ঠাকুরগাঁও জেলা জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে ডা. শফিকুর রহমান

স্বাধীনতার পর থেকে সকল সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা তদন্ত করতে হবে


২ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:১১

গত ৩০ ডিসেম্বর সোমবার ঠাকুরগাঁও জেলা স্কুল মাঠে জেলা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত বিশাল কর্মী সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় আমীর ডা. শফিকুর রহমান – আব্দুল আজিজ ফারুকী

ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা : স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত সংঘটিত সকল সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা তদন্ত করার জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। তিনি আওয়ামী লীগের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন, স্বাধীনতার পর থেকে যে দল সংখ্যালঘু বলে ফায়দা লুটে নিয়েছে, তারাই তাদের ক্ষতি করেছে, তাদের সম্পদ লুটে নিয়েছে, বাড়িঘর দখল করেছে, নির্যাতন করেছে। তারা এসব করে ইসলামপন্থীদের ওপর দায় চাপিয়ে দিতে চেয়েছে। ইসলামপন্থীরা এসব করে না, অন্যের সম্পদকে নিজের সম্পদ মনে করে না, অন্যকে নির্যাতন করে না। আমরা জাতিসংঘের কাছে দাবি জানিয়েছি, বাংলাদেশে যত এরকম ঘটনা ঘটেছে, তার সকল ঘটনার তদন্ত করা হোক। তাতে যারা অপরাধী হবে, তাদের বিচার হোক।
গত ৩০ ডিসেম্বর সোমবার ঠাকুরগাঁও জেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে জেলা স্কুল বড় মাঠে আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জেলা আমীর অধ্যাপক বেলাল উদ্দিন প্রধানের সভাপতিত্বে ও জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আলমগীর হোসেনের পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, অধ্যাপক মাহবুুবুর রহমান বেলাল, ঠাকুরগাঁও জেলা জামায়াতের সাবেক আমীর মাওলানা আব্দুল হাকিম, সাবেক শিবির সভাপতি ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য দেলোয়ার হোসেন।
এছাড়া বক্তব্য রাখেন দিনাজপুর জেলা আমীর আনিসুর রহমান, পঞ্চগড় জেলা জামায়াতের আমীর ইকবাল হোসাইন, হিন্দু ধর্মীয় নেতা যতীস চন্দ্র রায়, ওলামা নেতা মুফতি হারুনুর রশিদ কাসেমী, ঠাকুরগাঁও শহর শিবির সভাপতি আসাদুল্লাহ গালিব, শহীদ আবু রায়হানের পিতা ফজলে আলম রাশেদ, ঠাকুরগাঁও শহর জামায়াতের আমীর শামসুজ্জামান শামীম প্রমুখ। রংপুর জামায়াতের সেক্রেটারি আনোয়ার ইসলাম কাজলসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। শীতের সকাল থেকেই বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। গোটা জেলায় সম্মেলন ঘিরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। দীর্ঘদিন পর এমন সমাবেশ পেয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছে। সম্মেলনে একজন হিন্দু ধর্মীয় নেতা উপস্থিত হয়ে জামায়াত-শিবিরের আচার ব্যবহার ও শৃঙ্খলার প্রশংসা করে তাদের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ ছোট একটি দেশ। ছোট এই বাংলাদেশে ১৮ কোটি মানুষ। কিন্তু জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে পরিণত করতে পারিনি। তাদের হাতকে কর্মের হাতে পরিণত করতে পারলে দেশের চেহারা পাল্টে যেত।
সৎ নেতৃত্ব ক্ষমতায় না এলে জাতি মর্যাদাবান হতে পারবে না
যশোর সংবাদদাতা: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, সৎ নেতৃত্ব থেকে দেশ এখনো বঞ্চিত রয়ে গেছে। এ জায়গাটা পূরণ না হলে আমাদের জাতি সত্যিকার অর্থে মর্যাদাপূর্ণ জাতিতে পরিণত হতে পারবে না। তিনি বলেন, আল্লাহ আমাদের এদেশ উপহার দিয়েছেন। সাথে খনিজসম্পদসহ অনেক কিছু দিয়েছেন। কিন্তু আমাদের একটা জায়গায় ঘাটতি রয়ে গেছে। সৎ নেতৃত্ব থেকে দেশ এখনো বঞ্চিত রয়ে গেছে। এ জায়গাটা পূরণ না হলে আমাদের জাতি সত্যিকার অর্থে মর্যাদাপূর্ণ জাতিতে পরিণত হতে পারবে না। তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ ছিল দুঃশাসন আর দুর্নীতিতে পরিপূর্ণ।
গত ২৭ ডিসেম্বর শুক্রবার যশোর জেলা ঈদগাহ মাঠে ঐতিহাসিক কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথাবলেন ডা. শফিকুর রহমান। জেলা আমীর অধ্যাপক গোলাম রসুলের সভাপতিত্বে ও জেলা সেক্রেটারি মাওলানা আবু জাফর ও সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক গোলাম কুদ্দুসের যৌথ সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মো. মোবারক হোসেন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মুহাদ্দিস আবদুল খালেক ও মাওলানা আজিজুর রহমান। সংগীত পরিবেশন করে যশোর জেলা সাংস্কৃতিক সংসদ।
এছাড়া বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ড. আবদুল মতিন, ড. আলমগীর বিশ্বাস, ঝিনাইদহ জেলা আমীর অধ্যাপক আলী আযম, চুয়াডাঙ্গা জেলা আমীর এডভোকেট রুহুল আমীন, মাগুরা জেলা আমীর এমবি বাকের, নড়াইল জেলা আমীর আতাউর রহমান বাচ্চু, সাতক্ষীরা জেলা আমীর, অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম, ডা. মোসলেহ উদ্দীন ফরিদ, শহীদ আব্দুল্লাহর বাবা আব্দুল জব্বার, যশোর জেলার নায়েবে আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি ড. আবদুল মান্নান, যশোর জেলা কর্মপরিষদ সদস্য এডভোকেট গাজী এনামুল হক, মাওলানা আরশাদুল আলম, কেশবপুর উপজেলা আমীর অধ্যাপক মুক্তার আলী, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের জেলাশহর শিবির সভাপতি মোস্তফা কামাল প্রমুখ।
এর আগে আব্দুল্লাহ আল মামুনের অর্থসহ কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে কর্মী সম্মেলনের সূচনা হয়। শহীদ আব্দুল্লাহর বাবা আবদুল জব্বার বলেন, আমার ছেলে ঢাকায় গুলি খেয়ে ১০০ দিন পর মারা গেছে। তিনি জামায়াতের কাছে দাবি করেন, তার ছেলের রক্তের বিনিময়ে এদেশে যেন আল্লাহর বিধান কায়েম হয়। ভারত থেকে নিয়ে এসে যেন শেখ হাসিনার বিচার করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি বলেন, সরকারি আইন মানতে গিয়ে যেন কোনো মানুষকে হত্যা করা না হয়। প্রয়োজনে বাড়ি ফিরে যাও।
কর্মী সম্মেলন শুরুর আগেই সম্মেলনস্থল লোকে ভরে যায়। দুপুরের দিকে মাঠের বাইরে কয়েক কিলোমিটার মানুষে মানুষে সয়লাব হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরপর নারায়ে তাকবীর আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে মুখরিত হয় পুরো যশোর শহর।
আব্দুল্লাহ এলাকার গৌরব
বেনাপোল সংবাদদাতা: বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর আমীর জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আব্দুল্লাহ এলাকার গৌরব। তার কারণে আজ আমাদের এখানে আসা। আব্দুল্লাহ শহীদ না হলে আদৌ এখানে আসার সৌভাগ্য হতো কিনা, আমি জানি না। শহীদ আব্দুল্লাহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তিনি বাংলাদেশকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করার জন্য নিজের সম্ভাবনাময় জীবন অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছেন। তার আত্মত্যাগের জন্য জাতি আজ গর্বিত। আমি আশা করি, সারা দেশ তাকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে এবং তাকে জাতীয় বীরের মর্যাদা প্রদান করবেন। আমি মহান রবের নিকট দোয়া করি তিনি যেন তাকে শহীদ হিসেবে কবুল করেন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনকে ধৈর্যধারণ করার তাওফিক দান করুন। এ সময় তিনি শহীদ আব্দুল্লাহর পরিবারের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন এবং তার পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য জামায়াতে ইসলামীর স্থানীয় নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশ প্রদান করেন।
গত শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকাল ৩টার দিকে যশোরের শার্শা উপজেলার বেনাপোল বড় আঁচড়া গ্রামে যান ডা. শফিকুর রহমান। শহীদ আবদুল্লাহর পরিবারের সাথে সাক্ষাৎকালে তিনি এ মন্তব্য করেছেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নিহত আব্দুল্লাহর বাবা আব্দুল জব্বার, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মোবারক হোসেন, বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আজিজুর রহমান, যশোর জেলা আমীর গোলাম রসুল, শার্শা থানা শাখার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দরা।
আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শাহাদাত বরণকারী সকলে ন্যায়বিচার পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন এবং তাদের সকলের পরিবারের সাথে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সব সময় পাশে থাকবে বলে জানান।
উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুরুতর আহত রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী মো. আব্দুল্লাহ তিন মাসেরও অধিক সময় চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৪ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।