সম্পাদকীয় : নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন সম্মিলিত প্রয়াস


২২ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০০

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। পতিত সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগ ও তার রাজনৈতিক দোসররা পালিয়েছে। কিন্তু কথায় আছে নদী মারা গেলেও রেখা থাকে। হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাট; এমনকি ফুটপাতে হাঁটলেও এ সত্য উপলব্ধি করা যায়। নদী মারা গেছে, কিন্তু রেখা আছে। তারা বিগত দেড় দশকে যেসব অপকর্ম এদেশের ব্যবসায়ী, পাতিনেতা এবং দুর্নীতিবাজদের শিখিয়ে গেছে, একশ্রেণির মানুষ তা ভুলতে পারেনি। তাই তো ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের চেতনা ভুলে তারা আওয়ামী লীগ ও তার দোসরদের শূন্যস্থান পূরণ করে নিজেদের পকেট পূর্ণ করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। বাজারে গেলে আবারও দেখা যাচ্ছে সিন্ডিকেটের প্রভাব। রাস্তায় রাস্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একশ্রেণির সদস্যের সহযোগিতায় নিত্যপণ্যবাহী গাড়ি থামিয়ে এখনো চলছে চাঁদাবাজি। ফুটপাতে চলছে তোলাবাজি। যানবাহন, বিশেষ করে বাস, ট্রাক টার্মিনাল, অটোরিকশা থেকে আগের কায়দায় চাঁদাবাজি চলছে, পুরনোর সাথে যোগ হয়েছে নতুন নতুন মুখ। তাই জনগণের দুর্ভোগ যাচ্ছে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমছে না। কারণ অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ের চেয়ে গণসচেতনতা কমেছে। কারণ তাদের পাশে অভ্যুত্থানের পরপরই যেমন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, সাধারণ ছাত্ররা দাঁড়িয়েছিলেন এবং সাথে সাথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরপেক্ষভাবে অপরাধীদের মোকাবিলায় নির্যাতিত মানুষের সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছে, এখন আর তেমনটা দেখা যাচ্ছে না। চাঁদাবাজি-তোলাবাজির ভাগ-বাঁটোয়ারায় তাদের; বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্বল নৈতিকতার একশ্রেণির সদস্য অপরাধীদের সহযোগীর ভূমিকা পালন করছেন বলে অভিযোগ পত্রপত্রিকা ও মিডিয়ায় আসছে।
তাই আমরা মনে করি, যে সরিষায় ভূত তাড়াবেন, সেই সরিষার ভূত তাড়ানো না গেলে জনগণের কষ্টের দিন শেষ হবে না। গণঅভ্যুত্থানের চেতনা বাস্তবায়ন করাও সম্ভব হবে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য ও সেবামূল্য কমবে না। জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হলে সরকারের কোনো প্রচেষ্টাই সফল হবে না। আমরা জানি, পতিত স্বৈরাচার সরকার দেশের অন্যান্য আর্থিক খাতের সাথে বাজার ব্যবস্থাপনাও ভেঙে ফেলেছে। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নৈতিকমান চেইন অব কমান্ড কিছুই অবশিষ্ট রাখেনি। রাজনৈতিক কর্র্মীদের দেশপ্রেম ও মানবসেবার দীক্ষার বদলে দিয়েছে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিত্ত ও প্রভাব গড়ার কুশিক্ষা। দেশের বাজার ব্যবস্থায় এখন আর আমদানি-রপ্তানি, জোগান, চাহিদা ইত্যাদি সূচকে সীমাবদ্ধ নেই। বাজারের বড় নিয়ন্ত্রক এখন এলাকার পাতি মাস্তানরা, তাদের পরিচয় নেতা-পাতিনেতা। তাদের সখা হলেন সংশ্লিষ্ট থানা বা ফাঁড়ির আইনশৃঙ্খলা দুর্নীতিবাজ একশ্রেণির সদস্য।
কথায় আছেÑ বিল নষ্ট কচুরিপানায়, গ্রাম নষ্ট কানায়। আমরা বিশ্বাস করি, যারা রাজনীতি করেন, তাদের অধিকাংশেরই মিশন ও ভিশন হলো দেশের উন্নয়ন ও জনগণের সেবা করার মাধ্যমে মানবজনম সার্থক করা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যেও অধিকাংশ সদস্য সততার সাথে দেশ ও জনগণের সেবায় নিয়োজিত। কিন্তু কতিপয় সদস্যের কারণে ইমেজ সঙ্কট বাড়ছে। সাথে সাথে বাড়ছে জনগণের দুর্ভোগ। নির্যাতিত-নিপীড়িত সৎ ব্যবসায়ীরা সমস্যার প্রতিকার কার কাছে পাবেন, বুঝতে না পেরে চাঁদা দিয়ে অপরাধীদের সাথে সন্ধি করে নিরাপদে ব্যবসার সহজ পথে চলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। চাঁদার টাকা দ্রব্যমূল্যের সাথে যোগ করে জনগণের পকেটের ওপর চাপ বাড়ানোর ইচ্ছে না থাকলেও এক্ষেত্রে তারা বাধ্য হন। তাই সমস্যা সমাধানে সরল উদ্যোগ নয়, প্রয়োগ সম্মিলিত শক্তিশালী প্রয়াস।