প্রধান উপদেষ্টার নিকট যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, তার প্রস্তাবনা, ভাষা, যুক্তি গোটা জাতিকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে। এটা বিজাতীয় ধর্মবিমুখ, পরিবার বিচ্ছিন্ন ও ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদের বিকৃত রুচির বিকাশের বহিঃপ্রকাশ। এটা তথাকথিত ফ্যামিনিস্টদের পক্ষ থেকে এদেশের নারীর হাজার বছরের আকিদা-বিশ্বাস, নৈতিকতা, তাহজীব তামাদ্দুন ও সভ্যতা-সংস্কৃতির সাথে সম্পূর্ণরূপে সাংঘর্ষিক। এ বিতর্কিত প্রশ্নবিদ্ধ কমিশন বাংলাদেশের নারীদের সর্বসাধারণের আদৌ প্রতিনিধিত্ব করে না।
ওলামায়ে কেরাম বলেন, প্রতিবেদনে এক জায়গায় উপশিরোনাম করা হয়েছে, “পুরুষের ক্ষমতা ভেঙে গড়ো সমতা”। এ ধরনের ভাষা ও প্রতিপাদ্যই নির্ধারিত ইসলামবিদ্বেষী গোষ্ঠীর চিন্তা ও সমাজ বিচ্ছিন্নতা প্রমাণ করে। বাঙালি নারী কখনোই পুরুষকে প্রতিপক্ষ ভাবেনি, বরং সহযোগী ও সহকর্মী ভেবে সামাজিক সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ।
শীর্ষ ওলামায়ে কেরাম প্রধান উপদেষ্টার কাছে জোর দাবি জানিয়ে বলেন-
১. নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনকে এখনই বাতিল করতে হবে।
২. তাদের বিতর্কিত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করতে হবে।
৪. বাংলাদেশের নারী সমাজের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে দেশের হাজার বছরের আকিদা-বিশ্বাস, নৈতিকতা ও তাহজীব তামাদ্দুম সভ্যতা-সংস্কৃতির অনুকূল সংস্কার প্রস্তাব তৈরি করতে হবে।
৫. বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য সংস্কারের নামে সরাসরি কুরআন-সুন্নাহবিরোধী প্রস্তাবনা পেশ করার মতো স্পর্ধা যারা দেখিয়েছে এবং তাদের দোসরদের এখনই স্তব্ধ করতে হবে।
শীর্ষ ইসলামিক স্কলারগণ আরো বলেন, অনতিবিলম্বে এ প্রশ্নবিদ্ধ প্রস্তাবনা বাতিল করে এ দেশের আপামর জনতাকে শান্ত করুন। অন্যথায় উদ্ভূত যেকোনো পরিস্থিতির জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেই দায় নিতে হবে।
শীর্ষ স্কলারগণ হলেনÑ অধ্যক্ষ মাওলানা যাইনুল আবেদীন, ইসলামী কানুন বাস্তবায়ন পরিষদের আমীর মাওলানা আবু তাহের জিহাদী, মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ আশরাফী, সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদের মহাসচিব ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, হক্কানী পীর মাশায়েখ পরিষদের মহাসচিব মাওলানা শাহ আরিফ বিল্লাহ সিদ্দীকি প্রমুখ।
নারী সংস্কার কমিশন বাতিলসহ ৫ দাবিতে মহাসমাবেশের ডাক হেফাজতের
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল, ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর শাপলা চত্বরে সংঘটিত গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করাসহ পাঁচ দফা দাবিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। আগামী ৩ মের মধ্যে এসব দাবি মানা না হলে আরও বড় আকারে কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেয় তারা। গত রোববার (২০ এপ্রিল) রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশে (আইডিইবি) দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের এক জরুরি বৈঠক শেষে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন সংগঠনের মহাসচিব সাজিদুর রহমান। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আমীর শাহ মহীব্বুল্লাহ বাবুনগরী। বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে সাজিদুর রহমান বলেন, আজকে হেফাজতে ইসলামের মজলিসে আমেলা বা নির্বাহী পরিষদের মিটিংয়ে সর্বসম্মতিক্রমে আগামী ৩ মে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
পরে মহাসমাবেশের দাবিসমূহ তুলে ধরেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রথম দাবি, ফ্যাসিবাদী আমলে হেফাজতে ইসলামের নেতাদের নামে অসংখ্য মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে, তা প্রত্যাহার করে ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে এবং ২০২১ সালের মোদিবিরোধী আন্দোলনে হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের হত্যাকা-সহ সকল হত্যাকা-ের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে।’
কমিশন বাতিল করে নতুন কমিশন গঠনের দাবি আহমাদুল্লাহর
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ। তিনি তার ফেসবুক পেজে বিশাল এক পোস্ট দিয়ে প্রতিবেদনটির বিরুদ্ধে তার অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, “নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন এমন কিছু প্রস্তাব দিয়েছে, যা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্ম, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তার ভাষায়, এ প্রতিবেদনটি পুরোপুরি দেশবাসীর বিশ্বাস, চিন্তা এবং আকাক্সক্ষাকে উপেক্ষা করেছে। তিনি আরও বলেন, প্রতিবেদনে পরিবারের মূল্যবোধ ধ্বংস করার উদ্দেশ্য স্পষ্ট, যা দেশের সমাজ ব্যবস্থার জন্য ক্ষতিকর। তিনি আরও বলেন, ‘এ সরকারের প্রতিষ্ঠা হয়েছে শহীদের রক্তে, কিন্তু এ কমিশন সেই শহীদদের আত্মত্যাগের মূল্য জানে না। প্রতিবেদনটি তাদের বিশ্বাস এবং মূল্যবোধের প্রতি কোনো শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে না, বরং তাদের প্রতি অশ্রদ্ধা ও অপমানের একটি চিহ্ন।’ শায়খ আহমাদুল্লাহ অভিযোগ করেন, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন মূলত পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করে এবং তাদের একটি বিশেষ শ্রেণির নারী নেত্রীরা, যারা দীর্ঘদিন ধরে ধর্মীয় বিশ্বাস, সামাজিক মূল্যবোধ এবং পরিবার ব্যবস্থা ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে। তিনি আরও দাবি করেন যে, এ কমিশন দেশের সাধারণ মানুষের জীবনধারা এবং মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়। কমেন্ট বক্সে তিনি বলেন, “এরা যদি পরিবার ব্যবস্থাপনা এবং সুখী দাম্পত্য জীবনে পশ্চিমাদের চেয়ে এক শত বছর পিছিয়ে থাকে, তবে তাদের থেকে আমাদের সমাজে প্রবাহিত বস্তাপচা আদর্শ আমদানি করার কোনো মানে হয় না।” শায়খ আহমাদুল্লাহর মতে, এ প্রতিবেদন অবিলম্বে বাতিল করতে হবে এবং একটি নতুন নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন করা উচিত, যা দেশের সমাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে।
সংস্কার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান ও কমিশনটি বাতিল চায় ইসলামী আন্দোলন
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের কড়া সমালোচনা করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও দলের মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান। গত ২১ এপ্রিল সোমবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, পতিত স্বৈরাচারের জঞ্জাল দূর করতে জাতি একটি সামগ্রিক সংস্কারের প্রত্যাশা করছে। সেই সংস্কার হবে দেশের মানুষের বিশ্বাস, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ নিশ্চিত করার জনআকাক্সক্ষার প্রতিফলন। তিনি বলেন, সংস্কার নিয়ে সরকারের বিভিন্ন কমিশনের প্রস্তাব মানুষের প্রত্যাশার সঙ্গে অনেকটাই সাযুজ্যপূর্ণ হলেও নারীবিষয়ক কমিশনের প্রস্তাব মানুষের বিশ্বাসে আঘাত করেছে। এ ধরনের প্রস্তাব জনরোষ উসকে দেবে এবং তা পতিত ফ্যাসিবাদকে সুযোগ করে দেবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি দাবি করেন, সরকারকে অবিলম্বে নারীবিষয়ক কমিশনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে হবে এবং কমিশনটি বাতিল করতে হবে।