নূরুন্নাহার নীরু-এর কবিতা

একটা ভাষার বসন্ত চাই


২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৫:৪৭

এক বসন্তে আমি ইকো পাহাড়ের
রন্ধ্রে রন্ধ্রে বেজে যাওয়া প্রতিধ্বনি শুনছিলাম
“আমার কণ্ঠে বাজে না বাসন্তী রাগ,
আসে না ফাগুন শুভেচ্ছা-
সব বেসুরো হয়ে কেমন উল্টোরথে মোড় নেয়।
এসব তোমরা দেখেও দেখ না!
শুনেও শোন না!
কেউ শুনতে পায় না আমার চাপা গোঙানি।
তানপুরার তানে ওরা বিভোর ভালোবাসা বিনিময়ে-
এই বসন্তে।
কাঁটা তারের বেষ্টনে আবদ্ধ উন্মুখ প্রহরীর জীবন।
এখানে ভাষারা ম্রিয়মাণ। ইতিহাস পলায়নরত।

পাহাড়ের চিৎকারে কর্ণকূহূর স্তব্ধ করে দৃষ্টি ফেরাতেই দেখি
মুহুর্মুহু মৃত্যুর দাবানল প্রতিহিংসায় মত্ত।
লাশেরা মিছিল করে পৃথিবী ছেড়ে পালাচ্ছে;
আদমের সন্তানেরা শাখামৃগ হয়ে বেড়াচ্ছে।
রক্তে রাঙা বর্ণমালা অভাগীর মতো দাঁড়িয়ে আছে।
পাঁচমিশালী ভাষায় কৃত্রিম এক স্লোগান চলছে।
কোনো ভিন গ্রহে এসে পড়িনি তো?
চিমটি কেটে ধীশক্তি ফিরে বুঝতে চেষ্টা করলাম
কোকিল ডাকছে তো?
পলাশ ফুটেছে কি?
অবারিত সবুজে আবর্তিত হচ্ছে কি আমার বাংলাদেশ!

ওই তো কানায় কানায় ভরেছে শহীদ মিনার
লৌকিকতার অর্ঘ্য!
শহীদের আত্মারা চিৎকার করে বলছে-
আর চাই না কোন অবিমৃষ্য বয়ান,
চাই অসুন্দরের প্রতিবিম্বহীন একটা নতুন বসন্ত,
যেখানে থাকবে ঐতিহ্যে মোড়ানো আদম-হাওয়ার
প্রথম প্রেমের গল্প।
থাকবে বংশধারায় চলে আসা মানবমানবীর শাশ্বত পরিচিতি,
বর্ণমালার আখরে চেনা দুর্বার বসন্ত।
আবারো পবিত্র প্রেমের চিরায়ত বন্ধন চাই,
দিবসের বেষ্টনে বন্দী হয়ে নয়! প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ।

আমিও সুর মিলিয়ে বললাম চাই,
চাই আর একটা শুদ্ধ বসন্ত। পবিত্র স্মৃতির বসন্ত।
চিরন্তন রক্তে কেনা বাংলা ভাষার বস।