ইসলামী চিন্তাবিদ প্রফেসর ড. খুরশিদ আহমদের ইন্তেকাল
১৭ এপ্রিল ২০২৫ ১৪:১১
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইসলামিক ফাউন্ডেশন ইউকে’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নায়েবে আমীর অর্থনীতিবিদ ও দার্শনিক অধ্যাপক ড. খুরশিদ আহমদ গত ১৩ এপ্রিল রোববার যুক্তরাজ্যের লেস্টারের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয় ইন্না ইলাহি রাজিউন)। তার ইন্তেকালের খবরে মুসলিম বিশ্বের চিন্তাবিদ ও সচেতন মুসলমানরা শোকাহত। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ইসলামী সংগঠনের নেতা ও বিশিষ্ট আলেমগণ শোক প্রকাশ করেছেন।
প্রফেসর খুরশিদ আহমদ জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩২ সালের ২৩ মার্চ। তিনি যুক্তরাজ্যের লেস্টারে অবস্থিত দ্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামী দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ২০০২ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের সিনেট সদস্য ছিলেন।
খুরশিদ আহমদ যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব লেস্টার থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং তাঁর গবেষণার মূল বিষয় ছিল ইসলামিক অর্থনীতি। ১৯৮০-এর দশকে জেনারেল জিয়াউল হকের শাসনামলে পাকিস্তানের ইসলামাইজেশন প্রক্রিয়ার সময় তিনি একজন প্রভাবশালী উপদেষ্টা হিসেবে ভূমিকা পালন করেন। অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৮৮ সালে তিনি ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। ২০১১ সালে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘নিশান-ই-ইমতিয়াজ’ এবং ১৯৯০ সালে ‘কিং ফয়সাল ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ফর সার্ভিস টু ইসলাম’ পুরস্কারে ভূষিত হন।
প্রফেসর খুরশিদ আহমদ দীন ইসলামের খেদমত ও যুক্তরাজ্যের লেস্টারে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার জন্য এ কিং ফয়সাল পুরস্কারে ভূষিত হন। প্রফেসর আহমদ পাকিস্তানে ইসলামিক অর্থনৈতিক গবেষণার আন্তর্জাতিক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এর পাশাপাশি জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভিত্তির বৈজ্ঞানিক পরিষদে তাঁর অসাধারণ অবদানও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
একাডেমিক লাইফে খুরশিদ আহমদ আইন ও ফিকাহ বিষয়ে দুটি স্নাতক ডিগ্রি, অর্থনীতি ও ইসলামিক স্টাডিজে দুটি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং শিক্ষা ও ইসলামিক অর্থনীতিতে দুটি সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত একজন পণ্ডিত ও ইসলামী কর্মী হিসেবে প্রফেসর খুরশিদ আহমদ ৭০টি গ্রন্থ রচনা ও সম্পাদনা করেছেন, যার মধ্যে ইংরেজি ও উর্দু ভাষায় সমানসংখ্যক ৩৫টি করে বই রয়েছে। এছাড়া তিনি অসংখ্য প্রবন্ধ রচনা করেছেন এবং বিশ্বব্যাপী অন্তত ১০০টিরও বেশি সেমিনারে অংশগ্রহণ করেছেন। মাওলানা মওদূদী রহ.-এর সিলসিলা হিসেবে তিনি ‘তর্জুমানুল কুরআন’ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
প্রফেসর খুরশিদ ইসলামী ধর্মীয়, একাডেমিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংবিধানিক বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বহু প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি পাকিস্তানের ইনস্টিটিউট অব পলিসি স্টাডিজের চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়া তিনি করাচি ও লাহোরের ইসলামিক রিসার্চ একাডেমির ভাইস-প্রেসিডেন্ট এবং ইসলামাবাদের ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, জর্ডানের রয়্যাল একাডেমি ফর ইসলামিক সিভিলাইজেশন এবং নাইজেরিয়ার জারিয়ায় অবস্থিত ইসলামিক সেন্টারের বোর্ডের সদস্য ছিলেন। তিনি পাকিস্তানের ফেডারেল মন্ত্রী (পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও পরিসংখ্যান মন্ত্রণালয়), করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
তার মতো ঈর্ষণীয় ক্যারিয়ারের অধিকারী ইসলামী চিন্তাবিদ ও নেতা খুবই দুর্লভ। সাপ্তাহিক সোনার বাংলা পরিবার তার ইন্তেকালে শোকাহত। আল্লাহ পাক যেন এ অসাধারণ ব্যক্তিত্বের যাবতীয় নেক আমল কবুল করে তাকে জান্নাত নসীব করেন। আমিন।