সংবাদপত্রের পাতা থেকে


২৯ নভেম্বর ২০২৪ ০০:০০

॥ আহমদ আজিজ ॥
নৈরাজ্য ঠেকাতে পারছে না সরকার
‘নৈরাজ্য ঠেকাতে পারছে না সরকার’- এটা দৈনিক কালের কণ্ঠের ২৭ নভেম্বরের প্রধান শিরোনাম। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ের নৈরাজ্যকর বিক্ষোভে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপি। দলটির দাবি, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের লোকেরা এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তারা মনে করেন, অন্তর্র্বর্তী সরকার এ বিক্ষোভ সামাল দিতে ব্যর্থ হচ্ছে, পরিস্থিতি দিন দিন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। তাদের মত, সরকার পরিচালনায় রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতকে গুরুত্ব দিলে এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হতো না।
গত ২৫ নভেম্বর সোমবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলটির নেতাদের আলোচনায় এ পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে। বৈঠকে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। গত কয়েকদিনে রাজধানীতে বিভিন্ন দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ হয়েছে। রবি ও সোমবার পুরনো ঢাকায় শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। এছাড়া রাজধানীতে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে ঘেরাও করেছে বিক্ষোভকারীরা।
দৈনিক সমকালের ২৭ নভেম্বরের প্রধান শিরোনাম, ‘চিন্ময়ের গ্রেপ্তার ঘিরে সংঘাত, চট্টগ্রামে আইনজীবী নিহত।’ খবরে বলা হয়, সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও পুণ্ডরিক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন আবেদন ঘিরে গত ২৬ নভেম্বর মঙ্গলবার চট্টগ্রামে সংঘর্ষ হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে চিন্ময় অনুসারীর এ সংঘাতের সময় চট্টগ্রাম আদালতের সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) সাইফুল ইসলাম আলিফ (৩৫) নিহত হয়েছেন। আহত হন অন্তত ২০ জন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও লাঠিপেটা করে।
দৈনিক ইত্তেফাকের ২৭ নভেম্বরের শিরোনাম, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের গতিবিধিতে পুলিশের নজরদারি। খবরে বলা হয়, জামিনে কারাগার থেকে বের হয়ে এসে আবারও প্রকাশ্যে তৎপরতা শুরু করেছেন কয়েক জন শীর্ষ সন্ত্রাসী। পাশাপাশি পালিয়ে থাকা সন্ত্রাসীদেরও বেশ কয়েক জন প্রকাশ্যে এসেছেন। ইতোমধ্যে মগবাজারে প্রকাশ্যে মহড়া দিয়েছেন সুব্রত বাইন। ফলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রথম আলোর ২৭ নভেম্বরের একটি খবরের শিরোনাম, ‘ঢাকায় এবার জিকা রোগী শনাক্ত’। এতে বলা হয়, ঢাকায় এবার জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। গত তিন মাসে আটজনের শরীরে এ ভাইরাসের উপস্থিতি জানা গেছে। গত বছরও পাঁচজন জিকা রোগী শনাক্ত হয়েছিলেন। চিকিৎসার পর তারা এখন ঝুঁকিমুক্ত। আইইডিসিআর ও আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দৈনিক প্রথম আলোর ২৬ নভেম্বরের প্রধান শিরোনাম, ‘সরকারের ব্রিফিং : পরিকল্পিত অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে।’ প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিকল্পিতভাবে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে বলে মনে করে সরকার। গত দুই দিনে ঢাকা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে বিশৃঙ্খলা-ভাঙচুরের যেসব ঘটনা ঘটেছে, তা বড় ধরনের পরিকল্পনার অংশ বলেই ভাবছে সরকার।
দৈনিক নয়া দিগন্তের ২৬ নভেম্বরের প্রথম পাতার খবর, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন সংশোধনে নতুন বিধান’। প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হওয়া গুম-খুনের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনীর গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল 27আইন সংশোধন করে রোববার অধ্যাদেশের গেজেট প্রকাশ করেছে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ অধ্যাদেশে ভুক্তভোগী, আসামি ও সাক্ষীদের অধিকার সংরক্ষণ, ক্ষতিপূরণ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অপরাধের বিরুদ্ধে বিচারের বিধান থাকলেও, রাজনৈতিক দলের বিচারের বিধান রাখা হয়নি।
দৈনিক দেশ রূপান্তরের ২৬ নভেম্বরের প্রথম পাতার খবর, ‘পুলিশের সঙ্গে মাঠে কারা?’। প্রতিবেদনে বলা হয়, একটা সময় ছিল পুলিশকে নিজেদের ক্যাডার বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করেছে একটি রাজনৈতিক দল। আবার পুলিশের সঙ্গে থেকে বিরোধীপক্ষকে দমানোর জন্য হামলা ও মারধর করতেন রাজনৈতিক দলটির নেতাকর্মীরা। রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু এ দৃশ্য বদলায়নি। পটপরিবর্তন হলেও দাবি আদায়ের কর্মসূচিকারীদের দমনে পুলিশের সঙ্গে বিভিন্ন গোষ্ঠীকে এখনো দেখা যায়। সম্প্রতি ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের কর্মসূচি চলাকালে তাদের রাজপথ থেকে সরিয়ে দিতে পুলিশের সঙ্গে যোগ দেন কিছু রাজনৈতিক নেতা-কর্মী। দলীয় কোনো ব্যানারে না হলেও ধারণা করা যায় বর্তমান সরকারের অনুষঙ্গ বা সমর্থনকারী তারা।
‘নির্বাচন ইস্যুতে সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে’- এটি দৈনিক যুগান্তরের ২৫ নভেম্বরের প্রথম পাতার খবর। প্রতিবেদনে বলা হয়, দ্রুত নির্বাচনের জন্য অন্তর্র্বর্তী সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে। সরকারের প্রধান কাজ হচ্ছে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন-রাজনৈতিক দলগুলো থেকে ক্রমে এ বক্তব্য জোরদার হচ্ছে। দেশের বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি শুরুতে সরকারকে যৌক্তিক সময় দেওয়ার কথা বললেও এখন দ্রুত নির্বাচনি রোডম্যাপ চাইছে।
জামায়াতে ইসলামী সংস্কারে গুরুত্ব দিলেও বিলম্বিত নির্বাচন চায় না। পতিত স্বৈরাচার সরকারের সুবিধাভোগীদের অপতৎপরতা, নানামুখী সংকট, প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো দাবি নিয়ে রাজপথে আন্দোলনসংক্রান্ত পরিস্থিতি দলগুলোর মধ্যে দ্রুত নির্বাচনের তাগিদ বাড়িয়েছে- এমনটি মনে করছেন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
দৈনিক প্রথম আলোর ২৫ নভেম্বরের প্রথম পাতার খবর, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফেরাতে সবাই একমত’। প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৩ বছর আগে বাতিল হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফেরাতে সবাই একমত বলে জানিয়েছেন নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার। নাগরিক সমাজ, বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে গত ২৪ নভেম্বর সংলাপ করার পর এ বিষয়ে তাদের সবার ঐকমত্য হওয়ার কথা জানান তিনি।
‘নতুন করে খেলাপির ঝুঁকিতে ব্যবসায়ীরা’- এটি দৈনিক কালের কণ্ঠের ২৫ নভেম্বরের প্রথম পাতার খবর। প্রতিবেদনে বলা হয়, শিল্পোৎপাদন কমে গেছে। ব্যাহত হয়েছে রপ্তানি আয়। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাসহ নানামুখী চাপে ব্যবসা-বাণিজ্যে নেমে এসেছে স্থবিরতা। এর মধ্যে খেলপি ঋণের নীতিমালা পরিবর্তনের ফলে ঋণ পরিশোধের সময় কমে এসেছে। এ অবস্থা নতুন করে ঋণখেলাপি হওয়াসহ নানামুখী চাপের মুখে ব্যবসায়ী সমাজ। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশের ব্যাংক খাতে ব্যাপক লুটপাটে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে এসেছে। লুটপাটের টাকার বড় অংশ বিদেশে পাচার করা হয়েছে। ওই সব টাকা এতদিন খেলাপি করা হয়নি।
দৈনিক বণিক বার্তার গত ২৬ নভেম্বর প্রধান শিরোনাম ‘আদানিসহ ৭ বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তির বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে পর্যালোচনা কমিটি’। প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার শাসনামলে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত স্বাক্ষরিত বড় বিদ্যুৎ উৎপাদন চুক্তি পর্যালোচনায় সহায়তার জন্য একটি লিগ্যাল ও তদন্তকারী সংস্থাকে দায়িত্ব দেয়ার সুপারিশ করেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত জাতীয় পর্যালোচনা কমিটি। বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন পর্যালোচনা কমিটির এক প্রস্তাবে অন্তর্র্বর্তী সরকারের কাছে এ সুপারিশ করা হয়। সেই সঙ্গে আরো জানানো হয়েছে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের অন্য চুক্তিগুলো বিশ্লেষণ করতে কমিটির আরো সময় প্রয়োজন।
পর্যালোচনা কমিটি এমন সব তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করছে, যা আন্তর্জাতিক সালিশি আইন ও কার্যধারার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চুক্তি পুনর্বিবেচনা বা বাতিল করতে পারে। এক্ষেত্রে তাদের সহায়তায় শীর্ষমানের এক বা একাধিক আন্তর্জাতিক আইন এবং তদন্তকারী সংস্থাকে অবিলম্বে যুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। কমিটি অন্তর্র্বর্তী সরকারকে আরো জানিয়েছে, তারা নিশ্চিত করতে চায় যে তদন্তগুলো আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিতের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আলোচনা ও সালিশে গ্রহণযোগ্য হবে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত জাতীয় পর্যালোচনা কমিটি এরই মধ্যে বেশকিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুক্তির বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করে দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ভারতের গড্ডায় নির্মিত আদানি গ্রুপের ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, পটুয়াখালীর পায়রায় নির্মিত ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাট ৩৩৫ মেগাওয়াট ডুয়াল ফুয়েল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, আশুগঞ্জে ১৯৫ মেগাওয়াট গ্যাস বিদ্যুৎ কেন্দ্র, চট্টগ্রামের বাঁশখালী ৬১২ (প্রথম ইউনিট) মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেঘনাঘাটে সামিট গ্রুপের ৫৮৩ মেগাওয়াট ডুয়াল ফুয়েল বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং মেঘনাঘাট ইউনিক গ্রুপের ৫৮৪ মেগাওয়াট গ্যাসভিত্তিক (এলএনজি) বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
‘প্রশ্নবিদ্ধ ৬ বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি পর্যালোচনা হচ্ছে’- এটি দৈনিক আজকের পত্রিকার গত সোমবার ২৫ নভেম্বরের প্রধান শিরোনাম। খবরে বলা হয়, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে গত সাড়ে ১৫ বছরে বেসরকারি ও যৌথ অংশীদারত্ব মিলিয়ে ৮৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এসব কেন্দ্রের সঙ্গে করা বেশির ভাগ চুক্তিই নানা কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বড় বড় বিদ্যুৎ উৎপাদন চুক্তিগুলো পর্যালোচনায় সহায়তার জন্য স্বনামধন্য আন্তর্জাতিক আইন ও তদন্তকারী সংস্থা নিয়োগের সুপারিশ করেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত জাতীয় পর্যালোচনা কমিটি। রোববার অন্তর্র্বর্তী সরকারকে দেওয়া প্রস্তাবে এ সুপারিশ করে কমিটি।
‘জানুয়ারিতে ছাত্রদের নতুন দল’- এটি দৈনিক দেশ রূপান্তরের ২৫ নভেম্বরের প্রধান শিরোনাম। গণঅভ্যুত্থানের আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন-ঘোষিত এক দফায় ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের দাবি তোলা হয়েছিল। অভ্যুত্থান সফল হওয়ার পর এবার নিজেরাই এ দাবি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম থেকে আরও একধাপ এগিয়ে এবার নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের দিকে যাচ্ছে বৈষম্যবিরোধীরা। অন্তর্র্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার দায়িত্বে থাকা নাহিদ ইসলামকে নেতৃত্বে রেখে দল গঠনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের শুরুতে অর্থাৎ জানুয়ারিতেই আলোচিত নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা আসতে পারে।