উদ্ভট দাবি আদায়ের আন্দোলনে অতিষ্ঠ নগরবাসী
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৪:১৩
স্টাফ রিপোর্টার : নানা ধরনের দাবি আদায়ে আন্দোলনে রাজধানীবাসী অতিষ্ঠ। কারণ অনেক আন্দোলনেরই কোনো যৌক্তিগতা নেই। আর বেশিরভাগ আন্দোলনে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের ইন্ধন রয়েছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে সরকার নিশ্চিত হয়েছে। এসব আন্দোলনকারী প্রায় সবাই আওয়ামী লীগ আমলের সুবিধাভোগী। প্রায় সবারই চাকরি হয়েছে আওয়ামী লীগের সময়, অনেক ক্ষেত্রে নিয়মবহির্ভূতভাবে। সরকার শুরুতে বেশকিছু ষড়যন্ত্র সফলভাবে মোকাবিলা করেছে। যারা বিভিন্ন ব্যানারে আন্দোলনে রয়েছে, তাদের অনেকের পেছনেই রয়েছে একেকটা গল্প। গত কয়েকদিন ধরে আন্দোলনে ছিলেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকরা। তারা শাহবাগে সড়ক অবরোধ করেন। এদের সরাতে লাঠিচার্জ ও জলকামান ব্যবহার করতে হয় পুলিশকে। এ আন্দোলন চলাকালে ছাত্রলীগের সাবেক সেক্রেটারি সিদ্দিকী নাজমুলের একটি কথোপকথন ভাইরাল হয়। হোয়াটসঅ্যাপে ভাইরাল হওয়া ওই কথোপকথনে শিক্ষকদের আন্দোলনে ঢুকে কীভাবে লাশ ফেলতে হবে, সেই নির্দেশনা ও কৌশল বলে দেওয়া হয়। এভাবে প্রায় সব আন্দোলনে ইন্ধন রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। এসব শক্ত হাতে দমন করতে সরকাকে পরামর্শ দিয়েছেন রাজনীতিকরা।
চার দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে, মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছেন তারা। শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- অবিলম্বে শূন্য পদে নিয়োগ ও নতুন পদ সৃষ্টি; প্রতিষ্ঠানের নাম ও কোর্স কারিকুলামের সংশোধন; ক্লিনিক্যাল বিষয়ে উচ্চশিক্ষা এবং স্বতন্ত্র শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠা। গত জানুয়ারিতেও ম্যাটস শিক্ষার্থীরা এসব দাবিতে কারওয়ান বাজার ও জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবরোধ ও বিক্ষোভ করেন। দেশে ১৬টি সরকারি ও ৫১টি বেসরকারি অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল আছে। এসব ট্রেনিং স্কুল থেকে তিন বছরের কোর্স সম্পন্ন করলে শিক্ষার্থীরা ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল ফ্যাকাল্টি ডিগ্রি পান। তারা বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ‘স্বাস্থ্য সহকারী’ হিসেবে চাকরির সুযোগ পান।
এদিকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তি ও তাদের স্বজনদের একটি অংশ আন্দোলনে রয়েছেন। শহীদ পরিবারের স্বজনরা তিন দফাও জানিয়েছেন। তাদের দাবিগুলো হলো বৈষম্য নিরসনে আহতদের তিনটি ক্যাটাগরি বাদ দিয়ে দুটি ক্যাটাগরি করা, প্রান্তিক এলাকায় আহতদের চিকিৎসার সুবিধার্থে টোল ফ্রি হটলাইন সেবা চালু করা এবং আহতদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও তাদের সুরক্ষায় আইন করা। শহীদ পরিবারের স্বজন ও আহতদের প্রতিনিধির সঙ্গে বসে দাবিগুলো নিয়ে পর্যালোচনা সাপেক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ সাধারণ মানুষের। কারণ তারা অভ্যুত্থানের অংশীজন।
এদিকে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা সেনানিবাসে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে গত ৫০ দিনে সেনাবাহিনীর কার্যক্রমের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন সেনাসদর মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটর কর্নেল স্টাফ মো. শফিকুল ইসলাম। ওই ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, গত ৫০ দিনে দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে ৮৮টি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে উদ্ভূত ৩০ বার মূল সড়ক অবরোধ নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া গত এক মাসে ৪২টি বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে, যার মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি অফিস, রাজনৈতিক কোন্দল এবং অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের ঘটনাও ছিল।
তিনি বলেন, ২৮ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৫০ দিনে সেনাবাহিনীর কার্যক্রমের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী ১৭২টি অবৈধ অস্ত্র এবং ৫২৭ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে।
এ সময়কালে দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে (মূলত গাজীপুর, আশুলিয়া ও সাভার) ৮৮টি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে উদ্ভূত ৩০বার মূল সড়ক অবরোধ নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে। কারখানাগুলোকে চালু রাখার জন্য মালিকপক্ষ, শ্রমিকপক্ষ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, শিল্পাঞ্চল পুলিশ, বিজিএমইএসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সমন্বয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে বর্তমানে দেশের ২ হাজার ৯৭টি পোশাক কারখানার মধ্যে গুটিকয়েক (বেক্সিমকো গ্রুপ, সাউদার্ন ডিজাইনারস লিমিটেড, স্বাধীন গার্মেন্টস প্রাইভেট লিমিটেড এবং সেলফ ইননোভেটিভ ফ্যাশন লিমিটেড) ছাড়া সকল কারখানাই চালু রয়েছে। শিল্পাঞ্চল ছাড়াও সেনাবাহিনীর সদস্যরা গত এক মাসে ৪২টি বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে, যার মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত ঘটনা ছিল ১৪টি, সরকারি সংস্থা/অফিস সংক্রান্ত তিনটি, রাজনৈতিক কোন্দল ৯টি এবং অন্যান্য ঘটনা ছিল ১৬টি।