বইমেলায় বাড়ছে ক্রেতা ও দর্শনার্থী


১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৪:৩৮

স্টাফ রিপোর্টার : শুরুতে ক্রেতা আর দর্শনার্থী কম থাকলেও ক্রমেই বইমেলায় বেচাকেনা জমে উঠেছে। মেলার ১২তম দিনে এসে রূপ নিয়েছে উৎসবে। গল্প-আড্ডার সঙ্গে বেড়েছে বিক্রিও। মেলায় আসা দর্শকদের সবাই বই না কিনলেও এখন ক্রেতা বাড়ছে। স্টলে থাকা বিপণন কর্মীরা বলছেন, এখন দিন যাবে আর বিক্রি বাড়বে। অমর একুশে বইমেলা ২০২৫-এ গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, কবিতা, শিশুসাহিত্য, জীবনী, মুক্তিযুদ্ধ, নাটক, বিজ্ঞান, ইতিহাস, রাজনীতি, গণঅভ্যুত্থান, ধর্মীয়, অনুবাদ, অভিধানসহ অন্যান্য ধরনের বই আসছে। এবারের মেলায় সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে, তবে নিষিদ্ধ তসলিমা নাসরিনের বই প্রকাশ ও বিক্রি নিয়ে দর্শনার্থীদের মধ্যে হট্টগোল হয়, পরে এ বিষয়ে তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়।
বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগ থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ১২ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে বইমেলার ১২তম দিনে মেলার গেট খুলেছে বিকেল ৩টায়। মেলা চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। এদিন বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘গণঅভ্যুত্থান ২০২৪-এর কবিতা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এদিন প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হাসান রোবায়েত। আলোচনায় অংশ নেন মঈন জালাল চৌধুরী এবং আশফাক নিপুণ। এতে সভাপতিত্ব করেন কবি ফরহাদ মজহার।
বই তাৎপর্যপূর্ণ উৎসবে পরিণত হয়েছে। সারা বছর বই নিয়ে কোনো চিন্তাভাবনা, পঠন-পাঠন না থাকলেও ১ ফেব্রুয়ারি থেকে পুরো মাস আমরা একটা উৎসবে মেতে উঠি। সেই উৎসব বর্তমানে ডামাডোলে রূপ নিয়েছে। বইমেলা নিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষাবিদের রয়েছে আক্ষেপও। তাদের ভাষ্য, আমরা বইমেলার আদর্শ ও উদ্দেশ্য থেকে অনেক দূরে সরে এসেছি। বইমেলার জন্ম হয়েছিল একটি জ্ঞানভিত্তিক আলোকিত সমাজ গড়ে তোলার অনুপ্রেরণা ও জনআকাক্সক্ষা থেকে। বইয়ের কোনো বিকল্প নেই জ্ঞান অনুশীলনে, জীবনবোধ অর্জনে। যেকোনো আদর্শে আলোকিত আদর্শিক মানুষ গড়ে তোলায় এ মেলার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার কথা, কিন্তু মেলাটি এখন আলোড়িত হলেও আলোকিত হতে পারছে না। বইমেলার বসন্ত শুধু রঙের বসন্তে পর্যবসিত হয়ে পড়েছে। এদেশের তারুণ্যের যে আত্মত্যাগী আদর্শিক প্রাণোচ্ছ্বাস-প্রতিবাদী, দ্রোহী চরিত্র, সেই তারুণ্যকে উত্তেজনার কানাগলিতে প্রবাহিত করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলেছে।
প্রতি বছর মেলায় হাজার হাজার বই প্রকাশ পাচ্ছে, বিক্রিও হচ্ছে কোটি কোটি টাকা; কিন্তু সেসব বইয়ের বেশিরভাগই মানহীন, নিম্নরুচির, চটকদার, যা একটি জ্ঞানভিত্তিক আলোকিত সমাজ গঠনের বিপরীত কর্মকাণ্ডে পর্যবসিত। এই একুশ শতকের কেউ যদি ‘ভূতের বাচ্চা’ নিয়ে বই লেখে, তার চাইতে কিম্ভূত আর কী হতে পারে?
বইমেলায় এখন মেলা বসে ‘তিশা’, ‘সাব্রিনা’দের। তাদের নিয়ে যে রুচিহীন তাণ্ডব চলে, সেই কর্মকাণ্ডের সম্মুখীন হতে কোনো ভদ্রলোক বইমেলায় যাওয়ার চিন্তা করতে পারে না। এটা ঘটছে আমাদের প্রকাশকদের অব্যবসায়িক, অপেশাদার চরিত্র ও কাজকর্মের জন্য। তাদের কোনো নিজস্ব ভিশন বা চিন্তা নেই, মিশন তো দূরের বিষয়। এরা সবসময় সরকার তোষণমূলক প্রকাশনায় ব্যস্ত থাকে। এই দলে এমনকি বাংলা একাডেমি পর্যন্ত গা ভাসিয়েছেÑ এটাই সর্বনাশের মূলে। শুধু শত শত বই নয়, শত শত স্টলও বইমেলায় বরাদ্দ হয় দলীয় পাণ্ডাদের তোষণে। আর এ তোষণে পাণ্ডা থেকে পাণ্ডিত্যের ভেতর কোনো ভেদরেখা খুঁজে পাওয়া যায় না। এটা খুবই মর্মবেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা। কর্তৃত্ববাদী সরকারের তোষণকারী সমর্থকরূপে, নিজেরাও কর্তৃত্ববাদী অপশক্তি হয়ে উঠেছে বাংলা একাডেমি গত পনেরো বছরে। এ নির্লজ্জ ব্যক্তিত্বহীনতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বইমেলাকে সত্যিকার আলোকিত জ্ঞানভিত্তিক দেশ গঠনের অন্যতম সহায়ক শক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে বাংলা একাডেমিকেই যথার্থ ভূমিকা নিতে হবে। দলীয় অপরাজনীতিমুক্ত বিদ্যায়তনিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।